ফলোআপ : চমেক ছাত্র আবিদ হত্যা মামলা-আট দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কোনো আসামি by নূপুর দেব,

ট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) বিডিএস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রদলকর্মী আবিদুর রহমান আবিদ হত্যা মামলায় গত আট দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। মামলায় কলেজ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদের নেতাদের গড়পড়তা আসামি করায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারকাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।মামলায় মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের ২০ সদস্যের মধ্যে দুই ছাত্রী সদস্য ছাড়া ভিপি-জিএসসহ ১৮ জন এবং ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দুই সহসম্পাদককে আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতারা।


এ সম্পর্কে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপ নেতা ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচার অবশ্যই হোক, তা আমরা চাই। কিন্তু ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদের অস্তিত্ব বিলীনের জন্য যেভাবে সব নেতার বিরুদ্ধে গড়পড়তা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে মামলা দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।' ছাত্রলীগের সবাইকে জড়ানোয় মামলাটি কত দূর এগোবে, তা নিশ্চিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চমেক ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. ফয়সল আরো জানান, চমেকে অতীতে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর মামলায়ও প্রকৃত খুনিদের না জড়ানোয় মামলাগুলো আলোর মুখ দেখেনি।
গত ২১ বছরে চমেকে ট্রিপল মার্ডারসহ পাঁচজন খুন হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার পাঁচজনের মধ্যে একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক এবং দুজন মেডিক্যালের ছাত্র রয়েছেন। রাজনীতির কারণে এসব চাঞ্চল্যকর মামলার একটিতেও ঘাতকদের শনাক্ত করা যায়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মামলাগুলো হিমাগারে চলে গেছে। আদালতে সাক্ষী না আসায় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলাগুলো খারিজ হয়ে গেছে।
১৯৯১ সালের ২১ অক্টোবর এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ মাহবুবকে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। এ হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও সাক্ষী না পাওয়ায় এবং রাজনৈতিক কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর ইন্টার্নি চিকিৎসক মিজানসহ তিনজনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় তৎকালীন ছাত্র সংসদের ভিপি, জিএসসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাঁরা জামিনে বেরিয়ে আসেন। মামলার এজাহারভুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সবাই মামলা থেকে খালাস পেয়ে যান। আপেল হত্যা মামলাও একইভাবে খারিজ হয়ে যায়।
সর্বশেষ আবিদ হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবিদ হত্যার পর থেকেই চমেক ছাত্র সংসদ ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি স্থগিত রয়েছে। অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসনে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। আবিদকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী নির্যাতন করার পর হাসপাতালে ভর্তর্ি করা হলেও ঘটনাটি হাসপাতালের পরিচালক বা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিএসবি ও সিটিএসবির সদস্যরা হাসপাতালে তাঁদের দায়িত্ব পালন করলেও তাঁরাও জানতেন না ঘটনাটি। আবিদের মৃত্যুর আগে দুই দিনেও বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

No comments

Powered by Blogger.