পাঠ্যপুস্তক-চাই গতিশীল মুদ্রণ প্রক্রিয়া

বর্তমান সরকারের যে কয়টি মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে জনমনে সন্তোষ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেগুলোর অন্যতম। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পেঁৗছে দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশেষ আস্থা অর্জন করেছে এ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারমূলক বেশ কিছু উদ্যোগ এসেছে।


বিদ্যালয়ে ভর্তিক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ, অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণসহ কয়েকটি জনবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েও মন্ত্রণালয়টি প্রশংসিত হয়েছে। ইতিবাচক নানা উদাহরণের কারণে এ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি গণমাধ্যম ও নাগরিকদের সুদৃষ্টি রয়েছে। কেউ-ই প্রত্যাশা করে না, এর ইতিবাচক ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটুক। কোথাও অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতি সাফল্যের ধারাকে ম্লান করে দিক। বাংলাদেশের বাস্তবতায় অবশ্য এটি প্রায় অসম্ভব একটি প্রত্যাশা। বহু যুগের দুর্নীতি, অনিয়মের অচলায়তন ভেঙে সহসা একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি করাও কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার উপস্থিতি রয়েছে কিনা সেটি বড় বিবেচ্য। উচ্চপর্যায়ের তাগিদ ও তদারকি থাকলে ক্রমে দুর্নীতি, অনিয়মের অচলায়তন অপসৃত হবে সে প্রত্যাশা করা যায়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফিলতি যদি ইতিমধ্যে অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে সেটি উদ্বেগের কথা। সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে স্পষ্ট হয়েছে, বিগত বছরগুলোতে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছিল তা এবার হুমকির মুখে পড়েছে। গাফিলতিটা স্পষ্টভাবেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অর্থাৎ এনসিটিবির। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে বই রচিত হওয়ার কথা। পাঠ্যক্রম অনুসারে নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনা হেলাফেলার কাজ নয়। নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে বই লেখার কাজ দিয়েই এনসিটিবি বসে থাকতে পারে না। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে যেমন, তেমনি মান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনার প্রক্রিয়াও কার্যকর থাকতে হবে। কিন্তু কার্যত তেমনটি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। বইয়ের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে এনসিটিবি যত্নশীল নয়। প্রয়োজনীয় ২২টি বই লেখার কাজই শেষ হয়নি। বই লেখার কাজ শেষ হয়নি বলে মুদ্রণের দরপত্র খোলার দিন পিছিয়ে গেছে। এখন যে সময় হাতে আছে তা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করে বছরের পহেলা দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে পেঁৗছে দেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য এনসিটিবি যথেষ্ট সময় পেয়েছে। তারপরও যদি বই লেখার ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তবে মুদ্রণের অন্য পর্যায়গুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে নির্ভুল ও সুন্দর বই শিক্ষার্থীদের হাতে পেঁৗছাবে কী করে? শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে লেখা ও মুদ্রিত বই কি প্রশংসা অর্জন করবে, নাকি বিপুল সমালোচনার মুখে পড়বে এ নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। এনসিটিবির গাফিলতির শুরু বা শেষ এখানেই নয়। এর আগে উচ্চ মাধ্যমিকের বই না ছাপিয়ে নকল ও গাইড বইয়ের বাজার সহজ করার অভিযোগ উঠেছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বরাবরের মতো এবারও তাদের অজুহাত ঠুকনো। এনসিটিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে এমন গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে বই মুদ্রণ, মানসম্মত বই রচনা এবং নির্ভুল ও সুন্দর ছাপা ও বাঁধাই নিশ্চিত করে তা শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সফলভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের তীক্ষষ্ট নজরদারি দরকার। কর্তব্যে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।
 

No comments

Powered by Blogger.