শামুকভাঙাদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন by আ ন ম আমিনুর রহমান
নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় কদিন ক্যাম্পাসে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ঘুরতে পারিনি। তাই ২১ মার্চ আমার সহকারী কামালকে বললাম, ‘কোনো নতুন পাখি দেখেছ?’ সে বলল, ‘স্যার, কদিন ধরে বড় বড় সাদা-কালো বক দেখছি, আপনি ব্যস্ত থাকায় বলতে সাহস পাইনি।’
বিলম্ব না করে ওকে নিয়ে বের হলাম পাখি দেখতে। দুই বছর ধরেই সে এই পাখির কথা বলছে। ক্যাম্পাসের আশপাশে প্রতিবছর ৮-১০টার ঝাঁক দেখেছে। কিন্তু পরে অনেক খুঁজেও পাইনি। সম্ভবত মাংসলোলুপ পাখিশিকারিদের পেটে গেছে।
ঘণ্টা খানেক ধরে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়ালাম। ক্লান্ত হয়ে যখন দাঁড়িয়ে পড়েছি ঠিক তখনই মাথার ওপর দিয়ে বিশাল আকৃতির ১১টি পাখি উড়ে গেল। এক নজরেই চেনা গেল। পরদিন সকালে ওদের দেখলাম ধানখেতে। এরপর প্রতিদিন ওদের দিকে নজর রেখেছি। সংখ্যা ২৯টি। ক্যাম্পাসেরই বড় গাছে রাত কাটাচ্ছে। খাদ্যের জন্য চলে যাচ্ছে আশপাশের এলাকায়।
এরা হলো ‘শামুকভাঙা’ বা ‘শামুকখোল’ পাখি (এশিয়ান ওপেন-বিল স্টর্ক)। বৈজ্ঞানিক নাম anastomus oscitans. একসময় আবাসিক পাখি হিসেবে এ দেশের নদী-নালা, খালবিল বা অন্যান্য পানির উৎসের কাছে প্রচুর সংখ্যায় দেখা যেত। আমাদের সারস প্রজাতিগুলোর মধ্যে এরাই সংখ্যায় বেশি। তবে নানা কারণে বর্তমানে প্রায় ভিটেমাটিছাড়া। ছোট শামুক, সবুজ শামুক এদের প্রিয় খাবার। কিন্তু চিংড়ি, মাছ ও মুরগির খামারে এগুলোর ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে শামুকভাঙাদের খাদ্যাভাব চরমে। যদিও রাজশাহীর পুটিয়া, ফেনী এবং আরও কয়েকটি এলাকায় মাঝে মাঝে ডিম-বাচ্চা তুলতে দেখা যায়, কিন্তু চরম খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তাহীনতায় এরা সীমান্তের ওপারে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরে গেছে। বর্তমানে শীতে যে শামুকভাঙাগুলো দেখি, সেগুলো মূলত ভারত থেকে আসা।
দুই সপ্তাহ ধরে ক্যাম্পাসে শামুকভাঙার দেখা পেয়ে খুশিতে আটখানা হলেও মনের কোণে একটা শঙ্কাও বোধ করছিলাম। কারণ ৬৪-৮১ সেন্টিমিটার আকারের ও ১.৫-২.০ কেজি (পুরুষগুলো প্রায় ২.৫ কেজি) ওজনের পাখিগুলোর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দেওয়ার লোকের তো আর অভাব নেই। ক্যাম্পাসের ভেতরের এ রকম কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান আকন্দ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় ভেতরের পরিবেশ আপাতত নিরাপদ। ক্যাম্পাসে এদের খাদ্যও মোটামুটি আছে। এখন বাইরের দিকটায় একটু নিরাপত্তা দিতে পারলে হয়তো এরা এখানে টিকেও যেতে পারে। স্বভাবগত কারণেই এরা দু-তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করবে। এতখানি এলাকায় পাখিগুলোকে কে রক্ষা করবে? এসব যখন ভাবছি ঠিক তখন কামালের ফোন পেয়ে মন ভেঙে গেল।
২৯ মার্চ ভোরে পাখিগুলো ক্যাম্পাসের সীমানার বাইরে ধানখেতে খাদ্যের সন্ধানে গেলে তিনটি পাখি সেখানে পেতে রাখা ফাঁদে পড়ে। চারজন শিকারি পাখিগুলো নিয়ে যাচ্ছিল। কামাল তাদের পাখিগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। কিন্তু নির্দয় শিকারিরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাকে শাসিয়েছে। অগত্যা সে মনের দুঃখে আমাকে ফোন করে, যদি কিছু করা যায়।
একটু মাংসের লোভে প্রকৃতির এই বিরুদ্ধবাদীরা আজ যে কাজ করল ব্যক্তিগতভাবে কি তার প্রতিরোধ সম্ভব? এ জন্য দরকার গণসচেতনতা ও মাংসলোলুপ শিকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এ জন্য সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে গাজীপুরের স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনেরও সাহায্য দরকার। সবার সহযোগিতা পেলে হয়তো এই পাখিগুলোকে রক্ষা করা যেতে পারে। অন্যথায় প্রায় ভিটেমাটিছাড়া এই পাখিগুলো হয়তো একদিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে, ছবি হয়ে থাকবে কেবল বইয়ের পাতায়।
ঘণ্টা খানেক ধরে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়ালাম। ক্লান্ত হয়ে যখন দাঁড়িয়ে পড়েছি ঠিক তখনই মাথার ওপর দিয়ে বিশাল আকৃতির ১১টি পাখি উড়ে গেল। এক নজরেই চেনা গেল। পরদিন সকালে ওদের দেখলাম ধানখেতে। এরপর প্রতিদিন ওদের দিকে নজর রেখেছি। সংখ্যা ২৯টি। ক্যাম্পাসেরই বড় গাছে রাত কাটাচ্ছে। খাদ্যের জন্য চলে যাচ্ছে আশপাশের এলাকায়।
এরা হলো ‘শামুকভাঙা’ বা ‘শামুকখোল’ পাখি (এশিয়ান ওপেন-বিল স্টর্ক)। বৈজ্ঞানিক নাম anastomus oscitans. একসময় আবাসিক পাখি হিসেবে এ দেশের নদী-নালা, খালবিল বা অন্যান্য পানির উৎসের কাছে প্রচুর সংখ্যায় দেখা যেত। আমাদের সারস প্রজাতিগুলোর মধ্যে এরাই সংখ্যায় বেশি। তবে নানা কারণে বর্তমানে প্রায় ভিটেমাটিছাড়া। ছোট শামুক, সবুজ শামুক এদের প্রিয় খাবার। কিন্তু চিংড়ি, মাছ ও মুরগির খামারে এগুলোর ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে শামুকভাঙাদের খাদ্যাভাব চরমে। যদিও রাজশাহীর পুটিয়া, ফেনী এবং আরও কয়েকটি এলাকায় মাঝে মাঝে ডিম-বাচ্চা তুলতে দেখা যায়, কিন্তু চরম খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তাহীনতায় এরা সীমান্তের ওপারে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরে গেছে। বর্তমানে শীতে যে শামুকভাঙাগুলো দেখি, সেগুলো মূলত ভারত থেকে আসা।
দুই সপ্তাহ ধরে ক্যাম্পাসে শামুকভাঙার দেখা পেয়ে খুশিতে আটখানা হলেও মনের কোণে একটা শঙ্কাও বোধ করছিলাম। কারণ ৬৪-৮১ সেন্টিমিটার আকারের ও ১.৫-২.০ কেজি (পুরুষগুলো প্রায় ২.৫ কেজি) ওজনের পাখিগুলোর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দেওয়ার লোকের তো আর অভাব নেই। ক্যাম্পাসের ভেতরের এ রকম কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান আকন্দ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় ভেতরের পরিবেশ আপাতত নিরাপদ। ক্যাম্পাসে এদের খাদ্যও মোটামুটি আছে। এখন বাইরের দিকটায় একটু নিরাপত্তা দিতে পারলে হয়তো এরা এখানে টিকেও যেতে পারে। স্বভাবগত কারণেই এরা দু-তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করবে। এতখানি এলাকায় পাখিগুলোকে কে রক্ষা করবে? এসব যখন ভাবছি ঠিক তখন কামালের ফোন পেয়ে মন ভেঙে গেল।
২৯ মার্চ ভোরে পাখিগুলো ক্যাম্পাসের সীমানার বাইরে ধানখেতে খাদ্যের সন্ধানে গেলে তিনটি পাখি সেখানে পেতে রাখা ফাঁদে পড়ে। চারজন শিকারি পাখিগুলো নিয়ে যাচ্ছিল। কামাল তাদের পাখিগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। কিন্তু নির্দয় শিকারিরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাকে শাসিয়েছে। অগত্যা সে মনের দুঃখে আমাকে ফোন করে, যদি কিছু করা যায়।
একটু মাংসের লোভে প্রকৃতির এই বিরুদ্ধবাদীরা আজ যে কাজ করল ব্যক্তিগতভাবে কি তার প্রতিরোধ সম্ভব? এ জন্য দরকার গণসচেতনতা ও মাংসলোলুপ শিকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এ জন্য সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে গাজীপুরের স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনেরও সাহায্য দরকার। সবার সহযোগিতা পেলে হয়তো এই পাখিগুলোকে রক্ষা করা যেতে পারে। অন্যথায় প্রায় ভিটেমাটিছাড়া এই পাখিগুলো হয়তো একদিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে, ছবি হয়ে থাকবে কেবল বইয়ের পাতায়।
No comments