ঘরেই ঘাতক ট্রাক-দায় তো অনেকেরই
নগরে যদি আগুন লাগে দেবালয়ও যে রক্ষা পায় না, নেত্রকোনার পূর্বধলায় মা ও দুই শিশুকন্যার মর্মান্তিক প্রাণহানির মধ্য দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। প্রমাণ হলো, নিরাপত্তার বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় বড় ধরনের ফাঁক থেকে যায়। অতিরিক্ত বালুবোঝাই না থাকলেও ঘাতক ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের বসতঘরে ঢুকে ঘুমন্ত পরিবারকে চাপা দিত কি-না
এই অঘটনের পর সে প্রশ্ন তোলাই যায়। আমরা অবশ্যই চাই যে তিনটি অমূল্য প্রাণ এবং মূল্যবান সম্পদহানির জন্য দায়ী ট্রাকচালকের শাস্তি নিশ্চিত হোক। দুর্ঘটনার শিকার পরিবার যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়, তার ব্যবস্থাও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে এই কথাও সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা জরুরি যে, গৃহবধূ ও তার দুই শিশুকন্যার মর্মান্তিক মৃত্যুর দায় কেবল একজন ট্রাকচালককে শাস্তি দিয়েই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। বছরের পর বছর জারিয়া বালুঘাট থেকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক শ্যামগঞ্জের দিকে গেছে। এ ধরনের অনিয়ম যাদের দেখার কথা ছিল, তারা দায়িত্ব পালন করলে এই মৃত্যুর বোঝা আমাদের কাঁধে নিতে হতো না। সংশ্লিষ্ট সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলাচল অনুমোদিত কি-না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। খতিয়ে দেখতে হবে, অনুমতি থাকলেও সড়কটি এমন ভার বহনের উপযুক্ত ছিল না। সড়কের দুরবস্থার কারণে যদি কোনো ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তার দায় কি কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে? ঘাতক চালকের কি লাইসেন্স ছিল? আমরা জানি, রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে চলাচলকারী ভারী যানবাহনের চালকের নামমাত্র হলেও লাইসেন্স থাকে। বাকি বিশাল বাংলাদেশে এসবের বালাই নেই। স্টিয়ারিং ঘোরাতে পারলেই যে কাউকে চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়াও সর্বনাশা প্রবণতা নতুন নয়। ট্রাকটি যে মহাল থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছিল, তা কি অনুমোদিত? দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে খানিকটা বেমানান হলেও সড়কঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণের বিপদের দিকটা আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বস্তুত সার্বিক সতর্কতা ও শৃঙ্খলা ছাড়া যে নিরাপদ আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না, নেত্রকোনার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের সেই কথাই আরেকবার মনে করিয়ে দিয়ে গেল।
No comments