হামিদ-মোদি বৈঠক, তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি সমাধানে আশ্বাস
ঢাকা
থেকেই শুরু হচ্ছে ভারতের কার্যকর পূর্ব নীতি। এছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতা
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারত অনুঘটকের ভূমিকা পালনে আগ্রহী। ভারত সফরের দ্বিতীয়
দিনে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে এসব কথা বলেছেন ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি সমাধানে ফের
বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হামিদ ভারতীয় নেতাদের
সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন গতকাল। সন্ধ্যায় ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব
মুখার্জির সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। রাতে তার সম্মানে প্রণব মুখার্জির দেয়া
ভোজসভাতেও তিনি অংশ নেন। এদিন সকালেই ভারতের প্রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের আরও
কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার অনুরোধ না শুনেই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে
মিলিত হবেন বলে প্রেসিডেন্ট ভবনে দুপুরের আগেই ফিরে আসেন। এদিন দুপুরে
হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির
ব্যাপারে বাংলাদেশের মনোভাব তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট হামিদ। বৈঠকে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিস্তার পানিবণ্টন এবং সীমান্ত চুক্তি কার্যকর
করার ক্ষেত্রে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যে তার
সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে সে কথা মোদি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে
জানিয়েছেন। আধ ঘণ্টার এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি
কানেকটিভিটি নিয়েও কথা হয়েছে। মোদি জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত বাংলাদেশ সফরে
যেতে আগ্রহী। প্রেসিডেন্ট হামিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার এবং জনগণের
সমর্থন ও সহযোগিতার উল্লেখ করে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আরও সহযোগিতার
প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে মোদি বলেছেন,
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে ভারত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাতেও
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিদ্যুৎ খাতে ভারতের আরও সহযোগিতার আবেদন জানান।
বিশেষ করে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতার
প্রয়োজনীয়তার ওপর হামিদ বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রত্যুত্তরে মোদি জানিয়েছেন,
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে ভারত তৈরি। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট
মোদির গুজরাট মডেলের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তার নেতৃত্ব সমৃদ্ধশালী ভারত
গড়ার ক্ষেত্রে তরুণদের সাহায্য করবে বলে তিনি মনে করেন। ভারতের
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের
পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ
মোয়াজ্জেম আলী, এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক ও সচিব শেখ আলতাফ আলী। অন্যদিকে
ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, জাতীয়
নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ও ঢাকায় নিযুক্ত
ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভবনে বাংলাদেশের
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এই
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে ভারতকে আরও সহযোগিতা
করার আবেদন জানান। তিনি এ ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা
করেন। সুষমা স্বরাজ জানান যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভারতের সদিচ্ছা
রয়েছে এবং তা থাকবে। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট হামিদ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সুষমা স্বরাজ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত
সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের আরও সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রই নয়,
ভারতের এক নির্ভর যোগ্য বন্ধুও। গত ছয় মাসে দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে
যেসব বৈঠক হয়েছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিন বাংলাদেশের
প্রেসিডেন্ট ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। গত
বৃহস্পতিবার ছয় দিনের ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক দিল্লি
পৌঁছান। সেদিন বিকালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ
করেন। এদিকে, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের পশ্চিমবঙ্গ সফরে
নিরাপত্তার প্রশ্নে নির্ধারিত কর্মসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে। সোমবার
প্রেসিডেন্ট কলকাতায় এসে পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর কেশরী নাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে
মিলিত হবেন। তার সম্মানে রাজভবনে দেওয়া ভোজসভাতেও তিনি অংশ নেবেন। তবে
শান্তি নিকেতনে একদিন কাটানোর কর্মসূচি বদল করে তিনি সেখানে দুই ঘণ্টা
থাকবেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বোলপুরের কয়েক
কিলোমিটারের মধ্যে জেএমবির অনেকগুলো ঘাঁটি ছিল। তাই নিরাপত্তার কারণে
প্রেসিডেন্টকে সড়ক পথে যেতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে তেমনি তাকে পৌষ মেলার
অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে না করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টার যোগে
প্রেসিডেন্ট শান্তিনিকেতন যাবেন। সেখানে দুই ঘণ্টা থেকে ফিরে আসবেন
কলকাতায়। বিকালেই ফিরে যাবেন ঢাকায়। ওদিকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আগ্রার
তাজমহলে যাবেন এ জন্য সেখানে দুই ঘণ্টা আজ পর্যটকদের জন্য দর্শন বন্ধ রাখা
হয়েছে।
No comments