সেরা রিচার্ডস, দ্বিতীয় সেরা ধোনি!
সময়ের স্রোতে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে মানচিত্র। বদলের এই হাওয়াটা এসে লেগেছে ক্রিকেটেও। অসীম সময়ের টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছয় ওভারের সিঙ্ এ সাইডের বিবর্তন, উঁকি দিচ্ছে দিন-রাতের টেস্ট। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে 'কে সেরা' এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা একটু কঠিনই। যদিও তাঁদের এক পাল্লায় মাপার একটিই 'বাটখারা', তা হচ্ছে পরিসংখ্যান। যদিও বলা হয়, 'মিথ্যা হচ্ছে তিন রকম। মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা আর পরিসংখ্যান।' একটি সংখ্যাতাত্তি্বক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবে সবার ওপরের নামটা ভিভ রিচার্ডসের। তারপরই আছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এরপর যথাক্রমে মাইকেল বেভান, শচীন টেন্ডুলকার, ডিন জোনস ও ম্যাথু হেইডেন। এই সংখ্যাতাত্তি্বক গণনায় হিসাবে নেওয়া হয়েছে ব্যাটসম্যানের সময়কাল, সেই সময়কালে ম্যাচপ্রতি গড় রান ও ওভারপ্রতি গড়রানসহ বিভিন্ন উপাত্তকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম প্রজন্মের ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের খেলোয়াড়ি জীবনটা ১৬ বছরের। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১। ক্যারিয়ারটা শেষ করেছেন ৪৭ গড় রেখে, আর স্ট্রাইক রেট ৯০.২। অর্থাৎ প্রতি ১০০ বল খেলে গড়ে রিচার্ডসের সংগ্রহ হচ্ছে ৯০.০২ রান, যে হিসাবে বলপ্রতি তাঁর গড় সংগ্রহ প্রায় ০.৯০ রান। এ সময়ের বিচারে রিচার্ডসের এ পরিসংখ্যানগুলো হয়তো একটু সাদামাটা, কারণ ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদির মতো ব্যাটসম্যানরা প্রায়ই ১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করছেন। কিন্তু সরাসরি তুলনায় না গিয়ে, কিং ভিভের সময়টার একটা হিসাব নিলেই সঠিক ছবিটা পাওয়া যাবে। রিচার্ডসের খেলোয়াড়ি জীবনে দলের প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের গড় রান ছিল ২৯.৩৮, আর গড় স্ট্রাইকরেট ৬৫.৯৬। ক্যারিয়ারের গড়কে বলপ্রতি রানের সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যেটা পাওয়া যায় তা হচ্ছে 'ব্যাটিং সূচক'। ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং সূচক হচ্ছে ৪২.৩৯, যা তাঁর সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের গড় ব্যাটিং সূচকের প্রায় সোয়া দুই গুণ! অল্পকথায় বললে, ভিভ রিচার্ডস কতটা বিধ্বংসী ছিলেন তার প্রমাণ হচ্ছে, ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি বল রিচার্ডস খেলেছেন ৬২ বার। সেখানে ২৫ বারই তিনি রান করেছেন ৯০-এর বেশি স্ট্রাইকরেটে এবং বলের সমান বা তার চেয়ে বেশি রান করার নজির আছে ১৯টি। পরিসংখ্যান সারণিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক, নিজের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে রিচার্ডসের ফারাকটা (সারণি ১)।
পরের প্রজন্মের ক্রিকেটাররা রান করার ব্যাপারে আরেকটু গতিশীল। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে খেলা ক্রিকেটারদের গড় স্ট্রাইকরেট বেড়ে পেঁৗছে যায় ৬০-এর ঘরে। সে কারণে ব্যাটিং সূচকটাও ১৯ থেকে বেড়ে হয়ে যায় ২২। ব্যাটিং গড় হিসাবে এই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বলা যায় মাইকেল বেভানকে, ২৩২ ওয়ানডে খেলা এই অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি অপরাজিত ছিলেন ৬৭ ইনিংসে, শতকরা হিসেবে ক্যারিয়ারের ৩৪% ম্যাচে। নব্বইয়ের দশকটাকে বলা যেতে পারে 'বাঁহাতিদের দশক', কারণ তখন বিশ্বের সেরা প্রায় সব ব্যাটসম্যানই ছিলেন বাঁহাতি। বেভান বাদেও, সৌরভ গাঙ্গুলী, ব্রায়ান লারা, সাঈদ আনোয়ার, গ্যারি কার্স্টেনদের দাপটই দেখেছে ক্রিকেট-বিশ্ব। (সারণি ২)
এরপর আসা যাক বর্তমান যুগের অর্থাৎ জেট যুগের ক্রিকেটারদের কথায়। পাওয়ার প্লে, টোয়েন্টি টোয়েন্টি, নিয়মের শেকলে বাঁধা বোলার ও নির্বিষ উইকেটের যুগে ব্যাটসম্যানরা মেতেছেন রানোৎসবে। তাই স্ট্রাইকরেট, ব্যাটিং সূচক সব কিছুতেই উল্লম্ফন! এ সময়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইকরেট ৭৭.৯২। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম দিককার সময়ে, অর্থাৎ রিচার্ডসের যুগে সেটা ছিল ৬৫.৯৬! এসব পরিসংখ্যানে এ সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, পেছনে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও বীরেন্দর শেবাগের মতো ব্যাটসম্যানদের। তবে অনেকের চেয়ে ধোনিকে এগিয়ে রেখেছে তাঁর অপরাজিত ইনিংসগুলো। ক্যারিয়ারের ২৬.৬৮% ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ধোনি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজেও তাঁকে একবারও আউট করা যায়নি। (সারণি ৩)
সবশেষে শচীন টেন্ডুলকারের কথা। খুব সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান তিনি। ২২ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন 'লিটল মাস্টার' এবং বছরের সংখ্যাটা এখনো বাড়তির দিকে। এ সময়ে খেলার রূপ বদলেছে অনেকবার। কিন্তু সব বদলের সঙ্গেই খাপ খাইয়ে টেন্ডুলকার নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। আক্রমণাত্মক ও সহজাত স্ট্রোক খেলার প্রবণতা সমৃদ্ধ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেন্ডুলকার এ বদলগুলোকে দেখেছেন বেশি করে রান করার একটা সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে ব্যাকরণসিদ্ধ ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অনেকের জন্যই নিয়মের বদলগুলো এতটা সুখকর হয়নি। মূলত রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলা দ্রাবিড় তাই টেস্ট দলে গৌরবের সঙ্গে থাকলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে। ক্রিকইনফো অবলম্বনে
৭০ থেকে ৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত সেরা
ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম প্রজন্মের ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের খেলোয়াড়ি জীবনটা ১৬ বছরের। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১। ক্যারিয়ারটা শেষ করেছেন ৪৭ গড় রেখে, আর স্ট্রাইক রেট ৯০.২। অর্থাৎ প্রতি ১০০ বল খেলে গড়ে রিচার্ডসের সংগ্রহ হচ্ছে ৯০.০২ রান, যে হিসাবে বলপ্রতি তাঁর গড় সংগ্রহ প্রায় ০.৯০ রান। এ সময়ের বিচারে রিচার্ডসের এ পরিসংখ্যানগুলো হয়তো একটু সাদামাটা, কারণ ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদির মতো ব্যাটসম্যানরা প্রায়ই ১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করছেন। কিন্তু সরাসরি তুলনায় না গিয়ে, কিং ভিভের সময়টার একটা হিসাব নিলেই সঠিক ছবিটা পাওয়া যাবে। রিচার্ডসের খেলোয়াড়ি জীবনে দলের প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের গড় রান ছিল ২৯.৩৮, আর গড় স্ট্রাইকরেট ৬৫.৯৬। ক্যারিয়ারের গড়কে বলপ্রতি রানের সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যেটা পাওয়া যায় তা হচ্ছে 'ব্যাটিং সূচক'। ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং সূচক হচ্ছে ৪২.৩৯, যা তাঁর সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের গড় ব্যাটিং সূচকের প্রায় সোয়া দুই গুণ! অল্পকথায় বললে, ভিভ রিচার্ডস কতটা বিধ্বংসী ছিলেন তার প্রমাণ হচ্ছে, ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি বল রিচার্ডস খেলেছেন ৬২ বার। সেখানে ২৫ বারই তিনি রান করেছেন ৯০-এর বেশি স্ট্রাইকরেটে এবং বলের সমান বা তার চেয়ে বেশি রান করার নজির আছে ১৯টি। পরিসংখ্যান সারণিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক, নিজের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে রিচার্ডসের ফারাকটা (সারণি ১)।
পরের প্রজন্মের ক্রিকেটাররা রান করার ব্যাপারে আরেকটু গতিশীল। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে খেলা ক্রিকেটারদের গড় স্ট্রাইকরেট বেড়ে পেঁৗছে যায় ৬০-এর ঘরে। সে কারণে ব্যাটিং সূচকটাও ১৯ থেকে বেড়ে হয়ে যায় ২২। ব্যাটিং গড় হিসাবে এই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বলা যায় মাইকেল বেভানকে, ২৩২ ওয়ানডে খেলা এই অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি অপরাজিত ছিলেন ৬৭ ইনিংসে, শতকরা হিসেবে ক্যারিয়ারের ৩৪% ম্যাচে। নব্বইয়ের দশকটাকে বলা যেতে পারে 'বাঁহাতিদের দশক', কারণ তখন বিশ্বের সেরা প্রায় সব ব্যাটসম্যানই ছিলেন বাঁহাতি। বেভান বাদেও, সৌরভ গাঙ্গুলী, ব্রায়ান লারা, সাঈদ আনোয়ার, গ্যারি কার্স্টেনদের দাপটই দেখেছে ক্রিকেট-বিশ্ব। (সারণি ২)
এরপর আসা যাক বর্তমান যুগের অর্থাৎ জেট যুগের ক্রিকেটারদের কথায়। পাওয়ার প্লে, টোয়েন্টি টোয়েন্টি, নিয়মের শেকলে বাঁধা বোলার ও নির্বিষ উইকেটের যুগে ব্যাটসম্যানরা মেতেছেন রানোৎসবে। তাই স্ট্রাইকরেট, ব্যাটিং সূচক সব কিছুতেই উল্লম্ফন! এ সময়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইকরেট ৭৭.৯২। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম দিককার সময়ে, অর্থাৎ রিচার্ডসের যুগে সেটা ছিল ৬৫.৯৬! এসব পরিসংখ্যানে এ সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, পেছনে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও বীরেন্দর শেবাগের মতো ব্যাটসম্যানদের। তবে অনেকের চেয়ে ধোনিকে এগিয়ে রেখেছে তাঁর অপরাজিত ইনিংসগুলো। ক্যারিয়ারের ২৬.৬৮% ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ধোনি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজেও তাঁকে একবারও আউট করা যায়নি। (সারণি ৩)
সবশেষে শচীন টেন্ডুলকারের কথা। খুব সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান তিনি। ২২ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন 'লিটল মাস্টার' এবং বছরের সংখ্যাটা এখনো বাড়তির দিকে। এ সময়ে খেলার রূপ বদলেছে অনেকবার। কিন্তু সব বদলের সঙ্গেই খাপ খাইয়ে টেন্ডুলকার নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। আক্রমণাত্মক ও সহজাত স্ট্রোক খেলার প্রবণতা সমৃদ্ধ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেন্ডুলকার এ বদলগুলোকে দেখেছেন বেশি করে রান করার একটা সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে ব্যাকরণসিদ্ধ ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অনেকের জন্যই নিয়মের বদলগুলো এতটা সুখকর হয়নি। মূলত রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলা দ্রাবিড় তাই টেস্ট দলে গৌরবের সঙ্গে থাকলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে। ক্রিকইনফো অবলম্বনে
৭০ থেকে ৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত সেরা
No comments