সেরাদের সেরা মটকু

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানব জাতি সত্যিই বিচিত্র সত্তার অধিকারী। মতি-গতি একেক জনের একেক রকম। কখন যে কার মনে কী খেয়াল চেপে বসে, তা বোঝা বড়ই মুশকিল। পাওলির কথাই ধরুন। পাওলি নাম শুনেই আবার ভেবে বসবেন না যে, ইনি টালিগঞ্জের অভিনেত্রী পাওলি দম। নাম ছাড়া অন্য কিছুতে মোটেও মিল নেই দু'জনের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টার অধিবাসী পাওলির কৃতিত্ব একটাই।


সম্প্রতি তার নাম উঠেছে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। বর্তমান বিশ্বে যে কয়েকজন বেশি ওজনের নারী রয়েছেন, তার মধ্যে তিনিই এখন সর্বশ্রেষ্ঠ! ২০১২ খ্রিস্টাব্দের গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের নতুন সংস্করণে পাওলির নাম সগর্বে চলে আসবে।
পুরো নাম পাওলিন পর্টার। সবাই আদর করে ডাকেন পওলি। বয়স ৪৭ বছর। বর্তমানে পাওলিন পর্টারের ওজন ৩১৭ কিলোগ্রাম। মানে প্রায় আট মণ! বিশাল এ শরীর নিয়ে পাওলির সমস্যাও অনেক। একার চেষ্টায় তিনি কোনো কিছুই করতে পারেন না। গোসল থেকে শুরু করে শপিংমল_ যেখানেই যেতে চান না কেন, সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। অবশ্য সব কাজেই সহযোগিতা করেন ছেলে ডিলান। মাকে বিছানা থেকে তোলা, মোটর হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া, দিনে-রাতে ট্রলিতে খাবার সাজিয়ে দেওয়া_ এর সবই করেন ডিলান।
সাধারণ মার্কিন পরিবারের ছয় জনের সকালের নাস্তার সমপরিমাণ খাবার একাই সাবাড় করেন পাওলিন। প্রতিদিন সকালে তার নাস্তার টেবিলে আধা ডজন ডিম, পাঁচশ' গ্রাম মাংসের তৈরি বেকন, চার টুকরো আলু দিয়ে তৈরি হ্যাশ ব্রাউন, বড় ছয় টুকরো মাখন-পাউরুটি তার চাই-ই চাই। এছাড়াও খান আধা লিটার আইসক্রিম এবং আধা লিটার দুধ! অবশ্য পাওলি বলছেন, এ আর এমন কী? এরপর রয়েছে দুপুরের খাবার। কিন্তু দুপুরের খাবারের কথা গোপন রেখেছেন পাওলিন। রাতের খাবারের কথা অবশ্য ছেলে ডিলানই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মা রাতে চারটি পিৎজা, এক বাটি পাস্তা আর পাঁচশ' গ্রাম মাংস খেয়ে থাকেন। নিরামিষ চলে? না, না, একদম না। হাসতে হাসতে উত্তর দেন ডিলান।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে পাওলিন জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে চ্যাট করার সূত্রে পরিচয় হয় অ্যালেক্সের সঙ্গে। তারপর বিয়ে। কিন্তু এই ওজনের কারণে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তবে একটা আক্ষেপ আছে পাওলিনের। তিনি ওজন বাড়িয়ে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠতে চেয়েছিলেন নাকি স্বামী অ্যালেক্সের জন্যই। বিয়ের সময় পাওলিনের ওজন ছিল ২৭৩ কিলোগ্রাম। তার এ বিশাল বপুর জন্যই পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তবে ছেলে ডিলান কোনো অবস্থাতেই মাকে ছাড়তে নারাজ। একদিকে কলেজে পড়াশোনা, অন্যদিকে মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা নিয়ে দারুণ চিন্তিত ডিলান।
মজার ব্যাপার হলো, পাওলিনের রেকর্ড ভাঙতে অ্যারিজোনার সুজান ইমেন নামে ৩২ বছর বয়সী এক তরুণী উঠেপড়ে লেগেছেন। দিনে খাচ্ছেন কুড়ি হাজার ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার। তবে তাতে আদৌ চিন্তিত নন পাওলি। কারণ, তিনি এখন ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন। রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় ওজন বাড়ানো নিয়ে আর আগ্রহ নেই তার। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দুঃখ করে পাওলিন বলেন, এ ওজনের কারণে স্বামীকে হারিয়েছি। কোনো কাজ করতে পারি না। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই খুব চিন্তা হয়। পাওলিনের এ যাতনার কথা শুনে তার ওজন কমাতে এগিয়ে এসেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ক্রেরিস স্টিল। প্রতিদিন ডাক্তার তাকে দেখে যাচ্ছেন। খাবারের মেন্যু ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধ-পত্তর সম্পর্কেও নানা ধরনের টিপস দিয়ে যাচ্ছেন স্টিল। আমরাও চাই, পাওলি তার ওজন কমিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।
ফয়সাল আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.