চামড়া কিনছেন ট্যানারি মালিকরা-দরকষাকষির প্রথম দিনে অসন্তোষ -বেশি দামে পাচার হচ্ছে ভারতে by ফারজানা লাবনী

কোরবানির পশুর চামড়া অবশেষে কেনা শুরু করেছেন ট্যানারির মালিকরা। গত তিন বছর চামড়া ক্রয়ে দাম বেঁধে দেওয়া হলেও চলতি বছর কোনো দর নির্ধারণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে চামড়ার বাজার মন্দা_এমন দোহাই দিয়ে প্রতি ফুট কাঁচা চামড়া ৬৮ থেকে ৭৫ টাকার বেশি দামে কিনছেন না ট্যানারির মালিকরা। আবার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা ৮৫ থেকে ৮৭ টাকার কমে চামড়া বিক্রিতে রাজি নন।


চামড়া ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, চামড়া বেচাকেনার প্রথম দিন গতকাল রবিবার দেশের প্রায় সব স্থানেই দরকষাকষি চলেছে উভয় পক্ষের। কোনো কোনো জায়গায় ট্যানারি মালিকদের সুবিধামতো দামেই বিক্রি হয়েছে চামড়া। এ কারণে অসন্তোষ ছিল কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আবার এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে দেশের সীমান্ত এলাকার শহরগুলোয়। প্রতিবেশী ভারতে প্রতি বর্গফুট চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। তাই কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা দেশের ট্যানারি মালিকদের চেয়ে প্রতিবেশী দেশে চামড়া বিক্রিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনস (বিটিএ), কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মাচেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিটিএ সভাপতি শাহিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্প্রতি চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল ১৮ ডলার কমেছে কাঁচা চামড়ার দাম। আবার গত বছর অ্যানথ্যাঙ্ আতঙ্কের কারণে স্থানীয় বাজারে চামড়ার স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে স্থানীয় বাজার থেকে বেশি দামে কাঁচা চামড়া কিনে বায়ারদের কাছে স্বাভাবিক দামের চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাল না কিনে পাকিস্তান, ভারত, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ থেকে চামড়া কিনেছেন বায়াররা।' তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দুই বছর থেকে লোকসানের মধ্যে আছেন এ দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ঢাকায় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং রাজধানীর বাইরে ৬০ থেকে ৬৫ টাকার চেয়ে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। শুধু চামড়া কিনলেই হবে না, তা আমাদের আবার বাজারজাত করতে হবে। তাই অধিক দামে কাঁচা চামড়া কেনার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন ব্যবসায়ী এই নেতা।
বর্তমানে ফিনিশড চামড়ার দামও কম বলে কালের কণ্ঠকে জানান বাংলাদেশ ফিনিশডস্ লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এঙ্পোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আওয়াল। তিনি বলেন, প্রতি বর্গফুট ফিনিশড চামড়ার দর গতবার যেখানে ছিল দুই ডলার থেকে চার ডলার সেখানে চলতি সপ্তাহে দাম কমে এক-দেড় ডলার হয়েছে।
দাম কম থাকায় ইতিমধ্যে সীমান্ত পথে প্রায় তিন লাখ পিস চামড়া পাচার হয়েছে বলে জানান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি দেলোয়ার। ভালো দাম না পেলে আনা-নেওয়ার পথে আরো চামড়া পাচার হতে পারে_এমন আশঙ্কা করেন তিনি।
খুলনার শাহপুর এলাকার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, 'এলাকার চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানোর চেয়ে ভারতের সীমান্তে পাঠালে বেশি দাম পাওয়া যায়। ঢাকার ট্যানারির মালিকরা প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৭০ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না। অথচ ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ১০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছেন। তাই তাঁদের (ভারতের ব্যবসায়ীদের) কাছে বিক্রি করা ভালো মনে করেছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এ দেশের ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কেনার অন্যায় চেষ্টা করছেন। ভারতের পশুর চামড়ার চেয়ে এ দেশের কোরবানির পশুর চামড়ার গুণগত মান ভালো। তাই ব্যবসায়ীদের দরকষাকষির এই সুযোগে ভারতের ব্যবসায়ীরা সীমান্ত পথে বেশি দামে চামড়া কিনে নিচ্ছেন। এতে তাঁদের লোকসান নেই বলেও জানান তিনি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এ দেশের চামড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হয় বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। এভাবে চামড়া পাচার হতে থাকলে এ দেশে কাঁচা চামড়ার সংকট হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
বিশ্ববাজারে এ দেশের চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় বলে জানান বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আফতাব খান। লেদার ইঞ্জিনিয়ারস অ্যান্ড টেনোলজিস্টস সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, কোরবানিী চামড়া কয়েক হাত ঘুরে তবেই ট্যানারি মালিকদের কাছে পেঁৗছে। এ ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ীরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনে এলাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনে পরিবহন খরচ যোগ করে ট্যানারির মালিকদের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া সরবরাহ করেন।

No comments

Powered by Blogger.