আলোচনার আশ্বাস কৃষিমন্ত্রীর-খাদ্য কর্মসূচিতে চালের সঙ্গে আলু বিতরণের দাবি

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জের আলুচাষি রামপাল মিয়াকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তবুও তিনি ওই সেমিনারে যান। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আলু চাষ করে পরপর দুই বছর তাঁরা লোকসান দিয়েছেন। এ বছর এখনো অর্ধেক আলু বিক্রি হয়নি। সরকার আলুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তাঁরা আসছে মৌসুমে আলু চাষ করবেন না।


সেমিনারের আলোচনার বিষয় 'কৃষি খাত : খাদ্য নিরাপত্তায় বিকল্প প্রেক্ষিতের সমস্যা ও সম্ভাবনা' হলেও আলুই সেখানে মূল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। দেশের হিমাগার মালিক, সাধারণ ব্যবসায়ীসহ প্রায় সবাই আলু নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, অত্যধিক ফলন হওয়ায় এ বছর হিমাগারগুলোয় বিপুল আলু মজুদ আছে। অথচ আলুর নতুন মৌসুম শুরু হতে মাত্র দেড় মাস বাকি। ফলে প্রায় ১০ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। পাশাপাশি তাঁরা সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আলু বিতরণ করার পরামর্শও দেন। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আলুর সমস্যার কথা সরকারের চিন্তায় আছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে আলোচনার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা কৃষিজমি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা শিল্পায়ন, বসতবাড়ি নির্মাণ, কারখানার দূষণ ও ইটখোলার কবল থেকে কৃষিজমি রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মূল বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, ভারতে প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ৩৫০ গ্রাম চাল গ্রহণ করে। চীনে এর পরিমাণ ৩০০ গ্রাম। সেখানে বাংলাদেশে একজন মানুষ দৈনিক ৬০০ গ্রাম চাল গ্রহণ করে; কিন্তু চালের উৎপাদন সীমিত। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিকল্প খাদ্য গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধানের পরে বিকল্প খাদ্য হতে পারে গম। কিন্তু এ দেশের আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপেযোগী নয়। এ দেশে বেশি উৎপাদন হয় আলু। এক একর জমিতে যে পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে দুই হাজার ৫০০ কেজি চাল উৎপাদন করা যায়, একই পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে ১১ হাজার কেজির বেশি আলু উৎপাদন করা যায়।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন বলেন, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীন সারা দেশে ৭৬ লাখ ভিজিএফ কার্ড রয়েছে। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সাড়ে সাত লাখ ভিজিডি কার্ড রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। আগামী তিন মাস ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে ৩০ কেজি চালের বদলে ২৫ কেজি চাল দিয়ে পাঁচ কেজি চালের টাকা দিয়ে আলু বিতরণ করা হলে হিমাগারের প্রায় চার লাখ টন আলু বিক্রি হবে। এতে কিছুটা হলেও কৃষকরা ও হিমাগারের মালিকরা স্বস্তি পাবেন। তিনি আলু নিয়ে রাজনীতি না করে জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দৈনিক একটি করে আলু খাওয়ার আহ্বান জানান।
কোস্টাল সি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, দেশের আলু পচে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চাল-গম আমদানি করছি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। সার, ডিজেলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে আলু উৎপাদন করার পর সেই আলু নষ্ট হলে ভর্তুকির পুরো টাকাই নষ্ট হবে। মৌসুম শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস আগে আলু নিয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপনের সমালোচনা করেন মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে শেষ মুহূর্তে নয়, সারা বছরই আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারকে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। কোনো মন্ত্রী একক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সরকারিভাবে আলু বিতরণ করতে হলে সেটা অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির সভায় উঠাতে হয়।
তিনি বলেন, আলু নিয়ে আলোচনা করে যতটা সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তবে বাস্তবতা বিবর্জিত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ কারখানার শ্রমিকদের বেশি বেশি আলু খাওয়ানোর বিষয়ে উৎসাহী করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি আলু নিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে আলোচনা শুরু করার জন্য ভুল স্বীকার করেন। অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার ফারুক, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি জসিম উদ্দিনসহ সংগঠনটির নেতারা ও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.