ভাষাসৈনিক শিল্পী ইমদাদ হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ভাষাসৈনিক শিল্পী ইমদাদ হোসেন আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর আকস্মিক এ মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর স্মরণে এই বিশেষ আয়োজনে লিখেছেন তাঁরই দুই ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ভাষাসংগ্রামী, শিক্ষাবিদ আহমদ রফিক ও শিল্পী অধ্যাপক হাশেম খান-'ইমদাদ, তোমাকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম' by আহমদ রফিক
বন্ধুরা সব একে একে ঝরে যাচ্ছে-পঞ্চাশের দশকে আমরা যাঁরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে রাজপথে হেঁটেছি, আন্দোলন-সংগ্রামে একাট্টা হয়ে পথ চলেছি, আড্ডা দিয়েছি, মিছিল-সমাবেশে একই মতাদর্শ নিয়ে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছি তাদের কেউ কেউ যখন এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তখন তা মর্মবেদনার কারণ হয়ে ওঠে।চিত্রশিল্পী বন্ধু ইমদাদ হোসেন আমার ওই অন্তরঙ্গ বন্ধুদেরই একজন। কিছুদিন আগে আমিনুল চলে গেল, তার আগে দেবদাস (চক্রবর্তী), তারও আগে আতিকুল্লাহ, মধ্যখানে মেডিক্যাল কলেজের সহপাঠী-বন্ধু আবদুস সালাম।
অনেক আগে আনোয়ার।এ যেন এক অবধারিত মহাযাত্রার মিছিল। যেতে সবাইকে হবেই। কেউ আগে, কেউ পরে। যে পেছনে থাকে তাকে যন্ত্রণা পোহাতে হয় সবচেয়ে বেশি_বন্ধু ও সহযোদ্ধা হারানোর যন্ত্রণা, বেদনা।
পঞ্চাশের দশক নানা বিচারে মনে হয়েছে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ও সমাজপরিবর্তনের সম্ভাব্য সময়। বিশ্বপরিসরেও তখন মুক্তিসংগ্রামের হাওয়া। সে সুবাতাস আমাদের স্পর্শ করেছিল। সে সময় আমরা নিজেদের এটি সুসংহত সংঘের সদস্য ভেবেছি। প্রগতিচেতনা ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় কোনো সংঘাত তৈরি হয়নি।
আর ইমদাদ। তার সঙ্গে শুধু বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন বা তিপ্পান্ন-চুয়ান্নর গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে একসঙ্গে চলেছি তা-ই নয়, ব্যক্তিজীবনেও নানা কারণে নানাভাবে আমরা পরস্পরের সঙ্গী ছিলাম।
যেমন কমলাপুরে বসবাসকালে, তেমনি বিউটি বোর্ডিং বা রিভারভিউ ক্যাফের আড্ডায়, কখনো সুদূর মিরপুরে সাংবাদিক-বন্ধু হাসানুজ্জামান খানের বাসায়, দীর্ঘসময় পর আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নানা টানে একসঙ্গে বসেছি, আলোচনায় মেতেছি_সেসব শুধু স্মৃতি।
শেষ কয়েক বছরে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল অনিবার্য কিছু কারণে, তবু যখন কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে তখন তার আন্তরিক হাসি পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ...এখন ভারাক্রান্ত মনে স্বগতোক্তি : 'হে বন্ধু বিদায়।'
হাসপাতালে গিয়ে তোমাকে জীবিত দেখতে পাইনি। দুর্ভাগ্য আমার।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক, কবি
রবীন্দ্র গবেষক
পঞ্চাশের দশক নানা বিচারে মনে হয়েছে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ও সমাজপরিবর্তনের সম্ভাব্য সময়। বিশ্বপরিসরেও তখন মুক্তিসংগ্রামের হাওয়া। সে সুবাতাস আমাদের স্পর্শ করেছিল। সে সময় আমরা নিজেদের এটি সুসংহত সংঘের সদস্য ভেবেছি। প্রগতিচেতনা ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় কোনো সংঘাত তৈরি হয়নি।
আর ইমদাদ। তার সঙ্গে শুধু বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন বা তিপ্পান্ন-চুয়ান্নর গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে একসঙ্গে চলেছি তা-ই নয়, ব্যক্তিজীবনেও নানা কারণে নানাভাবে আমরা পরস্পরের সঙ্গী ছিলাম।
যেমন কমলাপুরে বসবাসকালে, তেমনি বিউটি বোর্ডিং বা রিভারভিউ ক্যাফের আড্ডায়, কখনো সুদূর মিরপুরে সাংবাদিক-বন্ধু হাসানুজ্জামান খানের বাসায়, দীর্ঘসময় পর আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নানা টানে একসঙ্গে বসেছি, আলোচনায় মেতেছি_সেসব শুধু স্মৃতি।
শেষ কয়েক বছরে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল অনিবার্য কিছু কারণে, তবু যখন কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে তখন তার আন্তরিক হাসি পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ...এখন ভারাক্রান্ত মনে স্বগতোক্তি : 'হে বন্ধু বিদায়।'
হাসপাতালে গিয়ে তোমাকে জীবিত দেখতে পাইনি। দুর্ভাগ্য আমার।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক, কবি
রবীন্দ্র গবেষক
No comments