দাপুটে জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশঃ ছবিতে সৌম্যদের আফ্রিকা-বধ, ছবি: শামসুল হক
২০০৭ বিশ্বকাপের পর রোববার মিরপুরে প্রোটিয়াদের হারাল বাংলাদেশ। এই জয়ে সবচেয়ে অবদান যার সেই সৌম্য সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন কোচ |
দেয়ালে
পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তা নয়। গুমোট একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এটা
অনস্বীকার্য। বিপুল বিক্রমে, এক ফুৎকারে সব উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। সিরিজের
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই খেললো
মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। মিরপুরের ২২ গজে ব্যাটে বলে বাংলাদেশের কাছে
চিড়ে-চ্যাপ্টা হলো প্রোটিয়ারা। রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে পরাজিত
করেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ এ সমতা ফেরাল টাইগাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এলো আট বছর পর। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে সুপার
এইটে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার প্রোটিয়াদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আর এই মধুর
জয়টা পরিষ্কার ও সন্দেহাতীত ভাবেই নিশ্চিত করে দিল, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে
অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ। টস জিতে
প্রথমে ব্যাট করে ৪৬ ওভারে ১৬২ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ২৭.৪
ওভারে ৩ উইকেটে ১৬৭ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৬৩ রানের টার্গেটই
দুর্গম পথ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। ২৪ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে
স্বাগতিকরা। আগের ম্যাচের সফল বোলার রাবাডাকে আক্রমণের প্ল্যানই করে
নেমেছিল বাংলাদেশ। যে কৌশলের বলিই হলেন তামিম ও লিটন। ইনিংসের সপ্তম বলেই
রাবাডাকে ডাউন দ্যা উইকেট মারতে গিয়ে টানা দুই ম্যাচে বোল্ড হন তামিম (৫)।
আক্রমণাত্মক শুরু পেয়েছিলেন লিটন দাসও। এক ছয়, দুই চারে তার উড়ন্ত শুরু
বাধা পায় রাবাডার করা চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে আঙ্গুলে ব্যথা পেলে।
প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরের বলেই বোল্ড হয়েছেন লিটন। তিনি ১৭ রান করেন।
তৃতীয় উইকেটে সৌম্য-মাহমুদউল্লাহর জুটি ইনিংস বিনির্মাণ ও দলকে স্বস্তির
প্ল্যাটফর্ম পাইয়ে দেয়। তাদের ব্যাটে ছিল শাসন আর আধিপত্যের গান। দলকে জয়ের
বন্দরে পৌঁছে দেয় তাদের ১৩৫ রানের জুটি। যা ওয়ানডেতে তৃতীয় ও যে কোনো
উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ৪৭ বলেই
তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সৌম্য। ৬৩ বলে ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। কিন্তু দলকে জয় থেকে চার রান দূরে রেখে আউট হয়ে যান
তিনি। ৫০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করা সৌম্য দলের
জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন সৌম্য। তিনি ৭৯ বলে
৮৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন। যেখানে ছিল ১৩টি চার ও ১টি ছক্কার মার। দক্ষিণ
আফ্রিকার পক্ষে রাবাডা দুই উইকেট নেন। এর আগে টসভাগ্যের খেলায় এদিনও
সুসংবাদ মিলেনি বাংলাদেশের জন্য। টসে হারলেও বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা
ছিল আগের তুলনায় অনেক পরিশীলিত, নিয়ন্ত্রিত। যার ফলটাও দ্রুতই মিলেছে।
বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অফ
স্ট্যাম্পের বাইরে মুস্তাফিজের কিছুটা শর্ট লেন্থের বল ডি ককের (২) ব্যাট
ছুঁয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে জমা পড়ে। আমলা-ডু প্লেসিসের ২৯
রানের জুটি ভেঙেছেন রুবেল। প্রথম ম্যাচ সাইড বেঞ্চে বসে থাকা রুবেল
দুর্দান্ত এক লেন্থ বলে উপড়ে দিয়েছেন আমলার অফ স্ট্যাম্প। আমলা ২২ রান
করেন। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রণের সামনে রানের জন্য হাসফাঁস করতে দেখা
গেছে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। খুবই মন্থর ছিল তাদের রানের চাকা। সেটি
সচলের চেষ্টায় সফল হননি রুশো-মিলাররাও। আক্রমণ ভুলে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে
বাধ্য হয়েছেন তারা। ১৯তম ওভারে রুশো (৪) বোল্ড হন নাসিরের বলে।
মাহমুদউল্লাহর বলে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে মিলার করেন ৯ রান। এই
সফরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন ডু প্লেসিস। উইকেট
আকড়ে থাকায় সিদ্ধহস্ত তিনি। রোববারও সেই পথেই হাঁটছিলেন ৪১ রান করা ডু
প্লেসিস। কিন্তু দলীয় ৯৩ রানে নাসিরকে ডাউন দ্যা উইকেট খেলতে গিয়ে লং অনে
সৌম্যর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। পথের কাঁটা ডুমিনিকে ফেরান মুস্তাফিজ। অফসাইডে
মাশরাফির তৈরি ফিল্ডিং জাল ছিন্ন করার চেষ্টাতেই ফিরতে হয়েছে ডুমিনিকে
(১৩)। ১২ রান করে ক্রিস মরিস রুবেলের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন। বাংলাদেশের
বোলারদের সামনে রীতিমতো জবুথবু হয়েই থাকতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। যার প্রমাণ
হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রান পূর্ণ করেছিল ৩১.৩ ওভারে।
একপ্রান্তে ফারহান বেহারডিন তোপ দাগানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। অ্যাবোটকে (৫)
নিজের তৃতীয় শিকার বানান নাসির। বেহারডিনকে ফিরিয়ে সফরকারীদের ইনিংসের
লেজটা মুড়ে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। ডিপ মিড উইকেটে অসাধারণ ক্যাচ নেন নাসির।
বেহারডিন ৩৬ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে নাসির ২৬ রানে ৩টি, মুস্তাফিজ ৩টি,
রুবেল ২টি, মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।
মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর সাকিব আল হাসান
ও সৌম্য সরকার। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা এল। ছবি: শামসুল হক
একটু আগেই সৌম্য সরকারের ছক্কায় মিরপুরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় পেল বাংলাদেশ। সেই সৌম্য সরকারকে অভিনন্দন ইমরান তাহির। ছবি: শামসুল হক
মিরপুরে সৌম্য সরকারের অপরাজিত ৮৮ রানে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ। ছবি: শামসুল হক
সৌম্য সরকারের এমন বাহারি শটেই বাংলাদেশে কাছে হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। ছবি: শামসুল হক
দক্ষিণ আফ্রিকার ছুড়ে দেওয়া ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে
শুরুতেই দুই উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপরই জুটি গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও
সৌম্য সরকার। তাঁদের জুটিতেই সহজেই জয় পায় মাশরাফি বাহিনী। ছবি: শামসুল হক
দক্ষিণ আফ্রিকার ডি ককের উইকেট পাওয়ার পর মুস্তাফিজুর রহমান। ছবি: শামসুল হক
ফ্যাফ ডু প্লেসিকে সাঝ ঘরে ফেরত পাঠানোয় নাসির হোসেনকে অধিনায়কের অভিনন্দন। ছবি: শামসুল হক
দক্ষিণ আফ্রিকার দলনায়ক আমলাকে বোল্ড করেছেন রুবেল হোসেন। ছবি: শামসুল হক
No comments