ঈদে বাড়ি ফেরা-ট্রেনের টিকিটের জন্য সাধনা তদবির থাকলে মিলছে দ্রুতই

র সব টিকিট-প্রত্যাশী মানুষের মতোই শনিবার বিকেল ৪টা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের আট নম্বর কাউন্টারে দাঁড়িয়েছিলেন আল আমিন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকিট জোটেনি তাঁর ভাগ্যে। একসময় সহকর্মীর কাছ থেকে জানলেন, রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য একটি তালিকা পাঠানোর পর বিশেষ কক্ষ থেকে স্লিপ পাঠানো হচ্ছে। আল আমিন রেলওয়েরই কর্মচারী। কিন্তু স্লিপের বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না।খবরটি পেয়ে অনেক চেষ্টায় নিজের নাম তালিকায় ওঠান একটি স্লিপ পাওয়ার জন্য। অতঃপর রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এঙ্প্রেসের তিনটি টিকিট (৪ অক্টোবরের) পান তিনি; যদিও চেয়েছিলেন চারটি।


গতকাল রবিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলে আল আমিন এ প্রতিবেদককে তাঁর এ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরছে। রেলের কর্মচারী হয়ে তাঁরই এ
অবস্থা। অন্যদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আল আমিন জানান, আজ সোমবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের কর্মকর্তাদের তদবিরে দ্রুত টিকিট মিলছে। কিন্তু অন্যদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে; তবেই মিলছে টিকিট। গতকাল দুপুরে স্টেশন ব্যবস্থাপকের কক্ষে এসেছিলেন সুরুজ মিয়া। তিনি জানান, বুধবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি। গতকাল সকাল থেকে লাইনেই ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে কাউন্টার থেকে বলা হয় টিকিট নেই। তাই ব্যবস্থাপককে খুঁজছেন। তাঁর মতো আরো অনেকে স্টেশন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কারণ তাঁর তদবিরে টিকিট মিলতে পারে।
দুপুরে স্টেশনের বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ টিকিট-প্রার্থী আগের দিন দুপুর থেকেই লাইনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায়, কিন্তু লাইন এতটুকু এগোয় না। কেন? এ প্রশ্ন্নের উত্তরে মগবাজার থেকে এসে বুধবার রাত থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শরাফত আলী বললেন, 'ফোনে টিকিট বুকিং হইয়া যাইতাছে। তাই লাইন আগায় না।'
কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির পরিস্থিতি এমনই।
চলি্লশোর্ধ্ব এনামুল কবীর জানান, তিন বন্ধু মিলে চট্টগ্রামে ঈদ করতে যাবেন। ৫ অক্টোবরের তিনটি টিকিট কিনতে সকাল ৮টা থেকে লাইনেই আছেন। কিন্তু দুপুর ১২টায় লাইন দুই হাতও এগোয়নি। তাঁর মতো সুহেল মিয়া, কবির হোসেন, ইকবাল পারভেজ চৌধুরী এবং অন্যদের দশাও একই। তাঁরা বিরক্ত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
ঘুরতে ঘুরতে একসময় দেখা গেল স্টেশনের মাসুদ নামে এক কর্মচারীর কাছে একটি ফোন এল, আর তিনি এক আগন্তুকের হাতে ছয়টি টিকিট ধরিয়ে দিলেন। জানা গেল, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নামে টিকিটগুলো দেওয়ার জন্য একটি ফোন এলে মাসুদ ওই ব্যক্তির কাছে টিকিটগুলো দিয়ে দেন।
অগ্রিম টিকিট বিক্রির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাড়ি যাওয়ার জন্য এলাকার পরিচিত অনেকেই টিকিট নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, কিন্তু টিকিট পাচ্ছেন না। কারণ চাহিদার তুলনায় আসন কম। এদিকে, রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনাল এবং টার্মিনালের বাইরের বিভিন্ন কাউন্টারে বাসের আগাম টিকিট মিলছে না। গতকাল কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বাসের আগাম টিকিট নেই। গাবতলীতে 'অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাচ্ছে' লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে। কিন্তু টিকিটপ্রার্থীরা টিকিট পাচ্ছেন না। দুপুরে কল্যাণপুরে একটি বাস কাউন্টারে এসেছিলেন শ্যামলীর লিমা রহমান। তিনি জানান, 'তিন দিন ধরে রাজশাহী যাওয়ার টিকিট খুঁজছি। মিলছে না।'

No comments

Powered by Blogger.