বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৫৮ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।এ এস এম এ খালেক, বীর প্রতীক চৌকস এক বিমানযোদ্ধা এ এস এম এ খালেক ১৯৭১ সালে বৈমানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ)। ২৫ মার্চ করাচি থেকে বিমান চালিয়ে ঢাকায় আসেন।
ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড দেখে তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁঁধে। তিনি তাঁর সন্দেহের কথা সবাইকে বলেন এবং সতর্ক করে দেন। সে রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
কয়েক দিন পর ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে যোগ দেন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে। আগরতলায় থাকাকালে তাঁর দেখা হয় আরও কয়েকজন বৈমানিকের সঙ্গে। তাঁরা আলোচনা করতে থাকেন, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া যায়। সেখানে তাঁরা নানা ধরনের সাংগঠনিক কাজ করতে থাকেন।
একজন বৈমানিক হিসেবে তাঁর জন্য উপযুক্ত হচ্ছে বিমানের সাহায্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আঘাত করা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সে ব্যবস্থা হয়নি। সেপ্টেম্বরে মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব বিমান উইং গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে এ এস এম এ খালেককে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে তিনটি বিমান দেয়। এর একটি ছিল ডিসি-৩ বা ডাকোটা। এই বিমানের জন্য নির্বাচিত হন এ এস এম এ খালেক, আবদুস সাত্তার (বীর প্রতীক) এবং আবদুল মুকিত (বীর প্রতীক)।
কিলোফ্লাইট নামের অন্তরালে মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের জন্মলগ্নে যে নয়জন বৈমানিক অন্তর্ভুক্ত হন, তাঁদের ছয়জনই ছিলেন বেসামরিক বৈমানিক। বিমান চালনার অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁদের বিমানের সাহায্যে যুদ্ধ করার বা বিমান থেকে বোমা ফেলার কায়দাকানুন জানা ছিল না। সে জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে এ এস এম এ খালেক রপ্ত করেন বিমান নিয়ে যুদ্ধ করার কৌশল। বিশেষত, রাতের বেলা আধুনিক দিকদর্শন যন্ত্র ছাড়াই বিমান চালনা এবং শত্রুর রাডার ফাঁকি দিয়ে মাত্র ২০০ ফুট উচ্চতায় ওড়ার কৌশল। আধুনিক কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা যন্ত্র ছাড়া রাতের আঁধারে শুধু কম্পাসের সাহায্যে বিমান চালনার পারদর্শিতা অর্জন একজন বৈমানিকের জন্য বিরাট সাফল্য। তিনি তা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে এ এস এম এ আবদুল খালেক অপেক্ষা করতে থাকেন অভিযানে যাওয়ার। সিদ্ধান্ত হয়, ডাকোটা বিমান নিয়ে এ এস এম এ খালেকরা ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অভিযান তাঁরা করতে পারেননি। পরে ওই বিমান ব্যবহূত হয় দুর্গম ঘাঁটিতে চলাচলে বা সরঞ্জামাদি পরিবহনে। দক্ষতার সঙ্গে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বৈমানিক হিসেবে অবদান রাখায় এ এস এম এ খালেককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩০৪।
এ এস এম এ আবদুল খালেক ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্বাধীনতার পর ডাকোটা (ডিসি-৩) বিমানটি বাংলাদেশ বিমানকে দেওয়া হয়। ডাকোটা বিমান দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। সেদিন বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে এ এস এম এ খালেকসহ পাঁচজন বৈমানিক নিহত হন।
এ এস এম এ খালেকের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠিতে। বাস করতেন ঢাকার ৪৩/৪ স্বামীবাগ লেনে। তাঁর বাবার নাম মো. সোনাম উদ্দীন। স্ত্রী রমিজা খালেক। তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে।
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধে বিমানবাহিনী, শ জামান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
কয়েক দিন পর ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে যোগ দেন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে। আগরতলায় থাকাকালে তাঁর দেখা হয় আরও কয়েকজন বৈমানিকের সঙ্গে। তাঁরা আলোচনা করতে থাকেন, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া যায়। সেখানে তাঁরা নানা ধরনের সাংগঠনিক কাজ করতে থাকেন।
একজন বৈমানিক হিসেবে তাঁর জন্য উপযুক্ত হচ্ছে বিমানের সাহায্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আঘাত করা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সে ব্যবস্থা হয়নি। সেপ্টেম্বরে মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব বিমান উইং গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে এ এস এম এ খালেককে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে তিনটি বিমান দেয়। এর একটি ছিল ডিসি-৩ বা ডাকোটা। এই বিমানের জন্য নির্বাচিত হন এ এস এম এ খালেক, আবদুস সাত্তার (বীর প্রতীক) এবং আবদুল মুকিত (বীর প্রতীক)।
কিলোফ্লাইট নামের অন্তরালে মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের জন্মলগ্নে যে নয়জন বৈমানিক অন্তর্ভুক্ত হন, তাঁদের ছয়জনই ছিলেন বেসামরিক বৈমানিক। বিমান চালনার অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁদের বিমানের সাহায্যে যুদ্ধ করার বা বিমান থেকে বোমা ফেলার কায়দাকানুন জানা ছিল না। সে জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে এ এস এম এ খালেক রপ্ত করেন বিমান নিয়ে যুদ্ধ করার কৌশল। বিশেষত, রাতের বেলা আধুনিক দিকদর্শন যন্ত্র ছাড়াই বিমান চালনা এবং শত্রুর রাডার ফাঁকি দিয়ে মাত্র ২০০ ফুট উচ্চতায় ওড়ার কৌশল। আধুনিক কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা যন্ত্র ছাড়া রাতের আঁধারে শুধু কম্পাসের সাহায্যে বিমান চালনার পারদর্শিতা অর্জন একজন বৈমানিকের জন্য বিরাট সাফল্য। তিনি তা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে এ এস এম এ আবদুল খালেক অপেক্ষা করতে থাকেন অভিযানে যাওয়ার। সিদ্ধান্ত হয়, ডাকোটা বিমান নিয়ে এ এস এম এ খালেকরা ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অভিযান তাঁরা করতে পারেননি। পরে ওই বিমান ব্যবহূত হয় দুর্গম ঘাঁটিতে চলাচলে বা সরঞ্জামাদি পরিবহনে। দক্ষতার সঙ্গে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বৈমানিক হিসেবে অবদান রাখায় এ এস এম এ খালেককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩০৪।
এ এস এম এ আবদুল খালেক ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্বাধীনতার পর ডাকোটা (ডিসি-৩) বিমানটি বাংলাদেশ বিমানকে দেওয়া হয়। ডাকোটা বিমান দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। সেদিন বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে এ এস এম এ খালেকসহ পাঁচজন বৈমানিক নিহত হন।
এ এস এম এ খালেকের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠিতে। বাস করতেন ঢাকার ৪৩/৪ স্বামীবাগ লেনে। তাঁর বাবার নাম মো. সোনাম উদ্দীন। স্ত্রী রমিজা খালেক। তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে।
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধে বিমানবাহিনী, শ জামান।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments