সাবধান...! by রবিন মাহমুদ
আমাদের দেশের নেতাদের লেখাপড়ার ডিগ্রি থাক আর না-ই থাক, সময়মতো তারা একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার মতো ডিগ্রি ঠিকই ধারণ করেন। একই সঙ্গে আরও একটি ব্যাপার বেশ ভালোভাবেই উঠে এসেছে, আর তা হলো নেত্রীদ্বয়ের প্রতি নেতাদের আনুগত্য! অতি সম্প্রতি নাসিক (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন) নির্বাচনে আমরা এ দুটি বিষয় খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল নাসিক নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে (মধ্যরাতের পর) ভোট গ্রহণের ৮ ঘণ্টা আগে বিএনপি কৌশলগত (!) কারণে নির্বাচন বয়কট করলে নির্বাচন দাঁড়ায় বিএনপির ভাষায় 'ভাই-বোনের' নির্বাচনে। নির্বাচনের আগে যাদের সাপ-বেজি বললেও বোধহয় কম বলা হতো, নির্বাচনের পর তারাই আবার ভাই-বোনের আদল পেয়ে গেছেন। ভাই-বোনের এই আদলটির পেছনে যে শুধু সরকারি দলেরই কৃতিত্ব তা নয়, নামকরণের জন্য অন্তত বিরোধী দলও কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। আর আমাদের নেত্রীদ্বয় আবারও প্রমাণ করলেন, রাজনীতিতে শেষ কথাটি তারাই বলেন।
আর সে কারণে তিন ঘণ্টা আগের অনড় তৈমূর আলম খন্দকার তিন ঘন্টা পরে রাজি হয়ে যান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। শামীম ওসমান ও হঠাৎ ভোল পাল্টে ফেলেন 'চমৎকার' নির্বাচন হয়েছে বলে 'সন্তোষ' প্রকাশ করেন।
একসময় রাজা-বাদশাহদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বোঝাতে বলা হতো, অমুক রাজার কথায় বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। এখনকার বনে-বাদাড়ে বাঘ কিংবা মহিষ কোনোটাই তেমন একটা মেলে না। মহিষ হয়ে গেছে গৃহপালিত প্রাণী আর বাঘ যতটা না বনে দেখা যায় তার চেয়ে বেশি চিড়িয়াখানা বা সার্কাসে দেখা যায়। তার চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এসব প্রাণীর (!) আনাগোনা বেশি। না বাস্তবে নয়, এদের নামের পদবির বদৌলতে। এই যেমন নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা তাকে সিংহপুরুষ বলে থাকেন। আইভী খুব সাধারণ রাজনীতিবিদ। তাই তার কপালে এখনও এমন পদবি জোটেনি। জুটলেও হরিণ কিংবা মহিষ টাইপের নিরীহ গোছের কোনো প্রাণীর নামের পদবিই জুটত।
সেই হিসাবে বিচার করলে আমাদের নেত্রীরাও কম ক্ষমতাধর নন। নইলে কি আর শামীম-আইভীকে পাশাপাশি রেখে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ঘোষণা দেন!
নির্বাচনের দিন পরাজয় নিশ্চিত জেনে শামিম ওসমান প্রশাসন ও পুলিশের দিকে আঙুল তাক করেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও সোডা দিয়ে ধুইয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। তিনি বারবার উচ্চারণ করেন, এই প্রশাসন 'কমপ্লিটলি বায়াসড'। কিন্তু নির্বাচনের দু'দিন পরেই তিনি তার সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। আইভীকে বোন সম্বোধন করেন এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে বলেও মত দেন। মজার ব্যাপার হলো এই দুদিনে কী এমন হলো যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে গেল? আর শামিম ওসমানের সেই 'কমপ্লিটলি বায়াসড' থিউরিই বা কোথায় গেল? সবই নেত্রীর কারিশমা। গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের 'দিন বদলের সনদ' এর ধারাবাহিকতায় চারদিকে এখন শুধু বদলে দেওয়ার স্লোগান। এর ব্যতিক্রম নন শামিম ওসমানও। তিনিও বদলে দিতে চান। তবে ইংলিশ ভার্সনে। ওনার স্লোগান হলো_চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ। নির্বাচনের আগেই ওনার ইমেজ নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। আগের 'ইমেজ' থেকে মুক্তির জন্য কাজ করা উচিত ছিল। উচিত ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তবেই নির্বাচনের সময় বিনা পয়সায় মানুষকে পাশে পাওয়া যেত। ঢাকা থেকে নেতা কিংবা ইডেন কলেজ থেকে কর্মী হায়ার করতে হতো না। নারায়ণগঞ্জবাসী যখন আগের বর্ধিত বাস ভাড়াতেই নাকাল, তখন তিনি উল্টো বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য পক্ষ নিলেন বন্ধুবর বাস মালিকদের! নারায়ণগঞ্জবাসী এসবের জবাব দিয়েছে ব্যালটে। ইমেজ কিংবা নারায়ণগঞ্জ নয়, বদলাতে হবে নিজেকে। উল্টে যাওয়ার ডিগ্রি যদি নিতেই হয় তবে সে ডিগ্রি হতে হবে নিজের নীতির ক্ষেত্রে। স্বার্থের জন্য নয়, একশ আশি ডিগ্রি ঘুরতে হবে নিজের ইমেজ বদলাতে, জনমানুষের ভাগ্য বদলাতে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য নয়! আমরাও চাই একেএম শামিম ওসমান 'চেঞ্জ' হোন, চেঞ্জ হোক তার ইমেজ!
প্রধানমন্ত্রী নাকি শামীম ওসমানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। কারণ তিনি চাইলে ১৫ মিনিটে সব কেন্দ্র দখল করতে পারতেন কিন্তু তিনি করেননি(!)। বরং পরাজয় জেনেও নির্বাচন করেছেন। সে ক্ষেত্রে আরও একজন তার আনুগত্যের কারণে তার নেত্রীর কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা পেয়েছেন, তিনি হলেন তৈমুর আলম খন্দকার। ইনিও শামীম ওসমানের চেয়ে কম যান না। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল, আবার নেত্রীর 'কারিশমা'র কল্যাণে নির্বাচন ব্যর্থ হয়েছে। এদের বদলে যাওয়ার ধরন দেখে ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে বদলে যাওয়ার স্লোগান তবে সত্যি সত্যিই কাজ করছে। নেত্রীদ্বয়ের ছোঁয়ায় এরা ঠিকই বদলে গেছেন। তৈমুরের নাক কেটে শামীমের যাত্রা ভঙ্গ করা বিএনপি নেত্রীর কৃতজ্ঞতা পাওয়া তৈমুর আর পরাজয় জেনেও নির্বাচন করা শামীম তাদের নেত্রীদের কৃতজ্ঞতায় মগ্ন থাকুন, আর নেত্রীদ্বয় মগ্ন থাকুন জনরায় বুঝতে না পারার মতো বিস্ময়কর অজ্ঞতায়!
আর সে কারণে তিন ঘণ্টা আগের অনড় তৈমূর আলম খন্দকার তিন ঘন্টা পরে রাজি হয়ে যান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। শামীম ওসমান ও হঠাৎ ভোল পাল্টে ফেলেন 'চমৎকার' নির্বাচন হয়েছে বলে 'সন্তোষ' প্রকাশ করেন।
একসময় রাজা-বাদশাহদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বোঝাতে বলা হতো, অমুক রাজার কথায় বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। এখনকার বনে-বাদাড়ে বাঘ কিংবা মহিষ কোনোটাই তেমন একটা মেলে না। মহিষ হয়ে গেছে গৃহপালিত প্রাণী আর বাঘ যতটা না বনে দেখা যায় তার চেয়ে বেশি চিড়িয়াখানা বা সার্কাসে দেখা যায়। তার চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এসব প্রাণীর (!) আনাগোনা বেশি। না বাস্তবে নয়, এদের নামের পদবির বদৌলতে। এই যেমন নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা তাকে সিংহপুরুষ বলে থাকেন। আইভী খুব সাধারণ রাজনীতিবিদ। তাই তার কপালে এখনও এমন পদবি জোটেনি। জুটলেও হরিণ কিংবা মহিষ টাইপের নিরীহ গোছের কোনো প্রাণীর নামের পদবিই জুটত।
সেই হিসাবে বিচার করলে আমাদের নেত্রীরাও কম ক্ষমতাধর নন। নইলে কি আর শামীম-আইভীকে পাশাপাশি রেখে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ঘোষণা দেন!
নির্বাচনের দিন পরাজয় নিশ্চিত জেনে শামিম ওসমান প্রশাসন ও পুলিশের দিকে আঙুল তাক করেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও সোডা দিয়ে ধুইয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। তিনি বারবার উচ্চারণ করেন, এই প্রশাসন 'কমপ্লিটলি বায়াসড'। কিন্তু নির্বাচনের দু'দিন পরেই তিনি তার সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। আইভীকে বোন সম্বোধন করেন এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে বলেও মত দেন। মজার ব্যাপার হলো এই দুদিনে কী এমন হলো যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে গেল? আর শামিম ওসমানের সেই 'কমপ্লিটলি বায়াসড' থিউরিই বা কোথায় গেল? সবই নেত্রীর কারিশমা। গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের 'দিন বদলের সনদ' এর ধারাবাহিকতায় চারদিকে এখন শুধু বদলে দেওয়ার স্লোগান। এর ব্যতিক্রম নন শামিম ওসমানও। তিনিও বদলে দিতে চান। তবে ইংলিশ ভার্সনে। ওনার স্লোগান হলো_চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ। নির্বাচনের আগেই ওনার ইমেজ নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। আগের 'ইমেজ' থেকে মুক্তির জন্য কাজ করা উচিত ছিল। উচিত ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তবেই নির্বাচনের সময় বিনা পয়সায় মানুষকে পাশে পাওয়া যেত। ঢাকা থেকে নেতা কিংবা ইডেন কলেজ থেকে কর্মী হায়ার করতে হতো না। নারায়ণগঞ্জবাসী যখন আগের বর্ধিত বাস ভাড়াতেই নাকাল, তখন তিনি উল্টো বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য পক্ষ নিলেন বন্ধুবর বাস মালিকদের! নারায়ণগঞ্জবাসী এসবের জবাব দিয়েছে ব্যালটে। ইমেজ কিংবা নারায়ণগঞ্জ নয়, বদলাতে হবে নিজেকে। উল্টে যাওয়ার ডিগ্রি যদি নিতেই হয় তবে সে ডিগ্রি হতে হবে নিজের নীতির ক্ষেত্রে। স্বার্থের জন্য নয়, একশ আশি ডিগ্রি ঘুরতে হবে নিজের ইমেজ বদলাতে, জনমানুষের ভাগ্য বদলাতে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য নয়! আমরাও চাই একেএম শামিম ওসমান 'চেঞ্জ' হোন, চেঞ্জ হোক তার ইমেজ!
প্রধানমন্ত্রী নাকি শামীম ওসমানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। কারণ তিনি চাইলে ১৫ মিনিটে সব কেন্দ্র দখল করতে পারতেন কিন্তু তিনি করেননি(!)। বরং পরাজয় জেনেও নির্বাচন করেছেন। সে ক্ষেত্রে আরও একজন তার আনুগত্যের কারণে তার নেত্রীর কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা পেয়েছেন, তিনি হলেন তৈমুর আলম খন্দকার। ইনিও শামীম ওসমানের চেয়ে কম যান না। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল, আবার নেত্রীর 'কারিশমা'র কল্যাণে নির্বাচন ব্যর্থ হয়েছে। এদের বদলে যাওয়ার ধরন দেখে ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে বদলে যাওয়ার স্লোগান তবে সত্যি সত্যিই কাজ করছে। নেত্রীদ্বয়ের ছোঁয়ায় এরা ঠিকই বদলে গেছেন। তৈমুরের নাক কেটে শামীমের যাত্রা ভঙ্গ করা বিএনপি নেত্রীর কৃতজ্ঞতা পাওয়া তৈমুর আর পরাজয় জেনেও নির্বাচন করা শামীম তাদের নেত্রীদের কৃতজ্ঞতায় মগ্ন থাকুন, আর নেত্রীদ্বয় মগ্ন থাকুন জনরায় বুঝতে না পারার মতো বিস্ময়কর অজ্ঞতায়!
No comments