বিশেষ সাক্ষাৎকার : মাহমুদুর রহমান মান্না-সবার জন্য বাসযোগ্য মহানগরীর স্বপ্ন দেখি
রাজধানীর দেয়াল ছেয়ে গেছে মেয়র পদপ্রার্থীদের রঙিন পোস্টারে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন। এগিয়ে আসছে বিভাজিত সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হন ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) মেয়র পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলী হাবিব
কালের কণ্ঠ : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হচ্ছেন। সিদ্ধান্তটি এলো কী করে? সিদ্ধান্ত কি আপনার দলীয় ফোরামে গৃহীত হয়েছে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তটি একেবারে ব্যক্তিগত নয়। দলের মধ্য থেকে অনেকে, দলের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে অনেকে আমাকে অনুরোধ করেছেন নির্বাচন করার জন্য। এটার কারণ সম্ভবত এই যে দলের পক্ষ থেকে কেউ একজন প্রার্থী হচ্ছেন বলে বাজারে এসেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত ব্যক্তিনির্ভর। একেকটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত কোনো দলেই নেওয়া হয় না। এমন একটি সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জে হয়েছিল। মানুষ সেটা পছন্দ করেনি। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এসব বিবেচনা করেই আমার দলের লোক এবং অন্যরা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলেছেন। ব্যাপকভাবে মানুষের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে সরকার। এই বিভাজনকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এই বিভাজনে গেলে কি নাগরিক সেবার মান নিশ্চিত হবে বলে আপনি মনে করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : বিভাজনের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এই ব্যাখ্যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বলা হয়েছে, নাগরিকদের কাছে কার্যকর সেবা পেঁৗছে দেওয়ার জন্যই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু এখন আপনি মহানগরীর লোকজনকে জিজ্ঞেস করুন, সবাই বলবেন বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে সেবার মান কিছুই বাড়েনি, বরং মশা বেড়েছে। যে যুক্তিতে সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। সেবা পেঁৗছে দেওয়ার কোনো লক্ষ্য থেকে সিটি করপোরেশনের বিভাজন হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। আমি মনে করি, অখণ্ড সিটি করপোরেশন থাকলেই ভালো ছিল।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করা কি সম্ভব?
মাহমুদুর রহমান মান্না : নাগরিক সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেবা বাড়ানো যেতে পারে। সেবার মান উন্নত করা সম্ভব।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করে না। ওয়াসা, ডেসা-ডেসকো, পুলিশ ইত্যাদি অনেক সেবাসংস্থাও এর সঙ্গে জড়িত। এসব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এটা কী করে নিশ্চিত করা যায়?
মাহমুদুর রহমান মান্না : সমন্বয় নেই_এটা মানতেই হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আগের মেয়ররা বলেছেন, নগরবাসী তো বলেই চলেছে। সিভিল সোসাইটি এ নিয়ে কথা বলছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো সমন্বয়ের কোনো চেষ্টা কি হয়েছে? কোনো উদ্যোগই তো নেওয়া হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এগুলো সমন্বয় করতে হবে। এই সমন্বয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত করার বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম। তবে এখনো সমন্বয় করা সম্ভব। এই সমন্বয় এখন বেশি জরুরি হবে উত্তর ও দক্ষিণের। উত্তর যেভাবে কাজ করছে বা করবে, দক্ষিণ সেভাবে না-ও করতে পারে। এটা করা না গেলে সমস্যা হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
কালের কণ্ঠ : একজন প্রার্থী হিসেবে নয়, এই মহানগরীর একজন বাসিন্দা হিসেবে আপনি কী কী সমস্যা দেখেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না : এই মহানগরীর বাসিন্দা হিসেবে সমস্যার কথা বললে বলব, গণপরিবহনের অভাব। সবারই অভিযোগ, রাস্তায় যাওয়া-আসায়ই দিনের অনেকটা সময় চলে যায়। এটা কোনো জীবন নয়। শুধু যে গণপরিবহনের সমস্যা, তা নয়। একই সঙ্গে রাস্তার সমস্যাও বড় সমস্যা। দুটো মিলিয়ে আমি বলব, মানুষের যাতায়াত দ্রুততর ও কম খরচসাপেক্ষ করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এই সমস্যা সমাধানে আপনার চেষ্টা কী হবে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : শুরুতেই বলেছি, ঢাকার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সব সমস্যার সমাধান করা এক দিনে সম্ভব নয়। নির্বাচিত হলে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। আমি সমন্বয়ের কাজটি করতে চাই। সমন্বয় করা গেলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব।
কালের কণ্ঠ : কিন্তু আপনি একটি দলেরও নেতা। আপনার দল একটি জোটের অংশীদার। এখন দল থেকে বা জোট থেকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিলে কী হবে? আপনি কি দলের সমর্থন পাচ্ছেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : হ্যাঁ, আমি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এখানে দলের কিছু করার নেই। দলের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা নারায়ণগঞ্জে আইভি করেছিলেন। পাননি। তা ছাড়া দলের তো কোনো প্রক্রিয়া নেই। কারণ, আইনগতভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোনো দলগত নির্বাচন নয়। তবে চলমান ঘটনার মধ্য থেকে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কাকে সমর্থন দেওয়া হবে। সে রকম একজনকে সমর্থন দেওয়া হয়ে গেছে। তার পরও আমি প্রকাশ্যে সাক্ষাৎকারে টিভিতে বলেছি, আমার মতো করে সিদ্ধান্ত নিলেও দলের সমর্থন আমি এখনো চাই। এটা আমার দলের নেতৃত্ব অবগত আছেন।
কালের কণ্ঠ : সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ একসময় সিটি গভর্নমেন্টের ধারণা দিয়েছিলেন। এই মহানগরী নিয়ে আপনি কি এমন কোনো ধারণা পোষণ করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : সিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে আমি ইন্টারনেট ও অন্যান্য সূত্র থেকে যে ধারণা পেয়েছি, তাতে এটা আলাদা একটা সরকার। প্রায় স্বায়ত্তশাসিত। নিশ্চিত একটা ধারণা এখনই দেওয়া যাবে না। আমি মনে করি, নগরবাসীর সেবার জন্য যে যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশ্লিষ্ট, তারা নগর কর্তৃপক্ষের কাছে বা নগর সরকারের কাছে ওই দায়িত্বের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকবে। কেউ কেউ বলতে চান, এটা সরকারের মধ্যে আরেকটা সরকার হয়ে গেল। না। কেউ তা মনে করলে সিটি গভর্নমেন্টকে কেমন করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দায়বদ্ধ করা যায়, তার একটা উপায় বের করা যেতে পারে। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নগর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। সিটি গভর্নমেন্টের ভূমিকা ব্যাপক হতে পারে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা মেনেই তা করা যেতে পারে।
কালের কণ্ঠ : যদি সমস্যার দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, মহানগরীতে গ্যাসসংযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি সংযোগ নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়। এসব সমস্যা সমাধানের সহজ পথ কী?
মাহমুদুর রহমান মান্না : এই সমস্যাটা সরকারকে আগে বুঝতে হবে। সিটি করপোরেশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখতে চাইলেও সবচেয়ে বড় জায়গা কিন্তু এটাই। এখানে ২২ লাখ লোকের ভোট। এই নগরীর মানুষের সমস্যাগুলো সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত_এটা সরকারকে বুঝতে হবে এবং সমাধান করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব লাগবে। প্রথমেই বিদ্যুতের কথা বলি। আমি প্রস্তাব দিতে চাই, যদি আমি নির্বাচিত হই, ঢাকা সিটি করপোরেশনে যে বিদ্যুৎ লাগবে, তা আমি উৎপাদন করব। কিন্তু বিতরণ ও সরবরাহের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আবার উৎপাদন করব, সেখানে জ্বালানি কী পাব, তার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। একইভাবে পানি সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব। পাগলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এত দিন ঝুলে থাকবে কেন? এটা অনেক আগেই শেষ করা যেত। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব বিষয়ের সঙ্গে নগরবাসীর সেবা জড়িত, সেই বিষয়ে নগর করপোরেশনের গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও নগর কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব থাকতে হবে। আমি এটাও মনে করি, সন্ত্রাসমুক্ত শহর গড়া সম্ভব। যানজট যদি বাইরের নগরী দূর করতে পারে, আমরাও পারব। শুধু গ্যাসের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। আমাদের অনেক বড় বড় অর্জন আছে_ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নোবেল প্রাইজ ও ক্রিকেট। সমাজ বদলে দিতে, অর্থনীতি সচল রাখতেও আমরা অবদান রাখতে পারি।
কালের কণ্ঠ : আপনার স্বপ্নের ঢাকা মহানগরীর কথা বলুন।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আমি সাংহাইয়ে গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি কী ছিল, কিভাবে উন্নয়ন করেছে। আমি আগামী পাঁচ, দশ, পনের, কুড়ি বছর পর কেমন ঢাকা দেখতে চাই তার একটি পরিকল্পনা করতে চাই। আপাতত পাঁচ বছরে একটি যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন শহরের স্বপ্ন দেখছি আমি। এই শহরের দরিদ্র বস্তিবাসীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের অবস্থা বদলে দিতে হবে। তারা বস্তিতে থাকবে কেন? আমি কথা বলেছি। বস্তিবাসীরা আমাকে বলেছে, তারা টাকা দিতে রাজি। তাদের প্লট দেওয়া হোক। বস্তি কেন বস্তির মতো থাকবে? সবার জন্য বাসযোগ্য মহানগরীর স্বপ্ন দেখি আমি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আপনাকেও ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হচ্ছেন। সিদ্ধান্তটি এলো কী করে? সিদ্ধান্ত কি আপনার দলীয় ফোরামে গৃহীত হয়েছে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তটি একেবারে ব্যক্তিগত নয়। দলের মধ্য থেকে অনেকে, দলের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে অনেকে আমাকে অনুরোধ করেছেন নির্বাচন করার জন্য। এটার কারণ সম্ভবত এই যে দলের পক্ষ থেকে কেউ একজন প্রার্থী হচ্ছেন বলে বাজারে এসেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত ব্যক্তিনির্ভর। একেকটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত কোনো দলেই নেওয়া হয় না। এমন একটি সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জে হয়েছিল। মানুষ সেটা পছন্দ করেনি। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এসব বিবেচনা করেই আমার দলের লোক এবং অন্যরা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলেছেন। ব্যাপকভাবে মানুষের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে সরকার। এই বিভাজনকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এই বিভাজনে গেলে কি নাগরিক সেবার মান নিশ্চিত হবে বলে আপনি মনে করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : বিভাজনের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এই ব্যাখ্যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বলা হয়েছে, নাগরিকদের কাছে কার্যকর সেবা পেঁৗছে দেওয়ার জন্যই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু এখন আপনি মহানগরীর লোকজনকে জিজ্ঞেস করুন, সবাই বলবেন বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে সেবার মান কিছুই বাড়েনি, বরং মশা বেড়েছে। যে যুক্তিতে সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। সেবা পেঁৗছে দেওয়ার কোনো লক্ষ্য থেকে সিটি করপোরেশনের বিভাজন হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। আমি মনে করি, অখণ্ড সিটি করপোরেশন থাকলেই ভালো ছিল।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করা কি সম্ভব?
মাহমুদুর রহমান মান্না : নাগরিক সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেবা বাড়ানো যেতে পারে। সেবার মান উন্নত করা সম্ভব।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করে না। ওয়াসা, ডেসা-ডেসকো, পুলিশ ইত্যাদি অনেক সেবাসংস্থাও এর সঙ্গে জড়িত। এসব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এটা কী করে নিশ্চিত করা যায়?
মাহমুদুর রহমান মান্না : সমন্বয় নেই_এটা মানতেই হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আগের মেয়ররা বলেছেন, নগরবাসী তো বলেই চলেছে। সিভিল সোসাইটি এ নিয়ে কথা বলছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো সমন্বয়ের কোনো চেষ্টা কি হয়েছে? কোনো উদ্যোগই তো নেওয়া হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এগুলো সমন্বয় করতে হবে। এই সমন্বয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত করার বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম। তবে এখনো সমন্বয় করা সম্ভব। এই সমন্বয় এখন বেশি জরুরি হবে উত্তর ও দক্ষিণের। উত্তর যেভাবে কাজ করছে বা করবে, দক্ষিণ সেভাবে না-ও করতে পারে। এটা করা না গেলে সমস্যা হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
কালের কণ্ঠ : একজন প্রার্থী হিসেবে নয়, এই মহানগরীর একজন বাসিন্দা হিসেবে আপনি কী কী সমস্যা দেখেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না : এই মহানগরীর বাসিন্দা হিসেবে সমস্যার কথা বললে বলব, গণপরিবহনের অভাব। সবারই অভিযোগ, রাস্তায় যাওয়া-আসায়ই দিনের অনেকটা সময় চলে যায়। এটা কোনো জীবন নয়। শুধু যে গণপরিবহনের সমস্যা, তা নয়। একই সঙ্গে রাস্তার সমস্যাও বড় সমস্যা। দুটো মিলিয়ে আমি বলব, মানুষের যাতায়াত দ্রুততর ও কম খরচসাপেক্ষ করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এই সমস্যা সমাধানে আপনার চেষ্টা কী হবে?
মাহমুদুর রহমান মান্না : শুরুতেই বলেছি, ঢাকার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সব সমস্যার সমাধান করা এক দিনে সম্ভব নয়। নির্বাচিত হলে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। আমি সমন্বয়ের কাজটি করতে চাই। সমন্বয় করা গেলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব।
কালের কণ্ঠ : কিন্তু আপনি একটি দলেরও নেতা। আপনার দল একটি জোটের অংশীদার। এখন দল থেকে বা জোট থেকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিলে কী হবে? আপনি কি দলের সমর্থন পাচ্ছেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : হ্যাঁ, আমি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এখানে দলের কিছু করার নেই। দলের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা নারায়ণগঞ্জে আইভি করেছিলেন। পাননি। তা ছাড়া দলের তো কোনো প্রক্রিয়া নেই। কারণ, আইনগতভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোনো দলগত নির্বাচন নয়। তবে চলমান ঘটনার মধ্য থেকে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কাকে সমর্থন দেওয়া হবে। সে রকম একজনকে সমর্থন দেওয়া হয়ে গেছে। তার পরও আমি প্রকাশ্যে সাক্ষাৎকারে টিভিতে বলেছি, আমার মতো করে সিদ্ধান্ত নিলেও দলের সমর্থন আমি এখনো চাই। এটা আমার দলের নেতৃত্ব অবগত আছেন।
কালের কণ্ঠ : সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ একসময় সিটি গভর্নমেন্টের ধারণা দিয়েছিলেন। এই মহানগরী নিয়ে আপনি কি এমন কোনো ধারণা পোষণ করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না : সিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে আমি ইন্টারনেট ও অন্যান্য সূত্র থেকে যে ধারণা পেয়েছি, তাতে এটা আলাদা একটা সরকার। প্রায় স্বায়ত্তশাসিত। নিশ্চিত একটা ধারণা এখনই দেওয়া যাবে না। আমি মনে করি, নগরবাসীর সেবার জন্য যে যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশ্লিষ্ট, তারা নগর কর্তৃপক্ষের কাছে বা নগর সরকারের কাছে ওই দায়িত্বের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকবে। কেউ কেউ বলতে চান, এটা সরকারের মধ্যে আরেকটা সরকার হয়ে গেল। না। কেউ তা মনে করলে সিটি গভর্নমেন্টকে কেমন করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দায়বদ্ধ করা যায়, তার একটা উপায় বের করা যেতে পারে। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নগর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। সিটি গভর্নমেন্টের ভূমিকা ব্যাপক হতে পারে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা মেনেই তা করা যেতে পারে।
কালের কণ্ঠ : যদি সমস্যার দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, মহানগরীতে গ্যাসসংযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি সংযোগ নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়। এসব সমস্যা সমাধানের সহজ পথ কী?
মাহমুদুর রহমান মান্না : এই সমস্যাটা সরকারকে আগে বুঝতে হবে। সিটি করপোরেশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখতে চাইলেও সবচেয়ে বড় জায়গা কিন্তু এটাই। এখানে ২২ লাখ লোকের ভোট। এই নগরীর মানুষের সমস্যাগুলো সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত_এটা সরকারকে বুঝতে হবে এবং সমাধান করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব লাগবে। প্রথমেই বিদ্যুতের কথা বলি। আমি প্রস্তাব দিতে চাই, যদি আমি নির্বাচিত হই, ঢাকা সিটি করপোরেশনে যে বিদ্যুৎ লাগবে, তা আমি উৎপাদন করব। কিন্তু বিতরণ ও সরবরাহের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আবার উৎপাদন করব, সেখানে জ্বালানি কী পাব, তার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। একইভাবে পানি সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব। পাগলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এত দিন ঝুলে থাকবে কেন? এটা অনেক আগেই শেষ করা যেত। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব বিষয়ের সঙ্গে নগরবাসীর সেবা জড়িত, সেই বিষয়ে নগর করপোরেশনের গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ব দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও নগর কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব থাকতে হবে। আমি এটাও মনে করি, সন্ত্রাসমুক্ত শহর গড়া সম্ভব। যানজট যদি বাইরের নগরী দূর করতে পারে, আমরাও পারব। শুধু গ্যাসের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। আমাদের অনেক বড় বড় অর্জন আছে_ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নোবেল প্রাইজ ও ক্রিকেট। সমাজ বদলে দিতে, অর্থনীতি সচল রাখতেও আমরা অবদান রাখতে পারি।
কালের কণ্ঠ : আপনার স্বপ্নের ঢাকা মহানগরীর কথা বলুন।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আমি সাংহাইয়ে গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি কী ছিল, কিভাবে উন্নয়ন করেছে। আমি আগামী পাঁচ, দশ, পনের, কুড়ি বছর পর কেমন ঢাকা দেখতে চাই তার একটি পরিকল্পনা করতে চাই। আপাতত পাঁচ বছরে একটি যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন শহরের স্বপ্ন দেখছি আমি। এই শহরের দরিদ্র বস্তিবাসীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের অবস্থা বদলে দিতে হবে। তারা বস্তিতে থাকবে কেন? আমি কথা বলেছি। বস্তিবাসীরা আমাকে বলেছে, তারা টাকা দিতে রাজি। তাদের প্লট দেওয়া হোক। বস্তি কেন বস্তির মতো থাকবে? সবার জন্য বাসযোগ্য মহানগরীর স্বপ্ন দেখি আমি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments