সু চির জয়

মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে হাজারো সমর্থকের ভিড়। সবার চোখ কার্যালয়ের সামনে বসানো বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনে। হঠাৎ বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে তারা। কারো চোখের কোণে জমে ওঠে অশ্রুফোঁটা- বিজয়ের অশ্রু, আনন্দের অশ্রু।


উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে তাদের নেতা অং সান সু চি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি দেশবাসীর মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন অনেক আগেই। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটাই যা বাকি ছিল। এত দিন সামরিক সরকার সেটা হতে দেয়নি। তবে এবার আর ঠেকিয়ে রাখতে পারল না। মিয়ানমারের হার না-মানা এই নেত্রী গতকাল রবিবারের উপনির্বাচনে ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণ-পশ্চিমের কাউমু আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। এবারই প্রথম দেশটির কোনো সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন তিনি।
সু চির জয়ে উল্লসিত এনএলডি সমর্থক কালিয়ার বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমি খুবই খুশি।'
২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ছেড়ে দেওয়া ৪৫টি শূন্য আসনে গতকাল উপনির্বাচন হয়। সু চির দল এনএলডি ৪৪টি আসনে লড়েছে। সবগুলোতেই এনএলডির প্রার্থী জয়ী হতে চলেছে বলে দাবি করেছে দলটি। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর সরকারিভাবে ফল পেতে সপ্তাহ খানেক লেগে যাবে।
কাউমু আসনে সু চির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রার্থী। কিন্তু ওই আসনের প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সু চি জয়ী হন বলে জানান এনএলডি কর্মকর্তা সু উইন। দলের নিজস্ব হিসাব উল্লেখ করে তিনি এ তথ্য জানান।
এর আগে এনএলডির সমর্থকরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রোদে পুড়ে তাদের নেত্রীকে জয়ী করতে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। অনেকে যেমন জান্তা সরকারের ভয়ে প্রকাশ্যে সু চির পক্ষে মুখ খোলেনি, তেমনি অনেকে আবার সব ভয়কে জয় করে সমর্থনের পাশাপাশি ভালোবাসা জানিয়েছে সু চির প্রতি। তেমনই একজন তিন জো উইন। তিনি বলেন, '২০ বছর ধরে এক ব্যক্তিই কেবল আমাদের হয়েছেন। আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি এবং তাঁকেই ভোট দিতে চাই। আমার গ্রামের প্রায় সবাই সু চিকে ভোট দেবে।' অনেকে অভিযোগ করে, ভোটার তালিকায় তাদের নাম পাওয়া যায়নি। তবে কী কারণে এটা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
ভোটার তালিকার ত্রুটি নিয়ে এনএলডির মুখপাত্র নায়ান ডইন বলেন, 'সারা দেশেই এ রকম হয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি অভিযোগ পাঠিয়েছি।'
বহু দলের অংশগ্রহণে মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৪৫টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৪ লাখ। সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১৭টি দলের মোট ১৫৭ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে মিয়ানমারে ক্ষমতায় রয়েছে সামরিক প্রশাসন। বিশ্লেষকদের মতে, এবারই প্রথম নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সরকার। এ ভোটকে সামনে রেখে কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্বাচনী এলাকাগুলো চষে বেড়িয়েছেন সু চি। তিনি যেখানেই গেছেন, মানুষের ঢল নেমেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কোন দল কত আসন পাচ্ছে- এ নির্বাচনে তা মুখ্য নয়। বরং জান্তা সরকার একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছে কি না, সে বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জনগণ এবারের নির্বাচনকে দেখছে পরীক্ষামূলকভাবে। তাদের মূল দৃষ্টি ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। অনেকেরই প্রত্যাশা, ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েই ক্ষমতায় যাবেন সু চি। সূত্র : সিএনএন, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.