মহাজোট: মান-অভিমানে বছর পার
লুৎফর রহমান: সমন্বয়হীনতা ও মান-অভিমানের টানাপড়েন দিয়েই আরও একটি বছর পার করলো ক্ষমতাসীন মহাজোট। সরকারের তিন বছর মেয়াদ শেষেও সময়ের সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি জোটের শরিক দলগুলো। এছাড়া ছোট শরিকদের মান-অভিমান ভাঙাতে খুব একটা উদ্যোগ নেয়নি প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ। বিদায়ী বছরে শরিকদের নিয়ে এক সঙ্গে বসা বা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনেও সফলতা দেখাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বছর শেষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত গণমিছিল ও সমাবেশেও শরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না। জোটগত এই কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও পরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায় সারে দলটি। এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি জাতীয় পার্টির কোন কর্মী-সমর্থক। সারা বছরে জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শরিক দলের নেতারা বৈঠক করেছেন একবার। তাও আলাদা আলাদাভাবে। গত ডিসেম্বরে গণমিছিল কর্মসূচিকে সামনে রেখে মূলত এই বৈঠক হয়। আর ১৪ দলের সমন্বয় সভা হয়েছে মাত্র একটি।
এছাড়া বছর জুড়ে নানা বিষয়ে মতবিরোধ ও টানাপড়েন চলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য শরিকদের। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মতবিরোধ ও মতদ্বৈধতা দেখা দেয়। সংবিধান সংশোধন, নারী নীতিমালা, ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ নিয়ে সরকারে থেকেও সরকারের বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য শরিক দলের নেতারা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ‘বিছমিল্লাহ’ রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। আর জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের অবস্থান ছিল এর বিপক্ষে। প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ রাখার পক্ষে ছিলেন। আর ১৪ দলের বক্তব্য ছিল- ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এক সঙ্গে চলতে পারে না। তাদের দাবি, সংবিধান সংশোধন হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সংবিধানের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা করার পক্ষে ছিলেন ১৪ দলের নেতারা। সংবিধান সংশোধন বিল পাসের দিনও নানা নাটকীয়তার পর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রথমে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে বিলের পক্ষে ভোট দেন। এর আগে নারী নীতিমালা নিয়েও দ্বিমত দেখা দেয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে। এ নীতিমালার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা অবস্থান নিলেও এর আংশিক বিরোধিতা ছিল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের। নারীনীতি প্রণয়নকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল তার। এদিকে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়েও বছরের শুরু থেকে কথা বলছে শরিক দলগুলো। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সমন্বয় সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ১৪ দলের নেতারা। ওই বৈঠকে খাদ্য ও দ্রব্যমূল্য বিস্তারিত জানানোর জন্য তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে দাবি করেন। বৈঠকে খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করারও প্রস্তাব দেন ১৪ দলের নেতারা। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে তারা এই তিন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে চান। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসেই এ ধরনের একটি বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে পুরো বছরেও এ ধরনের বৈঠকের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই ইস্যুতে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির নেতারাও প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিক জানান, শুধু দ্রব্যমূল্যের বিষয় নয়, আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার দরকার হলেও এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতেও সমন্বয় নেই বলে দাবি করে আসছেন ১৪ দলের নেতারা। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান অনেকটা নীরব হলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের রাজনৈতিক ঐক্যের ২৩ দফা শর্তের অন্যতম শর্ত ছিল এই যুদ্ধাপরাধের বিচার। গত বছর যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল যৌথভাবে রাজধানীতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে থানাভিত্তিক সভা সমাবেশ করে। ১৪ দলের এক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ৭টি বিভাগীয় শহরে মহা সমাবেশ করা হবে। তবে এ পর্যন্ত এ ধরনের কোন সমাবেশ না হলেও ১৪ দলভুক্ত দলগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকেও এ বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও যৌথ কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে দল ও জোটের প্রার্থী সমর্থন নিয়ে মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও মান-অভিমানের বিষয় ঘনীভূত হয়। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় বৈঠকের পর ঘোষণা করেছিলেন মহাজোটগতভাবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রার্থী দেয়া নিয়ে সমঝোতা হলেও ১৪ দলের সঙ্গে এ নিয়ে কোন আলোচনাই করেনি আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হলেও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীকে বসাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে জোটের নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভক্তি নিয়েও বিভক্ত ছিল মহাজোট। এই বিভক্তির পক্ষে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান নিলেও জাতীয় পার্টিসহ অন্য শরিক এ নিয়ে ছিল অনেকটা নীরব। তারা কেউ কেউ এই বিভক্তির সমালোচনাও করেন। সর্বশেষ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে দলীয় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া নিয়েও নাখোশ আওয়ামী লীগের ওপর অন্য শরিক দল। শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ স্থানীয় সরকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নিয়োগ নিয়ে সরকারের অন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও পরামর্শ চাওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টির নেতারা এ বিষয়ে তাদের অভিমানের কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে জোটের শরিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এছাড়া জোটের শরিক জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে আরও কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ছিল শুরু থেকে। কিন্তু বছরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হলেও জোটের শরিক কাউকে স্থান দেয়া হয়নি মন্ত্রিসভায়। এ নিয়ে অভিমান রয়েছে এই তিন শরিক দলের নেতাদের মধ্যে। ক্ষোভ আর অভিমানের কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বরাবরই বলে আসছেন তিনি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবেন। এখন থেকে সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঢাকার বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও নিজ দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে রেখেছেন এরশাদ।
এছাড়া বছর জুড়ে নানা বিষয়ে মতবিরোধ ও টানাপড়েন চলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য শরিকদের। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মতবিরোধ ও মতদ্বৈধতা দেখা দেয়। সংবিধান সংশোধন, নারী নীতিমালা, ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ নিয়ে সরকারে থেকেও সরকারের বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য শরিক দলের নেতারা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ‘বিছমিল্লাহ’ রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। আর জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের অবস্থান ছিল এর বিপক্ষে। প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ রাখার পক্ষে ছিলেন। আর ১৪ দলের বক্তব্য ছিল- ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এক সঙ্গে চলতে পারে না। তাদের দাবি, সংবিধান সংশোধন হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সংবিধানের মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা করার পক্ষে ছিলেন ১৪ দলের নেতারা। সংবিধান সংশোধন বিল পাসের দিনও নানা নাটকীয়তার পর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রথমে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে বিলের পক্ষে ভোট দেন। এর আগে নারী নীতিমালা নিয়েও দ্বিমত দেখা দেয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে। এ নীতিমালার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা অবস্থান নিলেও এর আংশিক বিরোধিতা ছিল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের। নারীনীতি প্রণয়নকালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল তার। এদিকে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়েও বছরের শুরু থেকে কথা বলছে শরিক দলগুলো। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সমন্বয় সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ১৪ দলের নেতারা। ওই বৈঠকে খাদ্য ও দ্রব্যমূল্য বিস্তারিত জানানোর জন্য তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে দাবি করেন। বৈঠকে খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করারও প্রস্তাব দেন ১৪ দলের নেতারা। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে তারা এই তিন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে চান। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসেই এ ধরনের একটি বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে পুরো বছরেও এ ধরনের বৈঠকের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই ইস্যুতে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির নেতারাও প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিক জানান, শুধু দ্রব্যমূল্যের বিষয় নয়, আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার দরকার হলেও এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতেও সমন্বয় নেই বলে দাবি করে আসছেন ১৪ দলের নেতারা। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান অনেকটা নীরব হলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের রাজনৈতিক ঐক্যের ২৩ দফা শর্তের অন্যতম শর্ত ছিল এই যুদ্ধাপরাধের বিচার। গত বছর যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল যৌথভাবে রাজধানীতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে থানাভিত্তিক সভা সমাবেশ করে। ১৪ দলের এক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ৭টি বিভাগীয় শহরে মহা সমাবেশ করা হবে। তবে এ পর্যন্ত এ ধরনের কোন সমাবেশ না হলেও ১৪ দলভুক্ত দলগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকেও এ বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও যৌথ কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে দল ও জোটের প্রার্থী সমর্থন নিয়ে মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও মান-অভিমানের বিষয় ঘনীভূত হয়। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় বৈঠকের পর ঘোষণা করেছিলেন মহাজোটগতভাবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রার্থী দেয়া নিয়ে সমঝোতা হলেও ১৪ দলের সঙ্গে এ নিয়ে কোন আলোচনাই করেনি আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হলেও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীকে বসাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে জোটের নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভক্তি নিয়েও বিভক্ত ছিল মহাজোট। এই বিভক্তির পক্ষে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান নিলেও জাতীয় পার্টিসহ অন্য শরিক এ নিয়ে ছিল অনেকটা নীরব। তারা কেউ কেউ এই বিভক্তির সমালোচনাও করেন। সর্বশেষ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে দলীয় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া নিয়েও নাখোশ আওয়ামী লীগের ওপর অন্য শরিক দল। শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ স্থানীয় সরকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নিয়োগ নিয়ে সরকারের অন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও পরামর্শ চাওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টির নেতারা এ বিষয়ে তাদের অভিমানের কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে জোটের শরিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এছাড়া জোটের শরিক জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে আরও কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ছিল শুরু থেকে। কিন্তু বছরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হলেও জোটের শরিক কাউকে স্থান দেয়া হয়নি মন্ত্রিসভায়। এ নিয়ে অভিমান রয়েছে এই তিন শরিক দলের নেতাদের মধ্যে। ক্ষোভ আর অভিমানের কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বরাবরই বলে আসছেন তিনি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবেন। এখন থেকে সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঢাকার বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও নিজ দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে রেখেছেন এরশাদ।
No comments