চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই ১৩ শিক্ষক নিয়োগ

পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে আবারও 'অস্থায়ী ভিত্তিতে' প্রভাষক ও সহকারী শিক্ষক পদে ১৩ জনকে সরাসরি নিয়োগ দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি করপোরেশনের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটিকে না জানিয়ে এক দিনেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ১৩ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।


তাঁদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-৩ চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর ছোট বোনসহ করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। চলতি সপ্তাহে নিয়োগের জন্য মনোনীত সবার কাছে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হবে বলে করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সম্প্রতি কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় দেড় শ শিক্ষককে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী এবং করপোরেশনের আইন অনুযায়ী সিটি মেয়রের শুধু দৈনিক ভিত্তিতে লেবার নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের জন্য মনোনীতরা হলেন, কলেজে ইংরেজির প্রভাষক পদে নিসাত হাসিনা, সুলতানা রাজিয়া, মাহমুদা আখন্দ, ওয়াহিদা তাসনিম; ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আফরোজা, দর্শন বিষয়ে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে কাউছার আকতার চৌধুরী। বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে জয়া রুদ্র, নাছিমা আখতার, প্রশান্ত বড়ুয়া, হাসিনা বেগম, রুমি চৌধুরী, আবিদা সুলতানা এবং নৈশপ্রহরী পদে মোহাম্মদ এসহাক ও আয়া পদে শিরিন আকতারের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইংরেজির প্রভাষক পদে আবেদনকারী নিসাত হাসিনা প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর ছোট বোন। প্রভাষকদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
এক দিনেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'করপোরেশনের ৪২টি স্কুলের মধ্যে অনেক স্কুলে মহিলা শিক্ষকরা মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ায় পড়ালেখার সমস্যা হয়। তাই উচ্চশিক্ষিত ভালো কিছু ছেলেমেয়ে দেখে তাঁদের অস্থায়ী ও খণ্ডকালীন ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।'
করপোরেশনের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর রেহেনা বেগম রানু বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। একটি কাজে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর কক্ষে গিয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দেখে হতবাক হয়েছি। ওখানে করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-৩ চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর বোনসহ আবেদনকারীদের দেখতে পাই। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বসতে বললেও আমি সেখানে বসিনি।'
এক প্রশ্নের জবাবে রেহেনা বেগম রানু বলেন, 'অতীতে জরুরি প্রয়োজনে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়র চাইলে নিয়োগ দিতে পারেন। শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটিকে না জানিয়ে এক দিনে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া এবং স্বচ্ছতার স্বার্থে করপোরেশনের যেকোনো নিয়োগে আত্মীয়করণ উচিত নয়।'
প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আলম নিজামী বলেন, 'করপোরেশনের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়োগ বিধি না থাকায় এবং করপোরেশনের সাধারণ সভায় অনুমোদন হওয়ায় অস্থায়ী ভিত্তিতে এঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্ধারিত বেতন ১৫ হাজার টাকায় কলেজে এবং সাড়ে ছয় হাজার টাকা স্কুলে ১৩ জন শিক্ষক, একজন অফিস সহকারী ও একজন আয়াকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ফাইল চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে।'

No comments

Powered by Blogger.