বিশেষ তদন্ত প্রস্তাব নাকচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
সমালোচনার ভয়ে ব্যাংক পরিচালকদের
নামে-বেনামে থাকা ঋণের বিষয়ে একটি বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করার প্রস্তাব
অনুমোদন করেননি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা। প্রস্তাবটি সরাসরি
নাকচ করে দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোতে নিয়মিত তদন্তের সময় পরিচালকদের
স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ঋণগুলোর ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষভাবে শুধু ব্যাংক
পরিচালকদের ঋণের ব্যাপারে কোনো তদন্ত করা হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষ তদন্ত প্রস্তাব নাকচ : সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাংক পরিদর্শক বিভাগ-১ থেকে পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে একটি বিশেষ তদন্ত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে তৈরি করা হয় একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনাও। এতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে একযোগে শুধু পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে একটি বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করার কাঠামো ঠিক করা হয়। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য ব্যাংকের কোন পরিচালকের কোন শাখায় ঋণ রয়েছে সেসব তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। তদন্তের মাধ্যমে পরিচালকরা ওইসব ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের অনিয়ম করেছেন তা খুঁজে বের করার কথা। কিন্তু এ প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয়নি। গভর্নর অন্য নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোতে তদন্ত করে। কোনো অভিযোগ পেলে তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হয়। এর বাইরে কোনো ইস্যু এলে উপরের নির্দেশে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উত্তরাঞ্চলের চালের চাতালের ঋণ, পুরনো জাহাজ কেনায় ঋণ, এলটিআর (লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট বা আমদানির জন্য সহজ শর্তের ঋণ), গ্রাহক সেবার অনিয়ম, মানি চেঞ্জারদের অনিয়মের বিষয়সহ আরও নানা বিষয়ে বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করেছে। এসব ক্ষেত্রে দুই বা তিন সদস্যের একাধিক পরিদর্শক দল গঠন করে একসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।
পরিচালকদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ওই ধরনের একটি বিশেষ তদন্ত করতে চেয়েছিলেন। দুই বা তিন সদস্যের একাধিক পরিদর্শক দল গঠন করে একসঙ্গে প্রায় সবগুলো ব্যাংকে এ তদন্ত হতো। প্রস্তাব অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এ তিন মাস ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা শুধু পরিচালকদের ঋণ নিয়েই তদন্ত করতেন। প্রস্তাবটি নাকচ করায় সেটি আর হল না।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের একটি বিশেষ তদন্ত হয়তো হবে। কেননা, একবার যেহেতু এ বিষয়ে একটি নথি উপস্থাপিত হয়েছে, ভবিষ্যতে সময় সুযোগ এলে এটি আবারও উপস্থাপিত হবে। তখন হয়তো এ ধরনের প্রস্তাব আর আটকে রাখা যাবে না।
সমালোচনার ভয় : সূত্র জানায়, ওই প্রস্তাব নাকচ করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহীরা বলেছেন, শুধু ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ নিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত করা হলে সমালোচনা হবে। অনেকে মনে করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু শুধু নিজ থেকেই পরিচালকদের অনিয়ম খুঁজে বের করছে। এতে পরিচালকদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ক্ষুদ্ধ হবে। এছাড়া ব্যাংক পরিচালকদের একটি বড় অংশেরই সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তারা উচ্চপর্যায় থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করে পাওয়া অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এ কারণে বিশেষ ধরনের তদন্ত না করে নিয়মিতভাবে তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবস্থা নিলে তা হবে আরও বেশি কার্যকর। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে বিশেষ তদন্ত করা থেকে বিরত থেকেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, শুধু পরিচালক নয়, যে কোনো বিষয়ে অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এখনও নিচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেয়া হবে।
পরিচালকদের ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আগে থেকেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে তথ্য পাঠিয়ে থাকে। ওইগুলো সমন্বয় করে নিয়মিত পরিচালকদের ঋণ তদারকি করা হয়।
সূত্র জানায়, পরিচালকদের প্রভাবে ওপর মহলের চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসার পরেও বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক জালিয়াতির ক্ষেত্রেও। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত করার পরেও একই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
অনিয়মের পাহাড় : সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের বেআইনি হস্তক্ষেপের মাত্রা ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। এভাবে তারা ব্যাংক থেকে নিচ্ছে নানা ধরনের বেআইনি সুবিধা- যা একদিকে আমানতকারীদের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের হস্তক্ষেপে বেশ কিছু আলোচিত জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কিছু পরিচালকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতায় সোনালী ব্যাংকে ঘটেছে হলমার্ক কেলেংকারি। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সরাসরি যোগসাজশে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতায় ঘটেছে বিসমিল্লাহ গ্র“পের জালিয়াতি। পরিচালকদের হস্তক্ষেপে গত বছর অগ্রণী ব্যাংকের সিএসআরের টাকা নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। প্রাইম ব্যাংক পরিচালকদের স্বার্থে সিএসআরের টাকায় কিনেছে ক্রিকেট ক্লাব। শাহজালাল ব্যাংকে বেনামি ঋণ নিয়ে পরিচালকদের আন্তঃকলহ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। পছন্দের লোককে পরিচালক করা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ফার্মার্স ব্যাংক পরিচালককে বেআইনি সুবিধা দেয়ায় এমডিকে জরিমানা দিতে হয়েছে। ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকে পরিচালকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ঋণের কোনো গতি হয়নি। এবি ব্যাংকে পরিচালকদের হস্তক্ষেপে বেনামি ঋণ দেয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক পরিচালকের হস্তক্ষেপে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা আÍসাতের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও পরিচালকরা নিজ ব্যাংকে আমানত রেখে বাড়তি সুদ আদায়, কম সুদে ঋণ নেয়া, নিজস্ব ভবন ব্যাংকের কাছে বাড়তি টাকায় ভাড়া দেয়া, বেনামে ব্যাংকের বিভিন্ন কাজ করে বাড়তি মুনাফা নেয়ার ঘটনাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান বলেন, পরিচালকদের ঋণের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিতভাবে তদারকি করা হয়। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাও তদন্ত করে দেখা যায়। এ কারণে বিশেষ আর কোনো তদন্তের প্রয়োজন পড়ে না।
বিএবির প্রতিক্রিয়া : এসব বিষয় নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, নতুন নতুন বিধান করে পরিচালকদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। পরিচালকদেরও একটি সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। তাদেরকে টার্গেট করে কিছু করা হলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এটি বিব্রতকর। তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকের পরিচালক তারা প্রত্যেকেই ভালো ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তিনি পরিচালকদের হস্তক্ষেপে অনিয়মের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করেন।
বিশেষ তদন্ত প্রস্তাব নাকচ : সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাংক পরিদর্শক বিভাগ-১ থেকে পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে একটি বিশেষ তদন্ত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে তৈরি করা হয় একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনাও। এতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে একযোগে শুধু পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে একটি বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করার কাঠামো ঠিক করা হয়। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য ব্যাংকের কোন পরিচালকের কোন শাখায় ঋণ রয়েছে সেসব তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। তদন্তের মাধ্যমে পরিচালকরা ওইসব ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের অনিয়ম করেছেন তা খুঁজে বের করার কথা। কিন্তু এ প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয়নি। গভর্নর অন্য নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোতে তদন্ত করে। কোনো অভিযোগ পেলে তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হয়। এর বাইরে কোনো ইস্যু এলে উপরের নির্দেশে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উত্তরাঞ্চলের চালের চাতালের ঋণ, পুরনো জাহাজ কেনায় ঋণ, এলটিআর (লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট বা আমদানির জন্য সহজ শর্তের ঋণ), গ্রাহক সেবার অনিয়ম, মানি চেঞ্জারদের অনিয়মের বিষয়সহ আরও নানা বিষয়ে বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করেছে। এসব ক্ষেত্রে দুই বা তিন সদস্যের একাধিক পরিদর্শক দল গঠন করে একসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।
পরিচালকদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ওই ধরনের একটি বিশেষ তদন্ত করতে চেয়েছিলেন। দুই বা তিন সদস্যের একাধিক পরিদর্শক দল গঠন করে একসঙ্গে প্রায় সবগুলো ব্যাংকে এ তদন্ত হতো। প্রস্তাব অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এ তিন মাস ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা শুধু পরিচালকদের ঋণ নিয়েই তদন্ত করতেন। প্রস্তাবটি নাকচ করায় সেটি আর হল না।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের একটি বিশেষ তদন্ত হয়তো হবে। কেননা, একবার যেহেতু এ বিষয়ে একটি নথি উপস্থাপিত হয়েছে, ভবিষ্যতে সময় সুযোগ এলে এটি আবারও উপস্থাপিত হবে। তখন হয়তো এ ধরনের প্রস্তাব আর আটকে রাখা যাবে না।
সমালোচনার ভয় : সূত্র জানায়, ওই প্রস্তাব নাকচ করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহীরা বলেছেন, শুধু ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ নিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত করা হলে সমালোচনা হবে। অনেকে মনে করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু শুধু নিজ থেকেই পরিচালকদের অনিয়ম খুঁজে বের করছে। এতে পরিচালকদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ক্ষুদ্ধ হবে। এছাড়া ব্যাংক পরিচালকদের একটি বড় অংশেরই সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তারা উচ্চপর্যায় থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করে পাওয়া অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এ কারণে বিশেষ ধরনের তদন্ত না করে নিয়মিতভাবে তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবস্থা নিলে তা হবে আরও বেশি কার্যকর। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে বিশেষ তদন্ত করা থেকে বিরত থেকেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, শুধু পরিচালক নয়, যে কোনো বিষয়ে অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এখনও নিচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেয়া হবে।
পরিচালকদের ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আগে থেকেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে তথ্য পাঠিয়ে থাকে। ওইগুলো সমন্বয় করে নিয়মিত পরিচালকদের ঋণ তদারকি করা হয়।
সূত্র জানায়, পরিচালকদের প্রভাবে ওপর মহলের চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসার পরেও বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক জালিয়াতির ক্ষেত্রেও। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত করার পরেও একই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
অনিয়মের পাহাড় : সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের বেআইনি হস্তক্ষেপের মাত্রা ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। এভাবে তারা ব্যাংক থেকে নিচ্ছে নানা ধরনের বেআইনি সুবিধা- যা একদিকে আমানতকারীদের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের হস্তক্ষেপে বেশ কিছু আলোচিত জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কিছু পরিচালকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতায় সোনালী ব্যাংকে ঘটেছে হলমার্ক কেলেংকারি। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সরাসরি যোগসাজশে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতায় ঘটেছে বিসমিল্লাহ গ্র“পের জালিয়াতি। পরিচালকদের হস্তক্ষেপে গত বছর অগ্রণী ব্যাংকের সিএসআরের টাকা নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। প্রাইম ব্যাংক পরিচালকদের স্বার্থে সিএসআরের টাকায় কিনেছে ক্রিকেট ক্লাব। শাহজালাল ব্যাংকে বেনামি ঋণ নিয়ে পরিচালকদের আন্তঃকলহ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। পছন্দের লোককে পরিচালক করা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ফার্মার্স ব্যাংক পরিচালককে বেআইনি সুবিধা দেয়ায় এমডিকে জরিমানা দিতে হয়েছে। ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকে পরিচালকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ঋণের কোনো গতি হয়নি। এবি ব্যাংকে পরিচালকদের হস্তক্ষেপে বেনামি ঋণ দেয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক পরিচালকের হস্তক্ষেপে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা আÍসাতের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও পরিচালকরা নিজ ব্যাংকে আমানত রেখে বাড়তি সুদ আদায়, কম সুদে ঋণ নেয়া, নিজস্ব ভবন ব্যাংকের কাছে বাড়তি টাকায় ভাড়া দেয়া, বেনামে ব্যাংকের বিভিন্ন কাজ করে বাড়তি মুনাফা নেয়ার ঘটনাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান বলেন, পরিচালকদের ঋণের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিতভাবে তদারকি করা হয়। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাও তদন্ত করে দেখা যায়। এ কারণে বিশেষ আর কোনো তদন্তের প্রয়োজন পড়ে না।
বিএবির প্রতিক্রিয়া : এসব বিষয় নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, নতুন নতুন বিধান করে পরিচালকদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। পরিচালকদেরও একটি সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। তাদেরকে টার্গেট করে কিছু করা হলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এটি বিব্রতকর। তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকের পরিচালক তারা প্রত্যেকেই ভালো ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তিনি পরিচালকদের হস্তক্ষেপে অনিয়মের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করেন।
No comments