ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন-তফসিল ১৫ এপ্রিলের মধ্যে by কাজী হাফিজ

আগামী ৪ এপ্রিল বুধবার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর ১৫ এপ্রিলের মধ্যে যেকোনো দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রবিবার ৪ এপ্রিলের ওই আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠকে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক,


বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই ও কোস্টগার্ড প্রধান, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে ইসি সচিবালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠুভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা তফসিল ঘোষণার আগেই এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ সংশোধিত সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে আগামী ২৯ মের মধ্যেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে রেখে ইসিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা চলবে। এরপর স্কুল-কলেজের কক্ষগুলোকে ভোটকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ২১ ও ২২ মে এ দু্ই দিন সময় লাগবে। এ অবস্থায় ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে ২৩, ২৪ অথবা ২৭ মে। ২৫ ও ২৬ মে এ দুই দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ার কারণে ইসি ভোট গ্রহণের জন্য ওই দুই দিনকে উপযুক্ত নাও মনে করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে আরো জানান, সংশোধিত সিটি করপোরেশন আইনে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত না রাখার কারণে এ নির্বাচনে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপিই এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
দুই সিটির ভোটার বৈষম্য : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে বর্তমান ভোটার ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে নারী ১০ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৩ ও পুরুষ ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬টি ওয়ার্ডে বর্তমান ভোটার ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৪। এর মধ্যে নারী সাত লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ এবং পুরুষ ৯ লাখ ১৬ হাজার ২৬০ জন। অর্থাৎ ঢাকা উত্তর সিটির ওয়ার্ডপ্রতি গড় ভোটার ৬০ হাজার ৩৮০। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ডপ্রতি গড় ভোটার ৩০ হাজার। ভোটারসংখ্যার এই ব্যাপক বৈষম্য নিয়েই এ দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে চার ওয়ার্ডে : নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকার দুই সিটির দুটি করে মোট চারটি সাধারণ ওয়ার্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। গতকাল ইসি সচিবালয় থেকে সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আগামী ২ মের মধ্যে ১০০টি এবং ১৫ মের মধ্যে এক হাজার ইভিএম সরবরাহ করতে হবে। এ সব ইভিএম ব্যবহারের জন্য এক হাজার ২০০ ব্যাটারির চাহিদাও জানানো হয়েছে।
বাজেট ৩৮ কোটি টাকা : ঢাকার এ দুই সিটির নির্বাচনের জন্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে ইসির ধারণা। ইসির প্রস্তাবিত এই বাজেটে ২০ কোটি টাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এবং পাঁচ কোটি টাকা ইভিএম ব্যবহারের জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। বাকি ১৩ কোটি টাকা খরচ হবে নির্বাচন পরিচালনার কাজে।
বিলবোর্ড-পোস্টার সম্পর্কে ব্যবস্থা তফসিল ঘোষণার পর : নির্বাচন কমিশনার মো. জাবেদ আলী নির্বাচনে আগাম প্রচারণার উদ্দেশ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড-পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, দেয়াল লিখন ও তোরণ অপসারণ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে বলেন, এর অনুলিপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছেনি। তবে তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের প্রচারণা সহ্য করা হবে না।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট রাজধানীতে আইন অমান্য করে লাগানো সব পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, দেয়াল লিখন এবং তোরণসহ বিভিন্ন প্রচারপত্র ১০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ ও উত্তর) প্রশাসককে এ আদেশ পালন করতে বলা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পরিবেশসচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.