ধর্ম-ইসলামে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মানবস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ-প্রতিরোধের বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে। সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেলে এর চিকিৎসাসেবা সুনিশ্চিত করার প্রতি জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে। সবল ও সুস্থতাই ইসলামের কাম্য। যেহেতু আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি মানুষের প্রধান কাজ, সেহেতু বান্দার সুস্থ থাকা অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ঈমান আনার পর একজন মুসলমানের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। আর সালাতকে নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ব্যায়াম বলা হয়। কিন্তু অসুস্থ দেহ-মন নিয়ে বিধিবদ্ধ ইবাদতগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হয় না বিধায় এগুলো গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই ইসলাম জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। সুস্থ ও সবল থাকাকে অনুপ্রাণিত করে বলা হয়েছে, ‘শক্তিশালী ও সুস্থ মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম।’ মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ঈমানদার ব্যক্তির শারীরিক শক্তি আছে, তিনি শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে প্রিয় সেই মুমিন অপেক্ষায় যে দুর্বল, শক্তিহীন, যার শারীরিক শক্তি কম।’
আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য যথেষ্ট শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। দৈহিক শক্তি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। নবী করিম (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে গণিমত মনে করবে। এগুলো হলো: বার্ধক্যের আগে তোমার তারুণ্যকে, দারিদ্র্যর পূর্বে তোমার সচ্ছলতাকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে।’
মানবদেহে যেসব কারণে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে এগুলোর মধ্যে অপরিণামদর্শী খাদ্যাভ্যাস এবং অতিশয় ভোজন অন্যতম, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হুমকিস্বরূপ। তাই ইসলাম মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা করাকে ফরজ করে দিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ে রোজা রাখাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। আর পানাহার গ্রহণের বিষয়ে ইসলাম যথার্থ তথা স্বাস্থ্যোপযোগী পথ নির্দেশ করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পথ প্রদর্শন করেন। যিনি আমাকে আহার ও পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সূরা আশ-শোয়ারা, আয়াত: ৭৮-৮০)
মানবদেহের ক্ষয় পূরণ ও তার উন্নতির জন্যই পানাহার করা হয়। তবে এ আহার করারও একটি স্বাস্থ্যসম্মত নীতি রয়েছে। যে নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে সে আহারই শরীরের ক্ষয় পূরণের পরিবর্তে এতে বরং ঘাটতি এনে দেবে এবং শরীরে জন্ম নেবে নানা রোগ-ব্যাধির উপকরণ। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা উদর পূর্তি করে ভোজন করো না, কেননা এতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।’ পেটকে সব রোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে হাদিসে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য গ্রহণ, এক-তৃতীয়াংশ পানি পান এবং অন্য অংশ খালি রাখাই হলো নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস। ইসলাম কখনো উদরপূর্তি করে খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে না। ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে, যখন ক্ষুধা পাবে কেবল তখনই খাদ্য গ্রহণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা খাওয়ার প্রয়োজন ব্যতীত খাদ্য গ্রহণ করি না। আর যখনই আমরা খাদ্য গ্রহণ করি তৃপ্তির সঙ্গে (উদরপূর্তি করে) ভক্ষণ করি না।’
জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার পরই ইসলাম রোগ-প্রতিরোধের প্রতি জোরালো তাগিদ দিয়েছে এবং চিকিৎসা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে। যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের রোগ-ব্যাধি হয় ইসলাম সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে, ‘চিকিৎসার চেয়ে রোগ-প্রতিরোধ উত্তম।’ হাদিস শরিফে চিকিৎসা-সংক্রান্ত অধ্যায়ে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ যেখানে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তার আশপাশে খাদ্যশস্যের ভেতর রোগব্যাধির শেফা বা আরোগ্যও দিয়েছেন। নবী করিম (সা.)-এর সব সুন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। কেউ যদি ঘুম থেকে জাগা, পানাহার, চালচলন, মলমূত্র ত্যাগসহ যাবতীয় আমল সুন্নত অনুযায়ী সম্পাদন করেন তাহলে জটিল রোগের ঝুঁকি থেকে তিনি মুক্ত থাকতে পারবেন। যেমন মাটির ঢিলা ব্যবহার, হাঁচি ও হাই তোলার সময় নাক ঢেকে রাখা, মিস্ওয়াক করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই সহায়ক। ইসলামি শরিয়ত মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি তা কার্যকরের ফলপ্রসূ উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য ধূমপান, মাদককে হারাম করা, পরিমিত আহার, সময়ানুগ খাবার গ্রহণ প্রভৃতি। কাজেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া ঈমানের দাবি।
তবে আল্লাহর ওপর ভরসার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার জন্য ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করাও ইসলামের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কারণ যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি তার প্রতিকারের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রোগ হলে চিকিৎসা করি, তা কি তাকদির পরিপন্থী নয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না, চিকিৎসা গ্রহণ করাই হলো তাকদির।’
ইসলাম মানবতার কল্যাণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তার সবটুকুই করেছে। অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম আচরণ এবং তার চিকিৎসাসেবার জন্য সুস্থ ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হাদিস শরিফে মুমিন ব্যক্তির জন্য ছয়টি অভ্যাসের মধ্যে কোনো পীড়াগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা-শুশ্রূষাকে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রোগীকে দেখতে যাওয়া, তার কপালে হাত রাখা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য ঈমানদারকে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কেও ইসলামের দিকনির্দেশনা সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের প্রতিও ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রোগ-ব্যাধি ছড়ানোর বড় কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশ। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ বলে হাদীস শরিফে ঘোষিত হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কার্যক্রমই ইসলামে স্বীকৃত নয়। এজন্য ইসলামসম্মত পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সহজতর হয়। ইসলামের এ চমৎকার নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা হলে ইহলৌকিক শান্তি ও পরকালীন সফলতা অবশ্যম্ভাবী। তাই ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করা মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য যথেষ্ট শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। দৈহিক শক্তি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। নবী করিম (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে গণিমত মনে করবে। এগুলো হলো: বার্ধক্যের আগে তোমার তারুণ্যকে, দারিদ্র্যর পূর্বে তোমার সচ্ছলতাকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে।’
মানবদেহে যেসব কারণে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে এগুলোর মধ্যে অপরিণামদর্শী খাদ্যাভ্যাস এবং অতিশয় ভোজন অন্যতম, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হুমকিস্বরূপ। তাই ইসলাম মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা করাকে ফরজ করে দিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ে রোজা রাখাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। আর পানাহার গ্রহণের বিষয়ে ইসলাম যথার্থ তথা স্বাস্থ্যোপযোগী পথ নির্দেশ করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পথ প্রদর্শন করেন। যিনি আমাকে আহার ও পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সূরা আশ-শোয়ারা, আয়াত: ৭৮-৮০)
মানবদেহের ক্ষয় পূরণ ও তার উন্নতির জন্যই পানাহার করা হয়। তবে এ আহার করারও একটি স্বাস্থ্যসম্মত নীতি রয়েছে। যে নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে সে আহারই শরীরের ক্ষয় পূরণের পরিবর্তে এতে বরং ঘাটতি এনে দেবে এবং শরীরে জন্ম নেবে নানা রোগ-ব্যাধির উপকরণ। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা উদর পূর্তি করে ভোজন করো না, কেননা এতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।’ পেটকে সব রোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে হাদিসে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য গ্রহণ, এক-তৃতীয়াংশ পানি পান এবং অন্য অংশ খালি রাখাই হলো নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস। ইসলাম কখনো উদরপূর্তি করে খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে না। ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে, যখন ক্ষুধা পাবে কেবল তখনই খাদ্য গ্রহণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা খাওয়ার প্রয়োজন ব্যতীত খাদ্য গ্রহণ করি না। আর যখনই আমরা খাদ্য গ্রহণ করি তৃপ্তির সঙ্গে (উদরপূর্তি করে) ভক্ষণ করি না।’
জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার পরই ইসলাম রোগ-প্রতিরোধের প্রতি জোরালো তাগিদ দিয়েছে এবং চিকিৎসা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে। যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের রোগ-ব্যাধি হয় ইসলাম সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে, ‘চিকিৎসার চেয়ে রোগ-প্রতিরোধ উত্তম।’ হাদিস শরিফে চিকিৎসা-সংক্রান্ত অধ্যায়ে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ যেখানে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তার আশপাশে খাদ্যশস্যের ভেতর রোগব্যাধির শেফা বা আরোগ্যও দিয়েছেন। নবী করিম (সা.)-এর সব সুন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। কেউ যদি ঘুম থেকে জাগা, পানাহার, চালচলন, মলমূত্র ত্যাগসহ যাবতীয় আমল সুন্নত অনুযায়ী সম্পাদন করেন তাহলে জটিল রোগের ঝুঁকি থেকে তিনি মুক্ত থাকতে পারবেন। যেমন মাটির ঢিলা ব্যবহার, হাঁচি ও হাই তোলার সময় নাক ঢেকে রাখা, মিস্ওয়াক করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই সহায়ক। ইসলামি শরিয়ত মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি তা কার্যকরের ফলপ্রসূ উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য ধূমপান, মাদককে হারাম করা, পরিমিত আহার, সময়ানুগ খাবার গ্রহণ প্রভৃতি। কাজেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া ঈমানের দাবি।
তবে আল্লাহর ওপর ভরসার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার জন্য ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করাও ইসলামের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কারণ যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি তার প্রতিকারের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রোগ হলে চিকিৎসা করি, তা কি তাকদির পরিপন্থী নয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না, চিকিৎসা গ্রহণ করাই হলো তাকদির।’
ইসলাম মানবতার কল্যাণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তার সবটুকুই করেছে। অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম আচরণ এবং তার চিকিৎসাসেবার জন্য সুস্থ ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হাদিস শরিফে মুমিন ব্যক্তির জন্য ছয়টি অভ্যাসের মধ্যে কোনো পীড়াগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা-শুশ্রূষাকে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রোগীকে দেখতে যাওয়া, তার কপালে হাত রাখা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য ঈমানদারকে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কেও ইসলামের দিকনির্দেশনা সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের প্রতিও ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রোগ-ব্যাধি ছড়ানোর বড় কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশ। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ বলে হাদীস শরিফে ঘোষিত হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কার্যক্রমই ইসলামে স্বীকৃত নয়। এজন্য ইসলামসম্মত পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সহজতর হয়। ইসলামের এ চমৎকার নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা হলে ইহলৌকিক শান্তি ও পরকালীন সফলতা অবশ্যম্ভাবী। তাই ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করা মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments