তিন-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী সেবার বাইরে by বদরুদোজ্জা সুমন
দেশে তিন-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী সেবার আওতার বাইরে রয়েছে। সেবা সম্প্রসারণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও সেটিকে অপর্যাপ্ত বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক বছরে প্রতিরোধ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও কার্যত অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) পক্ষ থেকে প্রতিরোধ বিষয়ক একটি জাতীয় নীতিমালার খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও অগ্রগতি নেই। বাডাস সূত্র জানায়, দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার মোট খরচের মাত্র ২৫ শতাংশের জোগান দিচ্ছে সরকার।
বাকি অর্থ সমিতিকে জোগাড় করতে হয়। সীমিত সামর্থ্যের কারণে আক্রান্তদের শনাক্তকরণ ও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডায়াবেটিক সমিতি। এ অবস্থায় আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- 'ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের এখনই সময়।' জেলা পর্যায়ের শাখাগুলোকে প্রতি বছর মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকা হারে সহায়তা দিচ্ছে বাডাস। জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ বলছেন, এ সহায়তা খুবই অপ্রতুল। অর্থের অভাবে সেবা বিঘি্নত হচ্ছে। নতুন রোগীর চাপ সামলানো
কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) হালনাগাদ তথ্যমতে, প্রতি আট সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর সাড়ে চার মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে মারা যায়। দিবস উপলক্ষে আইডিএফ প্রেসিডেন্ট জন ক্লদ 'গো ব্লু ফর ডায়াবেটিস' শীর্ষক বার্তায় এই মরণব্যাধি প্রতিরোধে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও মনোযোগী এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো গৃহীত 'গ্গ্নোবাল ডায়াবেটিস প্ল্যান ২০১১-২০২১'-এ রোগীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রতিরোধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার তাগিদ দেওয়া হয়।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা জানান, ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এদেশের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। আইডিএফের আহ্বানের অনেকটা বিপরীত চিত্র এখানে বিরাজ করছে। সেবা পাচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী। ডায়াবেটিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা আনুমানিক ৭০ লাখ। রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল, জেলা শহরে সমিতির অধিভুক্ত ৫৯টি শাখা এবং ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন) ও হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এইচসিডিপি) আওতাধীন ২৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবাকাজ চলছে।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান সমকালকে বলেন, 'সেবার চাহিদা ও আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সরকারকে আরেকটু বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তাই এ খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি প্রকারান্তরে স্বাস্থ্যব্যয় কমাবে।'
বারডেম হাসপাতালের তথ্য-উপাত্ত মতে, নিবন্ধিত রোগীর মধ্যে পাঁচ শতাংশ শিশু। সে হিসাবে প্রায় তিন লাখ শিশু জন্মগতভাবে ডায়াবেটিসে ভুগছে।
আন্তর্জাতিক সুপারিশের উল্টোচিত্র
জানা গেছে, ২০০৬ সালে জাতিসংঘের ৬১/২২৫ নং রেজুলেশনে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি 'জাতীয় নীতিমালা' গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর জাতীয় নীতিমালার খসড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ডায়াবেটিক সমিতি। একই বছর ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আরেকটি কপি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১১ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ২১ নভেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে খসড়াটি পাঠানো হয়। এর কিছুদিন পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের দফতরেও সেটি পাঠানো হয়েছে। খসড়া ঘেঁটে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকায় শারীরিক কসরত নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, নীতিমালা গ্রহণের সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ তেমন নেই। তারপরও সেটি তিন বছর ঝুলে আছে।
জেলা পর্যায়ে বাড়ছে রোগী
ডায়াবেটিস এর আগে নগরের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও জেলা পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য খুবই উদ্বেগজনক। বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিবন্ধিত রয়েছেন হাজার হাজার রোগী। ডায়াবেটিক সমিতির অধিভুক্ত কয়েকটি শাখায় খোঁজ নিয়ে রোগীর চাপ দ্রুত বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা রাজধানী থেকে অল্পদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। মনিটরিং দুর্বলতার কথাও বলেছেন তারা।
কুমিল্লা জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ডা. এম ওয়ালীউল্লাহ সমকালকে বলেন, ১০০ বেডের হাসপাতালের বিপরীতে প্রায় ৭০ হাজার রোগী নিবন্ধিত আছেন। দ্রুত এই সংখ্যা বাড়ছে।
সমিতির জয়পুরহাট জেলা শাখায় নিবন্ধিত রোগী প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। প্রতিদিন সেবা নিতে আসে গড়ে ১৫০ জন। বিপরীতে প্রশিক্ষিত ডাক্তার আছেন মাত্র পাঁচজন। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব চৌধুরী সমকালকে বলেন, চিকিৎসকরা অল্পদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রোগীর চাপ বাড়লে অসহায় হয়ে পড়তে হয়।
চট্টগ্রামে সমিতির শাখা ৭০ বেডের হাসপাতাল ও ৩৫ চিকিৎসক নিয়ে চলছে। নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, বছরে একবার কেন্দ্র থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে অর্থের জোগানে কার্যক্রম চলছে।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা শাখায় মাত্র দু'জন চিকিৎসককে প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। শাখার সভাপতি শহিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এত ছোট জেলায় সাত হাজার রোগী নিবন্ধিত। এটি ডায়াবেটিসের ঊর্ধ্বমুখী প্রকোপের নজির। প্রতিরোধমূলক প্রচার জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বারডেম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা জানান, টাইপ-১ ডায়াবেটিস (ইনসুলিন নির্ভর) প্রতিরোধ করা যায় না। শিশুরা জন্মগতভাবেই এতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে টাইপ-২ (বড়দের হয়) ডায়াবেটিস ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
বারডেমের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজিম উদ্দিন বলেন, ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ পরীক্ষা করা, মুটিয়ে না যাওয়া, পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং ব্যায়াম করতে হবে। অন্যথায় কিডনি বিকল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ডায়াবেটিস দিবসে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং অন্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সচেতনতার অভাবেই এদেশে প্রতি বছর অসংখ্য ডায়াবেটিক রোগী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার শিকার হন। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।
দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোগটি প্রতিরোধে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা এবং বিকেল ৪টায় বারডেমে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) হালনাগাদ তথ্যমতে, প্রতি আট সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর সাড়ে চার মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে মারা যায়। দিবস উপলক্ষে আইডিএফ প্রেসিডেন্ট জন ক্লদ 'গো ব্লু ফর ডায়াবেটিস' শীর্ষক বার্তায় এই মরণব্যাধি প্রতিরোধে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও মনোযোগী এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো গৃহীত 'গ্গ্নোবাল ডায়াবেটিস প্ল্যান ২০১১-২০২১'-এ রোগীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রতিরোধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার তাগিদ দেওয়া হয়।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা জানান, ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এদেশের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। আইডিএফের আহ্বানের অনেকটা বিপরীত চিত্র এখানে বিরাজ করছে। সেবা পাচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী। ডায়াবেটিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা আনুমানিক ৭০ লাখ। রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল, জেলা শহরে সমিতির অধিভুক্ত ৫৯টি শাখা এবং ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন) ও হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এইচসিডিপি) আওতাধীন ২৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবাকাজ চলছে।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান সমকালকে বলেন, 'সেবার চাহিদা ও আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সরকারকে আরেকটু বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তাই এ খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি প্রকারান্তরে স্বাস্থ্যব্যয় কমাবে।'
বারডেম হাসপাতালের তথ্য-উপাত্ত মতে, নিবন্ধিত রোগীর মধ্যে পাঁচ শতাংশ শিশু। সে হিসাবে প্রায় তিন লাখ শিশু জন্মগতভাবে ডায়াবেটিসে ভুগছে।
আন্তর্জাতিক সুপারিশের উল্টোচিত্র
জানা গেছে, ২০০৬ সালে জাতিসংঘের ৬১/২২৫ নং রেজুলেশনে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি 'জাতীয় নীতিমালা' গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর জাতীয় নীতিমালার খসড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ডায়াবেটিক সমিতি। একই বছর ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আরেকটি কপি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১১ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ২১ নভেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে খসড়াটি পাঠানো হয়। এর কিছুদিন পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের দফতরেও সেটি পাঠানো হয়েছে। খসড়া ঘেঁটে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকায় শারীরিক কসরত নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, নীতিমালা গ্রহণের সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ তেমন নেই। তারপরও সেটি তিন বছর ঝুলে আছে।
জেলা পর্যায়ে বাড়ছে রোগী
ডায়াবেটিস এর আগে নগরের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও জেলা পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য খুবই উদ্বেগজনক। বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিবন্ধিত রয়েছেন হাজার হাজার রোগী। ডায়াবেটিক সমিতির অধিভুক্ত কয়েকটি শাখায় খোঁজ নিয়ে রোগীর চাপ দ্রুত বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা রাজধানী থেকে অল্পদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। মনিটরিং দুর্বলতার কথাও বলেছেন তারা।
কুমিল্লা জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ডা. এম ওয়ালীউল্লাহ সমকালকে বলেন, ১০০ বেডের হাসপাতালের বিপরীতে প্রায় ৭০ হাজার রোগী নিবন্ধিত আছেন। দ্রুত এই সংখ্যা বাড়ছে।
সমিতির জয়পুরহাট জেলা শাখায় নিবন্ধিত রোগী প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। প্রতিদিন সেবা নিতে আসে গড়ে ১৫০ জন। বিপরীতে প্রশিক্ষিত ডাক্তার আছেন মাত্র পাঁচজন। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব চৌধুরী সমকালকে বলেন, চিকিৎসকরা অল্পদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রোগীর চাপ বাড়লে অসহায় হয়ে পড়তে হয়।
চট্টগ্রামে সমিতির শাখা ৭০ বেডের হাসপাতাল ও ৩৫ চিকিৎসক নিয়ে চলছে। নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, বছরে একবার কেন্দ্র থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে অর্থের জোগানে কার্যক্রম চলছে।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা শাখায় মাত্র দু'জন চিকিৎসককে প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। শাখার সভাপতি শহিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এত ছোট জেলায় সাত হাজার রোগী নিবন্ধিত। এটি ডায়াবেটিসের ঊর্ধ্বমুখী প্রকোপের নজির। প্রতিরোধমূলক প্রচার জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বারডেম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা জানান, টাইপ-১ ডায়াবেটিস (ইনসুলিন নির্ভর) প্রতিরোধ করা যায় না। শিশুরা জন্মগতভাবেই এতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে টাইপ-২ (বড়দের হয়) ডায়াবেটিস ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
বারডেমের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজিম উদ্দিন বলেন, ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ পরীক্ষা করা, মুটিয়ে না যাওয়া, পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং ব্যায়াম করতে হবে। অন্যথায় কিডনি বিকল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ডায়াবেটিস দিবসে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং অন্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সচেতনতার অভাবেই এদেশে প্রতি বছর অসংখ্য ডায়াবেটিক রোগী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার শিকার হন। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।
দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোগটি প্রতিরোধে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা এবং বিকেল ৪টায় বারডেমে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
No comments