দুর্নীতি দমন-সরকারকেই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে by মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
মামলা রুজু ও প্রত্যাহারের ফলে দুর্নীতি কমে না, বরং বৃদ্ধিই পায়। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ দায়ের করা হয়, তার মধ্যে দুটি মামলা চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ-রাজনীতিককে দলে টানার জন্য তার জামিন দেওয়া-নেওয়া নিয়ে যে প্রহসনের সৃষ্টি হয় তাতে আদালতের
সুনাম ক্ষুণ্নই হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের মামলার শুনানি বিলম্বিত হয় সরকারের আইন পরামর্শকদের অনাপত্তিতেই
১৯৭১ সালে আমরা অত্যাচার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিদ্রোহ করি। এই বাক্যের আটটি শব্দ ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের ঘোষণা থেকে নেওয়া। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতিবিরোধী আইন এবং ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার মধ্যে বছরখানেকের ব্যবধান ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পর দেশের পুনর্গঠনকল্পে সরকারি অর্থ পরিব্যয় ও টাকাপয়সার লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিকাশ ঘটতে পারে এই দুর্ভাবনায় দুর্নীতি দমন আইন পাস করা হয়। দেশ ভাঙা ও দেশ গড়ার ফলে দুর্নীতিবাজদের সম্মুখে এক মহোচ্ছব দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পায়।
উৎকোচ প্রদান একটি পুরনো প্রথা। কোরআন শরিফে বিচারকদের উৎকোচ না দেওয়ার জন্য নসিহত করা হয়েছে। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন, 'জলে বিচরণশীল মৎস্য জল গ্রহণ করে কি করে না তার নির্ণয় করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সরকারে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের জন্য অর্থ গ্রহণ করে কি-না তা নির্ণয় করা কঠিন।'
ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারই হচ্ছে দুর্নীতি। প্রশাসনযন্ত্রের কার্যকারিতার গতি ঘর্ষণমুক্ত ও দ্রুত করার জন্য যে উৎকোচ প্রদান করা হয় তাকে আমরা ছোট দুর্নীতি বলতে পারি। সামরিক বিমান, জাহাজ, রসদ, পরিবহন ও যোগাযোগযন্ত্র, মহাসড়ক, বাঁধ, সেতু ইত্যাদি প্রকৌশলী উদ্যোগ; রাষ্ট্রীয় ভিত্তিতে ভোগপণ্য ক্রয়-বিক্রয়; স্কুলের পাঠ্যপুস্তক, হাসপাতাল ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং পরামর্শকের ফি ইত্যাদি খাতে মহাদুর্নীতির রাঘববোয়ালরা বিচরণ করে। এক সময় লেখকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকার কিছু লেখকদের পাঁচশ' কপি বই কেনার ব্যবস্থা নেন। লেখকদের কী সুবিধা হয় জানি না। দুর্নীতিবাজ প্রকাশকরা বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি করে এক থোক টাকা অর্জন করেন। দলীয়তা ও দুর্নীতি দুই ঘোড়া একসঙ্গে গাড়ি টানে।
সহস্রহস্ত দুর্নীতি দানবের গতিবিধি সর্বত্র। অফিস-আদালতের কথা সবাই জানে না। কিন্তু এখন এমন সব স্থানে দুর্নীতি হচ্ছে আগে যা কল্পনা করাও যেত না। বিদ্যাদানের জন্য বা স্কুলের নামের জন্য আগে ভালো ছাত্রদের শিক্ষকরা বিনা বেতনে আলাদা করে যত্ন করে পড়াতেন। এখন শিক্ষকরা ক্লাসের পড়ায় ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট টিউশনি করছেন। প্রশ্নকর্তার সঙ্গে পরিচয়ের কথা প্রকাশ করে সাজেশন দিয়ে কোচিং ক্লাসে ছাত্রদের আকৃষ্ট করছেন। ভর্তি হওয়ার আগে স্কুল কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। ভর্তি ফরম কেনার সময় ছাত্রদের বড় ভাইদেরও চাঁদা দিতে হয়। এভাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষা লাভের অধিকার আজ নানাভাবে বিঘি্নত।
অন্যায় উদ্দেশ্যে, অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় ও অযৌক্তিকভাবে সরকারের যে অপব্যয় ঘটে এর প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। আর যে অপব্যয় সামান্য নয়, হাজার হাজার কোটি টাকার মহালোকসানি।
প্রশাসনে দুর্নীতির খাদ যাচাই-পরখ করার জন্য মানবাধিকার কষ্টিপাথরের আশ্রয় নিতে হবে। যে মানবাধিকার সকল মানুষের সমতা, সমান সুযোগের অধিকার এবং আইনের সমক্ষে সমান আশ্রয়ের কথা বলে তা দুর্নীতির কারণে দারুণভাবে বিঘি্নত হয়। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাকে মেনে নিয়ে সকল মানুষকে সমদৃষ্টিতে দেখার যে অঙ্গীকার সংবিধানে করা হয়েছে তা দুর্নীতির কারণে বিঘি্নত হয়। কারণ দুর্নীতি বৈষম্যের সৃষ্টি করে। দুর্নীতির জন্য সবাই সমান সুযোগ পায় না, আইনের সমান আশ্রয় পায় না এবং সরকারি সেবা খাত থেকে সমান সেবাও পায় না। যে সমাজে মানবাধিকার ক্রমাগতভাবে লঙ্ঘিত হয় সেখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে এবং আইলা-সিডরের মতো বড় দুর্বিপাক ঘটলে ধনী-দরিদ্র কারও নিরাপত্তা আর সেখানে নিশ্চিত থাকবে না।
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যে দেশ পরপর পাঁচবার শীর্ষস্থান অধিকার করেছে, যে দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-পৃথিবীর প্রচণ্ডতম শিক্ষাঙ্গন, যে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপজ্জনক সামুদ্রিক বন্দর, যে দেশের একটি ছাড়া প্রত্যেকটি জেলায় একসঙ্গে বোমা বিস্টেম্ফারণ হয়, যে দেশে কর্মরত বিচারক সন্ত্রাসীর হাতে নিহত হন, যে দেশের দু'জন রাষ্ট্রপতি অঘোরে প্রাণ হারান, যে দেশে জেলখানার দুর্ভেদ্য আশ্রয়ে রাজনীতিকরা নিহত হন, যে দেশে উলেল্গখযোগ্য নরহত্যার বিচার হয় না সেই দেশকে আমরা ব্যর্থ না বলে কেউ অনুকম্পাবশত ভঙ্গুর বলে থাকি।
আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটাই। কিন্তু তা রোধ করতে গাঁইগুঁই করি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি হয় ভাশুর নয় ভাগনে হয়ে যান। গণতন্ত্রের পুনরাবির্ভাবের সময় বিচারপতি আনসার আলীকে একটি কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনটি আজও দিনের আলো দেখল না। দুয়েকজন রাজনীতিক ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না। ওই প্রতিবেদনে কি তাদেরই মুখচ্ছবি উজ্জ্বল হয়ে আছে খবরের কাগজে যাদের নাম ফাটে, যাদের নিয়ে হর্স ট্রেডিং হয়? আমাদের দেশের জলবায়ু ঘোড়ার জন্য অনুকূল নয় বলে আমি দল ভাঙাভাঙি খেলাকে খচ্চর নিয়ে টানাটানি বলি।
মামলা রুজু ও প্রত্যাহারের ফলে দুর্নীতি কমে না, বরং বৃদ্ধিই পায়। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ দায়ের করা হয়, তার মধ্যে দুটি মামলা চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ-রাজনীতিককে দলে টানার জন্য তার জামিন দেওয়া-নেওয়া নিয়ে যে প্রহসনের সৃষ্টি হয় তাতে আদালতের সুনাম ক্ষুণ্নই হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের মামলার শুনানি বিলম্বিত হয় সরকারের আইন পরামর্শকদের অনাপত্তিতেই।
বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সময় সরকারকে যারা পরামর্শ দেন তাদের কেউ কেউ চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর অম্লানবদনে সেই বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন এবং এ ব্যাপারে 'স্বার্থের সংঘাত'-এর নীতি সম্পর্কে কোনো দুর্ভাবনাও নেই। কোনো বিব্রতবোধ নেই। আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতাহেতু যে ক্ষতি হচ্ছে তা আমাদের বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হয়। কিন্তু শিক্ষিত বিভীষণদের ষড়যন্ত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা সময়মতো প্রতিহত করতে না পারায় আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে বড় নিদারুণভাবে ব্যর্থ হচ্ছি। সংসদ বর্জনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ চুক্তিগুলো নিয়ে সংসদে কোনোই আলোচনা হচ্ছে না। যেসব তথ্য দেশের জনগণের স্বার্থে উদ্ঘাটিত হয় না, সেসব তথ্য অনিয়মিতভাবে কনসালটেন্সির মাধ্যমে অতি সহজেই পাচার হচ্ছে।
দুর্নীতি এক মহাবিদ্যা না পড়লে ধরা। দুর্নীতির ভেতরে একটা রোমাঞ্চ, অ্যাডভেঞ্চার আছে, আছে উত্তেজনা ও পুলক। দাও মারার লোভ। 'দিলাম ফাঁকি ধরতে পারল না'_ অহঙ্কারের বিষয়।
আজ দেশে দেশে দুর্নীতি বিরাজমান। চীনের মতো শৃঙ্খলাপর পরিবেশে এবং প্রাণদণ্ডের একাধিক দৃষ্টান্ত থাকলেও দুর্নীতির মাত্রা তেমন কমছে না। বড় দেশে দুর্নীতির বড় কেসসা আছে। ১৯৯০ সালের অক্টোবরে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই। বিচারকগণকে কীভাবে শৃঙ্খলা-শাসনের মধ্যে রাখা যায় তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমি মিসিসিপি জুডিসিয়াল পারফরম্যান্স কমিশনের কার্যালয়ে যাই। অসদাচরণের কিছু নমুনা তাদের প্রতিবেদন থেকে উলেল্গখ করি। অন্য বিচারকের বৈচারিক কর্মে অনধিকার হস্তক্ষেপ; অন্য বিচারকের বিরুদ্ধে অযথাযথ আচরণের অভিযোগ, আদালত অবমাননা, আইনের অপব্যবহার, সরকারি পদক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে অন্য বিচারকদের কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রার্থনা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে পুলিশ অফিসারকে ধমক দেওয়া বা তার চাকরি খাওয়ার চেষ্টা করা, কারাবন্দিদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানো, অসদাচরণ-জাতীয় উদ্দেশ্যে কোর্টের কর্মচারীদের ব্যবহার, বিচার প্রণালির এবং কোর্টের এখতিয়ার সম্পর্কিত বিধির লঙ্ঘন, অতিরিক্ত ফি ও খরচ আদায়, বিচার্য বিষয়ে আর্থিক স্বার্থ থাকার, অপরাধীর অবর্তমানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শ্রবণ, জরিমানার প্রতিবেদন না দেওয়া, জরিমানার টাকা তসুরপাত ও নিজের জন্য ব্যয় করা, অনিয়মিত হিসাবরক্ষণ, রাজনৈতিক দলে সক্রিয় থাকা বা বিচারক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরও মেয়র বা মহানগর পুলিশকর্তা হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে ইন্সপেকশন তদারকি একদম উঠে গেছে। সকল কর্মচারী-কর্মকর্তার কাজের দেখাশোনা করা দরকার।
দুর্নীতির শাস্তি হওয়া উচিত। 'লোকটা অবসর নিতে যাচ্ছে, এখন চাকরিচ্যুত হলে পথে বসবে'_ এই অনুকম্পায় আমি বিভাগীয় তদন্ত শেষ হতে দেখেছি। খবরের কাগজে দেখেছি, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে দুর্নীতির জন্য শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে বঙ্গভবনে ডেকে চা খাইয়ে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। মানীর মান মান্যবরগণ সযত্নে রক্ষা করেছেন।
আজকাল দুর্নীতিবাজরা যেমন বদমায়েশ তেমনি বিদগ্ধ ও বিচক্ষণ। গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে হাওয়া বুঝে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়েকশ' কোটি সরকার পাওনা পরিশোধ করেন। কত শো কোটি গায়েব করা হয় তা সৃষ্টিকর্তা হয়তো জানেন। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল না রাখতে পারলে মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী, হাবাগোবা ও নিরীহ আমলা বড়জোর রেজিস্ট্রি অফিস, রেভিনিউ অফিস, থানার ফকিরি দুর্নীতি ধরতে পারবেন তাঁর পক্ষে দেশি ওস্তাদ, দরবেশ ও তাদের আন্তর্জাতিক দোসরদের কেশস্পর্শ করা সহজ হবে না। আজকাল আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে যে অদৃশ্য চৌকস দুর্নীতি হচ্ছে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চালানের অবমূল্যায়ন-অধিমূল্যায়নের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে মানি লন্ডারিং অ্যাক্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। ফলে সরকার যে শুধু ন্যায্য রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, আর্থিক কর্মকাণ্ডে যে বিষময় পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে তাও রোধ করতে পারছে না।
দুর্নীতিবিরোধী চেতনা সৃষ্টির জন্য যারা সুপারিশ করেন এবং মিডিয়ার আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন তাদের আমি শুভেচ্ছা জানাই। একুশের চেতনা বা একাত্তরের চেতনা থুবড়ে রাস্তায় পড়ে আছে। একেবারে নিষ্প্রাণ। নতুন মানববন্ধন সম্পর্কে একজন বড় দুঃখ করে বলেছেন, এমন করে একশ' বছর দাঁড়িয়ে থাকলে এ মানববন্ধনে কিছু হবে না। দুর্নীতি দমন করতে হলে সাফল্যের সঙ্গে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। যদি আপনারা দুর্নীতিবিরোধী প্রচার করতে চান তবে এ পর্যন্ত কোন কোন মহাপ্রাণ দুর্নীতিবাজ এবং তাদের দুর্নীতির রকম কী ছিল যা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে পরে প্রকাশিত হয়েছে তা প্রকাশ করেন। আইনের অছিলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কতটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় তার হাস্যকর বৃত্তান্ত লোকের সমক্ষে তুলে ধরেন। দুর্নীতি দমনে কত নথিপত্র হারিয়েছে বা পথ ভুলেছে তার হিসাব প্রকাশ করেন। কোন কোন মামলা কী কী কারণে কার কার অদক্ষতায় ও অপারঙ্গমতায় এত সময়ক্ষেপণ হয়েছে তা প্রকাশ করেন। দুর্নীতির প্রসার ঠেকাতে হবে_ পহেলা রাতে বিলিল্গ মারতে হবে। এবং সদাশয় সরকারকে যথাযথ আইন প্রণয়ন করে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে।
[দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০১২ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত 'দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা' ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণ]
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান :তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা
১৯৭১ সালে আমরা অত্যাচার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিদ্রোহ করি। এই বাক্যের আটটি শব্দ ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের ঘোষণা থেকে নেওয়া। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতিবিরোধী আইন এবং ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার মধ্যে বছরখানেকের ব্যবধান ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পর দেশের পুনর্গঠনকল্পে সরকারি অর্থ পরিব্যয় ও টাকাপয়সার লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিকাশ ঘটতে পারে এই দুর্ভাবনায় দুর্নীতি দমন আইন পাস করা হয়। দেশ ভাঙা ও দেশ গড়ার ফলে দুর্নীতিবাজদের সম্মুখে এক মহোচ্ছব দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পায়।
উৎকোচ প্রদান একটি পুরনো প্রথা। কোরআন শরিফে বিচারকদের উৎকোচ না দেওয়ার জন্য নসিহত করা হয়েছে। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন, 'জলে বিচরণশীল মৎস্য জল গ্রহণ করে কি করে না তার নির্ণয় করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সরকারে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের জন্য অর্থ গ্রহণ করে কি-না তা নির্ণয় করা কঠিন।'
ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারই হচ্ছে দুর্নীতি। প্রশাসনযন্ত্রের কার্যকারিতার গতি ঘর্ষণমুক্ত ও দ্রুত করার জন্য যে উৎকোচ প্রদান করা হয় তাকে আমরা ছোট দুর্নীতি বলতে পারি। সামরিক বিমান, জাহাজ, রসদ, পরিবহন ও যোগাযোগযন্ত্র, মহাসড়ক, বাঁধ, সেতু ইত্যাদি প্রকৌশলী উদ্যোগ; রাষ্ট্রীয় ভিত্তিতে ভোগপণ্য ক্রয়-বিক্রয়; স্কুলের পাঠ্যপুস্তক, হাসপাতাল ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং পরামর্শকের ফি ইত্যাদি খাতে মহাদুর্নীতির রাঘববোয়ালরা বিচরণ করে। এক সময় লেখকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকার কিছু লেখকদের পাঁচশ' কপি বই কেনার ব্যবস্থা নেন। লেখকদের কী সুবিধা হয় জানি না। দুর্নীতিবাজ প্রকাশকরা বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি করে এক থোক টাকা অর্জন করেন। দলীয়তা ও দুর্নীতি দুই ঘোড়া একসঙ্গে গাড়ি টানে।
সহস্রহস্ত দুর্নীতি দানবের গতিবিধি সর্বত্র। অফিস-আদালতের কথা সবাই জানে না। কিন্তু এখন এমন সব স্থানে দুর্নীতি হচ্ছে আগে যা কল্পনা করাও যেত না। বিদ্যাদানের জন্য বা স্কুলের নামের জন্য আগে ভালো ছাত্রদের শিক্ষকরা বিনা বেতনে আলাদা করে যত্ন করে পড়াতেন। এখন শিক্ষকরা ক্লাসের পড়ায় ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট টিউশনি করছেন। প্রশ্নকর্তার সঙ্গে পরিচয়ের কথা প্রকাশ করে সাজেশন দিয়ে কোচিং ক্লাসে ছাত্রদের আকৃষ্ট করছেন। ভর্তি হওয়ার আগে স্কুল কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। ভর্তি ফরম কেনার সময় ছাত্রদের বড় ভাইদেরও চাঁদা দিতে হয়। এভাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষা লাভের অধিকার আজ নানাভাবে বিঘি্নত।
অন্যায় উদ্দেশ্যে, অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় ও অযৌক্তিকভাবে সরকারের যে অপব্যয় ঘটে এর প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। আর যে অপব্যয় সামান্য নয়, হাজার হাজার কোটি টাকার মহালোকসানি।
প্রশাসনে দুর্নীতির খাদ যাচাই-পরখ করার জন্য মানবাধিকার কষ্টিপাথরের আশ্রয় নিতে হবে। যে মানবাধিকার সকল মানুষের সমতা, সমান সুযোগের অধিকার এবং আইনের সমক্ষে সমান আশ্রয়ের কথা বলে তা দুর্নীতির কারণে দারুণভাবে বিঘি্নত হয়। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাকে মেনে নিয়ে সকল মানুষকে সমদৃষ্টিতে দেখার যে অঙ্গীকার সংবিধানে করা হয়েছে তা দুর্নীতির কারণে বিঘি্নত হয়। কারণ দুর্নীতি বৈষম্যের সৃষ্টি করে। দুর্নীতির জন্য সবাই সমান সুযোগ পায় না, আইনের সমান আশ্রয় পায় না এবং সরকারি সেবা খাত থেকে সমান সেবাও পায় না। যে সমাজে মানবাধিকার ক্রমাগতভাবে লঙ্ঘিত হয় সেখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে এবং আইলা-সিডরের মতো বড় দুর্বিপাক ঘটলে ধনী-দরিদ্র কারও নিরাপত্তা আর সেখানে নিশ্চিত থাকবে না।
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যে দেশ পরপর পাঁচবার শীর্ষস্থান অধিকার করেছে, যে দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-পৃথিবীর প্রচণ্ডতম শিক্ষাঙ্গন, যে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপজ্জনক সামুদ্রিক বন্দর, যে দেশের একটি ছাড়া প্রত্যেকটি জেলায় একসঙ্গে বোমা বিস্টেম্ফারণ হয়, যে দেশে কর্মরত বিচারক সন্ত্রাসীর হাতে নিহত হন, যে দেশের দু'জন রাষ্ট্রপতি অঘোরে প্রাণ হারান, যে দেশে জেলখানার দুর্ভেদ্য আশ্রয়ে রাজনীতিকরা নিহত হন, যে দেশে উলেল্গখযোগ্য নরহত্যার বিচার হয় না সেই দেশকে আমরা ব্যর্থ না বলে কেউ অনুকম্পাবশত ভঙ্গুর বলে থাকি।
আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটাই। কিন্তু তা রোধ করতে গাঁইগুঁই করি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি হয় ভাশুর নয় ভাগনে হয়ে যান। গণতন্ত্রের পুনরাবির্ভাবের সময় বিচারপতি আনসার আলীকে একটি কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনটি আজও দিনের আলো দেখল না। দুয়েকজন রাজনীতিক ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না। ওই প্রতিবেদনে কি তাদেরই মুখচ্ছবি উজ্জ্বল হয়ে আছে খবরের কাগজে যাদের নাম ফাটে, যাদের নিয়ে হর্স ট্রেডিং হয়? আমাদের দেশের জলবায়ু ঘোড়ার জন্য অনুকূল নয় বলে আমি দল ভাঙাভাঙি খেলাকে খচ্চর নিয়ে টানাটানি বলি।
মামলা রুজু ও প্রত্যাহারের ফলে দুর্নীতি কমে না, বরং বৃদ্ধিই পায়। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ দায়ের করা হয়, তার মধ্যে দুটি মামলা চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ-রাজনীতিককে দলে টানার জন্য তার জামিন দেওয়া-নেওয়া নিয়ে যে প্রহসনের সৃষ্টি হয় তাতে আদালতের সুনাম ক্ষুণ্নই হয়। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের মামলার শুনানি বিলম্বিত হয় সরকারের আইন পরামর্শকদের অনাপত্তিতেই।
বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের সময় সরকারকে যারা পরামর্শ দেন তাদের কেউ কেউ চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর অম্লানবদনে সেই বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন এবং এ ব্যাপারে 'স্বার্থের সংঘাত'-এর নীতি সম্পর্কে কোনো দুর্ভাবনাও নেই। কোনো বিব্রতবোধ নেই। আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতাহেতু যে ক্ষতি হচ্ছে তা আমাদের বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হয়। কিন্তু শিক্ষিত বিভীষণদের ষড়যন্ত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা সময়মতো প্রতিহত করতে না পারায় আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে বড় নিদারুণভাবে ব্যর্থ হচ্ছি। সংসদ বর্জনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ চুক্তিগুলো নিয়ে সংসদে কোনোই আলোচনা হচ্ছে না। যেসব তথ্য দেশের জনগণের স্বার্থে উদ্ঘাটিত হয় না, সেসব তথ্য অনিয়মিতভাবে কনসালটেন্সির মাধ্যমে অতি সহজেই পাচার হচ্ছে।
দুর্নীতি এক মহাবিদ্যা না পড়লে ধরা। দুর্নীতির ভেতরে একটা রোমাঞ্চ, অ্যাডভেঞ্চার আছে, আছে উত্তেজনা ও পুলক। দাও মারার লোভ। 'দিলাম ফাঁকি ধরতে পারল না'_ অহঙ্কারের বিষয়।
আজ দেশে দেশে দুর্নীতি বিরাজমান। চীনের মতো শৃঙ্খলাপর পরিবেশে এবং প্রাণদণ্ডের একাধিক দৃষ্টান্ত থাকলেও দুর্নীতির মাত্রা তেমন কমছে না। বড় দেশে দুর্নীতির বড় কেসসা আছে। ১৯৯০ সালের অক্টোবরে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই। বিচারকগণকে কীভাবে শৃঙ্খলা-শাসনের মধ্যে রাখা যায় তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমি মিসিসিপি জুডিসিয়াল পারফরম্যান্স কমিশনের কার্যালয়ে যাই। অসদাচরণের কিছু নমুনা তাদের প্রতিবেদন থেকে উলেল্গখ করি। অন্য বিচারকের বৈচারিক কর্মে অনধিকার হস্তক্ষেপ; অন্য বিচারকের বিরুদ্ধে অযথাযথ আচরণের অভিযোগ, আদালত অবমাননা, আইনের অপব্যবহার, সরকারি পদক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে অন্য বিচারকদের কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রার্থনা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে পুলিশ অফিসারকে ধমক দেওয়া বা তার চাকরি খাওয়ার চেষ্টা করা, কারাবন্দিদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানো, অসদাচরণ-জাতীয় উদ্দেশ্যে কোর্টের কর্মচারীদের ব্যবহার, বিচার প্রণালির এবং কোর্টের এখতিয়ার সম্পর্কিত বিধির লঙ্ঘন, অতিরিক্ত ফি ও খরচ আদায়, বিচার্য বিষয়ে আর্থিক স্বার্থ থাকার, অপরাধীর অবর্তমানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শ্রবণ, জরিমানার প্রতিবেদন না দেওয়া, জরিমানার টাকা তসুরপাত ও নিজের জন্য ব্যয় করা, অনিয়মিত হিসাবরক্ষণ, রাজনৈতিক দলে সক্রিয় থাকা বা বিচারক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরও মেয়র বা মহানগর পুলিশকর্তা হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে ইন্সপেকশন তদারকি একদম উঠে গেছে। সকল কর্মচারী-কর্মকর্তার কাজের দেখাশোনা করা দরকার।
দুর্নীতির শাস্তি হওয়া উচিত। 'লোকটা অবসর নিতে যাচ্ছে, এখন চাকরিচ্যুত হলে পথে বসবে'_ এই অনুকম্পায় আমি বিভাগীয় তদন্ত শেষ হতে দেখেছি। খবরের কাগজে দেখেছি, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে দুর্নীতির জন্য শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে বঙ্গভবনে ডেকে চা খাইয়ে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। মানীর মান মান্যবরগণ সযত্নে রক্ষা করেছেন।
আজকাল দুর্নীতিবাজরা যেমন বদমায়েশ তেমনি বিদগ্ধ ও বিচক্ষণ। গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে হাওয়া বুঝে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়েকশ' কোটি সরকার পাওনা পরিশোধ করেন। কত শো কোটি গায়েব করা হয় তা সৃষ্টিকর্তা হয়তো জানেন। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল না রাখতে পারলে মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী, হাবাগোবা ও নিরীহ আমলা বড়জোর রেজিস্ট্রি অফিস, রেভিনিউ অফিস, থানার ফকিরি দুর্নীতি ধরতে পারবেন তাঁর পক্ষে দেশি ওস্তাদ, দরবেশ ও তাদের আন্তর্জাতিক দোসরদের কেশস্পর্শ করা সহজ হবে না। আজকাল আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে যে অদৃশ্য চৌকস দুর্নীতি হচ্ছে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চালানের অবমূল্যায়ন-অধিমূল্যায়নের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে মানি লন্ডারিং অ্যাক্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। ফলে সরকার যে শুধু ন্যায্য রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, আর্থিক কর্মকাণ্ডে যে বিষময় পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে তাও রোধ করতে পারছে না।
দুর্নীতিবিরোধী চেতনা সৃষ্টির জন্য যারা সুপারিশ করেন এবং মিডিয়ার আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন তাদের আমি শুভেচ্ছা জানাই। একুশের চেতনা বা একাত্তরের চেতনা থুবড়ে রাস্তায় পড়ে আছে। একেবারে নিষ্প্রাণ। নতুন মানববন্ধন সম্পর্কে একজন বড় দুঃখ করে বলেছেন, এমন করে একশ' বছর দাঁড়িয়ে থাকলে এ মানববন্ধনে কিছু হবে না। দুর্নীতি দমন করতে হলে সাফল্যের সঙ্গে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। যদি আপনারা দুর্নীতিবিরোধী প্রচার করতে চান তবে এ পর্যন্ত কোন কোন মহাপ্রাণ দুর্নীতিবাজ এবং তাদের দুর্নীতির রকম কী ছিল যা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে পরে প্রকাশিত হয়েছে তা প্রকাশ করেন। আইনের অছিলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কতটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় তার হাস্যকর বৃত্তান্ত লোকের সমক্ষে তুলে ধরেন। দুর্নীতি দমনে কত নথিপত্র হারিয়েছে বা পথ ভুলেছে তার হিসাব প্রকাশ করেন। কোন কোন মামলা কী কী কারণে কার কার অদক্ষতায় ও অপারঙ্গমতায় এত সময়ক্ষেপণ হয়েছে তা প্রকাশ করেন। দুর্নীতির প্রসার ঠেকাতে হবে_ পহেলা রাতে বিলিল্গ মারতে হবে। এবং সদাশয় সরকারকে যথাযথ আইন প্রণয়ন করে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে।
[দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০১২ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত 'দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা' ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণ]
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান :তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা
No comments