শিক্ষার্থী নির্যাতন-হিতোপদেশে সুফল মিলছে না

পরপর দু'দিন সমকালের লোকালয় পাতায় শিক্ষার্থী নির্যাতনের দুটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা স্কুলে এক শ্রেণীর শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার সাক্ষ্য বহন করে। দুটি ঘটনাতেই শিক্ষকের নির্যাতনে শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শেরপুরের খন্দকারটোলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের মারের ফলে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতী খাতুনের হাত


ভেঙেছে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অপর ঘটনায় সিলেটের কাজীটুলার মক্তবগলির কাজী জালাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ২০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছেন। এই শিক্ষককে ইতিপূর্বে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ৩ বার বদলি করা হয়। কিন্তু তার শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভ্যাসে পরিবর্তন হয়নি। এসব ঘটনায় স্পষ্ট যে, সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তরিক হলেও এবং এ ব্যাপারে শিক্ষকদের ওপর নির্দেশনা জারি করলেও শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ করা যায়নি। তাই এ ব্যাপারে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যানুরাগী এবং শিক্ষা, মনোরোগ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের নতুন করে সম্মিলিতভাবে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে সামাজিক সচেতনতামূলক আন্দোলনও জরুরি। যেসব শিক্ষক বদলি বা তিরস্কার পাওয়ার পরও পুনরায় শিক্ষার্থী নির্যাতন করেন, তাদের ব্যাপারে কাউন্সেলিং ভিন্ন ধরনের হওয়া উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত জাতীয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করে চিন্তন বৈঠকের আয়োজন এবং সেখান থেকে এ ধরনের প্রবণতা রোধে সমন্বিত ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা। বিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে এবং এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই পরিশীলিত করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষক সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বের কোথাও 'পিটিয়ে গাধাকে মানুষ করার' ধারণা গ্রহণযোগ্য হয় না। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রায়শই উদ্ধত আচরণ করে বটে, কিন্তু তার সমাধান মারধরে নেই। এটাও মনে রাখতে হবে যে, সংবাদপত্রে কোনো খবর প্রকাশ হলেই কেবল শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা আলোচনায় আসে। এর বাইরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে এবং এটা বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.