চরাচর-নদ-নদীর অস্তিত্ব সংকট by আজিজুর রহমান

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিবেশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে নদী, উপনদী ও শাখা নদী মিলিয়ে মোট নদ-নদীর সংখ্যা ২৩০টি। তবে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক মতপার্থক্য। স্থানীয়ভাবে মোট ৪২০টি নদ-নদীর হিসাব পাওয়া গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো অনেক বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন নদী গবেষকরা।


নদী নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিজিআইএস) হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ২০০টি। দেশের নদ-নদীগুলোর পানি প্রবাহ দ্রুত কমে যাচ্ছে। অনেক নদ-নদী এখন মৃতপ্রায়। একে একে মরে যাচ্ছে এসব নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা গেছে, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ড্রেজিংয়ের অভাবে দেশের অধিকাংশ নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পলি জমে গত কয়েক বছরে দেশের ১৭টি নদ-নদী সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আরো আটটি নদী খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এককালের খরস্রোতা বর্তমানে মৃত এই ১৭টি নদ-নদী হচ্ছে- কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা, রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ভুবনেশ্বর, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ও এর শাখা বরাক, শরীয়তপুরের পালং, খুলনার হামকুড়া, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুড়ি নদী, সাতক্ষীরার মরিচাপ, যশোরের হরিহর ও মুক্তেশ্বরী, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর বামনী, বগুড়ার মানস, নাটোর-পাবনার বড়াল ও চিকনি, কুষ্টিয়ার হিসনা, রাজশাহী-নাটোরের মুসা খান এবং কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-যশোর-ঝিনাইদহ-খুলনা-বাগেরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব। অন্য যে আটটি নদ-নদী মৃত্যুপথে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়-নীলফামারী-রংপুর-বগুড়া-সিরাজগঞ্জের করতোয়া, পাবনা-মানিকগঞ্জ-ঢাকা-মুন্সীগঞ্জের ইছামতি, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-মাগুরা-নড়াইল-পিরোজপুরের কালিগঙ্গা, কুষ্টিয়া-মাগুরা-ঝিনাইদহ-ফরিদপুর-মাদারীপুরের কুমার, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের চিত্রা, যশোর-খুলনার ভদ্রা, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী এবং নড়াইলের চিত্রা।
নদ-নদীগুলোতে অবাধ পানি প্রবাহের ওপর নির্ভর করছে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সেচ, কৃষিকাজ পরিচালনা, মৎস্য আহরণ, নৌ চলাচল, বাণিজ্য ও শিল্পসহ অর্থনীতির মূল কর্মকাণ্ড। তাই নদ-নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.