শ্রদ্ধাঞ্জলি-উজ্জীবিত তারুণ্য by ফরিদুর রেজা সাগর
এই আসা-যাওয়ার মাঝখানে এমন এক ঝলক দিয়ে গেল মিনার। দূর থেকে কুতুব মিনারের মাথা দেখে পর্যটক যেমন স্থানটিকে চিহ্নিত করে এগিয়ে যান, এ দেশের তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিকতাকেও সেই চিহ্ন বহুদূর থেকে দীর্ঘকাল দেখা যাববঙ্গবন্ধু এভিনিউর খাবার-দাবারের পাশে একজন হকার বসতেন। রাস্তার ওপরে।
দোকানটার একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল। বাংলাদেশ থেকে যত পত্রিকা বেরোত, সেখানে প্রায় সব ধরনের কাগজ পাওয়া যেত।
এ কথা অনেকের জানা, আমাদের মতো ছোট একটি দেশে হরেক ধরনের কাগজ বেরোয়, প্রায় ৪০০ কাগজ আছে। এদিক থেকে আমরা লক্ষ্যযোগ্য সমৃদ্ধ অনেক বছর থেকেই।
যে সময়টির কথা বলছি সে সময়ে সাপ্তাহিক, পাক্ষিকের দারুণ সময়। ছোট-বড় অনেকগুলো সাপ্তাহিক পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছিল। বেশ সকালবেলা এসে খাবার-দাবার খুলে বসতাম। তখনও এ দোকানে নাশতা বিক্রির ব্যবস্থা ছিল না। শুধু দুপুর আর রাতের খাবার। তাই সকালে থাকত ফাঁকা। লোকজনের ভিড় হতো না। সকালটায় শুধু তদারকি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করানো। রান্নাবান্নার জন্য বাজারে পাঠানো ইত্যাদি।
সকালে আমি আর সিরাজ যখন ঘর থেকে হেঁটে হেঁটে খাবার-দাবারে আসতাম, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাঠে দেখতাম ট্রেইনি সব ছেলে পুলিশ, মেয়ে পুলিশ। সবাই মার্চ করছে। ওই দৃশ্য দেখে উৎসাহিত হতাম মনে মনে।
তারা যদি এত সকালে উঠে অনুশীলন করে তবে আমি কেন ভোরে উঠতে পারব না? কেন রেডি হয়ে সকাল সকাল দোকানটায় এসে বসব না? ৮টায় এসে আধঘণ্টার মধ্যে কাঁচা খাবার কেনানো, রান্নার ব্যবস্থায় যাওয়া, পরিচ্ছন্নতা, আগের রাতের বাকি হিসাব মেলানোর কাজ_ সব শেষ হয়ে যেত। তারপর তো ১২টা পর্যন্ত মানুষজনের ভিড়ভাটার জন্য প্রতীক্ষা। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের অখণ্ড অবসর। এই সময়টা পার করার জন্য আমার ভরসার জায়গা ছিল কালাম হকার। তিনি তার পাশের পত্রিকার দোকান থেকে কাগজ পাঠাতেন। দৈনিক থেকে শুরু করে যাবতীয় ম্যাগাজিন। সযত্নে ভাঁজ রক্ষা করে প্রায় সব কাগজই গোগ্রাসে পড়তাম। দৈনিক। সাপ্তাহিক। পাক্ষিক। মাসিক। কাগজের জগতের সোনালি সময় তখন। প্রায় প্রতি সপ্তায় কিছু না কিছু নতুন কাগজ বাজারে আসছে। সেই সময়টায় একদিন চোখ আটকে গেল একটা নতুন পত্রিকায়।
সাপ্তাহিক বিচিন্তা, যায়যায়দিনের মতো সাপ্তাহিক। অথচ আড়ম্বরহীন, আকর্ষক। দু'তিন সপ্তাহ পড়তে পড়তে বেশ মজা পেয়ে গেলাম। ছোট ছোট রিপোর্ট। ছোট ছোট লেখা। মতামত। ফিচার। পত্রিকার নামটিও মাথায় গেঁথে গেল। বিচিন্তা। ঠিকানা মগবাজার। ওখান থেকে বেরোচ্ছে। লেখক-রিপোর্টাররা সব নবীন। কারণ, খ্যাতনামা কোনো সাংবাদিকের নাম নেই। সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রতিবেদক_ নামে চিনতে পারছি না কাউকেই।
যারা লিখছেন, তাদের নামটামও সাধারণভাবে লেখার নিচে সামান্য করে ছাপা হচ্ছে। লেখার বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ এখানে, রচয়িতা নয়। লেখকের চেয়ে লেখাটাই বড় ব্যাপার। একজন সংবাদপত্রের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম। কাগজটি পড়তে পড়তে আমার আগ্রহ তখন তুঙ্গস্পর্শী।
সাংবাদিক বন্ধুটি জানাল, কেন, সম্পাদকটিকে চিনতে পারছ না? আগে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছিল। ভালো কিছু রিপোর্ট করেছে সেখানে। এখন কিছু তারুণ্যদীপ্ত ছেলেকে নিয়ে এই কাগজ প্রকাশ করছে। তাঁর নাম মিনার মাহমুদ।
ওই সময়টায় যায়যায়দিন সাপ্তাহিক এক পুরস্কার প্রবর্তন করেছিল। টেলিভিশন নিয়ে, আমার ধারণা, সেটি ছিল এ দেশে প্রথম পুরস্কারের আয়োজন।
বেশ বড়সড়ভাবে সোনারগাঁও হোটেলে পুরস্কার বিতরণ হতো। শেরাটনে হতো। খাবার-দাবারের পাশাপাশি আমাদের তখন আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ইমপ্রেস ভিডিও। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। ক্যামেরায় আমরা বিয়ে ও বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান রেকর্ড করি। এ ছাড়া বিটিভির অনুষ্ঠান, উপস্থাপনা, লেখালেখি ওইসব তো ছিলই।
তাই মাথায় এলো, সেই ইমপ্রেস ভিডিও থেকে যদি টিভি পুরস্কারের আয়োজন করা যায় তবে কেমন হয়? মন্দ কী? এরকম একটা চিন্তা থেকে ভাবলাম, ওই দ্রুত আলোড়ন তোলা কাগজটির অফিসেই প্রস্তাবটা নিয়ে যাই না কেন? দেখি না কথা বলে!...
ওই পত্রিকার সঙ্গে যৌথভাবে ইমপ্রেস ভিডিও পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে ভালো কিছুই হবে। কিন্তু চিন্তাটি মাথায় এলেও সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লাম না। ভাবলাম আরও দুটি দিন। যায়যায়দিন পুরনো সংখ্যা সব সংগ্রহ করে ঠাণ্ডা মাথায় ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম। কীভাবে কীভাবে ওরা পদক্ষেপে গেছে, সব দেখলাম নীরবে। একটা কাঠামো সাজালাম নিভৃতে। মাথা খাটিয়ে তৈরি করলাম একটা অবয়ব।
তারপর একদিন পকেটে ক্যাশ দু'হাজার টাকা নিয়ে খাবার-দাবার থেকে রওনা হলাম মগবাজার। বিচিন্তা অফিসের উদ্দেশে। ঠিকানা টুকে নিলাম একটা চিরকুটে। খুঁজে খুঁজে দিলু রোডে ওদের ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। পত্রিকা অফিসের কোনো শানশওকত নেই সেই দফতরে। এ পত্রিকা অফিস সম্পর্কে যে ইমেজ তার সঙ্গে কোনো মিল পেলাম না। সাধারণ একটা বাড়িতে, সাধারণ একটি ঘর থেকে বেরোচ্ছে সেই কাগজ। সেই কাগজের সম্বল, টগবগে কিছু তরুণের তলোয়ারের মতো ধারালো মস্তিষ্ক আর অসীম সাহসী এক সম্পাদক যুবা। শানিত। আক্রমণাত্মক। বুদ্ধিদীপ্ত। চিন্তায় আলাদা সবার চেয়ে।
প্রথম স্বচক্ষে মিনার মাহমুদের চেহারা দেখলাম। পরিচয় হলো। ভেতরে পেস্টিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এগিয়ে এসে হাত মেলালেন। বললাম, এসেছি খাবার-দাবার থেকে। খাবার-দাবার ততদিনে পরিচিত একটি নাম।
মিনার বললেন, আমি খাবার-দাবার চিনি। এক-দু'বার খেতে গেছিও। পিঠা-ভাত সবই আমার পছন্দ। বসুন।
বসে হেসে বললাম, আমি একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। প্রস্তাবটি এই রকম। আপনার মনে ধরলে যৌথভাবে প্রজেক্ট শুরু করা যেতে পারে। ছোট এক পৃষ্ঠায় মোটামুটি আইডিয়াটা লেখা আছে। পড়ে দেখে জানাবেন।
মিনার খুব আনন্দিত হয়ে কাগজটা হাত বাড়িয়ে নিলেন। খুব যত্ন নিয়ে পড়লেন। আমার কাছে মুখে মুখেও সব শুনলেন। তারপর জানালেন, ভালো, বেশ ভালো।
বললাম, কিন্তু আমার এখানে একটা আবদার আছে।
কেমন? সেটা কী?
বললাম, আপনার বিচিন্তার প্রতি সংখ্যার ব্যাকপেইজটা আমাকে দিতে হবে। খাবার-দাবার এবং ইমপ্রেস ভিডিও লোগোসহ প্রতি সপ্তাহ ব্যাকপেইজে ছাপা হবে, ধরে নিন কমপক্ষে তিন মাস। তারপর পহেলা বোশেখে পুরস্কারটা দেওয়া হবে আড়ম্বরে। পুরস্কার অনুষ্ঠানটা আমরা আয়োজন করব। কিন্তু ব্যাকপেইজ চাই নিয়মিত।
মিনারের ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। প্রশ্ন, তারপর?
বললাম, যেহেতু খাবার-দাবার ও ইমপ্রেস ছোট প্রতিষ্ঠান একটা, কাজেই ব্যাকপেইজের বিজ্ঞাপনের মূল্য অনেক হলেও আমরা সেটা দিতে পারব না সেভাবে। প্রতি সংখ্যার জন্য এক হাজার টাকার বেশি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। যদি রাজি হন তবেই কথা এগোতে পারে। তাহলেই সব হবে।
মিনার সব শুনে বললেন, আপনি এসেছেন সে জন্য থ্যাংকস। ঠিক আছে, আমি এখনই কংক্রিট কিছু বলছি না। আসেন, আপনি কাল একবার আসেন। দেখি কী করা যায়!
আমার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, মিনার আমাকে কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। মন খারাপ না করেই উঠে এলাম। কারণ, এত কম টাকায় এমন একটা পাঠকপ্রিয় কাগজ কেন পেছনের পাতা ছাড়বে? সেই সময়ের জন্যও টাকাটা অনেক কম। ধরেও নিলাম হবে না। তাই পরদিন সকালে আর ফোনও করলাম না। বিচিন্তা অফিসে যাওয়ার চিন্তাটাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা ঠিক হবে বলে মনে করলাম।
সারাদিন চলে গেল। হঠাৎ বিকেলের পরে খাবার-দাবারের ল্যান্ডফোন ঝনঝন করে বেজে উঠল।
মিনারের ফোন।
ফোন করেই হইহই করে উঠল সে, কী হলো আপনি এলেন না যে? এখনই একটু আসেন।
গেলাম। মিনার যথারীতি উঠে দাঁড়িয়ে হাত মেলাল।
দেখি মিনারের টেবিলের চারপাশে সব তরুণ রিপোর্টার বসে আছে। তার সমস্ত তরুণ সহযোদ্ধা। আমি আজকে মনে করতে পারব না স্পষ্ট করে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ফজলুল বারী, জিল্লুর রহমান, আনোয়ার সাহাদাত, আসিফ নজরুল। কারণ এখনকার বিখ্যাত সব তারাই তখন ওই পত্রিকার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। মিনার মাঝখানে বসে।
মিনার কথা না বাড়িয়ে সোজাসাপটা বলে ফেলল, আপনার প্রস্তাব আমাদের পছন্দ হয়েছে। কালই বলে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি আমার সেনাপতিদের সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে যাওয়া উচিত মনে করিনি। ওদের সবাইকে নিয়েই তো কাগজটা বের হয়। এদের চিন্তার দাম আছে। সবাই সম্মত হয়েছে আনন্দের সঙ্গে।
মিনার আরও জানাল, কাগজটি করার সময় যারা আমার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে, সবাই জানিয়েছিল, অনেক দিন পর্যন্ত এই কাগজে বিজ্ঞাপন পাওয়াটা কঠিন হবে। সেখানে আমাদের পত্রিকায় প্রথম একটা বিজ্ঞাপন হেঁটে হেঁটে এসেছে। আপনার প্রপোজালে তাই আমরা খুব চার্জড। কাগজটা আপনি দেখেন নিয়মিত। লক্ষ্য করেছেন কি, একটা বিজ্ঞাপনও এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি? এখানেও আমাদের উচ্ছ্বাস। আপনার প্রস্তাব তাই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। বললাম, তার মানে আগামী সংখ্যা থেকে ব্যাকপেইজটা আমি পাচ্ছি?
মিনার মাথা নাড়ল, অবশ্যই পাচ্ছেন। তবে আমরা আপনার কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নেব না। এমনিতেই ছাপা হবে। ছাপতে থাকব সব শর্ত ও চুক্তি মেনেই। তবে ডিজাইন ও লেখা রেডি করতে সময় লাগবে বলে নেক্সট সংখ্যায় বিজ্ঞাপনটা ছাপা হবে না। কারণ, আজকেই আমাদের পেস্টিং। সবার তাই তাড়া, দেখতেই পাচ্ছেন। সবাই হাতে হাতে কাজটা করি। সবাই থাকি। মোট আটজন মিলে কাজটা শেষ করি।
জানতে চাইলাম, পেস্টিং ক'টা পর্যন্ত চলবে?
ঠিক নেই। ১টা-দেড়টা তো হয়ে যাবে!
বললাম, ঠিক আছে। আমি তবে আজ আর সময় নষ্ট না করি। তোমাদের সঙ্গে যেহেতু জয়েন্টলি কাজের কথা ফাইনাল হয়েই গেল, আজকের রাতের আটজনের খাবারটা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। শুধু আজ নয়, প্রতি পেস্টিংয়ের দিন রাতের খাবারটা খাবার-দাবার থেকে যাবে। যদি রাজি না হও তবে সব আলোচনা বাতিল।
হেসে ফেলেছিল মিনার আমার কথায়।
সেভাবে তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিক মিনারের সঙ্গে আমার সম্পর্কের শুরু। সখ্য। বন্ধুত্ব। সেই মিনারকে দেখেছি, শুধু সম্পাদক হিসেবে আইডিয়া তৈরি করে বসে থাকত না, নিজেও প্রতি সংখ্যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে গেছে।
এখন যারা সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে খ্যাত, যারা একসময় মিনারের সঙ্গে, মিনারের সানি্নধ্যে, মিনারের কাগজে কাজ করেছেন। তরুণদের মধ্যে সেই সাহসী তারুণ্য এনে দিতে পেরেছে মিনার, যা দেশের ক্রান্তিকালে খুব জরুরি একটা বিষয়। শুধু কি তরুণদের? বয়সী মেধাবীরাও মিনারের সংস্পর্শে এসে হয়ে গেছেন তরুণ। যেমন ফজলুল আলম। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। বিলেতে থাকেন। মিনারের প্রেরণায় তরুণ লেখকের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে তার কাগজে প্রবাস থেকে লিখে গেছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। মিনারের সেই আশ্চর্য জাদুটা ছিল। সে জন্য তার 'বিচিন্তা' ছিল তারুণ্যের প্রতীক। তার জীবনযাপনে যা কিছু দেখি, সবই উদ্দীপনাময়। নইলে ১৮-১৯ বছর পর দেশে ফিরে আবারও কাগজটা নিয়ে মেতে ওঠার চিন্তা করত না। এখানেও একটা মানুষের ভেতরের উজ্জীবিত তারুণ্যটা প্রমাণিত হয়, বয়স বেড়েছে। বাড়ছিল না মনের বয়স। তার ওইরকম মৃত্যুও সেই সাক্ষ্য দেয়। সময়ের সঙ্গে সব পাল্টেছে। পাল্টায়নি তার মনের বয়স।
মিনারের এক সময়ের সাংবাদিক সহকর্মী, চলচ্চিত্রকার আনোয়ার সাহাদাত আমাকে একটা কথা বলেছে, মিনার সবসময় সুশোভন সুন্দর হোটেল ভালোবাসত। দেখতাম সাংঘাতিক হোটেলপ্রীতি, ভালো হোটেল থেকে খাওয়া নিয়ে আসত আমাদের জন্য। একটা ভালো লেখা মনোযোগ দিয়ে লিখবে, চলে যেত হোটেলে। আজকের মৃত্যুটাও সে বেছে নিল এক নিভৃত তারকা হোটেলেই। হোটেলে মানুষ আসে যায়। থাকে না। পৃথিবীটাও কি ছিল মিনারের জন্য একটা হোটেল?
এই আসা-যাওয়ার মাঝখানে এমন এক ঝলক দিয়ে গেল মিনার। দূর থেকে কুতুব মিনারের মাথা দেখে পর্যটক যেমন স্থানটিকে চিহ্নিত করে এগিয়ে যান, এ দেশের তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিকতাকেও সেই চিহ্ন বহুদূর থেকে দীর্ঘকাল দেখা যাবে। দেখা যাবে স্থায়ীভাবে।
ফরিদুর রেজা সাগর : টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব
এ কথা অনেকের জানা, আমাদের মতো ছোট একটি দেশে হরেক ধরনের কাগজ বেরোয়, প্রায় ৪০০ কাগজ আছে। এদিক থেকে আমরা লক্ষ্যযোগ্য সমৃদ্ধ অনেক বছর থেকেই।
যে সময়টির কথা বলছি সে সময়ে সাপ্তাহিক, পাক্ষিকের দারুণ সময়। ছোট-বড় অনেকগুলো সাপ্তাহিক পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছিল। বেশ সকালবেলা এসে খাবার-দাবার খুলে বসতাম। তখনও এ দোকানে নাশতা বিক্রির ব্যবস্থা ছিল না। শুধু দুপুর আর রাতের খাবার। তাই সকালে থাকত ফাঁকা। লোকজনের ভিড় হতো না। সকালটায় শুধু তদারকি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করানো। রান্নাবান্নার জন্য বাজারে পাঠানো ইত্যাদি।
সকালে আমি আর সিরাজ যখন ঘর থেকে হেঁটে হেঁটে খাবার-দাবারে আসতাম, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাঠে দেখতাম ট্রেইনি সব ছেলে পুলিশ, মেয়ে পুলিশ। সবাই মার্চ করছে। ওই দৃশ্য দেখে উৎসাহিত হতাম মনে মনে।
তারা যদি এত সকালে উঠে অনুশীলন করে তবে আমি কেন ভোরে উঠতে পারব না? কেন রেডি হয়ে সকাল সকাল দোকানটায় এসে বসব না? ৮টায় এসে আধঘণ্টার মধ্যে কাঁচা খাবার কেনানো, রান্নার ব্যবস্থায় যাওয়া, পরিচ্ছন্নতা, আগের রাতের বাকি হিসাব মেলানোর কাজ_ সব শেষ হয়ে যেত। তারপর তো ১২টা পর্যন্ত মানুষজনের ভিড়ভাটার জন্য প্রতীক্ষা। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের অখণ্ড অবসর। এই সময়টা পার করার জন্য আমার ভরসার জায়গা ছিল কালাম হকার। তিনি তার পাশের পত্রিকার দোকান থেকে কাগজ পাঠাতেন। দৈনিক থেকে শুরু করে যাবতীয় ম্যাগাজিন। সযত্নে ভাঁজ রক্ষা করে প্রায় সব কাগজই গোগ্রাসে পড়তাম। দৈনিক। সাপ্তাহিক। পাক্ষিক। মাসিক। কাগজের জগতের সোনালি সময় তখন। প্রায় প্রতি সপ্তায় কিছু না কিছু নতুন কাগজ বাজারে আসছে। সেই সময়টায় একদিন চোখ আটকে গেল একটা নতুন পত্রিকায়।
সাপ্তাহিক বিচিন্তা, যায়যায়দিনের মতো সাপ্তাহিক। অথচ আড়ম্বরহীন, আকর্ষক। দু'তিন সপ্তাহ পড়তে পড়তে বেশ মজা পেয়ে গেলাম। ছোট ছোট রিপোর্ট। ছোট ছোট লেখা। মতামত। ফিচার। পত্রিকার নামটিও মাথায় গেঁথে গেল। বিচিন্তা। ঠিকানা মগবাজার। ওখান থেকে বেরোচ্ছে। লেখক-রিপোর্টাররা সব নবীন। কারণ, খ্যাতনামা কোনো সাংবাদিকের নাম নেই। সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রতিবেদক_ নামে চিনতে পারছি না কাউকেই।
যারা লিখছেন, তাদের নামটামও সাধারণভাবে লেখার নিচে সামান্য করে ছাপা হচ্ছে। লেখার বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ এখানে, রচয়িতা নয়। লেখকের চেয়ে লেখাটাই বড় ব্যাপার। একজন সংবাদপত্রের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম। কাগজটি পড়তে পড়তে আমার আগ্রহ তখন তুঙ্গস্পর্শী।
সাংবাদিক বন্ধুটি জানাল, কেন, সম্পাদকটিকে চিনতে পারছ না? আগে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছিল। ভালো কিছু রিপোর্ট করেছে সেখানে। এখন কিছু তারুণ্যদীপ্ত ছেলেকে নিয়ে এই কাগজ প্রকাশ করছে। তাঁর নাম মিনার মাহমুদ।
ওই সময়টায় যায়যায়দিন সাপ্তাহিক এক পুরস্কার প্রবর্তন করেছিল। টেলিভিশন নিয়ে, আমার ধারণা, সেটি ছিল এ দেশে প্রথম পুরস্কারের আয়োজন।
বেশ বড়সড়ভাবে সোনারগাঁও হোটেলে পুরস্কার বিতরণ হতো। শেরাটনে হতো। খাবার-দাবারের পাশাপাশি আমাদের তখন আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ইমপ্রেস ভিডিও। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। ক্যামেরায় আমরা বিয়ে ও বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান রেকর্ড করি। এ ছাড়া বিটিভির অনুষ্ঠান, উপস্থাপনা, লেখালেখি ওইসব তো ছিলই।
তাই মাথায় এলো, সেই ইমপ্রেস ভিডিও থেকে যদি টিভি পুরস্কারের আয়োজন করা যায় তবে কেমন হয়? মন্দ কী? এরকম একটা চিন্তা থেকে ভাবলাম, ওই দ্রুত আলোড়ন তোলা কাগজটির অফিসেই প্রস্তাবটা নিয়ে যাই না কেন? দেখি না কথা বলে!...
ওই পত্রিকার সঙ্গে যৌথভাবে ইমপ্রেস ভিডিও পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে ভালো কিছুই হবে। কিন্তু চিন্তাটি মাথায় এলেও সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লাম না। ভাবলাম আরও দুটি দিন। যায়যায়দিন পুরনো সংখ্যা সব সংগ্রহ করে ঠাণ্ডা মাথায় ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম। কীভাবে কীভাবে ওরা পদক্ষেপে গেছে, সব দেখলাম নীরবে। একটা কাঠামো সাজালাম নিভৃতে। মাথা খাটিয়ে তৈরি করলাম একটা অবয়ব।
তারপর একদিন পকেটে ক্যাশ দু'হাজার টাকা নিয়ে খাবার-দাবার থেকে রওনা হলাম মগবাজার। বিচিন্তা অফিসের উদ্দেশে। ঠিকানা টুকে নিলাম একটা চিরকুটে। খুঁজে খুঁজে দিলু রোডে ওদের ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। পত্রিকা অফিসের কোনো শানশওকত নেই সেই দফতরে। এ পত্রিকা অফিস সম্পর্কে যে ইমেজ তার সঙ্গে কোনো মিল পেলাম না। সাধারণ একটা বাড়িতে, সাধারণ একটি ঘর থেকে বেরোচ্ছে সেই কাগজ। সেই কাগজের সম্বল, টগবগে কিছু তরুণের তলোয়ারের মতো ধারালো মস্তিষ্ক আর অসীম সাহসী এক সম্পাদক যুবা। শানিত। আক্রমণাত্মক। বুদ্ধিদীপ্ত। চিন্তায় আলাদা সবার চেয়ে।
প্রথম স্বচক্ষে মিনার মাহমুদের চেহারা দেখলাম। পরিচয় হলো। ভেতরে পেস্টিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এগিয়ে এসে হাত মেলালেন। বললাম, এসেছি খাবার-দাবার থেকে। খাবার-দাবার ততদিনে পরিচিত একটি নাম।
মিনার বললেন, আমি খাবার-দাবার চিনি। এক-দু'বার খেতে গেছিও। পিঠা-ভাত সবই আমার পছন্দ। বসুন।
বসে হেসে বললাম, আমি একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। প্রস্তাবটি এই রকম। আপনার মনে ধরলে যৌথভাবে প্রজেক্ট শুরু করা যেতে পারে। ছোট এক পৃষ্ঠায় মোটামুটি আইডিয়াটা লেখা আছে। পড়ে দেখে জানাবেন।
মিনার খুব আনন্দিত হয়ে কাগজটা হাত বাড়িয়ে নিলেন। খুব যত্ন নিয়ে পড়লেন। আমার কাছে মুখে মুখেও সব শুনলেন। তারপর জানালেন, ভালো, বেশ ভালো।
বললাম, কিন্তু আমার এখানে একটা আবদার আছে।
কেমন? সেটা কী?
বললাম, আপনার বিচিন্তার প্রতি সংখ্যার ব্যাকপেইজটা আমাকে দিতে হবে। খাবার-দাবার এবং ইমপ্রেস ভিডিও লোগোসহ প্রতি সপ্তাহ ব্যাকপেইজে ছাপা হবে, ধরে নিন কমপক্ষে তিন মাস। তারপর পহেলা বোশেখে পুরস্কারটা দেওয়া হবে আড়ম্বরে। পুরস্কার অনুষ্ঠানটা আমরা আয়োজন করব। কিন্তু ব্যাকপেইজ চাই নিয়মিত।
মিনারের ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। প্রশ্ন, তারপর?
বললাম, যেহেতু খাবার-দাবার ও ইমপ্রেস ছোট প্রতিষ্ঠান একটা, কাজেই ব্যাকপেইজের বিজ্ঞাপনের মূল্য অনেক হলেও আমরা সেটা দিতে পারব না সেভাবে। প্রতি সংখ্যার জন্য এক হাজার টাকার বেশি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। যদি রাজি হন তবেই কথা এগোতে পারে। তাহলেই সব হবে।
মিনার সব শুনে বললেন, আপনি এসেছেন সে জন্য থ্যাংকস। ঠিক আছে, আমি এখনই কংক্রিট কিছু বলছি না। আসেন, আপনি কাল একবার আসেন। দেখি কী করা যায়!
আমার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, মিনার আমাকে কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। মন খারাপ না করেই উঠে এলাম। কারণ, এত কম টাকায় এমন একটা পাঠকপ্রিয় কাগজ কেন পেছনের পাতা ছাড়বে? সেই সময়ের জন্যও টাকাটা অনেক কম। ধরেও নিলাম হবে না। তাই পরদিন সকালে আর ফোনও করলাম না। বিচিন্তা অফিসে যাওয়ার চিন্তাটাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা ঠিক হবে বলে মনে করলাম।
সারাদিন চলে গেল। হঠাৎ বিকেলের পরে খাবার-দাবারের ল্যান্ডফোন ঝনঝন করে বেজে উঠল।
মিনারের ফোন।
ফোন করেই হইহই করে উঠল সে, কী হলো আপনি এলেন না যে? এখনই একটু আসেন।
গেলাম। মিনার যথারীতি উঠে দাঁড়িয়ে হাত মেলাল।
দেখি মিনারের টেবিলের চারপাশে সব তরুণ রিপোর্টার বসে আছে। তার সমস্ত তরুণ সহযোদ্ধা। আমি আজকে মনে করতে পারব না স্পষ্ট করে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ফজলুল বারী, জিল্লুর রহমান, আনোয়ার সাহাদাত, আসিফ নজরুল। কারণ এখনকার বিখ্যাত সব তারাই তখন ওই পত্রিকার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। মিনার মাঝখানে বসে।
মিনার কথা না বাড়িয়ে সোজাসাপটা বলে ফেলল, আপনার প্রস্তাব আমাদের পছন্দ হয়েছে। কালই বলে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি আমার সেনাপতিদের সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে যাওয়া উচিত মনে করিনি। ওদের সবাইকে নিয়েই তো কাগজটা বের হয়। এদের চিন্তার দাম আছে। সবাই সম্মত হয়েছে আনন্দের সঙ্গে।
মিনার আরও জানাল, কাগজটি করার সময় যারা আমার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে, সবাই জানিয়েছিল, অনেক দিন পর্যন্ত এই কাগজে বিজ্ঞাপন পাওয়াটা কঠিন হবে। সেখানে আমাদের পত্রিকায় প্রথম একটা বিজ্ঞাপন হেঁটে হেঁটে এসেছে। আপনার প্রপোজালে তাই আমরা খুব চার্জড। কাগজটা আপনি দেখেন নিয়মিত। লক্ষ্য করেছেন কি, একটা বিজ্ঞাপনও এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি? এখানেও আমাদের উচ্ছ্বাস। আপনার প্রস্তাব তাই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। বললাম, তার মানে আগামী সংখ্যা থেকে ব্যাকপেইজটা আমি পাচ্ছি?
মিনার মাথা নাড়ল, অবশ্যই পাচ্ছেন। তবে আমরা আপনার কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নেব না। এমনিতেই ছাপা হবে। ছাপতে থাকব সব শর্ত ও চুক্তি মেনেই। তবে ডিজাইন ও লেখা রেডি করতে সময় লাগবে বলে নেক্সট সংখ্যায় বিজ্ঞাপনটা ছাপা হবে না। কারণ, আজকেই আমাদের পেস্টিং। সবার তাই তাড়া, দেখতেই পাচ্ছেন। সবাই হাতে হাতে কাজটা করি। সবাই থাকি। মোট আটজন মিলে কাজটা শেষ করি।
জানতে চাইলাম, পেস্টিং ক'টা পর্যন্ত চলবে?
ঠিক নেই। ১টা-দেড়টা তো হয়ে যাবে!
বললাম, ঠিক আছে। আমি তবে আজ আর সময় নষ্ট না করি। তোমাদের সঙ্গে যেহেতু জয়েন্টলি কাজের কথা ফাইনাল হয়েই গেল, আজকের রাতের আটজনের খাবারটা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। শুধু আজ নয়, প্রতি পেস্টিংয়ের দিন রাতের খাবারটা খাবার-দাবার থেকে যাবে। যদি রাজি না হও তবে সব আলোচনা বাতিল।
হেসে ফেলেছিল মিনার আমার কথায়।
সেভাবে তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিক মিনারের সঙ্গে আমার সম্পর্কের শুরু। সখ্য। বন্ধুত্ব। সেই মিনারকে দেখেছি, শুধু সম্পাদক হিসেবে আইডিয়া তৈরি করে বসে থাকত না, নিজেও প্রতি সংখ্যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে গেছে।
এখন যারা সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে খ্যাত, যারা একসময় মিনারের সঙ্গে, মিনারের সানি্নধ্যে, মিনারের কাগজে কাজ করেছেন। তরুণদের মধ্যে সেই সাহসী তারুণ্য এনে দিতে পেরেছে মিনার, যা দেশের ক্রান্তিকালে খুব জরুরি একটা বিষয়। শুধু কি তরুণদের? বয়সী মেধাবীরাও মিনারের সংস্পর্শে এসে হয়ে গেছেন তরুণ। যেমন ফজলুল আলম। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। বিলেতে থাকেন। মিনারের প্রেরণায় তরুণ লেখকের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে তার কাগজে প্রবাস থেকে লিখে গেছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। মিনারের সেই আশ্চর্য জাদুটা ছিল। সে জন্য তার 'বিচিন্তা' ছিল তারুণ্যের প্রতীক। তার জীবনযাপনে যা কিছু দেখি, সবই উদ্দীপনাময়। নইলে ১৮-১৯ বছর পর দেশে ফিরে আবারও কাগজটা নিয়ে মেতে ওঠার চিন্তা করত না। এখানেও একটা মানুষের ভেতরের উজ্জীবিত তারুণ্যটা প্রমাণিত হয়, বয়স বেড়েছে। বাড়ছিল না মনের বয়স। তার ওইরকম মৃত্যুও সেই সাক্ষ্য দেয়। সময়ের সঙ্গে সব পাল্টেছে। পাল্টায়নি তার মনের বয়স।
মিনারের এক সময়ের সাংবাদিক সহকর্মী, চলচ্চিত্রকার আনোয়ার সাহাদাত আমাকে একটা কথা বলেছে, মিনার সবসময় সুশোভন সুন্দর হোটেল ভালোবাসত। দেখতাম সাংঘাতিক হোটেলপ্রীতি, ভালো হোটেল থেকে খাওয়া নিয়ে আসত আমাদের জন্য। একটা ভালো লেখা মনোযোগ দিয়ে লিখবে, চলে যেত হোটেলে। আজকের মৃত্যুটাও সে বেছে নিল এক নিভৃত তারকা হোটেলেই। হোটেলে মানুষ আসে যায়। থাকে না। পৃথিবীটাও কি ছিল মিনারের জন্য একটা হোটেল?
এই আসা-যাওয়ার মাঝখানে এমন এক ঝলক দিয়ে গেল মিনার। দূর থেকে কুতুব মিনারের মাথা দেখে পর্যটক যেমন স্থানটিকে চিহ্নিত করে এগিয়ে যান, এ দেশের তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিকতাকেও সেই চিহ্ন বহুদূর থেকে দীর্ঘকাল দেখা যাবে। দেখা যাবে স্থায়ীভাবে।
ফরিদুর রেজা সাগর : টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব
No comments