পবিত্র কোরআনের আলো-লুত (আ.)-এর পর শোয়াইব (আ.)-এর সম্প্রদায়ের অনৈতিকতার কাহিনী
৮২. ওয়া মা কানা জাওয়াবা ক্বাওমিহী ইল্লা আন ক্বালূ আখরিজূহুম মিন ক্বারইয়াতিকুম; ইন্নাহুম উনাছুইঁ ইয়াতাত্বাহ্হারূন।৮৩. ফাআনজাইনাহু ওয়া আহ্লাহূ ইল্লাম রাআতাহূ কানাত মিনাল গাবিরীন।৮৪. ওয়া আমত্বারনা আলাইহিম মাত্বারা; ফান্যুর কাইফা কানা আ'কি্ববাতুল মুজরিমীন।
৮৫. ওয়া ইলা মাদইয়ানা আখাহুম্ শুআ'ইবা; ক্বালা ইয়া ক্বাওমি'বুদুল্লাহা মা লাকুম্ মিন ইলাহিন গাইরাহূ; ক্বাদ জাআতকুম বায়্যিনাতুম মির রাবি্বকুম ফাআওফুল কাইলা ওয়াল মীযানা ওয়ালা তাবখাছুন্নাছা আশ্ইয়াআহুম ওয়ালা তুফসিদূ ফিল আরদ্বি বা'দা ইসলাহিহা; যালিকুম খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম মুমিনীন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৮২-৮৫]
অনুবাদ : ৮২. তাঁর অর্থাৎ লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের উত্তর ছিল কেবল এটাই যে এদের তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন মানুষ, যারা খুব পবিত্র থাকতে চায়।
৮৩. এরপর আমি লুত এবং তাঁর পরিবারবর্গকে সেই জনপদ থেকে বের করে এনে রক্ষা করলাম, তবে তাঁর স্ত্রী ছাড়া। তিনি ওই সব লোকের মধ্যে পড়ে রইলেন, যারা শাস্তিতে নিপতিত হয়েছিল।
৮৪. এরপর আমি তাঁদের ওপর শান্তির বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। লক্ষ করে দেখুন, সেই পাপাচারীদের পরিণতি কেমন হয়েছিল।
৮৫. আর মাদায়ান শহরে আমি তাদের এক ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তোমরা পরিমাপ ও ওজনে কখনো কম দেবে না এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্যগুলো দেওয়ার বেলায় তাদের অধিকার খর্ব করবে না। আর আল্লাহর সৃষ্ট এই পৃথিবীতে সংস্কার-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।
ব্যাখ্যা : ৮২, ৮৩ ও ৮৪ নম্বর আয়াতে লুত আলাইহিস সালামের অর্ধ অসভ্য জাতির পাপাচার ও তাদের পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। লুত (আ.) যখন মাদুম এলাকার মানুষকে তাদের সমকামিতা ও পাপাচারের তীব্র সমালোচনা করে তাদের সত্য, সুন্দর, সভ্যতার পথে আনার আহ্বান জানালেন, তখন তারা বহিরাগত নবী লুতকে তাদের জনপদ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। নবী লুত (আ.) তাঁর পরিবারবর্গ ও স্বল্পসংখ্যক মুমিন সহচরকে নিয়ে সে এলাকা ত্যাগ করলেন এবং আল্লাহর গজবে পড়ে সে এলাকা পুরোপুরি মিসমার হয়ে গেল। সে সময় তাঁর স্ত্রীও স্বামীর অবাধ্য হয়ে সেখানে থেকে গিয়েছিলেন এবং গজবে নিপতিত হয়েছিলেন। এ সম্প্রদায়টির কোনো চিহ্ন আর পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই।
৮৫ নম্বর আয়াতে মাদায়ানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং মাদায়ানবাসীর মধ্য থেকে যে নবী শোয়াইবকে তাঁদের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছিলেন, সে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। মাদায়ান প্রকৃতপক্ষে একটি গোত্রের নাম। সেই গোত্রের আবাসভূমিকে কেন্দ্র করে একটি শহর গড়ে উঠেছিল এবং এর নাম হয়েছিল মাদায়ান। কথিত আছে, মাদায়ান হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এক সহচরের নাম। তিনি সে এলাকায় বসবাস স্থাপন করে সেখানকার বাসিন্দাদের আল্লাহর পথে পরিচালিত করার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। পরে সেখানে মাদায়ান নামেই এক সমৃদ্ধ শহর গড়ে উঠেছিল। হজরত শোয়াইব (আ.)-এর আমল ছিল হজরত মুসা (আ.)-এর আমলের সামান্য আগে। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, শোয়াইব (আ.) মুসা (আ.)-এর শ্বশুর ছিলেন। এক সময়ের সমৃদ্ধ ও সৎ লোক-অধ্যুষিত মাদায়ানবাসী কালক্রমে কুফর ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা মাপজোখে হেরফের করত এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদও কেড়ে নিত। তারা ব্যবসায়ী কাফেলাগুলোর সম্পদ লুট করত। সেই অধঃপতিত মাদায়ানবাসীকে সুপথে আনার জন্য শোয়াইব (আ.)কে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছিল। হজরত শোয়াইব (আ.) তাঁদেরকে হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করে দৃশ্যত ব্যর্থই হয়েছিলেন। এই কাহিনী সুরা হুদে (১১: ৮৪-৯৫) আরো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৮২. তাঁর অর্থাৎ লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের উত্তর ছিল কেবল এটাই যে এদের তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন মানুষ, যারা খুব পবিত্র থাকতে চায়।
৮৩. এরপর আমি লুত এবং তাঁর পরিবারবর্গকে সেই জনপদ থেকে বের করে এনে রক্ষা করলাম, তবে তাঁর স্ত্রী ছাড়া। তিনি ওই সব লোকের মধ্যে পড়ে রইলেন, যারা শাস্তিতে নিপতিত হয়েছিল।
৮৪. এরপর আমি তাঁদের ওপর শান্তির বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। লক্ষ করে দেখুন, সেই পাপাচারীদের পরিণতি কেমন হয়েছিল।
৮৫. আর মাদায়ান শহরে আমি তাদের এক ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তোমরা পরিমাপ ও ওজনে কখনো কম দেবে না এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্যগুলো দেওয়ার বেলায় তাদের অধিকার খর্ব করবে না। আর আল্লাহর সৃষ্ট এই পৃথিবীতে সংস্কার-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।
ব্যাখ্যা : ৮২, ৮৩ ও ৮৪ নম্বর আয়াতে লুত আলাইহিস সালামের অর্ধ অসভ্য জাতির পাপাচার ও তাদের পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। লুত (আ.) যখন মাদুম এলাকার মানুষকে তাদের সমকামিতা ও পাপাচারের তীব্র সমালোচনা করে তাদের সত্য, সুন্দর, সভ্যতার পথে আনার আহ্বান জানালেন, তখন তারা বহিরাগত নবী লুতকে তাদের জনপদ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। নবী লুত (আ.) তাঁর পরিবারবর্গ ও স্বল্পসংখ্যক মুমিন সহচরকে নিয়ে সে এলাকা ত্যাগ করলেন এবং আল্লাহর গজবে পড়ে সে এলাকা পুরোপুরি মিসমার হয়ে গেল। সে সময় তাঁর স্ত্রীও স্বামীর অবাধ্য হয়ে সেখানে থেকে গিয়েছিলেন এবং গজবে নিপতিত হয়েছিলেন। এ সম্প্রদায়টির কোনো চিহ্ন আর পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই।
৮৫ নম্বর আয়াতে মাদায়ানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং মাদায়ানবাসীর মধ্য থেকে যে নবী শোয়াইবকে তাঁদের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছিলেন, সে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। মাদায়ান প্রকৃতপক্ষে একটি গোত্রের নাম। সেই গোত্রের আবাসভূমিকে কেন্দ্র করে একটি শহর গড়ে উঠেছিল এবং এর নাম হয়েছিল মাদায়ান। কথিত আছে, মাদায়ান হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এক সহচরের নাম। তিনি সে এলাকায় বসবাস স্থাপন করে সেখানকার বাসিন্দাদের আল্লাহর পথে পরিচালিত করার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। পরে সেখানে মাদায়ান নামেই এক সমৃদ্ধ শহর গড়ে উঠেছিল। হজরত শোয়াইব (আ.)-এর আমল ছিল হজরত মুসা (আ.)-এর আমলের সামান্য আগে। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, শোয়াইব (আ.) মুসা (আ.)-এর শ্বশুর ছিলেন। এক সময়ের সমৃদ্ধ ও সৎ লোক-অধ্যুষিত মাদায়ানবাসী কালক্রমে কুফর ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা মাপজোখে হেরফের করত এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদও কেড়ে নিত। তারা ব্যবসায়ী কাফেলাগুলোর সম্পদ লুট করত। সেই অধঃপতিত মাদায়ানবাসীকে সুপথে আনার জন্য শোয়াইব (আ.)কে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছিল। হজরত শোয়াইব (আ.) তাঁদেরকে হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করে দৃশ্যত ব্যর্থই হয়েছিলেন। এই কাহিনী সুরা হুদে (১১: ৮৪-৯৫) আরো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments