অন অ্যারাইভাল ভিসা-সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বার্থেই জরুরি
এই অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় ও উন্নত করার উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সার্ক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়নি। যেমন তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধনও ওইভাবে তৈরি হয়নি।
প্রতিবারই সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠানকালে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রধানরা অঙ্গীকার করেন, দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়বে এবং প্রত্যেকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যেকেই কাজ করবে। কিন্তু সম্মেলন কিংবা দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক শেষ হওয়ার পর আর এই বিষয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি হয় না।
এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে ভিসা সমস্যা, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা না হওয়া। বাণিজ্যসুবিধা সম্প্রসারণ না করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে না। আর বাণিজ্যসুবিধা অর্জনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন হচ্ছে দেশগুলোর মধ্যে সহজ যাতায়াত নিশ্চিত করা। কিন্তুু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিসা প্রথা এত জটিল যে ইচ্ছা করলেই যেকোনো দেশে সহজে কেউ যেতে পারে না। সাধারণত অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কোনো জোট গঠন হলে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত সুবিধাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মনে করা হয়, সদস্য দেশগুলোর নাগরিকদের সহজ যোগাযোগ স্থাপন লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থা আমরা দেখতে পাই।
সার্ক সৃষ্টির মৌলিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সে রকম সহজ যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি হওয়া প্রয়োজন। আর এই জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রথা চালু করা জরুরি। এই বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। ৩০ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ১১তম সার্ক ট্রেড ফেয়ার ও টুরিজম মার্ট-২০১২ চলাকালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও সেই প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করলে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো উন্নত হবে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম দাবি হওয়ার পরও সার্কভুক্ত দেশগুলো সেই দাবি পূরণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না মূলত এই ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি থাকার কারণে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে অন অ্যারাইভাল ভিসা ব্যবস্থা চালু করা অতি জরুরি। এক্ষেত্রে সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলাদেশকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই পদ্ধতি নিশ্চিত হলে বাংলাদেশ তূলনামূলকভাবে অধিক সুবিধা ভোগ করবে।
No comments