বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ by জাকির হোসেন

সামগ্রিকভাবে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ থাকলেও দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে নিট এফডিআই বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তথ্য চূড়ান্ত হিসাব নয়। এটি প্রাক্কলিত হিসাব।


বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিট এফডিআইর প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট এফডিআই ছিল ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এফডিআই বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের এফডিআইর হিসাবটি চূড়ান্ত নয়। এটি মূলত আগের প্রবণতা এবং সাম্প্রতিক সময়ের কিছু তথ্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলিত হিসাব। সাধারণত চূড়ান্ত হিসাবের সঙ্গে এ প্রাক্কলনের বড় ধরনের পার্থক্য থাকে না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এফডিআই কিছুটা বেড়েছে। এর মূল কারণ, তৈরি পোশাক খাতে কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত কয়েক মাসে বিদেশিরা বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা কিনেছে। এগুলোর সমষ্টিগত বিনিয়োগ মোট এফডিআই বাড়াতে সহায়তা করেছে।
অবশ্য এফডিআইর এ পরিসংখ্যানে খুশি হওয়ার তেমন কিছু নেই বলে মনে করেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি আফতাব উল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এফডিআই ছিল খুবই কম। এ দুর্বল ভিত্তির ওপর যেটুকু বেড়েছে তাতে শতকরা হিসাবে অনেক বেশি মনে হচ্ছে। তার মতে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ এফডিআই আসতে পারত তার খুব কম অংশই বাস্তবে আসছে। বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামো সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তেমন আকর্ষণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আলোচ্য সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও খানিকটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি : চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) পরিসংখ্যান দেখে মনে হয়েছিল বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর চাপ কমে আসছে। সেপ্টেম্বরের তথ্য ওই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরকে ধরে প্রথম তিন মাসে পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৪ কোটি ডলার বেশি। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সামগ্রিক লেনদেনে ভারসাম্যে ঘাটতি হয়েছে ৪০ কোটি ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.