রাজধানীজুড়ে নেতা-কর্মীদের আত্মপ্রচারের মহোৎসব by সেলিম জাহিদ
পোস্টার-ব্যানার দিয়ে প্রচারমূলক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা কোনো রকম নিয়মশৃঙ্খলা মানছেন না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে একেবারে পেছনের সারির নেতা, এমনকি কোনো কোনো কর্মী পর্যন্ত ইচ্ছেমতো পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে মূলত আত্মপ্রচার করছেন।
রাজপথসহ অলিগলিতে এসব প্রচারসামগ্রী সৌন্দর্যহানিও করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার বিভাগ থাকলেও খুব কমসংখ্যক পোস্টার-ব্যানার বা ফেস্টুনই সরাসরি দলের প্রচার বিভাগ থেকে কিংবা এর অনুমোদন নিয়ে করা হচ্ছে। মন্ত্রী-সাংসদ এবং দলের কেন্দ্রীয়সহ নানা পর্যায়ের নেতারা নানা অছিলায় দলীয় প্রধানকে অভিনন্দন জানাতে অহরহ পোস্টার-ব্যানার করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রায়ই এসব পোস্টার-ব্যানারের উদ্দেশ্য থাকে নিজের প্রভাব জাহির করে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করা।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সূত্র জানায়, দলের গঠনতন্ত্রে বাঁধাধরা বিধিনিষেধ না থাকায় প্রান্তিক কর্মীরাও নিজের নাম-ছবি দিয়ে অরুচিকর, অনেক ক্ষেত্রে হাস্যকর পোস্টার প্রকাশ করছেন।
কয়েকটি নমুনা: রাজধানীর তেজগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় গত ১৭ মার্চ থেকে একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে। জনৈক জামিনুল হক সেন্টু একটি শিশু কোলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার যুগল ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপেন। পোস্টারে লেখা: ‘জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার—আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানান, জামিনুল হক আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। তাঁর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তেজগাঁও থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে নেতাগো লগে হেও লাইনে দাঁড়াইছিল। ছোট বাচ্চা দেখে প্রধানমন্ত্রী ইকটু আদর করছেন। বাস, হেই ফটু খিচা (ছবি তুলে) পোস্টার করি হমানে লাগাইছে।’
মিরপুরের মণিপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল মোল্লা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে এ ধরনের এক পোস্টার লাগিয়েছেন। পোস্টারে লেখা হয়, ‘শিক্ষাঙ্গনে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন’।
এ ব্যাপারে ইসমাইল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ (মনিপুর স্কুল) টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখার জন্যই পোস্টার করেছি।’
ইসমাইল জানান, তিনি নিজে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন।
পোস্টার-ফেস্টুনে রাজধানীর উত্তর এলাকা ছেয়ে ফেলেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির সভাপতি মামুন হাসান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযুক্তি এত সহজ হয়ে গেছে যে, এটি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। আমরা দলের নীতি-আদর্শ এবং স্বার্থবিরোধী কিছু যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর শাখা প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুস সালাম প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আত্মকেন্দ্রিক প্রচারকে ‘পতিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংক্রমণ’ বলে আখ্যা দেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাজনীতিতে বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের প্রচার অন্যায় এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী।’
১২ মার্চ ও নয়াপল্টন: ১২ মার্চ ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে বিএনপি ও দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ছোট নেতাদের প্রচারের হিড়িক পড়ে রাজধানীতে। নানা রঙের ডিজিটাল ব্যানারে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের ভবনগুলোর চেহারা প্রায় সিনেমা হলে রূপ নেয়।
বিএনপির নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘১২ মার্চের মহাসমাবেশ উপলক্ষে পুলিশ আমাদের প্রচারই করতে দেয়নি। তখন আমরা প্রচারের বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।’
ডিসিসি নির্বাচন এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ: ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারযুদ্ধ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক এ ধরনের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব। ঢাকা উত্তর এলাকা থেকে মেয়র পদপ্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নামে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অসংখ্য নেতা পোস্টার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুভাকাঙ্ক্ষীরা পোস্টার করলে মানা তো করতে পারি না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার বিভাগ থাকলেও খুব কমসংখ্যক পোস্টার-ব্যানার বা ফেস্টুনই সরাসরি দলের প্রচার বিভাগ থেকে কিংবা এর অনুমোদন নিয়ে করা হচ্ছে। মন্ত্রী-সাংসদ এবং দলের কেন্দ্রীয়সহ নানা পর্যায়ের নেতারা নানা অছিলায় দলীয় প্রধানকে অভিনন্দন জানাতে অহরহ পোস্টার-ব্যানার করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রায়ই এসব পোস্টার-ব্যানারের উদ্দেশ্য থাকে নিজের প্রভাব জাহির করে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করা।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সূত্র জানায়, দলের গঠনতন্ত্রে বাঁধাধরা বিধিনিষেধ না থাকায় প্রান্তিক কর্মীরাও নিজের নাম-ছবি দিয়ে অরুচিকর, অনেক ক্ষেত্রে হাস্যকর পোস্টার প্রকাশ করছেন।
কয়েকটি নমুনা: রাজধানীর তেজগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় গত ১৭ মার্চ থেকে একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে। জনৈক জামিনুল হক সেন্টু একটি শিশু কোলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার যুগল ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপেন। পোস্টারে লেখা: ‘জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার—আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানান, জামিনুল হক আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। তাঁর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তেজগাঁও থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে নেতাগো লগে হেও লাইনে দাঁড়াইছিল। ছোট বাচ্চা দেখে প্রধানমন্ত্রী ইকটু আদর করছেন। বাস, হেই ফটু খিচা (ছবি তুলে) পোস্টার করি হমানে লাগাইছে।’
মিরপুরের মণিপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল মোল্লা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে এ ধরনের এক পোস্টার লাগিয়েছেন। পোস্টারে লেখা হয়, ‘শিক্ষাঙ্গনে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন’।
এ ব্যাপারে ইসমাইল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ (মনিপুর স্কুল) টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখার জন্যই পোস্টার করেছি।’
ইসমাইল জানান, তিনি নিজে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন।
পোস্টার-ফেস্টুনে রাজধানীর উত্তর এলাকা ছেয়ে ফেলেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির সভাপতি মামুন হাসান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযুক্তি এত সহজ হয়ে গেছে যে, এটি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। আমরা দলের নীতি-আদর্শ এবং স্বার্থবিরোধী কিছু যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর শাখা প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুস সালাম প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আত্মকেন্দ্রিক প্রচারকে ‘পতিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংক্রমণ’ বলে আখ্যা দেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাজনীতিতে বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের প্রচার অন্যায় এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী।’
১২ মার্চ ও নয়াপল্টন: ১২ মার্চ ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে বিএনপি ও দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ছোট নেতাদের প্রচারের হিড়িক পড়ে রাজধানীতে। নানা রঙের ডিজিটাল ব্যানারে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের ভবনগুলোর চেহারা প্রায় সিনেমা হলে রূপ নেয়।
বিএনপির নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘১২ মার্চের মহাসমাবেশ উপলক্ষে পুলিশ আমাদের প্রচারই করতে দেয়নি। তখন আমরা প্রচারের বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।’
ডিসিসি নির্বাচন এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ: ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারযুদ্ধ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক এ ধরনের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব। ঢাকা উত্তর এলাকা থেকে মেয়র পদপ্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নামে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অসংখ্য নেতা পোস্টার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুভাকাঙ্ক্ষীরা পোস্টার করলে মানা তো করতে পারি না।’
No comments