সুন্দরবন বিপর্যয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা -ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের রিপোর্ট
সুন্দরবনে
তেলের ট্যাংকার ডুবিতে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার মন্থরগতিতে
সাড়া দিয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারকে অনেক
প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। ওই ট্যাংকারটি ডুবে যাওয়ার পর তা তীরে আনা
হয়েছে দু’দিন পরে। ততক্ষণে তা থেকে তেল শেলা নদীর মাধ্যমে সুন্দরবনের
বিভিন্ন নদী-খালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে কোন
বিশেষজ্ঞ নেয়া হয় নি। সম্প্রতি সুন্দরবনের শেলা নদীতে ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার
তেলবাহী ট্যাংকার সাউদার্ন স্টার ৭ ডুবির পর সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা
লিখেছেন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণ।
এতে বলা হয়েছে, ছড়িয়ে পড়া তেল স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে সংগ্রহের চেষ্টা
করা হলেও তা কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে খুব সামান্যই আস্থা প্রকাশ করা
হয়েছে। ট্যাংকারের মালিকপক্ষ তেল ছড়িয়ে যাওয়া রোধে বয়া’র বার ব্যবহার
করেছে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা সেই তেল সংগ্রহ করে দিলে প্রতি লিটারের জন্য
৩০ টাকা দাম ধরা হয়েছে। জাল ব্যবহার করে স্থানীয় জেলেদের প্রতি আহ্বান
জানানো হয়েছে ওই তেল সংগ্রহ করতে। তিন রকমের বিরল ডলফিনের অভয়ারণ্যের ভেতর
দিয়ে কিভাবে নৌরুট অনুমোদন দেয়া হয়েছে আগামী দিনগুলোতে তা নিয়ে অস্বস্তিকর
অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন কর্মকর্তারা। ওদিকে ভারত সীমান্তে ভারতীয়
কর্মকর্তারা চলমান এই বিপর্যয়ের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রেখেছেন। সুন্দরবন
বায়োস্ফিয়ার-এর পরিচালক প্রদীপ ভায়াস-এর মতে, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি
সুন্দরবন এলাকায় বন্যপ্রাণীবিষয়ক কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নজর
রাখছেন যে, বাংলাদেশের ওই তেল ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে কিনা। তবে ভাল খবর হলো, এ
ঘটনাটি ঘটেছে শুষ্ক মওসুমে। তাতে তেলের বিস্তার সীমিত হয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্ডিয়ার সুন্দরবন প্রোগ্রাম অফিসের প্রধান অনুরাগ দান্দা
বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্যদের তুলনায় কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কঠিন প্রতিকূলতার মুখে পড়বে বিভিন্ন গাছ। বিশেষ করে
ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদগুলোর মূল আক্রান্ত হয়ে সহসাই মারা যাবে। কয়েক লাখ লিটার
তেল ছড়িয়ে পড়ার পর বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশের সুন্দরবন। বিশ্বের বৃহত্তম
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এটা। একই সঙ্গে নানা বিরল প্রাণীর অভয়ারণ্য এ সুন্দরবন।
বড় আকারের এ বিপর্যয়ের পর হুমকির মুখে বিরল ইরাবতী ও গঙ্গা ডলফিন এবং রয়েল
বেঙ্গল টাইগার। ৯ই ডিসেম্বর ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার সাউদার্ন স্টার ৭
অপর একটি কার্গো জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনাটি ঘটে। চার দিন পর উদ্ধার
করা হয় ডুবে যাওয়া জাহাজ। আর সুন্দরবন ও আশপাশের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে
পড়ে তেল। বিশেষজ্ঞরা ক্ষতির মাত্রা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। কোন
আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনও আসেনি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিভিন্ন মাছ, কাঁকড়া ও জলজ প্রাণীর মৃতদেহ দেখা গেছে। এখনও তেলের গন্ধ
পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য
অনন্যসাধারণ। রংবেরঙের মাছরাঙা পাশিসহ এখানে তিন শ’রও বেশি প্রজাতির
পাখিদের বাস। ভাটি এলাকাগুলোতে ভোদড়, বানর, বন্য শূকর, আর হরিণের বাস। ২০১১
সালে নিউ ইয়র্কভিত্তিক ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি সুন্দরবন এলাকায় ৬
হাজার ইরাবতি ডলফিন রয়েছে বলে আবিষ্কার করে। এ তথ্য সামনে আসার পর ইরাবতি
ডলফিন আর লম্বা নাসারন্ধ্রের গঙ্গা ডলফিনদের জন্য তিনটি অভয়ারণ্য স্থাপন
করা হয়। বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ায় এসব প্রাণীর ওপর
প্রভাব সহ বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
No comments