শামীম ওসমান বললেন সাজানো নির্বাচন

বগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনকে 'প্রশ্নবিদ্ধ' বলে উল্লেখ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় তিনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) প্রতি দাবি জানিয়েছেন। গতকাল রোববার ভোটগ্রহণ শেষে সিইসি বরাবর দেওয়া চিঠিতে তিনি এ দাবি জানান। রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে দেওয়া চিঠিতে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে


পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের কালো টাকা ব্যবহার হয়েছে। এ কালো টাকার প্রভাবে পুলিশ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সরাসরি আইভীর পক্ষে দোয়াত-কলম প্রতীকে ভোট চেয়েছে। এ ছাড়া বিকেলে নাসিক নির্বাচনকে সাজানো নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন সাজানো। আগে যদি বুঝতাম এরকম সাজানো নির্বাচন হবে তাহলে এ নির্বাচনে আমি অংশ নিতাম না।
এদিকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে কথা বললেও গতকাল দুপুরে শামীম ওসমান অভিযোগ করেন, ইভিএমে কারচুপি হচ্ছে। কারচুপি করে তাকে হারানো হচ্ছে। আর তাতে তার দলেরই কোনো অংশের সমর্থন রয়েছে। সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী হওয়ার সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি না পারছি বলতে, না পারছি সইতে।
সিইসি বরাবর অভিযোগ : লিখিত অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম ওসমান বলেছেন, নির্বাচন চলাকালে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পুলিশ প্রশাসন সরাসরি আইভীর পক্ষ নেয়। এসব কেন্দ্রে তার এজেন্টদের পুলিশ সরাসরি প্রবেশে বাধা দেয়। শহরের বিবি মরিয়ম স্কুল কেন্দ্র, আইইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ধনকুণ্ডা, কদমতলী, গোদনাইল, আরামবাগ কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি দেখতে পান, সেখানে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা তার এজেন্ট ও কর্মীদের হুমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন। সে সঙ্গে তারা মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে সরাসরি ভোট চাইছেন। বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানুর মেয়েকে পুলিশ সরাসরি দোয়াত-কলম মার্কায় ভোট দিতে অনুরোধ করে। এতে যারা অস্বীকৃতি জানায় তাদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর ফলে ভোটদানের গতি ধীর হয়ে যায়। শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মর্গান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তার কর্মীদের বের করে দেওয়া হয়। একই ওয়ার্ডের দেওভোগ, পাক্কা রোড, আদর্শ বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ নম্বর কক্ষের চার নম্বর বুথে ইভিএমে দেয়াল ঘড়িতে ভোটাররা চাপ দিলেও ভোট দোয়াত-কলমে গিয়ে পড়ে। শহরের গণবিদ্যা নিকেতন স্কুল, বাবুরাইল কেন্দ্রের বেশ ক'টি কেন্দ্র, বন্দরের নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা কেন্দ্র দখল করে দোয়াত-কলমের ব্যাজ লাগিয়ে সেই প্রতীকে ভোট দিয়েছে বলে তার এজেন্ট ও ভোটাররা অভিযোগ করেছেন। বন্দরের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতিত্ব এবং মেয়র প্রার্থী আইভীর দোয়াত-কলমে ভোট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রে স্থানীয় ভোটাররা সেলিনা হায়াৎ আইভীর ক্যাডার এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রনিকে পাকড়াও করলেও সেখানে ১৫ মিনিট পরও পুলিশ আসেনি।
'সবকিছু এমন সাজানো জানলে
নির্বাচন করতাম না'
নারায়ণগঞ্জ শহরের রাইফেলস ক্লাবে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শামীম ওসমান এ নির্বাচনকে সাজানো বলে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম আরও বলেন, আমি সরকারি দলের প্রার্থী। আমার হাত-পা বাঁধা। অনেক কিছুই আমি বলতে পারি না। আমি বিশ্বাস করি, আমি জয়ী হবো। কিন্তু আজ সারাদিনে যা হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। পুলিশ প্রশাসন আইভীর পক্ষে কাজ করেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়েছি; কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সবকিছু এমন সাজানো হবে জানলে আমি কখনোই নির্বাচনে অংশ নিতাম না।
সাংবাদিকদের শামীম ওসমান বলেন, শামীমকে হারাতে ওয়ান-ইলেভেন, বিএনপি, জামায়াত সবাইকে এক হতে হয়। এখানে আইভীকে জেতাতে তাই হয়েছে। জামায়াত ফাইন্যান্স করছে, সে টাকা পেয়েছে পুলিশ। নির্বাচনে কালো টাকার দৌরাত্ম্য চলছে দাবি করে তিনি বলেন, এসব বিষয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দলের সমর্থন না থাকলে এ চুরি করতে পারত না।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলার পর ফল মেনে নেবেন কি-না জানতে চাইলে সাবেক সাংসদ শামীম বলেন, বিলিভ মি (বিশ্বাস করুন), জয়-পরাজয় যা-ই হোক, আমি খুশি মনে মেনে নিতাম। কিন্তু এখন মানতে কষ্ট হবে।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ভোটকেন্দ্রের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কমপ্লিটলি বায়াসড, বায়াসড, বায়াসড।
সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখার পর দুপুর ১টার দিকে শহরের রাইফেলস ক্লাবে সাংবাদিকদের শামীম বলেন, গত এক ঘণ্টায় ভোটের চিত্র উল্টে গেছে। আমি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখলাম, পুলিশ প্রকাশ্যে আইভীর পক্ষে ভোট চাচ্ছে। তবে সকাল ৯টার দিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমী কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই চলছে।
সকাল ৮টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন শামীম। সিদ্ধিরগঞ্জে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। দুপুরে ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার এক শিক্ষক বলেছেন, তিনি দেয়াল ঘড়িতে চাপ দিলেও ভোট ওঠে দোয়াত-কলমে। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রের সামনে তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাজিমুদ্দিন ওরফে রনি নামে এক নেতাকে মারধর করেন তিনি। রনি আইভীর হয়ে কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ করে তখন তিনি বলেন, আইভীর পক্ষে ভোটে ব্যাপক কারচুপি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তিনি নির্বাচন বয়কট করবেন।
শামীম ওসমানের সারাদিন : নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় জামতলার শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে শহরের ইসদাইর কবরস্থানে বাবা সামসুজ্জোহার কবর জিয়ারত করেন শামীম ওসমান। এরপর তিনি শহরের বার একাডেমী স্কুলে নিজের ভোট দেন। সেখানে তিনি উপস্থিত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন।

No comments

Powered by Blogger.