ট্রানজিটের পক্ষে সরকারি নীতিনির্ধারকেরাঃ ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট দিলেই বেশি লাভ
ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা মনে করেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে এখনই পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট দেওয়া ঠিক হবে না। বরং ট্রানশিপমেন্ট দিলেই বেশি লাভ। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর যৌথ আয়োজনে গতকাল রোববার ‘ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট অথবা ট্রানজিট’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলা হয়। রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ সরকারি নীতিনির্ধারকেরা অবশ্য ট্রানজিটের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, ট্রানজিট কিংবা ট্রানশিপমেন্ট যাই দেওয়া হোক না কেন, ব্যবসায়ীসহ বিশেষজ্ঞদের মত নেওয়া হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, ট্রানজিট দিলে ভারতের অর্থ সাশ্রয় হবে বলে তার ভাগ চাওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
সংলাপে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ধারণাপত্রে বলা হয়, ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট বা ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি সহজ নয়। এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেওয়ায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ও দূরত্ব কমে যাবে এবং ভারত অনেক সহজে ও কম দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারবে। এতে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রানজিট নিয়ে সরকারের গঠন করা কোর কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করার তাগিদ দিয়ে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, এতে ট্রানজিট-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে স্বচ্ছতা বাড়বে। তাঁর মতে, ট্রানজিটে সব পক্ষের সমানভাবে লাভবান হতে হবে এবং তা টেকসই হতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের কীভাবে সর্বোচ্চ লাভবান হওয়া যায়, তাই করা উচিত। আপাতত তিনি ট্রানশিপমেন্টের পক্ষে মত দেন।
এরপরেই মুক্ত আলোচনা পর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রথম প্রশ্ন হলো—আমরা ট্রানজিট, নাকি ট্রানশিপমেন্ট দেব? সরকার ইতিমধ্যে ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে। তবে ট্রানশিপমেন্ট দিলেই আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
ট্রানজিট দিলে ব্যয় অনুযায়ী লাভ এবং রাজনৈতিক সমঝোতা কীভাবে হবে, এই দুটি বিষয় পরিষ্কার করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেল নেবে, তা ঠিক করতে হবে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের দাম সস্তা। বাংলাদেশের ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নেপাল ও ভুটান আদৌ ট্রানজিট চাইছে কি না, তাও বিবেচনায় আনতে হবে।
ট্রানজিট দিতে চারটি বিষয়কে বিবেচনায় আনার পরামর্শ দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এগুলো হলো: আইনগত কাঠামো, নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, অবকাঠামোগত সুবিধা ও মাশুল। ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের অসংগতি রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি; যেমন—ট্রানজিট-প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতার অভাব, অর্থনীতি নাকি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, স্বল্পমেয়াদি নাকি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ, ট্রানজিট-প্রক্রিয়াটি কোনোক্রমে নাকি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করা হচ্ছে এবং ট্রানজিট সীমিত নাকি সমন্বিত আকারে দেওয়া হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও কোর কমিটির সদস্য এম রহমত উল্লাহ বলেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় ভারতকে এই মুহূর্তে সীমিত আকারে ট্রানশিপমেন্ট দেওয়া যেতে পারে। সড়কপথের বেহালদশায় সরাসরি ট্রানজিট দেওয়া সম্ভব নয়। রেলপথে ট্রানজিট দেওয়াও কঠিন। কেননা, সরাসরি রেলযোগাযোগ নেই। আগামী তিন-চার বছরের আগে নতুন রেলপথ তৈরি করা সম্ভব নয়। এখনো কিছুই শুরু হয়নি। রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলপথের ওজন সীমাবদ্ধতা। আশুগঞ্জ নৌবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না করে ট্রানজিট দেওয়া উচিত হবে না।
সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনিসুল হক বলেন, বিদ্যমান রপ্তানিনীতিতেই ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করে তা পুনরায় রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।
আনিসুল হকের এই বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রানজিটের সঙ্গে রপ্তানিনীতি মেলানোর সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, কোর কমিটি বিভিন্ন ধরনের মাশুল আরোপের প্রস্তাব করেছে। এর বাইরে ট্রানজিট দিলে ভারতের সাশ্রয়কৃত অর্থের ভাগ চাওয়া উচিত।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, ট্রানজিট দিলেই বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ট্রানজিট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যসচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ট্রানশিপমেন্টে বাংলাদেশের যান ব্যবহার করা হবে। এতে বেশি আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে। জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌফিক আলী বলেন, অবকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষামূলক চালান নেওয়া শুরু হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান শুরু হয়েছিল। পরে তা আর শেষ হয়নি।
ট্রানজিটে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, এমন চিন্তা কল্পনাপ্রসূত ছাড়া কিছুই নয়। নিরাপত্তা নিয়ে একটি দেশ কখনো অপর একটি দেশের ওপর নির্ভর করে না। ট্রানজিট হলো একটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড।
মসিউর রহমান আরও বলেন, বিনিয়োগ তুলে আনার জন্য স্বাভাবিক লাভের কথা বিবেচনায় আনতে হবে। একচেটিয়া লাভের কথা চিন্তা করা যাবে না। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মুখে বিনিয়োগও করবেন না। নৌ প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালান নেওয়া শেষ হয়েছে। এখন দেখা হচ্ছে, এটা কীভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশি জাহাজের ড্রাফট (পানির নিচে থাকা অংশ) কম, ভারতীয় জাহাজের ড্রাফট বেশি। তাই জন্য খনন প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনে সড়কপথের সক্ষমতা কম। তাই সীমিত আকারে ভারত সড়কপথ ব্যবহার করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ট্রানজিট মাশুল বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। ট্রানজিট বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ হলো একটি ভালো চিন্তা। কিন্তু ইতিহাস বলছে, কোনো বিষয়ে এগোতে হলে ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই একটি সমন্বিত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকার মানে হয় না।
ট্রানজিট দিলে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার ভাগ দাবি প্রসঙ্গে গওহর রিজভী বলেন, সুয়েজ খাল দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের জাহাজ পার হলে কি মিসর বাংলাদেশের সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় আনে?
সবশেষে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, সরকার দেশের স্বার্থবিরোধী কিছুই করবে না। কোর কমিটির প্রতিবেদন সরকার বিচার-বিশ্লেষণ করছে। চূড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, গণস্বাস্থ্যের চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ, প্রমুখ।
সংলাপে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ধারণাপত্রে বলা হয়, ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট বা ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি সহজ নয়। এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেওয়ায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ও দূরত্ব কমে যাবে এবং ভারত অনেক সহজে ও কম দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারবে। এতে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রানজিট নিয়ে সরকারের গঠন করা কোর কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করার তাগিদ দিয়ে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, এতে ট্রানজিট-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে স্বচ্ছতা বাড়বে। তাঁর মতে, ট্রানজিটে সব পক্ষের সমানভাবে লাভবান হতে হবে এবং তা টেকসই হতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের কীভাবে সর্বোচ্চ লাভবান হওয়া যায়, তাই করা উচিত। আপাতত তিনি ট্রানশিপমেন্টের পক্ষে মত দেন।
এরপরেই মুক্ত আলোচনা পর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রথম প্রশ্ন হলো—আমরা ট্রানজিট, নাকি ট্রানশিপমেন্ট দেব? সরকার ইতিমধ্যে ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে। তবে ট্রানশিপমেন্ট দিলেই আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
ট্রানজিট দিলে ব্যয় অনুযায়ী লাভ এবং রাজনৈতিক সমঝোতা কীভাবে হবে, এই দুটি বিষয় পরিষ্কার করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেল নেবে, তা ঠিক করতে হবে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের দাম সস্তা। বাংলাদেশের ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নেপাল ও ভুটান আদৌ ট্রানজিট চাইছে কি না, তাও বিবেচনায় আনতে হবে।
ট্রানজিট দিতে চারটি বিষয়কে বিবেচনায় আনার পরামর্শ দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এগুলো হলো: আইনগত কাঠামো, নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, অবকাঠামোগত সুবিধা ও মাশুল। ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের অসংগতি রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি; যেমন—ট্রানজিট-প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতার অভাব, অর্থনীতি নাকি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, স্বল্পমেয়াদি নাকি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ, ট্রানজিট-প্রক্রিয়াটি কোনোক্রমে নাকি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করা হচ্ছে এবং ট্রানজিট সীমিত নাকি সমন্বিত আকারে দেওয়া হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও কোর কমিটির সদস্য এম রহমত উল্লাহ বলেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় ভারতকে এই মুহূর্তে সীমিত আকারে ট্রানশিপমেন্ট দেওয়া যেতে পারে। সড়কপথের বেহালদশায় সরাসরি ট্রানজিট দেওয়া সম্ভব নয়। রেলপথে ট্রানজিট দেওয়াও কঠিন। কেননা, সরাসরি রেলযোগাযোগ নেই। আগামী তিন-চার বছরের আগে নতুন রেলপথ তৈরি করা সম্ভব নয়। এখনো কিছুই শুরু হয়নি। রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলপথের ওজন সীমাবদ্ধতা। আশুগঞ্জ নৌবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না করে ট্রানজিট দেওয়া উচিত হবে না।
সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনিসুল হক বলেন, বিদ্যমান রপ্তানিনীতিতেই ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করে তা পুনরায় রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।
আনিসুল হকের এই বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রানজিটের সঙ্গে রপ্তানিনীতি মেলানোর সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, কোর কমিটি বিভিন্ন ধরনের মাশুল আরোপের প্রস্তাব করেছে। এর বাইরে ট্রানজিট দিলে ভারতের সাশ্রয়কৃত অর্থের ভাগ চাওয়া উচিত।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, ট্রানজিট দিলেই বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ট্রানজিট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যসচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ট্রানশিপমেন্টে বাংলাদেশের যান ব্যবহার করা হবে। এতে বেশি আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে। জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌফিক আলী বলেন, অবকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষামূলক চালান নেওয়া শুরু হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান শুরু হয়েছিল। পরে তা আর শেষ হয়নি।
ট্রানজিটে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, এমন চিন্তা কল্পনাপ্রসূত ছাড়া কিছুই নয়। নিরাপত্তা নিয়ে একটি দেশ কখনো অপর একটি দেশের ওপর নির্ভর করে না। ট্রানজিট হলো একটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড।
মসিউর রহমান আরও বলেন, বিনিয়োগ তুলে আনার জন্য স্বাভাবিক লাভের কথা বিবেচনায় আনতে হবে। একচেটিয়া লাভের কথা চিন্তা করা যাবে না। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মুখে বিনিয়োগও করবেন না। নৌ প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালান নেওয়া শেষ হয়েছে। এখন দেখা হচ্ছে, এটা কীভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশি জাহাজের ড্রাফট (পানির নিচে থাকা অংশ) কম, ভারতীয় জাহাজের ড্রাফট বেশি। তাই জন্য খনন প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনে সড়কপথের সক্ষমতা কম। তাই সীমিত আকারে ভারত সড়কপথ ব্যবহার করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ট্রানজিট মাশুল বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। ট্রানজিট বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ হলো একটি ভালো চিন্তা। কিন্তু ইতিহাস বলছে, কোনো বিষয়ে এগোতে হলে ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই একটি সমন্বিত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকার মানে হয় না।
ট্রানজিট দিলে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার ভাগ দাবি প্রসঙ্গে গওহর রিজভী বলেন, সুয়েজ খাল দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের জাহাজ পার হলে কি মিসর বাংলাদেশের সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় আনে?
সবশেষে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, সরকার দেশের স্বার্থবিরোধী কিছুই করবে না। কোর কমিটির প্রতিবেদন সরকার বিচার-বিশ্লেষণ করছে। চূড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, গণস্বাস্থ্যের চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ, প্রমুখ।
No comments