জবি ওয়ারিক ও ব্র্যাড প্ল্যামার-হোয়াইট হাউসের দৃষ্টিতে ইরানের অন্ধকার ভবিষ্যৎ

এপ্রিলে পরমাণু বিষয়ক আলোচনা হচ্ছে। তাকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা যুক্তিবদ্ধ হয়ে ইরানের তেলখাতে রাজস্ব আয়ের পথকে সঙ্কুচিত করে নিতে চেয়েছে। তবে এই অর্থনৈতিক চাপ যে আলোচনাকে কেন্দ্র করেই তা বোঝা যায়।


এদিকে গত শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, ইরানের সরবরাহ ছাড়াও বিশ্বের তেল চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করার মতো অবস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এই পদক্ষেপ আগামী তিন মাসে ইরানের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধাক্কা দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী ১ জুলাই থেকেই ইরানকে সাবধান করে দেওয়া হয়। আর এই পদক্ষেপ ইরানের বিলিয়ন ডলার রাজস্ব ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ইরান থেকে তেল আনা বন্ধ করার কারণে যে সরবরাহ ঘাটতি হওয়ার কথা, তা সৌদি আরব ও অন্য কয়েকটি দেশ পূরণ করে দিতে পারবে। এতে করে মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমে আসবে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা সঙ্গে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। আর আমাদের সাফল্যও আসতে শুরু করেছে। সঙ্গী দেশের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। ফলে ইরানকে একটি সঠিক বার্তাও প্রদান করা হচ্ছে।
মধ্যএপ্রিলে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ইরানকে আরেক দফা চাপ প্রয়োগ করা হবে, যাতে করে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি আর না চালায়। একই সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবেও এই উদ্যোগকে আখ্যায়িত করা যায়। এদিকে শুক্রবারই ব্যারেল প্রতি তেলের মূল্য ৪৯ সেন্ট বেড়ে গেছে। এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১২২ দশমিক ৮৮ মার্কিন ডলার প্রতি ব্যারেল।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে, ইরান আসলে বেসামরিক স্থাপনার আড়ালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজটিই করে যাচ্ছে। কিন্তু ইরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামাকে রাজনৈতিক ঝুঁকিতেও ফেলে দিতে পারে। ইরানের তেল নিষেধাজ্ঞার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে_এটা প্রায় নিশ্চিত। যার প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্ত ভোটারদের ওপর। আর এই ভোটারদের ওপরই ওবামার পুনর্নির্বাচিত হওয়াটা বেশির ভাগ নির্ভরশীল। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ওবামার এই পদক্ষেপ রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে উস্কে দেবে।
১১টি বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে ইরান থেকে তেল আমদানি হ্রাস করায় সেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছে। ইরানের আরো যেসব ক্রেতা আছে তাদেরও ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত শুক্রবার তুরস্ক ইরান থেকে তেল আমদানি ১০ শতাংশ নামিয়ে এনেছে। একই সঙ্গে তাদের এই ঘাটতি পূরণের জন্য তারা তাৎক্ষণিকভাবে সৌদি আরবের সঙ্গেও কথা বলেছে।
তেল আমদানিতে এই নিরুৎসাহিতকরণ প্রক্রিয়া ইরানের অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। ইরান এর আগে এত বড় অর্থনৈতিক চাপের মুখে কখনো পড়েনি।
তেল বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইরানের তেল রপ্তানির পরিমাণ এরই মধ্যে অর্ধেকে নেমে গেছে। যার পরিমাণ দৈনিক এক মিলিয়ন ব্যারেলের কম হবে না। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো ইরানের তেল ক্রয় না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জাপান এবং ইতালিও ইরান থেকে তেল ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। মার্চ মাসে ইরানের তেল বিক্রি কমে গিয়ে তিন লাখ ব্যারেলে দাঁড়ায়। এই তথ্য পরিবেশন করেছে সুইসভিত্তিক তেল বহনকারী কম্পানি পেট্রোলজিস্টিক।
সৌদি আরব দৈনিক ছয় লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে গত অক্টোবর থেকে। বাড়তি এই উৎপাদনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে যে তেল ঘাটতি দেখা দেবে তা পূরণ করে নেওয়া। তেলের নিত্য চাহিদা পূরণে উত্তর আমেরিকার কিছু উৎপাদন ক্ষেত্র ব্যবহারকারীদের স্বস্তি এনে দিতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের এই অবস্থার পেছনে শুধু পরমাণু শক্তির আশঙ্কাই কাজ করেছে। এর মধ্যে চীনের বিষয়টি অনেকটা অনুল্লেখ্যই থেকে যায়। কিন্তু চীনের বাজারেও ইরানের তেলের প্রবেশ কমে গেছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে। তাও আবার তেলের মূল্যজনিত কারণেই। এখন চীন আবার ইরানের সঙ্গে এই বিষয়ে ঘনিষ্ঠতর হবে, এমনটাও কি এত সহজেই চিন্তা করা যায়? বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, এটা তো তারা দেখতে পাচ্ছে। আর এটাও যুক্তি-পরামর্শ করেই হয়েছে। এমন অবস্থায় বিশ্বসমাজের বিষয়টিকেও ভাবতে হবে তাদের।
তবে তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ইরানের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা অবশ্য এনে দিয়েছে। গত বছর তারা ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে তেল বিক্রি করে। এই তথ্য জানা গেছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড থেকে।
রয়টারের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইরানের রাজস্ব আয় অর্ধেক হবে তেল বিক্রি থেকে। অর্থাৎ তাদের আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
লেখকদ্বয় : সাংবাদিক
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.