ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১২ বছরের ছেলেটির নামে অভিযোগপত্র! by ওমর ফারুক
ঢাকার চকবাজারে এক শিল্পপতির বাসায় কাজ করত ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ৯ বছরের শিশু আকলিমা। গত ৩০ জানুয়ারি সে মারা যায়। গৃহকর্তা দাবি করেন, রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু আট মাস পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে_আকলিমাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আকলিমাদের গ্রামের ১২ বছরের শিশু সুমনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
সুমন একই বাসায় কাজ করলেও আকলিমার মৃত্যুর মাসখানেক আগেই গ্রামে ফিরে গিয়েছিল বলে গ্রামবাসী ও তার পরিবার জানিয়েছে। চকবাজার থানার পুলিশ সুমনকে অভিযুক্ত করে গত ২৪ অক্টোবর চার্জশিটও দিয়েছে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মানুষ হতবাক। তারা বুঝে উঠতে পারছে না, কিভাবে এর প্রতিকার পাবে, কার কাছে যাবে।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর চকবাজার থানাধীন জয়নাগ রোডের ২২/খ নম্বর বাড়িতে আকলিমার মৃত্যু হয়। এতে চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। গৃহকর্তা বরকত মুন্সি জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আকলিমার মৃত্যু হয়েছে। আট মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে- আকলিমাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এতে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। আর সেই হত্যা মামলায় ১৮ সেপ্টেম্বর সুমনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর দেওয়া হয় চার্জশিট।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার সাব ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সুমনকে অভিযুক্ত করে ২৪ অক্টোবর চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না, কয়জন সাক্ষী রয়েছে। তবে ১০-১২ জন হতে পারে।'
ঈদুল আজহার আগের দিন ৬ নভেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উজান চরনওপাড়ায় সুমনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবাসহ বাড়ির সবাই সুমনের চিন্তায় অস্থির। সাংবাদিক এসেছে খবর পেয়েই গ্রামের অনেক লোক জড়ো হয়। সুমনের বাড়ির লোকজন জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে চার-পাঁচজন লোক এসে দরজায় কড়া নাড়ে। সুমনের বাবা দরজা খুলে দেন। তারা ঘরে ঢুকে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জানায়_সুমনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ির সবাইকে চুপ থাকতে বলে তারা বিদায় নেয়। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পর গ্রামবাসী নিশ্চিত হয়, তারা সত্যিই পুলিশ, সাদা পোশাকে এসে সুমনকে নিয়ে গেছে।
প্রতিবেশিরা জানায়, আকলিমা হত্যার মাসখানেক আগে থেকে তারা সুমনকে গ্রামে দেখেছে। তাদের সবার প্রশ্ন_যে ছেলেটি ঘটনার দিন ওই বাড়িতে ছিলই না, সে কি করে ধর্ষণ করে হত্যা করল? প্রতিবেশি জসিম উদ্দিন বলেন, 'আকলিমার যেদিন মৃত্যু সংবাদ শুনলাম, এর মাসখানেক আগে থেকেই সুমনকে বাড়িতে দেখতাম। অন্য শিশুদের সঙ্গে তাকে খেলা করতে ও স্কুলে যেতে দেখেছি।'
উল্লেখ্য, চকবাজার এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন চরনওপাড়া গ্রামের সুফিয়া বেগম। তিনি দুই বছর আগে শিল্পপতি বরকত মুন্সির বাসায় কাজের জন্য একই গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে আকলিমাকে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই আকলিমা ওই বাসায় কাজ করছিল। কিছুদিন পর বরকত মুন্সির পরিবারের কথায় আকলিমাদের গ্রামেরই দিনমজুর নূর ইসলামের ছেলে সুমনকে এনে কাজে দেন সুফিয়া বেগম। এরপর থেকে দুজনই ওই বাসায় কাজ করতে থাকে। সুফিয়া জানান, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ডেকে সুমনকে তাঁর হাতে তুলে দেন গৃহকর্ত্রী। এর পর সুমন গ্রামের বাড়ি ফিরে গিয়ে আবারও তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়।
আকলিমার বাবা জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আকলিমাকে দেখতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় আকলিমা তাকে বলেছিল, 'আমারে তুমি নিয়ে যাও। বাড়িতে আমি না খাইয়া থাকবাম। এই হানে আমার দম বন্ধ হয়ে আয়ে। রাইতে ঘুমাইতে পারি না। সাইবের (গৃহকর্তা) বড় ছেড়াডা (ছেলে) আমারে যন্ত্রণা দেয়। আল্লার দোহাই লাগে আমারে নিয়া যাও।'
দিনমজুর জালাল উদ্দিন মেয়ের কথা না শুনে উল্টো ধমক দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। আফসোস আর শোকের গলায় তিনি বলেন, 'এক মাস পার হতে না হতেই গ্রামে খবর আসে আমার মেয়ে আর নেই।' গৃহকর্তা বরকত মুন্সি জানান, রান্নার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে আকলিমা। তাঁরা ওই দিনই ঢাকায় যান। গভীর রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে লাশসহ তাঁদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গৃহকর্তার লোকজন।
বরকত মুন্সি চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। শেষ পর্যন্ত আট মাস পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পায় পুলিশ। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় আকলিমাকে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর শেখ আ. মোতালেব বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় চকবাজার থানার আরেক সাব-ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলামকে। তিনি তদন্তে নেমে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ইশ্বরগঞ্জের চরনওপাড়ার দিনমজুর নুর ইসলামের ছেলে সুমনকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন ঢাকায়। সুমন বর্তমানে টঙ্গীর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর চকবাজার থানাধীন জয়নাগ রোডের ২২/খ নম্বর বাড়িতে আকলিমার মৃত্যু হয়। এতে চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। গৃহকর্তা বরকত মুন্সি জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আকলিমার মৃত্যু হয়েছে। আট মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে- আকলিমাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এতে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। আর সেই হত্যা মামলায় ১৮ সেপ্টেম্বর সুমনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর দেওয়া হয় চার্জশিট।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার সাব ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সুমনকে অভিযুক্ত করে ২৪ অক্টোবর চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না, কয়জন সাক্ষী রয়েছে। তবে ১০-১২ জন হতে পারে।'
ঈদুল আজহার আগের দিন ৬ নভেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উজান চরনওপাড়ায় সুমনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবাসহ বাড়ির সবাই সুমনের চিন্তায় অস্থির। সাংবাদিক এসেছে খবর পেয়েই গ্রামের অনেক লোক জড়ো হয়। সুমনের বাড়ির লোকজন জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে চার-পাঁচজন লোক এসে দরজায় কড়া নাড়ে। সুমনের বাবা দরজা খুলে দেন। তারা ঘরে ঢুকে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জানায়_সুমনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ির সবাইকে চুপ থাকতে বলে তারা বিদায় নেয়। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পর গ্রামবাসী নিশ্চিত হয়, তারা সত্যিই পুলিশ, সাদা পোশাকে এসে সুমনকে নিয়ে গেছে।
প্রতিবেশিরা জানায়, আকলিমা হত্যার মাসখানেক আগে থেকে তারা সুমনকে গ্রামে দেখেছে। তাদের সবার প্রশ্ন_যে ছেলেটি ঘটনার দিন ওই বাড়িতে ছিলই না, সে কি করে ধর্ষণ করে হত্যা করল? প্রতিবেশি জসিম উদ্দিন বলেন, 'আকলিমার যেদিন মৃত্যু সংবাদ শুনলাম, এর মাসখানেক আগে থেকেই সুমনকে বাড়িতে দেখতাম। অন্য শিশুদের সঙ্গে তাকে খেলা করতে ও স্কুলে যেতে দেখেছি।'
উল্লেখ্য, চকবাজার এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন চরনওপাড়া গ্রামের সুফিয়া বেগম। তিনি দুই বছর আগে শিল্পপতি বরকত মুন্সির বাসায় কাজের জন্য একই গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে আকলিমাকে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই আকলিমা ওই বাসায় কাজ করছিল। কিছুদিন পর বরকত মুন্সির পরিবারের কথায় আকলিমাদের গ্রামেরই দিনমজুর নূর ইসলামের ছেলে সুমনকে এনে কাজে দেন সুফিয়া বেগম। এরপর থেকে দুজনই ওই বাসায় কাজ করতে থাকে। সুফিয়া জানান, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ডেকে সুমনকে তাঁর হাতে তুলে দেন গৃহকর্ত্রী। এর পর সুমন গ্রামের বাড়ি ফিরে গিয়ে আবারও তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়।
আকলিমার বাবা জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আকলিমাকে দেখতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় আকলিমা তাকে বলেছিল, 'আমারে তুমি নিয়ে যাও। বাড়িতে আমি না খাইয়া থাকবাম। এই হানে আমার দম বন্ধ হয়ে আয়ে। রাইতে ঘুমাইতে পারি না। সাইবের (গৃহকর্তা) বড় ছেড়াডা (ছেলে) আমারে যন্ত্রণা দেয়। আল্লার দোহাই লাগে আমারে নিয়া যাও।'
দিনমজুর জালাল উদ্দিন মেয়ের কথা না শুনে উল্টো ধমক দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। আফসোস আর শোকের গলায় তিনি বলেন, 'এক মাস পার হতে না হতেই গ্রামে খবর আসে আমার মেয়ে আর নেই।' গৃহকর্তা বরকত মুন্সি জানান, রান্নার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে আকলিমা। তাঁরা ওই দিনই ঢাকায় যান। গভীর রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে লাশসহ তাঁদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় গৃহকর্তার লোকজন।
বরকত মুন্সি চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। শেষ পর্যন্ত আট মাস পর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পায় পুলিশ। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় আকলিমাকে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর শেখ আ. মোতালেব বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় চকবাজার থানার আরেক সাব-ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলামকে। তিনি তদন্তে নেমে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ইশ্বরগঞ্জের চরনওপাড়ার দিনমজুর নুর ইসলামের ছেলে সুমনকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন ঢাকায়। সুমন বর্তমানে টঙ্গীর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।
No comments