বিমান বাংলাদেশ-ভাঙা ডানা নিয়ে ওড়া যায় না
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি আদায়ের আন্দোলনে নতুন গতি আনতে 'বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদ' ১৬ এপ্রিল থেকে ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। বিমানের 'পাইলট থেকে সর্বস্তরের কর্মীদের' দাবি কতটা যৌক্তিক কিংবা কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি ঠিক কি-না, সে প্রশ্ন করাই যায়।
কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান মঙ্গলবার স্বীকার করেছেন, 'বিমানের ব্যবস্থাপনার মান আরও উন্নত হওয়া উচিত।' সমকাল সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার জানিয়েছে, ৫ ফেব্রুয়ারি 'বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদের' আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন আহমেদ একদিনের জন্যও অফিস করেননি। বিমান একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং আইনবিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পরিচালনা পর্ষদের। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম অস্থিরতা চলছে, সেখানে চেয়ারম্যান টানা দুটি মাস কী করে অনুপস্থিত থাকেন? এ ঘটনা থেকে তার নৈতিক অবস্থানের দুর্বলতা কি প্রকটভাবে ধরা পড়ে না? তিনি বলতে পারেন, 'কিছুসংখ্যক স্বার্থান্বেষী' ব্যক্তি জাতীয় পতাকাবাহী গৌরবের প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ বিরাজ করলে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে তো তারই নেতৃত্ব প্রদানের কথা। কিন্তু তিনি যে অফিসেই গরহাজির থাকছেন! বিমান ভালোভাবে চলছে না, সেটা সর্বজনবিদিত। সরকার আরেকটি নতুন ও বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য হন্যে হয়ে জমি খুঁজছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানটির যে অবস্থা তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার কি কেবল অন্য দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসার কথাই ভাবছে? উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে 'গ্রাউন্ডেড' শব্দ বহুল ব্যবহৃত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ শব্দের প্রতীকী ব্যবহার খোদ বিমান বাংলাদেশ সম্পর্কেও হয়ে থাকে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে প্রতিষ্ঠানটি দশকের পর দশক একচেটিয়া বাজারের কর্তৃত্ব ভোগ করেছে, কিন্তু এ সুযোগকে সফলতার সঙ্গে কাজে লাগানো যায়নি। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার অবাধ সুযোগ দিয়ে কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ প্রদানের পরও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। কমানো যায়নি অনিয়ম-দুর্নীতি। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ডানা ভেঙে অনাগত সময় পর্যন্ত গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকবে কি-না_ এমন শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রতিষ্ঠানের সবাই মিলে বিমানের বিঘ্নহীনভাবে আকাশে ওড়া এবং দেশ-দেশান্তরে ছুটে চলা নিশ্চিত করায় সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। 'বিমান কোম্পানি বিধায় সরকারের কিছু করার নেই'_ এমন মত আঁকড়ে থাকার যুক্তি নেই। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান যে কর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন, তাতে সন্দেহ করা চলে না। তিনি পদে বহাল, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না_ এমনটি 'সাধারণের' ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা যায় না। নিশ্চয়ই তিনি মনে করছেন, তার খুঁটির জোর শক্ত। আর এখানেই সরকারের উচ্চমহলের সক্রিয়তা কাঙ্ক্ষিত। বিমানের যেসব কর্মী আন্দোলন করছেন, তাদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠান ও দেশের সার্বিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখে চলতে হবে। কর্মসূচি প্রদানের ক্ষেত্রে তারা নমনীয় হবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে সরকারকেই।
No comments