তেল চুরি by হায়দার আলী ও দিলীপ কুমার মণ্ডল
১৪ মার্চ সকাল সোয়া ৮টা। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল রেল স্টেশন-সংলগ্ন এসও রোডে একটি দোকানের সামনে ট্যাংকলরি থেকে পাইপ দিয়ে জ্বালানি তেল নামাচ্ছেন দুই যুবক। একপর্যায়ে তাঁদের একজন হাঁক দেন- 'ওস্তাদ, মাল খালাস।' এরপর চলে যায় লরিটি। পাশেই আরেকটি লরি থেকে একই কায়দায় তরল জ্বালানি নামানো হচ্ছিল।
গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একজন উচ্চ স্বরে বলেন, 'কইরে, আইজ গরম একটু বেশি পড়ছে। দুই গ্যালন বেশি নামাইয়া রাখ।'
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল চুরি এভাবেই চলছিল প্রকাশ্যে। পদ্মা অয়েলের ডিপো থেকে তেল বোঝাই করে বের হওয়ার পর অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছিল তা। ডিপোটিকে কেন্দ্র করে পাশের এসও সড়কের দুই পাশেই দেখা গেল চোরাই তেল বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে।
এলাকাবাসী জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের পদ্মা ও মেঘনা ডিপো থেকে প্রায় ৫০০টি ট্যাংকলরি এবং ফতুল্লার পঞ্চবটির যমুনা ও মেঘনা ডিপো থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০টি ট্যাংকলরি তেল পরিবহন করে থাকে। এসব লরি থেকে প্রকাশ্যেই জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। এর সঙ্গে লরির মালিক পক্ষের লোকজন থেকে শুরু করে চালক-হেলপার ও স্থানীয় চোরাই তেলের সিন্ডিকেট জড়িত।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, এই চারটি ডিপো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। আর এতে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। এদিকে ডিজেল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল চুরি, সিস্টেম লস কিংবা অপচয়ের ফলে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে একসময়ের লাভজনক সংস্থা বিপিসিকে। অব্যাহত চুরির কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানি করা জ্বালানি তেলের মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকার জ্বালানির হিসাব নেই বলেও বিপিসি সূত্রে জানা যায়।
ট্যাংকলরি থেকে প্রকাশ্যেই তেল চুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসও রোডের মুদি ব্যবসায়ী ফজল করিম বলেন, 'আপনি কি এলাকায় নতুন আইছেন? আপনি নতুন অইলেও তেল চুরির ঘটনা এইখানে নতুন না। ডিপো শুরু হওয়ার পর থেইক্যাই এই কাজ চলতাছে। কত মানুষ দেখছি পেটের ভাত জোটাইতে পারত না, এহন হেরা কোটি টাকার মালিক। ওরা যে ক্যামনে এত টাকার মালিক অইছে, একটু খোঁজ নিয়া দেখেন।' এ আলাপচারিতার সময় পাশেই বসে ছিলেন আইলপাড়া মহল্লার শাহ আলম ও মনিরুল ইসলাম। ট্যাংকলরি থেকে তেল চুরির দৃশ্য আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তাঁদের একজন বলেন, 'ওই যে ডিব্বাওয়ালা দেখতাছেন না, ২০ থেকে ২৫ বছরের ওই রকম ডিব্বাওয়ালারা এখন গাড়ি-বাড়ির মালিক হইছে। তারা এখন সিন্ডিকেট কইরা মাসে কোটি টাকার তেল চুরি করে।'
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোদনাইল এলাকার একজন মুসল্লি কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, 'আমার লগে আসেন।' তিনি নিয়ে যান রেল স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায়। দূর থেকে একটি জায়গা দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে ফার্নেস তেলের একটি 'চোরাই হাউস' রয়েছে। ভূগর্ভস্থ এই চোরাই ট্যাংকে হাজার হাজার লিটার চোরাই তেল মজুত করে আবার ট্যাংকলরিতে করেই বাইরে বিক্রি করা হয়। শুধু গোদনাইল এলাকায় মাটির নিচের এরকম 'চোরাই হাউস' রয়েছে ৩০টিরও বেশি। এলাকাবাসী জানায়, চোরাই তেল বিক্রির দোকানকে স্থানীয়ভাবে 'পল্টি ঘর' বলা হয়। এগুলোর পাহারায় সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। লরি থেকে এসব দোকানে ৫০ লিটার থেকে হাজার লিটার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিপোর তেল বিক্রি করে গোদনাইলের ৫০ জনের বেশি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কয়েকজন তেলের পাম্প, তেলের ট্যাংকলরিসহ শত শত কোটি টাকার মালিক। এলাকাবাসী জানায়, কিছু অসাধু পাম্পের মালিকও এসব চোরাই তেল কেনে। র্যাব-পুলিশের অভিযানে সিন্ডিকেটের কেউ কেউ ধরা পড়লেও তারা একপর্যায়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনিও চুরির ঘটনার কথা কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'ট্যাংকলরিতে তেল লোড করে ডিপো থেকে চলে যাওয়ার পর অনেক সময় চালক ও হেলপাররা তেল চুরি করে এবং বিক্রি করে থাকে। ডিপোর বাইরে কিছু হলে সেই বিষয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের ডিপোতে যেন তেল চুরি না করতে পারে সেই জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ডিপোর কর্মকর্তারা তেল চুরির সঙ্গে জড়িত আছেন- এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেব। তেল চুরি ঠেকাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।'
'চুরি আমরা করি না' : লরি থেকে চোরাই তেল কিনে বিক্রি করে থাকেন- এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তাঁরা এ ব্যবসার কথা স্বীকার করলেও দায় চাপিয়ে দেন বিক্রেতাদের ওপর। ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের দোকান গোদনাইলের এসও রোডে। মুখোমুখি হলে ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তেল ট্যাংকলরি থেকে আনে না, আকাশ থেকে আনে- সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। ড্রামে কিংবা গ্যালনে করে তেল আনলে উচিত মূল্যে কিনে রাখি। আমরা নিজেরা চুরি করি না।'
চোরাই তেলের আরেক ব্যবসায়ী মো. কাশেম বলেন, 'আমরা অল্প তেলের ব্যবসা করি। আমাগো না জিগাইয়া ট্যাংকলরিতে করে হাজার হাজার লিটার তেল যারা চুরি করতাছে, হেগো যাইয়া জিগান।'
গোদনাইলের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান এখন অন্তত ১০টি ট্যাংকলরির মালিক। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁর বড়লোক হওয়ার সূত্র চোরাই তেল বিক্রি। ডিব্বায় করে তেল চুরির কারণে আতিককে আগে লোকজন ডিব্বাওয়ালা আতিক বলে ডাকত। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আতিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি বৈধভাবে তেলের ব্যবসা করেছি, এখনো করছি। কোনো চোরাই তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। তবে গোদনাইল এলাকায় অনেকেই চোরাই তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।' 'লোকজন বলে আপনি ডিব্বাওয়ালা থেকে এখন কোটি কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন, কিভাবে সম্ভব?' এ প্রশ্নের উত্তরে আতিক বলেন, 'সৎভাবে পরিশ্রম করলে অনেক কিছুই সম্ভব। মানুষের অপপ্রচারে কান দিয়েন না।'
পদ্মা অয়েলের ট্যাংকলরির চালক আহাম্মেদ হোসেন, ইসমাইল হাওলাদার ও আরিফুর রহমান বলেন, ট্যাংকলরির ভেতর কিছু তেল পড়ে থাকে এগুলো হেলপাররা ফোম দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে বিক্রি করে। তাঁদের একজন বলেন, 'এসব ছিচকে চোর না খুইজ্যা বড় বড় চোর আছে- তাগো যাইয়া ধরেন।' আজিমউদ্দিন বলেন, 'খুচরা তেল বেচাকেনা করি, কিন্তু সবাই আমাগো বিরক্ত করে। খোঁজ নিয়ে দেখেন আপনাগো মতো সাংবাদিকদেরই চোরাই তেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে।'
ধরা পড়ে, ছাড়া পায় : গত ১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় চোরাই তেলের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তিন হাজার ৩০০ লিটার তেল উদ্ধার করেন র্যাব-১১-এর সদস্যরা। ওই সময় আটক করা হয় আবদুস সালাম (৫০), ইব্রাহিম খলিল (৪৩) ও রাজীব (২৮) নামের তিন তেলচোর সদস্যকে। এদিকে গত জানুয়ারি মাসে ফতুল্লার কুতুবপুরে চোরাই তেল ব্যবসায়ী সেলিমের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ট্যাংকলরি থেকে তেল চুরির সময় হাতেনাতে সাড়ে ছয় হাজার লিটার (ডিজেল) চোরাই জ্বালানি তেলসহ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া ও চালক লিটন হাওলাদারকে আটক করা হয়। ওই সময় সেলিমের আস্তানা থেকে ১০টি খালি তেলের ড্রাম, পাঁচটি তেলের টিন এবং একটি ৫০ ফুট লম্বা মোটা পাইপ জব্দ করের র্যাব সদস্যরা।
জানা গেছে, র্যাব-১১ এ অভিযানে হাতেনাতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ৯টি মামলা করেছে। র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবু হেনা মো. মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এখানে যোগদানের পর দুটি অভিযান চালিয়েছি। সে অভিযানের একটিতে বিমানের ৩২ হাজার লিটার তেলসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং আরেকটি অভিযানে একটি ট্রাকে তেল ভর্তি ৩০টি ড্রামসহ আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।' তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে অনেকবার চোরা সিন্ডিকেটকে ধরেছি, নিজেরা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি, কিন্তু তেল কম্পানি কোনো সহযোগিতা না করায় আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসছে।'
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বলেন, 'পুলিশ কয়েকটি অভিযানে চোরাই তেলসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে এবং তারা হাজত বাস করছে। চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক আছে। চোরাই তেল ব্যবসা করছে- এমন সংবাদ পেলে যেকোনো সময় আবারও অভিযান চালানো হবে।'
ধাপে ধাপে চুরি : আমদানি করা জ্বালানি তেল নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে নারায়ণগঞ্জের চারটি ডিপোতে খালাস করার সময় থেকেই শুরু হয় চুরির মহাযজ্ঞ। প্রথমত তেলবাহী জাহাজের কর্মকর্তা ও ডিপোর ইনচার্জের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার কিংবা বাল্কহেড দিয়ে জাহাজ থেকে হাজার হাজার লিটার তেল চুরি করা হয়। ডিপো থেকে গাড়িতে তেল বোঝাইয়ের সময়ও চলে মিটার টেম্পারিং। অভিযোগ রয়েছে, ডিপোর সুপারের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অনেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা প্রতিটি গাড়িতে ১৫-২০ লিটার তেল কম দিয়ে থাকে। এ ছাড়া লরিতে বোঝাইয়ের পর রাস্তায় দোকানে বিক্রি করা হয় তেল। একেকটি লরি থেকে ৮০ লিটার থেকে ১২০ লিটার করে তেল চুরি হয়ে থাকে। কোনো কোনো লরির নিচের দিকে এক থেকে দেড় হাজার লিটার তেল অতিরিক্ত ধারণ ক্ষমতার চোরাই ট্যাংকি তৈরি করা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ৯ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকলরির পাশাপাশি ১৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার লরিও আছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ডিপোর কর্মকর্তারা ৯০০ লিটারের লরিতে মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার ৩০০ লিটার তেল সরবরাহ করেন, কিন্তু খাতা-কলমে লিখে রাখেন ৯০০ লিটার। এই বাড়তি তেল পরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
শতাধিক আস্তানা : গোদনাইল পদ্মা অয়েল কম্পানির ডিপো থেকে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ লাইন ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে চোরাই তেল কেনা-বেচার অর্ধশত আস্তানা। এর মধ্যে বর্মাশীল এলাকায় দুটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় একটি ও ঢাকা বাইপাস সড়কের কাঞ্চন এলাকায় একটি আস্তানা রয়েছে। মেঘনার ডিপোকে ঘিরেও রয়েছে এ ধরনের অনেক আস্তানা। এ ছাড়া ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের পাশে ফতুল্লা পঞ্চবটি এলাকায় যমুনা ও মেঘনা তেলের ডিপোকে কেন্দ্র করে ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের দুই পাশে চোরাই তেলের প্রায় ৩০টি দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার চারটি ডিপো এলাকায় চোরাই তেলের অনেকগুলো ভূগর্ভস্থ ট্যাংকি রয়েছে বলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
৪০ কোটি টাকার তেল গায়েব : বিপিসির একটি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩০ ব্যারেল। অথচ দেশে তেল সংগ্রহ দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪২১ ব্যারেল। এ হিসেবে লোপাট হওয়া তেলের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৯০৯ ব্যারেল। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার মতো।
সূত্র আরো জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সিংহভাগই ডিজেল। বাকি তেলের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল। বিপিসির সূত্র মতে, গত বছর আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ৩২ হাজার ২৫৭ ব্যারেলের কোনো হিসাব নেই। যার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ডিজেলের মধ্যে লোপাট হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৪২৬ ব্যারেল, যার মূল্য ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকারও বেশি। কেরোসিনের মধ্যে হিসেব নেই ৮৭৬ ব্যারেলের, যার মূল্য ৮২ লাখ ৩১ হাজার টাকারও বেশি। একইভাবে ৪৭৯ ব্যারেল অকটেনের হিসেব নেই, যার মূল্য ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৬২১ ব্যারেল ফার্নেস অয়েলের হিসেব নেই, যার মূল্য ৫১ লাখ ৬৬ হাজার টাকারও বেশি।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল চুরি এভাবেই চলছিল প্রকাশ্যে। পদ্মা অয়েলের ডিপো থেকে তেল বোঝাই করে বের হওয়ার পর অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছিল তা। ডিপোটিকে কেন্দ্র করে পাশের এসও সড়কের দুই পাশেই দেখা গেল চোরাই তেল বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে।
এলাকাবাসী জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের পদ্মা ও মেঘনা ডিপো থেকে প্রায় ৫০০টি ট্যাংকলরি এবং ফতুল্লার পঞ্চবটির যমুনা ও মেঘনা ডিপো থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০টি ট্যাংকলরি তেল পরিবহন করে থাকে। এসব লরি থেকে প্রকাশ্যেই জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। এর সঙ্গে লরির মালিক পক্ষের লোকজন থেকে শুরু করে চালক-হেলপার ও স্থানীয় চোরাই তেলের সিন্ডিকেট জড়িত।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, এই চারটি ডিপো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। আর এতে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। এদিকে ডিজেল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল চুরি, সিস্টেম লস কিংবা অপচয়ের ফলে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে একসময়ের লাভজনক সংস্থা বিপিসিকে। অব্যাহত চুরির কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানি করা জ্বালানি তেলের মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকার জ্বালানির হিসাব নেই বলেও বিপিসি সূত্রে জানা যায়।
ট্যাংকলরি থেকে প্রকাশ্যেই তেল চুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসও রোডের মুদি ব্যবসায়ী ফজল করিম বলেন, 'আপনি কি এলাকায় নতুন আইছেন? আপনি নতুন অইলেও তেল চুরির ঘটনা এইখানে নতুন না। ডিপো শুরু হওয়ার পর থেইক্যাই এই কাজ চলতাছে। কত মানুষ দেখছি পেটের ভাত জোটাইতে পারত না, এহন হেরা কোটি টাকার মালিক। ওরা যে ক্যামনে এত টাকার মালিক অইছে, একটু খোঁজ নিয়া দেখেন।' এ আলাপচারিতার সময় পাশেই বসে ছিলেন আইলপাড়া মহল্লার শাহ আলম ও মনিরুল ইসলাম। ট্যাংকলরি থেকে তেল চুরির দৃশ্য আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তাঁদের একজন বলেন, 'ওই যে ডিব্বাওয়ালা দেখতাছেন না, ২০ থেকে ২৫ বছরের ওই রকম ডিব্বাওয়ালারা এখন গাড়ি-বাড়ির মালিক হইছে। তারা এখন সিন্ডিকেট কইরা মাসে কোটি টাকার তেল চুরি করে।'
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোদনাইল এলাকার একজন মুসল্লি কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, 'আমার লগে আসেন।' তিনি নিয়ে যান রেল স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায়। দূর থেকে একটি জায়গা দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে ফার্নেস তেলের একটি 'চোরাই হাউস' রয়েছে। ভূগর্ভস্থ এই চোরাই ট্যাংকে হাজার হাজার লিটার চোরাই তেল মজুত করে আবার ট্যাংকলরিতে করেই বাইরে বিক্রি করা হয়। শুধু গোদনাইল এলাকায় মাটির নিচের এরকম 'চোরাই হাউস' রয়েছে ৩০টিরও বেশি। এলাকাবাসী জানায়, চোরাই তেল বিক্রির দোকানকে স্থানীয়ভাবে 'পল্টি ঘর' বলা হয়। এগুলোর পাহারায় সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। লরি থেকে এসব দোকানে ৫০ লিটার থেকে হাজার লিটার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিপোর তেল বিক্রি করে গোদনাইলের ৫০ জনের বেশি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কয়েকজন তেলের পাম্প, তেলের ট্যাংকলরিসহ শত শত কোটি টাকার মালিক। এলাকাবাসী জানায়, কিছু অসাধু পাম্পের মালিকও এসব চোরাই তেল কেনে। র্যাব-পুলিশের অভিযানে সিন্ডিকেটের কেউ কেউ ধরা পড়লেও তারা একপর্যায়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনিও চুরির ঘটনার কথা কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'ট্যাংকলরিতে তেল লোড করে ডিপো থেকে চলে যাওয়ার পর অনেক সময় চালক ও হেলপাররা তেল চুরি করে এবং বিক্রি করে থাকে। ডিপোর বাইরে কিছু হলে সেই বিষয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের ডিপোতে যেন তেল চুরি না করতে পারে সেই জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ডিপোর কর্মকর্তারা তেল চুরির সঙ্গে জড়িত আছেন- এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেব। তেল চুরি ঠেকাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।'
'চুরি আমরা করি না' : লরি থেকে চোরাই তেল কিনে বিক্রি করে থাকেন- এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তাঁরা এ ব্যবসার কথা স্বীকার করলেও দায় চাপিয়ে দেন বিক্রেতাদের ওপর। ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের দোকান গোদনাইলের এসও রোডে। মুখোমুখি হলে ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তেল ট্যাংকলরি থেকে আনে না, আকাশ থেকে আনে- সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। ড্রামে কিংবা গ্যালনে করে তেল আনলে উচিত মূল্যে কিনে রাখি। আমরা নিজেরা চুরি করি না।'
চোরাই তেলের আরেক ব্যবসায়ী মো. কাশেম বলেন, 'আমরা অল্প তেলের ব্যবসা করি। আমাগো না জিগাইয়া ট্যাংকলরিতে করে হাজার হাজার লিটার তেল যারা চুরি করতাছে, হেগো যাইয়া জিগান।'
গোদনাইলের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান এখন অন্তত ১০টি ট্যাংকলরির মালিক। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁর বড়লোক হওয়ার সূত্র চোরাই তেল বিক্রি। ডিব্বায় করে তেল চুরির কারণে আতিককে আগে লোকজন ডিব্বাওয়ালা আতিক বলে ডাকত। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আতিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি বৈধভাবে তেলের ব্যবসা করেছি, এখনো করছি। কোনো চোরাই তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। তবে গোদনাইল এলাকায় অনেকেই চোরাই তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।' 'লোকজন বলে আপনি ডিব্বাওয়ালা থেকে এখন কোটি কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন, কিভাবে সম্ভব?' এ প্রশ্নের উত্তরে আতিক বলেন, 'সৎভাবে পরিশ্রম করলে অনেক কিছুই সম্ভব। মানুষের অপপ্রচারে কান দিয়েন না।'
পদ্মা অয়েলের ট্যাংকলরির চালক আহাম্মেদ হোসেন, ইসমাইল হাওলাদার ও আরিফুর রহমান বলেন, ট্যাংকলরির ভেতর কিছু তেল পড়ে থাকে এগুলো হেলপাররা ফোম দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে বিক্রি করে। তাঁদের একজন বলেন, 'এসব ছিচকে চোর না খুইজ্যা বড় বড় চোর আছে- তাগো যাইয়া ধরেন।' আজিমউদ্দিন বলেন, 'খুচরা তেল বেচাকেনা করি, কিন্তু সবাই আমাগো বিরক্ত করে। খোঁজ নিয়ে দেখেন আপনাগো মতো সাংবাদিকদেরই চোরাই তেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে।'
ধরা পড়ে, ছাড়া পায় : গত ১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় চোরাই তেলের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তিন হাজার ৩০০ লিটার তেল উদ্ধার করেন র্যাব-১১-এর সদস্যরা। ওই সময় আটক করা হয় আবদুস সালাম (৫০), ইব্রাহিম খলিল (৪৩) ও রাজীব (২৮) নামের তিন তেলচোর সদস্যকে। এদিকে গত জানুয়ারি মাসে ফতুল্লার কুতুবপুরে চোরাই তেল ব্যবসায়ী সেলিমের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ট্যাংকলরি থেকে তেল চুরির সময় হাতেনাতে সাড়ে ছয় হাজার লিটার (ডিজেল) চোরাই জ্বালানি তেলসহ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া ও চালক লিটন হাওলাদারকে আটক করা হয়। ওই সময় সেলিমের আস্তানা থেকে ১০টি খালি তেলের ড্রাম, পাঁচটি তেলের টিন এবং একটি ৫০ ফুট লম্বা মোটা পাইপ জব্দ করের র্যাব সদস্যরা।
জানা গেছে, র্যাব-১১ এ অভিযানে হাতেনাতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ৯টি মামলা করেছে। র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবু হেনা মো. মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এখানে যোগদানের পর দুটি অভিযান চালিয়েছি। সে অভিযানের একটিতে বিমানের ৩২ হাজার লিটার তেলসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং আরেকটি অভিযানে একটি ট্রাকে তেল ভর্তি ৩০টি ড্রামসহ আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।' তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে অনেকবার চোরা সিন্ডিকেটকে ধরেছি, নিজেরা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি, কিন্তু তেল কম্পানি কোনো সহযোগিতা না করায় আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসছে।'
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বলেন, 'পুলিশ কয়েকটি অভিযানে চোরাই তেলসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে এবং তারা হাজত বাস করছে। চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক আছে। চোরাই তেল ব্যবসা করছে- এমন সংবাদ পেলে যেকোনো সময় আবারও অভিযান চালানো হবে।'
ধাপে ধাপে চুরি : আমদানি করা জ্বালানি তেল নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে নারায়ণগঞ্জের চারটি ডিপোতে খালাস করার সময় থেকেই শুরু হয় চুরির মহাযজ্ঞ। প্রথমত তেলবাহী জাহাজের কর্মকর্তা ও ডিপোর ইনচার্জের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার কিংবা বাল্কহেড দিয়ে জাহাজ থেকে হাজার হাজার লিটার তেল চুরি করা হয়। ডিপো থেকে গাড়িতে তেল বোঝাইয়ের সময়ও চলে মিটার টেম্পারিং। অভিযোগ রয়েছে, ডিপোর সুপারের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অনেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা প্রতিটি গাড়িতে ১৫-২০ লিটার তেল কম দিয়ে থাকে। এ ছাড়া লরিতে বোঝাইয়ের পর রাস্তায় দোকানে বিক্রি করা হয় তেল। একেকটি লরি থেকে ৮০ লিটার থেকে ১২০ লিটার করে তেল চুরি হয়ে থাকে। কোনো কোনো লরির নিচের দিকে এক থেকে দেড় হাজার লিটার তেল অতিরিক্ত ধারণ ক্ষমতার চোরাই ট্যাংকি তৈরি করা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ৯ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকলরির পাশাপাশি ১৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার লরিও আছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ডিপোর কর্মকর্তারা ৯০০ লিটারের লরিতে মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার ৩০০ লিটার তেল সরবরাহ করেন, কিন্তু খাতা-কলমে লিখে রাখেন ৯০০ লিটার। এই বাড়তি তেল পরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
শতাধিক আস্তানা : গোদনাইল পদ্মা অয়েল কম্পানির ডিপো থেকে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ লাইন ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে চোরাই তেল কেনা-বেচার অর্ধশত আস্তানা। এর মধ্যে বর্মাশীল এলাকায় দুটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় একটি ও ঢাকা বাইপাস সড়কের কাঞ্চন এলাকায় একটি আস্তানা রয়েছে। মেঘনার ডিপোকে ঘিরেও রয়েছে এ ধরনের অনেক আস্তানা। এ ছাড়া ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের পাশে ফতুল্লা পঞ্চবটি এলাকায় যমুনা ও মেঘনা তেলের ডিপোকে কেন্দ্র করে ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের দুই পাশে চোরাই তেলের প্রায় ৩০টি দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার চারটি ডিপো এলাকায় চোরাই তেলের অনেকগুলো ভূগর্ভস্থ ট্যাংকি রয়েছে বলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
৪০ কোটি টাকার তেল গায়েব : বিপিসির একটি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩০ ব্যারেল। অথচ দেশে তেল সংগ্রহ দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪২১ ব্যারেল। এ হিসেবে লোপাট হওয়া তেলের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৯০৯ ব্যারেল। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার মতো।
সূত্র আরো জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সিংহভাগই ডিজেল। বাকি তেলের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল। বিপিসির সূত্র মতে, গত বছর আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ৩২ হাজার ২৫৭ ব্যারেলের কোনো হিসাব নেই। যার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ডিজেলের মধ্যে লোপাট হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৪২৬ ব্যারেল, যার মূল্য ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকারও বেশি। কেরোসিনের মধ্যে হিসেব নেই ৮৭৬ ব্যারেলের, যার মূল্য ৮২ লাখ ৩১ হাজার টাকারও বেশি। একইভাবে ৪৭৯ ব্যারেল অকটেনের হিসেব নেই, যার মূল্য ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৬২১ ব্যারেল ফার্নেস অয়েলের হিসেব নেই, যার মূল্য ৫১ লাখ ৬৬ হাজার টাকারও বেশি।
No comments