প্রযুক্তির নতুন ছোঁয়ায় স্যামসাং by সাইদুজ্জামান

ব্যাংকক বিমানবন্দরে নেমেই পাওয়া গেল অর্কিড শুভেচ্ছা। আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো অর্কিড। হাতে বেমানান লাগছে। অতঃপর তা লাগিয়ে দেওয়া হলো বুকপকেটে। বিমানবন্দরে এসেছিলেন স্যামসাংয়ের দুজন কর্মী। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘স্যামসং ফোরাম ২০১২’।


স্টারকম বাংলাদেশের সমন্বয়ে আমাদের ব্যাংকক যাত্রা। আর আমন্ত্রণ স্যামসাংয়ের। স্টারকমের পক্ষে আছেন মো. আহমেদুন ফায়েজ। স্যামসাংয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন শায়লা পারভীন। ফুরফুরে মেজাজেই আমরা যার যার লাগেজ সংগ্রহে ব্যস্ত। আমরা সবাই যার যার লাগেজ পেলাম, কিন্তু বাংলাভিশনের বদরুল আলম নাবিলের লাগেজ নেই, নেই তো নেই-ই। কিছুতেই আর তার হদিস করা গেল না। অতঃপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ। নাবিলের মন খারাপ! লাগেজ হারানোর কারণে বিমানবন্দরে বাড়তি দেড় ঘণ্টা ব্যয়। এ কাহিনি গত ১৭ মার্চ রাতের।

পরের দিনের কথা
‘আমার টেলিভিশন আমার কথা শোনে। আমার টেলিভিশন আমাকে বোঝে।’ এমনটি বলছিলেন স্যামসাংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী বি ডি পার্ক। ‘টেলিভিশন সুইচ অন অথবা টেলিভিশন সুইচ অফ’ এমন উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশন চালু হয়ে যাবে অথবা বন্ধ হয়ে যাবে। দূর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (রিমোট কন্ট্রোলার) ঝামেলাও আর থাকছে না। টেলিভিশন চলবে মুখের কথায়। কণ্ঠের মাধ্যমে টেলিভিশন চালু করা যাবে, বন্ধ করা যাবে। শুধু তা-ই নয়, হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বা নাড়াচাড়ায় চ্যানেল পরিবর্তন ও টেলিভিশনের ভলিউম বাড়ানো-কমানো যাবে।
এমন উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শন হলো ১৮ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। ব্যাংকক কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী আয়োজনে স্যামসাংয়ের নতুন পণ্যের প্রদর্শন, পণ্যবিষয়ক সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদির আয়োজন করা হয় স্যামসাং ফোরাম ২০১২-এ। স্যামসাংয়ের নতুন পণ্য সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করাই ছিল এই ফোরামের প্রধান উদ্দেশ্য। সার্কভুক্ত দেশের মুদ্রণও ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা এই ফোরামে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সাতজন সাংবাদিক এই সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে স্যামসাংয়ের কর্মকর্তারা বলেন, স্যামসাং নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তির সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। স্যামসাং সব সময় একধাপ এগিয়ে থাকতে চায়। স্যামসাং এগিয়ে আছে।
সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে ওপরের বিষয়গুলো জানা হলো। এর পরপরই স্যামসাংয়ের পণ্য প্রদর্শন শুরু হয়।

স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব রেঞ্জ
এর পর্দা সমতল ও অতি উজ্জ্বল। এটি চালানোও অতি সহজ। যেকোনো ফরম্যাটের ভিডিও পর্দা জুড়ে (ফুলস্ক্রিন) দেখা যাবে।অনেক দূর থেকে শব্দ ধারণে সক্ষম।

ওয়াই-ফাই স্মার্ট ক্যামেরা
এতে রয়েছে ২১ এক জুম লেন্স। অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে উঁচু পর্বতের একদল আরোহীর ছবি তোলারও ক্ষমতা রাখে এই ক্যামেরা। পর্দাকে তিন ভাগে ভাগ করে একই সঙ্গে তিনটি ভিন্ন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা যাবে। রয়েছে ক্যামেরার উভয় পাশেই ডিসপ্লে।

রেফ্রিজারেটর
৮৯০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিজ। সাধারণ ফ্রিজের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম শব্দ ও ২৬ শতাংশ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এটি দুই দরজাবিশিষ্ট।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র
এটি বেশ ‘বুদ্ধিমান’। এই এয়ার কন্ডিশনারটি ৩১ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে নিজে থেকেই চারপাশের আবহাওয়া বুঝে পরিবেশ গরম বা ঠান্ডা রাখবে। এতে রয়েছে ভাইরাস ডক্টর নামের এক ধরনের মেকানিজম যা বাতাসবাহিত ক্ষতিকর উপাদান; যেমন— ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙাস ইত্যাদি ধ্বংস করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে।

ওয়াশিং মেশিন
৩০ শতাংশ পানি কম খরচ করে বেশি কাপড় ধোয়া যায়। কোনো ঘর্ষণ হয় না বলে কাপড়ের ক্ষতি হয় না।

প্রিন্টার
তার ছাড়া মুঠোফোন থেকেও প্রিন্ট করা যাবে।

নোটবুক
পাতলা ও দৃঢ় ল্যাপটপ কম্পিউটার এটি।পর্দায় কোনো আলোর প্রতিফলন হয় না। সে কারণে যেকোনো জায়গায় বসে কাজ করা যাবে।

এলইডি মনিটর
জীবন্ত ছবি দেখা যাবে। প্রশস্ত অনভূমিক এবং উল্লম্ব উভয়ভাবেই দেখা যাবে।

মি. বি ডি পার্ক (যিনি স্যামসাং ইন্ডিয়ার পরিচালকও বটে) বলেন, ‘এশিয়ার মানুষের কল্যাণের স্বার্থে শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য উন্নত রাখার জন্য স্যামসাং কাজ করে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ উন্নত প্রযুক্তির সেবায় স্যামসাং কর্মরত। এই সেবাকে আমরা পৌঁছে দিতে চাই সারা বিশ্বে।’
ব্যাংকক কনভেনশন সেন্টারে আরও বক্তব্য দেন স্যামসাংয়ের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা রাজকুমার রিশি, রণজিৎ যাদব, উদয় ভাট ও মহেষ কৃষ্ণান।
দুপুরের খাবারের পর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো চাউপ্রয়া নদীর ধারে। রাতের খাবারসহ নৌভ্রমণ। সাজানো-গোছানো নৌযান। সামনের ডেকে মঞ্চ। গান-বাজনার ব্যবস্থা। চাউপ্রয়ার দুই পারে ব্যাংকক শহর। আলোকোজ্জ্বল দৃশ্য। নদী দেখা, শহর দেখা, অসংখ্য মন্দির দেখা। নৌযানে পা রাখতেই থাই জাতীয় পোশাক পরা দুই নারী আমাদের করজোড়ে অভিবাদন জানালেন। ‘সোয়াদিকুন’, অর্থাৎ স্বাগতম।
চলতে শুরু করল আমাদের লঞ্চ। দুই পারের অসাধারণ সব দৃশ্য! প্রায় নিষ্পলক আমাদের চোখ। ক্লিক ক্লিক করতে থাকে আমাদের ক্যামেরা। এ এক অনন্য ব্যাংকক। দুই পারের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা আর সঙ্গে চলতে থাকে খানাপিনা। স্যামসাংয়ের এক কর্মকর্তা মঞ্চের সামনে এসে অতিথি সাংবাদিকদের স্বাগত জানালেন। বললেন, ‘আসুন, সবাই মিলে আজকের এই সময়টাকে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করি।’ অবশ্য তার আগেই সবার আনন্দ উপভোগ শুরু হয়ে গেছে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা আনন্দময় নৌভ্রমণ শেষে আমরা রাত ১১টায় আবার শহরে পা দিলাম।
১৯ মার্চ। সিয়াম ক্যাম্প পেং স্কি হোটেলে সকালের নাশতা করছি। দুপুরের মধ্যে স্যামসাং সম্মেলনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকেরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। ও, ভালো কথা। সাংবাদিক নাবিলের লাগেজ পাওয়া গেছে। গত রাতে তাঁর লাগেজ এসে পৌঁছেছে হোটেলে। লাগেজটি ঢাকাতেই থেকে গিয়েছিল। জানা গেল, নেপাল এয়ারলাইনসে ওটি পৌঁছেছে ব্যাংককে।
সাংবাদিক সংগীতা চেনগাপ্পা এসে ইংরেজিতে বলেন, ‘আমি কিন্তু কিছু কিছু বাংলা জানি!’
‘ভেরি গুড। শুনি তোমার বাংলা—।’
সংগীতা প্রায় স্পষ্ট উচ্চারণে বলে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

No comments

Powered by Blogger.