জাবি উপাচার্য নির্বাচন-গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুভ হোক
দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও গত সাড়ে তিন বছর ধরে এর একটিতেও নির্বাচিত উপাচার্য নেই। নেই নির্বাচিত ছাত্র সংসদও। ফলে গণতান্ত্রিক বিধিবিধান এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন উপেক্ষিতই থেকেছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থার শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। অনেকদিন পর ২০ জুলাই সেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশ নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্য একটি অংশ এর বিরোধিতা করছে। অথচ শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত উপাচার্যের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করা। বিরোধিতাকারী শিক্ষকদের কথা হচ্ছে, যে ১৫ জন সিনেট সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের স্থানে নতুন সদস্য নির্বাচন না করে নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু নতুন ভিসির পক্ষে সিনেট সদস্য নির্বাচনের মতো কাজ কি স্বল্প সময়ে করা আদৌ সম্ভব? আর এটা করতে গিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি আবার চরম আকার ধারণ করলে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপাচার্য বলেছেন, তিনি ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ মেনেই মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেট সদস্যদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। শিক্ষক সমাজের এতে আপত্তি থাকা উচিত নয়। বিশেষত জাবির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষক সমাজের মধ্যে বিরাজমান গোষ্ঠী ও দলাদলিজাত বিভেদ ভুলে সবাই নির্বাচন নিয়ে একাট্টা হবেন এটাই প্রত্যাশিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব নিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভিসি প্যানেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পেরেছেন তার জন্য তাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হয়। তাছাড়া ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মতো দুরূহ কর্ম সম্পাদনেও তার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য অনুসরণীয়। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যরা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন ছাড়াই বছরের পর বছর ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ব্যতিক্রম। আশা করা যায়, জাবিতে ভিসি প্যানেল নির্বাচনের পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথ অনুসরণ করবে। জাবির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুভ হোক।
No comments