সবিশেষ-যে পঞ্চাশে লাগে খুশি

পুরনো প্যান্টের পকেটে হঠাৎ একদিন ৫০০ টাকার একটি কড়কড়ে নোট পেয়ে গেলে কেমন লাগবে? অথবা অফিসের বস ডেকে হঠাৎ কাজের পরিবর্তে এক দিন ছুটি ধরিয়ে দিলে? কিংবা সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমাতে গিয়ে দেখা গেল বিছানায় পরিপাটি করে বিছানো রয়েছে ধবধবে তকতকে একটি পরিচ্ছন্ন চাদর; কেমন লাগবে? যদি মনে হয় যে পেটের ভেতর প্রজাপতি ওড়া শুরু করে দিয়েছে, তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ এমনটি মনে হওয়াই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, দৈনন্দিন জীবনের এমন ছোট ছোট কিছু ঘটনাই মানুষের মনে সুখের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। আর গবেষকরা এমন ৫০টি বিষয়ের একটি তালিকাও তৈরি করেছেন।


সুখী হওয়ার জন্য সুখী মানুষের জামা খুঁজে বেড়ানো রাজার গল্প অনেকেরই জানা। অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতায় শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও চিত্তে সুখ না থাকা সেই রাজাকে সুখী করতে হেকিম
পরামর্শ দিয়েছিলেন কোনো সুখী মানুষের জামা গায়ে চাপাতে। ওই জামা গায়ে চাপিয়ে সুখী হওয়ার বাসনায় রাজা হয়ে উঠেছিলেন অস্থির। কিন্তু সুখী মানুষের দেখা পেতে তাঁকে পোহাতে
হয়েছিল বিস্তর দুর্ভোগ। কিন্তু সুখী হওয়ার জন্য আসলে এত ঝামেলা পোহানোর প্রয়োজন পড়ে না। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কিছু বিষয় থেকেই মানুষ যথেষ্ট সুখী বোধ করে। থ্রি ব্যারেলস ব্র্যান্ডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের করা ওই গবেষণার ফল এখন এ কথাই বলছে। একেকজনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেকরকম হলেও গবেষণায় এমন ৫০টি বিষয়ের একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সব মানুষই কম-বেশি সুখ বোধ করে।
সুখী হওয়ার বিষয়গুলো ওই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে পুরনো জামা-কাপড়ের পকেটে হঠাৎ অর্থযোগ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ছুটি পাওয়া। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পরিচ্ছন্ন বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া। তালিকায় থাকা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আরো রয়েছে যথাক্রমে সমুদ্রে সন্তরণ, রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা, সূর্যের আলোতে বসে থাকা, কারো মাধ্যমে ফুল বা চকোলেট পেয়ে সারপ্রাইজড হওয়া, প্রিয়জনের কাছ থেকে সুন্দর কোনো বার্তা পাওয়া। আরো রয়েছে সুন্দর আলোকিত একটি দিনে বেড়াতে যাওয়া, প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি, থ্যাংক ইউ কার্ড পাওয়া, বড় কোনো লটারি জেতা, অতীতের স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া কোনো গান শোনা, পুরনো ছবি দেখা, নতুন কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব, কোনো শিশুর হাসির শব্দ শোনা, বসের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া ইত্যাদি। তালিকায় শেষের দিকে রয়েছে স্কুলে সন্তানদের সাফল্য, বাসে বা ট্রেনে কারো নিজের সিটটি ছেড়ে বসতে দেওয়া, এমনি এমনি কিছু খাবার খাওয়া। আর একেবারে শেষে ৫০তম অবস্থানে রয়েছে চুমু খাওয়া।
গবেষকরা জানিয়েছেন, দেখা গেছে যে মানুষ রোদ ও আলো বেশি পছন্দ করে। কেননা রৌদ্রোজ্জ্বল কোনো সময় বা দিনে কোনো কিছু করতে পারা থেকে অনেকেই অনেক ধরনের সুখ পাওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া কাছের এমনকি দূরের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও মানুষকে সুখী করে তোলে। এমনি সুখকে সংজ্ঞায়িত করা বা একেকজনের একেক বিষয়ে সুখ বোধ করার ব্যাপারটি তো রয়েছেই, তবে এ গবেষণা থেকে জানা গেল, বড় বড় বিষয় থেকে বড় বড় সুখের বিষয়গুলোর বাইরে প্রতিটি মানুষই আসলে খুব সাধারণ, সামান্য বিষয় থেকেও বেশ পুলকিত হয়, সুখ বোধ করে। মানুষের মনোজগতের এ এক অনন্য দিক। সূত্র : এঙ্প্রেস ডট কো., ডেক্কান হেরাল্ড, টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.