ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে লুকোচুরি
বন্ধ
হয়নি তেল নিয়ে খেলা। এবার চলছে দাম নিয়ে লুকোচুরি। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে
এফবিসিসিআই বলেছিল পুরনো তেল নতুন দামে বিক্রি করতে। এতে প্রতি লিটার
বোতলজাত তেলের দাম হওয়ার কথা ১০১ টাকা। বিষয়টি ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী
প্রতিষ্ঠানগুলো আমলে নিলেও নেননি খুচরা দোকানিরা। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে
প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১০১ টাকায়। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বিক্রি
হয়েছিল লিটারপ্রতি ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এবার
চলছে অন্য খেলা। খোদ পাইকারি পর্যায়ে কোম্পানিগুলো ঘোষণা দেয়- আগামী
সপ্তাহে লিটারপ্রতি আরও ৮ টাকা বাড়ানো হবে। এতে পাইকারি পর্যায়েই প্রতি
লিটার বোতলবদ্ধ তেলের দাম পড়বে ১০৯ থেকে ১১০ টাকা, যা খুচরা পর্যায়ে গিয়ে
ঠেকবে প্রায় ১১২ থেকে ১১৫ টাকায়। ফলে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে সয়াবিন
তেলের দাম। কাওরান বাজারের একজন ডিলার জানান, খোলা তেলে ইতিমধ্যে ৬ থেকে ৭
টাকা বেড়েছে। বোতলবদ্ধ তেলেও বাড়বে বলে শুনেছি। বাড়লে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তে
পারে বলে তার ধারণা। বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন, আবার কেউ খুলছেন না।
অনেকটা তেল নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, আগামী
সপ্তাহ থেকে নতুন তেলে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে
ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে তীর মার্কা ও পুষ্টি কোম্পানি
জানিয়েছে তেলের দাম বাড়ার কথা। এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতা বরাত হোসেন বাবুল
মানবজমিনকে জানান, পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেলের পরিবেশকরা বলেছে, প্রতি পাঁচ
লিটারের বোতলজাত তেলে ৪০ টাকা বাড়ানো হবে। অপর এক দোকানি জানান, তীর
ব্র্যান্ডের পরিবেশকরা বলেছে, প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হবে। কেউ বলছেন ৮
টাকা। রূপচাঁদা মার্কা তেলের একজন ডিলার জানান, তেলের দাম বাড়লে ডিলার
হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। কারণ বিক্রি কমে যায়। তিনি বলেন, কোথাও না কোথাও
সিন্ডিকেট হচ্ছে। হয় মালিক পক্ষে না হয় সরকারে। যদি তা না হতো তবে এক
সপ্তাহের ব্যবধানে আবার তেলের দাম বাড়তো না। গত ১১ই ডিসেম্বর এফবিসিসিআই
তেলে কমানোর নির্দেশনা দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। আগে সরবরাহ করা
সয়াবিন তেল যেন বর্তমান দামে বিক্রি হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে
মালিকপক্ষকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন
(এফবিসিসিআই)। একই সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও নতুন দামে বোতলবদ্ধ ভোজ্যতেল
বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি। যদি কোন ব্যবসায়ী
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করেন, তাহলে ভোক্তাদের
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর কিংবা এফবিসিসিআইকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বোতলবদ্ধ
সয়াবিন তেলের দাম কমানোয় ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে সময়
ধন্যবাদ জানিয়েছিল এফবিসিসিআই। সংগঠনটি আশা করেছিল, ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও
বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতেও আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী
স্থানীয় বাজারে দ্রুত দর সমন্বয় ও তা বাস্তবায়ন করবে, যেন ভোক্তারা সঠিক
মূল্যে ভোজ্যতেল কিনতে পারেন। নতুন দর অনুযায়ী, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন
তেল ১০২ টাকা ও ৫ লিটারের তেল ৫০৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু
ব্যবসায়ীরা সে কথা রাখেনি। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.
হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, বিষয়টি জানা নেই। যদি অনুসন্ধানে পাওয়া যায়
তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এফবিসিসিআই ও
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এক সঙ্গে কাজ করবে বলে জানান তিনি। কনজুমার
এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম
রহমান মানবজমিনকে জানান, গুটিকয় ব্যবসায়ী তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার
চাইলেও তেলের দাম কমাতে পারবে না। তবে দাম কমানোর সদিচ্ছা থাকলে টিসিবিসহ
সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেল আমদানি করা উচিত। এ প্রক্রিয়ায় তেলের দাম
কমতে পারে। ভোক্তাশ্রেণী সুফল পাবে। এছাড়া অন্য কোন পথ আছে বলে আমার জানা
নেই।
No comments