তবু স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

খনো ১৫১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। টেল এন্ডারদের নিয়ে এ ব্যবধান কতটা কমাতে পারবেন নাসির হোসেন, তা নিয়ে অস্বস্তি আছে। দুশ্চিন্তা আছে ক্রমে স্পিনারদের হয়ে ওঠা এ উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে কতটুকু পথ-ই বা পাড়ি দিতে পারবে গতকাল হুমমুড়িয়ে ভেঙে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং? তবে এ অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তা এক পাশে সরিয়ে রেখে দ্বিতীয় দিনশেষে আশাবাদের কথাই শুনিয়েছেন ঢাকায় টেস্ট অভিষিক্ত সোহরাওয়ার্দী শুভ। এ পর্যন্ত ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের 'নিউক্লিয়াস' সাকিব আল হাসানেরও কণ্ঠেও আশার বাণী।


৩০০- ৩৫০ রান তাড়া করা আত্মবিশ্বাস এ দুজনের আছে। ধরে নেওয়া যায়, এ বিশ্বাসটা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমেও আছে! ক্যারিবীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কার্ক এডওয়ার্ডস অবশ্য মনে করছেন, এখানে চতুর্থ ইনিংসে ৩৫০ রান টার্গেট দিতে পারলে তাতেই ম্যাচ জেতা যাবে।
ম্যাচের তিন সকালে এসে অভিষেকের খবর শোনাটা এ অর্থে ভালোই হয়েছে বলে মনে করছেন সোহরাওয়ার্দী, 'আগের দিন জানলে হয়তো টেনশনে রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হতো!' সকালে হুট করে মাথায় টেস্ট ক্যাপ ওঠার পর ১৩তম বলেই প্রথম টেস্ট উইকেট_সোহরাওয়ার্দীর উৎফুল্ল থাকার যথেষ্ট কারণ ঘটেছিল শনিবার। কিন্তু কাল ব্যক্তিগত সেই উচ্ছ্বাস অনেকটাই আড়ালে দুশ্চিন্তার ছায়ায়, 'একসময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বের হয়ে গেছে। তবে এখন মনে হচ্ছে আমাদেরও সুযোগ আছে'। সে 'সুযোগ' আসবে, যদি, 'আরো ৫০টা রান করতে পারি। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ওদের (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) কম রানে আটকে যদি ৩০০ রানের মতো টার্গেট পাই, তাহলে সম্ভব।' মিরপুরের উইকেট ভাঙতে শুরু করেছে। বল ঘুরছে। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্পিননির্ভর বোলিং আক্রমণ আরো ভয়-ভীতি ছড়াবে বলে বিশ্বাস সোহরাওয়ার্দীর।
সে বিশ্বাসটা আরেকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসানের আছে। তবে সঙ্গে দুঃখও আছে তাঁর, 'খুব ভালো টাইমিং হচ্ছিল। যদি সেঞ্চুরি পেতাম, তাহলে আরো ভালো লাগত।' সাকিবের ৭৩ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গেলে দিনটাও ভালো যেত বাংলাদেশের।
অবশ্য শুরুটা একেবারে খারাপ যায়নি। সাকিব আর নাসিরের স্পিনে ক্যারিবীয় টেল খুব ঝামেলা করতে পারেনি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলারদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে গিয়ে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় উল্টো ঝামেলায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং প্রসঙ্গ উঠতেই তাই কিছুটা সঙ্কুচিত সোহরাওয়ার্দী, 'আসলে আমাদের টপ অর্ডার ভালো করতে পারেনি।' আপাতত দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁদের ওপর 'বাজি' ধরে অপেক্ষায় আছেন তিনি। ফিদেল এডওয়ার্ডস যে মাত্র ২৯ বলের ব্যবধানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার মতো ব্যাটিং করেননি, তেমন ইঙ্গিত আছে সাকিবের মন্তব্যেও, 'আমার মনে হয়নি যে ওরা খুব ভালো বোলিং করেছে। তবে ক্রিকেটে এমন হতে পারে। ব্লক করতে গিয়েও আপনি আউট হতে পারেন।'
এটা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের তরফের ব্যাখ্যা। যিনি শর্ট বলে পটাপট উইকেট তুলে নিয়েছেন, সেই এডওয়ার্ডস দিনশেষে মাইক্রোফোনের সামনে এসে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের বহু পুরনো সমস্যার কথা জানিয়ে গেলেন, 'ইনিংসের শুরুতে ব্যাটসম্যানদের খুব বেশি শটস খেলতে দেখলে যেকোনো বোলারই উৎসাহ বোধ করবে।' বিশেষ করে যখন ব্যাটসম্যানরা সাড়ে তিন শ' রান রেখে যান। যখন রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বুক উচ্চতার বল দেখলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা ঘাবড়ে যান! এ কারণেই কিনা, ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলে ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকায় নিজের নামটা পাঁচ নম্বরে লিখিয়েও গতকালের স্পেলটাকে ক্যারিয়ারসেরা মানতে রাজি হলেন না ফিদেল এডওয়ার্ডস। তবে খুশি একটা কারণে, 'পরিকল্পনামাফিক বল করতে পেরেছি। যেটা চট্টগ্রামে পারিনি। আসলে এ ধরনের উইকেটে খুব বেশি খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাই চট্টগ্রামে লাইন-লেন্থে সমস্যা হয়েছিল। আজ যে সমস্যাটা হয়নি।'
সাকিব আল হাসানের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ঢাকার উইকেট কিংবা বাংলাদেশের বোলিং সামলাতে এতটুকু সমস্যা হয়নি কার্ক এডওয়ার্ডসের। এক ইনিংসের নায়ক নন তিনি। মাঝে একটি টেস্ট বিরতি দিয়ে তিন টেস্টে গতকাল করেছেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অনেক খুঁচিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের মৃদু প্রশংসাই তাঁর মুখ থেকে বের করা গেল। সেটুকুও সম্ভবত সৌজন্যের খাতিরেই করেছেন কার্ক এডওয়ার্ডস, 'আজ সকালে রুবেল হোসেন খুব জোরে বল করেছে। আর সাকিব যে ভালো বোলার, এটা আমরা আগে থেকেই জানি। তাই ওকে সাবধানে খেলেছি।'
দুই দলের পার্থক্যটা সম্ভবত এখানেই। শ্রেয়তর দল হয়েও সতর্ক ক্রিকেট খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ বড্ড অসতর্ক। এ অভিযোগ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা মানুন কি না মানুন!

No comments

Powered by Blogger.