বিএনপি কেন তৈমুরকে ‘কোরবানি’ দিল? by এ কে এম জাকারিয়া
‘একমাত্র মৃত্যুই আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে পারবে’—এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তাঁকে নির্বাচন থেকে ‘দূরে সরাতে’ এমন দুর্ভাগ্যজনক কিছুর প্রয়োজন পড়েনি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদেশ যে এর চেয়েও বড়! নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেকে ‘কোরবানি’ দিয়েছেন তিনি। দল ও দলের চেয়ারপারসনের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা করার ছিল!
রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অরাজনৈতিক। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুজন প্রার্থীর প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। নির্বাচন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ না থাকলেও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার সেটাই করেছেন। স্বেচ্ছায় করেননি, করেছেন দলের নির্দেশে। ‘অরাজনৈতিক’ স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটি ছিল ‘রাজনৈতিক’ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে শুরু থেকেই কৌশলী ছিল সরকারি দল আওয়ামী লীগ। যেভাবে এগোচ্ছিল ও শেষ পর্যন্ত ফলাফল যা হয়েছে, তাতে পুরো ফসলটি আওয়ামী লীগের ঘরেই উঠত। কীভাবে? একটু ব্যাখ্যা করা দরকার।
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর অংশগ্রহণে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো এবং নির্বাচনের ফলাফল এখন যা হয়েছে তা-ই হতো অর্থাত্ সেলিনা হায়াত্ আইভী জিতে যেতেন, তখন আওয়ামী লীগ বলত যে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীকে (শামীম ওসমানকে সমর্থন দেওয়াটাও কী আওয়ামী লীগের কৌশলের অংশ ছিল?) জেতানোর চেষ্টা করেনি সরকার। নির্বাচন কমিশনের অধীনে, এমনকি সেনাবাহিনী ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর আইভী তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী! আওয়ামী লীগের হারানোর কিছু নেই। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের শতভাগ রাজনৈতিক সাফল্য অর্জনে শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় তৈমুরের প্রার্থিতা প্রত্যাহার। আওয়ামী লীগ তার কৌশলের পুরো ফসল ঘরে তুলতে পারল না বিএনপির পাল্টা কৌশলের কারণে।
বিএনপি শেষ সময়ে এসে বুঝতে পেরেছে, তাদের প্রার্থীর অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফলাফল যা-ই হোক, নির্বাচন যদি অবাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এটাকেই পুঁজি করবে সরকারি দল। সামনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলনের কথা ভাবছে, তা অনেকটা যৌক্তিক ভিত্তি হারাবে। এই নির্বাচনকে যেকোনোভাবেই হোক প্রশ্নবিদ্ধ করা বিএনপির জন্য তাই জরুরি ছিল। শেষ মুহূর্তে তৈমুর আলমকে ‘কোরবানি’ দিয়ে দলটি সে কাজটিই করেছে। রোববারের নির্বাচনের পর যখন ফলাফল আসছিল, তখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, বিএনপিদলীয় নেতারা যেসব যুক্তি দিয়ে আসছিলেন, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ হিসেবে বিবেচিত এই নির্বাচনের জন্য তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে কোনো কৃতিত্ব দিতে চাননি। বরং সেনা মোতায়েন না করা ও সরকারের সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন কেন নির্বাচন স্থগিত করল না বা কমিশন কেন পদত্যাগ করল না—এসব বিষয়কেই বিএনপির নেতারা জোরের সঙ্গে সামনে আনতে চেয়েছেন। আর বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে আইভীর জয় হয়েছে, এমনটিও তাঁরা বলার চেষ্টা করেছেন।
বিএনপি সামনের জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে। সেই বিবেচনায় শেষ মুহূর্তে বিএনপির নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটিকে দলটির রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখতে হবে। কিন্তু ভোট বর্জনের মতো নেতিবাচক কৌশল নিয়ে কতটুকু সামনে এগোনো যাবে, সেটা সত্যিই এক বড় প্রশ্ন।
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর অংশগ্রহণে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো এবং নির্বাচনের ফলাফল এখন যা হয়েছে তা-ই হতো অর্থাত্ সেলিনা হায়াত্ আইভী জিতে যেতেন, তখন আওয়ামী লীগ বলত যে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীকে (শামীম ওসমানকে সমর্থন দেওয়াটাও কী আওয়ামী লীগের কৌশলের অংশ ছিল?) জেতানোর চেষ্টা করেনি সরকার। নির্বাচন কমিশনের অধীনে, এমনকি সেনাবাহিনী ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর আইভী তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী! আওয়ামী লীগের হারানোর কিছু নেই। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের শতভাগ রাজনৈতিক সাফল্য অর্জনে শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় তৈমুরের প্রার্থিতা প্রত্যাহার। আওয়ামী লীগ তার কৌশলের পুরো ফসল ঘরে তুলতে পারল না বিএনপির পাল্টা কৌশলের কারণে।
বিএনপি শেষ সময়ে এসে বুঝতে পেরেছে, তাদের প্রার্থীর অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফলাফল যা-ই হোক, নির্বাচন যদি অবাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এটাকেই পুঁজি করবে সরকারি দল। সামনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলনের কথা ভাবছে, তা অনেকটা যৌক্তিক ভিত্তি হারাবে। এই নির্বাচনকে যেকোনোভাবেই হোক প্রশ্নবিদ্ধ করা বিএনপির জন্য তাই জরুরি ছিল। শেষ মুহূর্তে তৈমুর আলমকে ‘কোরবানি’ দিয়ে দলটি সে কাজটিই করেছে। রোববারের নির্বাচনের পর যখন ফলাফল আসছিল, তখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, বিএনপিদলীয় নেতারা যেসব যুক্তি দিয়ে আসছিলেন, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ হিসেবে বিবেচিত এই নির্বাচনের জন্য তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে কোনো কৃতিত্ব দিতে চাননি। বরং সেনা মোতায়েন না করা ও সরকারের সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন কেন নির্বাচন স্থগিত করল না বা কমিশন কেন পদত্যাগ করল না—এসব বিষয়কেই বিএনপির নেতারা জোরের সঙ্গে সামনে আনতে চেয়েছেন। আর বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে আইভীর জয় হয়েছে, এমনটিও তাঁরা বলার চেষ্টা করেছেন।
বিএনপি সামনের জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে। সেই বিবেচনায় শেষ মুহূর্তে বিএনপির নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটিকে দলটির রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখতে হবে। কিন্তু ভোট বর্জনের মতো নেতিবাচক কৌশল নিয়ে কতটুকু সামনে এগোনো যাবে, সেটা সত্যিই এক বড় প্রশ্ন।
No comments