যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা ঐতিহাসিক নতুন যুগের সূচনা
৫০
বছর পর কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে ঐতিহাসিক সূচনা হতে
চলেছে। বুধবার উভয় রাষ্ট্র নতুন করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিগন্ত উন্মোচনের
ঘোষণা দেয়। এরই সূত্র ধরে আবারও কূটনৈতিক মিত্রতা জোরদার করার প্রক্রিয়া
চলছে। কিউবার ওপর পাঁচ দশকের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাও শিথিল হবে বলে আশা করা
হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। উভয় দেশের মধ্যকার এ ঐতিহাসিক
সূচনার প্রাক্কালে কিউবা ৫৩ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, আমরা যাদের বিষয়ে কিউবা
সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলাম, তারা ওই ৫৩ বন্দিকে মুক্ত করতে সম্মত
হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে
ইতিমধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে তিনি
আশা প্রকাশ করেন। এদিকে কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো জানিয়েছেন,
কারাবন্দি মার্কিন কন্ট্রাক্টর অ্যালান গ্রসের বিনিময়ে যে তিন কিউবান
বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তারা দেশে পৌঁছেছে। জেরার্ডো হার্নান্দেজ,
র্যামন লাবানিনো এবং অ্যান্টোনিও গেরেরো নামক ওই তিন কিউবানকে গুপ্তচর
সংক্রান্ত অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। রাউল ক্যাস্ট্রো জাতির উদ্দেশে দেয়া
বক্তব্যে বলেন, কমিউনিস্ট বিরোধী নির্বাসিত দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা ওই
ব্যক্তিদেরকে কিউবা সরকার বীর বলে বিবেচনা করে। মার্কিন কর্মকর্তারা আরও
জানিয়েছেন, বন্দিবিনিময় শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিউবাতে
নতুন করে দূতাবাস চালু করার বিষয়ে সমঝোতা করতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, ১৯৬১
সাল থেকে কিউবায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ রয়েছে। ওবামা ও ক্যাস্ট্রোর মধ্যে
ফোনালাপ হয়েছে। গত রাত ১১টার সময় জাতির উদ্দেশে উভয় নেতার বক্তব্য দেয়ার
কথা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক দশকের মার্কিন
বিচ্ছিন্নকরণ কিউবাতে গণতন্ত্রের উত্থান, সমৃদ্ধি এবং স্থীতিশীল কিউবা
স্থাপনের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আজ আমরা আমেরিকাতে আমাদের নেতৃত্ব
নতুন করে শুরু করছি। পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আলোচনা শুরু
হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। ওবামা তার বক্তব্যে বলেছেন, কিউবার সঙ্গে
ওয়াশিংটনের সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্পর্ক
সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ সেকেলে পদক্ষেপের ইতি টানার সময় এসেছে।
আমরা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু করবো। এসব
পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, আমরা আমেরিকান ও কিউবান জনগণের জন্য আরও সুযোগ তৈরি
করতে চাই। নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাই। কিউবার ওপর পঞ্চাশ বছরের বাণিজ্য
নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ওবামা কংগ্রেসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ
বিতর্ক করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। শীতল যুদ্ধকালীন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই
রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শিথিল করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করার লাতিন আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ- পোপ ফ্রান্সিসকে
ধন্যবাদ দেন ওবামা। ওবামা বলেন, কিউবার জনগণের প্রতি আমেরিকা বন্ধুত্বের
হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্প্যানিশ ভাষায় ওবামা বলেন, টোডোস সোমোস আমেরিকানোস
অর্থাৎ আমরা সবাই আমেরিকান। রাউল ক্যাস্ত্রো তার বক্তব্যে বলেন, অর্ধশতকেরও
বেশি সময় পর কিউবা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।
বন্দিবিনিময়ের পর ঐতিহাসিক এ দিগন্ত উন্মোচনের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে তিনি
বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির এখনও কোন সমাধান
হয়নি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬০ সালে কিউবার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করেছিল। আর পরের বছর থেকে বন্ধ হয়ে যায় সব রকমের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এ
নিষেধাজ্ঞার ফলে কিউবার অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও
ক্যাস্ত্রো ভাইদের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটেনি কিউবাতে। ওবামা
প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। আর বাকি দু’বছর। এদিকে অসুস্থ ফিদেল
ক্যাস্ট্রোর বয়স ৮৮। তার ভাই ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ত্রোর বয়ষ
৮৩। শীতল সম্পর্ক শিথিল করার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় উভয় দেশের নেতাদের উপরই
পদক্ষেপ নেয়ার চাপ ছিল। অবশেষে তেমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মার্কিন
নাগরিকদের কিউবা সফরের জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন শিথিল করেছেন ওবামা। এখন
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলেও অচিরেই সে লক্ষে পদক্ষেপ গৃহীত হতে
পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
No comments