চর্যাদের আব্বু আম্মুরা by ধ্রুব এষ
এই আর্টিস্ট ঘুম থেকে ওঠেন সকালে। সকালে বলতে খুবই সকালে। কাকপক্ষীও তখন ওঠে না। আর্টিস্ট উঠে সকাল দেখেন কিছুক্ষণ। তারপর পত্রপত্রিকা পড়েন কিছুক্ষণ। তারপর ছবি আঁকেন অনেকক্ষণ ধরে। এই আর্টিস্ট চর্যার বাবা। তাসমিয়াহ্ চর্যা। বয়স, আজকের হিসাব ধরলে ঠিক চার বছর আট মাস তেরো দিন।
‘লিটল রেড রাইডিং হুডে’র গল্প যারা পড়েছে, শুনেছে, তারা খুব বুঝতে পারবে ব্যাপারটা। চর্যা তাসমিয়াহ্ হলো একটা লিটল রেড রাইডিং হুড। ওদের মতোই বুদ্ধিমতী এই ছোট্ট মেয়েটা। কথা বলতে পারে খুবই গুছিয়ে। আর লিটল রেড রাইডিং হুডের মতো তার একটা লাল টুপিও আছে। তফাত লিটল হেড রাইডিং হুড থাকে একমাত্র তার নানুবুড়ির সঙ্গে আর চর্যা থাকে তার দাদুবুড়ি, আব্বু, আম্মু এবং পান্না ফুফুমণির সঙ্গে। তারা থাকে মিরপুর দুই নম্বরে একটা হাউসিং কোম্পানির বিল্ডিংয়ে। ছয়তলায়। বিল্ডিংটাই ছয়তলা। বারোটা ফ্ল্যাট ছয়তলা মিলিয়ে। বাচ্চাকাচ্চার সংখ্যা তিরিশের কম নয়। এদের কয়জন চর্যার খুব বন্ধু। এখনো এরা কেউ স্কুলে যায় না। তাও কি যে ব্যস্ত-সমস্ত একেকজন। একটা লিফট আছে বিল্ডিংয়ে। কিন্তু তারা কেউ লিফটে ওঠে না। এই কয়েক মাস ধরে ওঠে না। লিফটে আটকা পড়ে গিয়েছিল একদিন। সব কয়টা। ভয় অবশ্য পায়নি একটুও। ভয় পেয়েছিলেন তাদের আম্মুরা। ভয়ে সব কান্নাকাটি করে অস্থির। তিনতলার অমির মা-তো অজ্ঞানই হয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার সময় আর্টিস্ট বাসায় ছিলেন না। তিনি কাজ করেন একটা দৈনিক পত্রিকায়। পত্রিকার সাহিত্য পাতা, ছোটদের পাতার ছবি আঁকেন। তার অফিস বারোটা থেকে আটটা। কারওয়ান বাজারে অফিস। বাস ধরে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে নয়টা-দশটা বেজে যায়। কোনোদিন চর্যা ঘুমিয়ে পড়ে, কোনোদিন ঘুমিয়ে পড়ে না। আর্টিস্টকে সারা দিনের ব্যস্ততার ফিরিস্তি শুনিয়ে ঘুমায়। দাদুবুড়ি কী করল, পান্না ফুফুমণি কী করল আর তারা কী কী করল। আম্মুকে সব বলা হয়ে যায় আগেই। চর্যার আম্মুও সারা দিন বাসায় থাকেন না। চাকরি করেন একটা ব্যাংকে। তাকে বেরোতে হয় সকাল সাতটায়। ফেরেন সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটায়। আম্মুর অফিস ছুটি শুক্রবার আর আব্বুর ছুটি রোববার। ছুটি না, আব্বু বলেন, ডে-অফ। লিফটে আটকা পড়ার ঘটনা এক শুক্রবারে ঘটেছিল। চর্যার আম্মুও খুব কান্না করেছিলেন। আম্মুদের এত কান্নাকাটি দেখতে একটুও ভালো লাগেনি পুঁচকিদের। এই জন্যই নাকি তারা আর লিফটে ওঠে না। চর্যাই এসব কথা বলেছে তার আব্বুকে। তাদের সব হুটপাট এখন সিঁড়িতে। একতলা থেকে ছয়তলার সিঁড়ি, এই তারা উঠছে, এই নামছে। কয়টা পাখির ছানা মনে হয়। কিচিরমিচির কিচিরমিচির করছে সারাক্ষণ। সারাক্ষণ বলতে যতক্ষণ তাদের ঘুমে না পায় আর কি!
আজ রোববার। আর্টিস্টের ডে-অফ। সকালে উঠে পত্রিকা পড়ে মাত্র ছবি আঁকতে বসেছেন। ছোটদের একটা গল্পের ছবি আঁকছেন। এই গল্প ছাপা হবে পত্রিকায়। গল্পে একটা মজার বাঘ আর একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। তারা বন্ধু। আর্টিস্ট প্রথমে পেনসিলে ড্রয়িংটা করলেন, বাঘের ল্যাজে বসে আছে মেয়েটা। এবার রঙিন করতে হবে এদের। মোমরঙে না জলরঙে? আর্টিস্ট ঠিক করলেন জলরঙে করবেন। সেই মতো জলরঙের বাক্স থেকে কমলা আর হলুদ টিউবটা নিলেন। কালো, সবুজ, নীল এসবও লাগবে। তবে পরে। আগে হলুদ রং করবেন বাঘকে। কমলা রং হবে মেয়েটার ফ্রকে।
চর্যার পান্না ফুফুমণি এক কাপ চা দিয়ে গেলেন আর্টিস্টকে। একটু আগে চর্যার আম্মু বের হয়ে গেছেন অফিসে। চর্যা তার দাদুবুড়ির সঙ্গে ঘুমাচ্ছে।
একটা কাক ডাকল, কা! কা! কা!
আর্টিস্টের মনে হলো, ‘চা! চা! চা!’
আর্টিস্ট চায়ে চুমুক দিলেন এবং পেনসিলের ড্রয়িংটা দেখলেন। চর্যা উঠে এই ছবিটা দেখবে। বাঘের ল্যাজে বসা মেয়েটাকে দেখবে। দেখে...? আর্টিস্ট আর চিন্তা করতে পারলেন না, কেউ টোকা দিল ফ্ল্যাটের দরজায়। টুক টুক টুক! টুক টুক টুক! কলবেল আছে দরজায়। টোকা দিচ্ছে কেন তাহলে? নাকি কারেন্ট নেই? না আছে। ফ্যান চলছে ঘরে। তবে? আর্টিস্ট বললেন, ‘কে?’
উত্তর এল, ‘আমি।’
ছোট্ট কেউ।
আর্টিস্ট বললেন, ‘ও, দাঁড়াও।’
দরজা খুলে আর্টিস্ট যাকে দেখলেন, সম্ভবত চর্যা-বাহিনীর ক্ষুদ্রতম সদস্য ইনি। কলবেলের সুইচের নাগাল পান না। তিনতলা কি চারতলার বাচ্চা। সবুজ রঙের ফ্রক, চুলে ঝুঁটি। রিবনের রং কমলা। চোখে অল্প ঘুম আছে এখনো। আর্টিস্টকে দেখে বললেন, ‘আব্বু!’
তাকে আব্বু ডাকছে? আর্টিস্ট ভাবলেন। তাকেই ডাকছে। আবার বলল, ‘আব্বু, দরজা কই?’
‘দরজা? এই তো।’ আর্টিস্ট বললেন।
‘না, দরজা। দরজা কই, আব্বু?’
কী মুশকিল! দরজা কই এখন কে বোঝায় একে? আর্টিস্ট বললেন, ‘তুমি আগে ভেতরে এসে বসো!’
‘দরজা কি ঘুমায়, আব্বু?’
ও-ও-ও-ও-ও! দরজা! এতক্ষণে বুঝলেন আর্টিস্ট। দরজা হলো চর্যা। হাসি পেলেও কোনো রকমে হাসি আটকে রেখে আর্টিস্ট বললেন, ‘হ্যাঁ, দরজা তো ঘুমায়, আম্মু। তুমি বসো আমি দরজাকে ডেকে দিই।’
‘না।’
‘ডাকব না?’
‘না।’
‘না? কেন?’
‘না, আমি আবার আবেবা। দাই, আব্বু।’
আবেবা মানে আসব। দাই, যাই।
আর্টিস্ট বললেন, ‘ঠিক আছে, আম্মু। দরজা উঠলে ওকে আমি বলব। নাকি তুমি একটু বসবে? আমি একটা বাঘের ছবি আঁকছি, দেখবে?’
‘না, দাই।’
চলে গেলেন। দরজা বন্ধ করে আর্টিস্ট হাসলেন। দরজা, দাই। তবে রিনরিনে গলা বাচ্চাটার! আবার তাকে ডাকল কিনা আব্বু!
পরের আধঘণ্টা ধরে আর্টিস্ট ছবিটা আঁকলেন। ছোট্ট মেয়েটার ড্রয়িং আবার করলেন। এখন একে দেখে চিনতে পারবে চর্যা। রং হলো ছবি। হলুদের ওপর কালো ডোরাকাটা মস্ত বাঘ আর তার ল্যাজে সবুজ ফ্রক পরা মেয়েটা। চুলে ঝুঁটিও আছে মেয়ের। রিবন কমলা।
আর্টিস্টের ছবি আঁকা শেষ হলো আর চর্যা ঘুম থেকে উঠল। ভেতরের ঘরের দরজায় তাকে দেখে আর্টিস্ট বললেন, ‘চর্যা, আম্মু।’
তারপর আর্টিস্ট যা ভেবেছিলেন, চর্যা এই ঘরে ঢুকে ছবিটা দেখল, তার চোখ এমনিই বড় বড়, সেই চোখ আরও বড় করে বলল, ‘এ কী!’
আর্টিস্ট বললেন, ‘কী, আম্মু?’
‘এটা কার ছবি? বাঘের ল্যাজে?’
‘তুমি বলো কে?’
‘নীলিমা না?’
দরজা-দাইয়ের নাম তাহলে নীলিমা। আর্টিস্ট বললেন, ‘হ্যাঁ, আম্মু। তোমাকে খুঁজতে এসেছিল নীলিমা। আমাকে কী বলল, জানো?’
‘কী?’
‘বলল, আব্বু।’
‘উঁ।’
একটুও আশ্চর্য হলো না চর্যা। বড় চোখ আরও বড় করল না। বিষয়টা কী? আর্টিস্ট বললেন, ‘ছোটমানুষ তো। ভুল করে ডেকে ফেলেছে মনে হয়।’
চর্যা বলল, ‘না, আব্বু।’
আশ্চর্য হলেন আর্টিস্ট। তাঁর চোখ তাঁর মেয়ের মতো বড় বড় না, তাই তেমন বড় করতে পারলেন না। না, আব্বু, মানে? নীলিমা আব্বু ডাকবে কেন আর্টিস্টকে? আশ্চর্য আর্টিস্ট হাসিমুখে বললেন, ‘আমি কি তার আব্বু, আম্মু?’
‘আমার তো আব্বু।’ চর্যা বলল। আর্টিস্ট ভাবলেন তাঁর মেয়েটা কি ধরতে পারছে না বিষয়টা? না পারার কথা তো নয়। এই বয়সেই যথেষ্ট বুদ্ধিমতী সে।
বুদ্ধিমতী নিজের থেকেই বলল, ‘আমিও তো আব্বু ডাকি তার আব্বুকে।’
‘কার আব্বুকে?’
‘নীলিমার আব্বুকে। সুফলা, অমি, স্নিগ্ধার আব্বুকে।’
বলছে কী মেয়ে? এ আবার কী রকমের কথা?
মেয়ে বোধহয় বাপের অবস্থা বুঝল। বলল, ‘কেন, আম্মু তোমাকে বলেনি? আমরা তো সবাই আব্বু আম্মু ডাকি আমাদের আব্বু আম্মুদের।’
‘তাই নাকি? তোমার আম্মুকে আম্মু ডাকে তারা?’
‘হ্যাঁ-এ-এ-এ! আমিও আম্মু ডাকি তাদের আম্মুদের।’ বলে চর্যা ফিক করে হাসল। শুনে, দেখে, আর্টিস্ট কী ভাবলেন? কী সর্বনাশ! না। আর্টিস্ট ভাবলেন, আরে! দারুণ ব্যাপার তো!
আজ রোববার। আর্টিস্টের ডে-অফ। সকালে উঠে পত্রিকা পড়ে মাত্র ছবি আঁকতে বসেছেন। ছোটদের একটা গল্পের ছবি আঁকছেন। এই গল্প ছাপা হবে পত্রিকায়। গল্পে একটা মজার বাঘ আর একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। তারা বন্ধু। আর্টিস্ট প্রথমে পেনসিলে ড্রয়িংটা করলেন, বাঘের ল্যাজে বসে আছে মেয়েটা। এবার রঙিন করতে হবে এদের। মোমরঙে না জলরঙে? আর্টিস্ট ঠিক করলেন জলরঙে করবেন। সেই মতো জলরঙের বাক্স থেকে কমলা আর হলুদ টিউবটা নিলেন। কালো, সবুজ, নীল এসবও লাগবে। তবে পরে। আগে হলুদ রং করবেন বাঘকে। কমলা রং হবে মেয়েটার ফ্রকে।
চর্যার পান্না ফুফুমণি এক কাপ চা দিয়ে গেলেন আর্টিস্টকে। একটু আগে চর্যার আম্মু বের হয়ে গেছেন অফিসে। চর্যা তার দাদুবুড়ির সঙ্গে ঘুমাচ্ছে।
একটা কাক ডাকল, কা! কা! কা!
আর্টিস্টের মনে হলো, ‘চা! চা! চা!’
আর্টিস্ট চায়ে চুমুক দিলেন এবং পেনসিলের ড্রয়িংটা দেখলেন। চর্যা উঠে এই ছবিটা দেখবে। বাঘের ল্যাজে বসা মেয়েটাকে দেখবে। দেখে...? আর্টিস্ট আর চিন্তা করতে পারলেন না, কেউ টোকা দিল ফ্ল্যাটের দরজায়। টুক টুক টুক! টুক টুক টুক! কলবেল আছে দরজায়। টোকা দিচ্ছে কেন তাহলে? নাকি কারেন্ট নেই? না আছে। ফ্যান চলছে ঘরে। তবে? আর্টিস্ট বললেন, ‘কে?’
উত্তর এল, ‘আমি।’
ছোট্ট কেউ।
আর্টিস্ট বললেন, ‘ও, দাঁড়াও।’
দরজা খুলে আর্টিস্ট যাকে দেখলেন, সম্ভবত চর্যা-বাহিনীর ক্ষুদ্রতম সদস্য ইনি। কলবেলের সুইচের নাগাল পান না। তিনতলা কি চারতলার বাচ্চা। সবুজ রঙের ফ্রক, চুলে ঝুঁটি। রিবনের রং কমলা। চোখে অল্প ঘুম আছে এখনো। আর্টিস্টকে দেখে বললেন, ‘আব্বু!’
তাকে আব্বু ডাকছে? আর্টিস্ট ভাবলেন। তাকেই ডাকছে। আবার বলল, ‘আব্বু, দরজা কই?’
‘দরজা? এই তো।’ আর্টিস্ট বললেন।
‘না, দরজা। দরজা কই, আব্বু?’
কী মুশকিল! দরজা কই এখন কে বোঝায় একে? আর্টিস্ট বললেন, ‘তুমি আগে ভেতরে এসে বসো!’
‘দরজা কি ঘুমায়, আব্বু?’
ও-ও-ও-ও-ও! দরজা! এতক্ষণে বুঝলেন আর্টিস্ট। দরজা হলো চর্যা। হাসি পেলেও কোনো রকমে হাসি আটকে রেখে আর্টিস্ট বললেন, ‘হ্যাঁ, দরজা তো ঘুমায়, আম্মু। তুমি বসো আমি দরজাকে ডেকে দিই।’
‘না।’
‘ডাকব না?’
‘না।’
‘না? কেন?’
‘না, আমি আবার আবেবা। দাই, আব্বু।’
আবেবা মানে আসব। দাই, যাই।
আর্টিস্ট বললেন, ‘ঠিক আছে, আম্মু। দরজা উঠলে ওকে আমি বলব। নাকি তুমি একটু বসবে? আমি একটা বাঘের ছবি আঁকছি, দেখবে?’
‘না, দাই।’
চলে গেলেন। দরজা বন্ধ করে আর্টিস্ট হাসলেন। দরজা, দাই। তবে রিনরিনে গলা বাচ্চাটার! আবার তাকে ডাকল কিনা আব্বু!
পরের আধঘণ্টা ধরে আর্টিস্ট ছবিটা আঁকলেন। ছোট্ট মেয়েটার ড্রয়িং আবার করলেন। এখন একে দেখে চিনতে পারবে চর্যা। রং হলো ছবি। হলুদের ওপর কালো ডোরাকাটা মস্ত বাঘ আর তার ল্যাজে সবুজ ফ্রক পরা মেয়েটা। চুলে ঝুঁটিও আছে মেয়ের। রিবন কমলা।
আর্টিস্টের ছবি আঁকা শেষ হলো আর চর্যা ঘুম থেকে উঠল। ভেতরের ঘরের দরজায় তাকে দেখে আর্টিস্ট বললেন, ‘চর্যা, আম্মু।’
তারপর আর্টিস্ট যা ভেবেছিলেন, চর্যা এই ঘরে ঢুকে ছবিটা দেখল, তার চোখ এমনিই বড় বড়, সেই চোখ আরও বড় করে বলল, ‘এ কী!’
আর্টিস্ট বললেন, ‘কী, আম্মু?’
‘এটা কার ছবি? বাঘের ল্যাজে?’
‘তুমি বলো কে?’
‘নীলিমা না?’
দরজা-দাইয়ের নাম তাহলে নীলিমা। আর্টিস্ট বললেন, ‘হ্যাঁ, আম্মু। তোমাকে খুঁজতে এসেছিল নীলিমা। আমাকে কী বলল, জানো?’
‘কী?’
‘বলল, আব্বু।’
‘উঁ।’
একটুও আশ্চর্য হলো না চর্যা। বড় চোখ আরও বড় করল না। বিষয়টা কী? আর্টিস্ট বললেন, ‘ছোটমানুষ তো। ভুল করে ডেকে ফেলেছে মনে হয়।’
চর্যা বলল, ‘না, আব্বু।’
আশ্চর্য হলেন আর্টিস্ট। তাঁর চোখ তাঁর মেয়ের মতো বড় বড় না, তাই তেমন বড় করতে পারলেন না। না, আব্বু, মানে? নীলিমা আব্বু ডাকবে কেন আর্টিস্টকে? আশ্চর্য আর্টিস্ট হাসিমুখে বললেন, ‘আমি কি তার আব্বু, আম্মু?’
‘আমার তো আব্বু।’ চর্যা বলল। আর্টিস্ট ভাবলেন তাঁর মেয়েটা কি ধরতে পারছে না বিষয়টা? না পারার কথা তো নয়। এই বয়সেই যথেষ্ট বুদ্ধিমতী সে।
বুদ্ধিমতী নিজের থেকেই বলল, ‘আমিও তো আব্বু ডাকি তার আব্বুকে।’
‘কার আব্বুকে?’
‘নীলিমার আব্বুকে। সুফলা, অমি, স্নিগ্ধার আব্বুকে।’
বলছে কী মেয়ে? এ আবার কী রকমের কথা?
মেয়ে বোধহয় বাপের অবস্থা বুঝল। বলল, ‘কেন, আম্মু তোমাকে বলেনি? আমরা তো সবাই আব্বু আম্মু ডাকি আমাদের আব্বু আম্মুদের।’
‘তাই নাকি? তোমার আম্মুকে আম্মু ডাকে তারা?’
‘হ্যাঁ-এ-এ-এ! আমিও আম্মু ডাকি তাদের আম্মুদের।’ বলে চর্যা ফিক করে হাসল। শুনে, দেখে, আর্টিস্ট কী ভাবলেন? কী সর্বনাশ! না। আর্টিস্ট ভাবলেন, আরে! দারুণ ব্যাপার তো!
No comments