সুন্দরবনের তেল অপসারণে সহায়তায় বিশেষজ্ঞ পাঠাবে জাতিসংঘ
বিশ্বের
সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস তেল অপসারণে সাহায্য
করতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে পাঠাবে জাতিসংঘ। সুন্দরবনে একটি
তেলবাহী ট্যাংকার-ডুবির ফলে ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ার এক সপ্তাহেরও বেশি সময়
পর এ ঘোষণা দিলো জাতিসংঘ। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। সুন্দরবনের সংরক্ষিত
ম্যানগ্রোভ এলাকায় কয়েক লাখ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানেই বিরল প্রজাতির
ইরাবতী ও গাঙ্গেয় ডলফিনদের বসতি। জাতিসংঘের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
সংস্থাটির ডিজাস্টার অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন (ইউএনডিএসি)’র একটি
দল ঢাকায় পৌঁছেও গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা একটি সুষ্ঠুভাবে তেল অপসারণ করতে
ব্যর্থ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। এখন এ তেল ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়
ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত বনবিভাগ তেল অপসারণের ব্যাপারে স্থানীয়
গ্রামবাসী ও জেলেদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বাংলাদেশ থেকে অনুরোধের
পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ এ দলটি প্রেরণ করে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সম্ভাব্য
ক্ষতি ও ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারকে নিজেদের পরামর্শ দেবে জাতিসংঘের এ দলটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ফ্রান্স জাতিসংঘের এ উদ্যোগকে
স্বাগত জানিয়েছে। এদিকে ভারতের অ্যাদাপশন প্রোগ্রাম অ্যান্ড সুন্দরবন
ল্যান্ডস্কেপ ডিপার্টমেন্টের প্রধান অনুরাগ দাণ্ডা বলেছেন, তেল ছড়িয়ে পড়ার
স্বল্পমেয়াদি প্রভাব হতে পারে, জীববৈচিত্র্য হ্রাস। তিনি বলেন, যদিও
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এ তেল আসবে না। তবে আমরা খবর পেয়েছি যে তেল
ইতিমধ্যেই ১৫০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে মারাত্মক পরিণতি
হতে পারে। যেমন, কাঁকড়ার মতো প্রাণিগুলোর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। তবে
বিরল ইরাবতী ডলফিনদের ব্যাপারে আশার কথাই শোনালেন তিনি। তার মতে, যেহেতু
ডলফিন খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী। আশা করা হচ্ছে, তারা তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা
থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন
সোসাইটি জানিয়েছিল, এখানে প্রায় ৬ হাজার ইরাবতী ডলফিন রয়েছে। তবে জলজ
প্রাণীদের ওপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অনিতা মুখার্জী।
কেননা, চেইন-রিঅ্যাকশনের ক্ষতি হওয়ার ফলে মাছের ওপর নির্ভরশীল পাখিদের জীবন
ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ থেকে পুনরুদ্ধার পেতে
অনেক বছর লাগতে পারে বলেও তার অভিমত। এর আগে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ
প্রকাশ করে জাতিসংঘ। এ পথে যে কোন ধরনের বাণিজ্যিক জলযান চলাচল সমপূর্ণ
বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
No comments