সিঁথির বেপরোয়া জীবন by রুদ্র মিজান
মধ্যবিত্ত
পরিবারের মেয়ে মেহেরুন বিনতে সিঁথি। ছোটবেলা থেকেই তার উচ্চবিলাসী
মনমানসিকতা। একপর্যায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বেপরোয়া জীবনযাপনে। ব্যাংকার
স্বামীকে ছেড়ে পরকীয়ায় মজে এখন সারা দেশে আলোচিত। সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম
মুকুলের সঙ্গে তার পরকীয়ার কারণে ভাঙনের মুখে দুটি সংসার। স্ত্রী নাজনীন
আক্তারের দায়ের করা মামলায় এখন কারাভোগ করছেন মুকুল। একই মামলায় কারাগার
থেকে সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন সিঁথি।
সিঁথি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতো সিঁথি। সৌন্দর্য ও কণ্ঠের গুণে সহজেই মানুষকে আকর্ষণ তৈরি করতো সে। একসময় ঢাকায় এসে ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। এর মধ্যেই ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। খ্যাতিমান ও ধনাঢ্য পরিবারের ওই ছেলেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকেন সিঁথি। চুটিয়ে প্রেম করেন তারা। ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত শপিং মল, কফি শপ, রেস্টুরেন্ট বরাবরই প্রিয় ছিল সিঁথির।
সূত্রমতে, ওই সময়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকে যোগ দেন ছেলেটি। এরপরেই ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তার সঙ্গে বিয়ে হয় সিঁথির। বিয়ের পর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ভ্রমণের তীব্র ইচ্ছার কথা বারবার প্রকাশ করতেন সিঁথি। কিন্তু সাধ্য ও সুযোগের অভাবে তা সম্ভব হতো না তার স্বামীর। সকাল ৯টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত তাকে একাই থাকতে হতো ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামীর মগবাজারের বাসায়। ওই সময়ে ফেসবুক ও টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতেন সিঁথি। সুযোগ পেলেই বাইরে বের হতেন বন্ধুদের সঙ্গে। সিঁথির ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু রয়েছে বলে তার স্বামী স্বীকার করেছেন। ওয়েস্টার্ন পোশাক প্রিয় ছিলো তার।
ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামীর এক বন্ধুর মাধ্যমে এক আমেরিকা প্রবাসীর সঙ্গে পরিচয় হয় সিঁথির। ওই পরিচয়ের পর ফোন নম্বর বিনিময় হয়। ওই দিন রাতেই ফেসবুকে ওই প্রবাসীর বন্ধু তালিকায় যোগ হন সিঁথি। স্বামীর অজান্তে তার সঙ্গে চ্যাট ও ফোনে কথা হতো সমানতালে। বিষয়টি ওই প্রবাসীর স্ত্রী অবগত হওয়ার পর তা আর বেশিদূর এগোয়নি। তবে ওই সময়ে প্রাক্তন আরেক প্রেমিকের সঙ্গে আবার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটান সিঁথি।
২০১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় শিশুকন্যা চন্দ্রমুখীর মৃত্যু ও তার মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টার সংবাদে। চন্দ্রমুখীকে হারিয়ে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিক নাজনীন আক্তার তন্বি। ওই সংবাদে অনেকের মতোই মর্মাহত হন সিঁথি। চন্দ্রমুখীর মা তন্বির চেয়েও তার বাবা রকিবুল ইসলাম মুকুলকে জানার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তিনি। সিঁথির ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ওই সময়ে মুকুল যে টিভি চ্যানেলে কাজ করতেন সে টিভি চ্যানেলের নিয়মিত দর্শক ছিলেন সিঁথি। ফেসবুকে সার্চ করে মুকুলকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ প্রেরণ করেন তিনি। শুরু হয় হাই-হ্যালো। ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত তন্বি তখন হাসপাতালের শয্যায়। ওই সময়েই মুকুলের সঙ্গে ফেসবুকে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে সিঁথির। গত বছরের জানুয়ারিতে মুকুলের সঙ্গে দেখা করতে ওই টিভি চ্যানেলের অফিসে যান সিঁথি। রকিবুল ইসলাম মুকুল তখন ওই টিভি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক। সেদিন ওই টিভি অফিসে ছবি তোলে তা ফেসবুকে আপলোড করেন সিঁথি। অফিসে দীর্ঘ সময় মুকুলের সঙ্গে কথা হয় সিঁথির। অন্তরঙ্গ আলাপনের এক পর্যায়ে ওই দিনই দুজনের মধ্যে তুমি সম্বোধনের শুরু হয়। মুকুল ওই সময় তাকে জানান, স্ত্রী তন্বি হাসপাতালে থাকায় খাওয়া-দাওয়ায় কষ্টে হচ্ছে তার। এরপর প্রায়ই বাসায় রান্না করে মুকুলের জন্য অফিসে নিয়ে যেতেন সিঁথি। ওই সময়ে মুকুলের সঙ্গে ঘনঘন দেখা করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য একটা চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। গণমাধ্যমের রিপোর্টার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সিঁথি। মুকুলও তাকে আশ্বস্ত করেন। এরমধ্যেই ওয়ারীতে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সিঁথি। স্কুলের নাম করে মুকুলের সঙ্গে সময় কাটানোই তার প্রিয় হয়ে উঠে। পাশাপাশি ছায়ানটে গান শিখতেন সিঁথি। রবীন্দ্র সংগীতে ভালো হাতেখড়ি তার।
সিঁথির ঘনিষ্ঠরা জানান, একান্তে সময় কাটানোর জন্য বনশ্রীতে একটি বাসা ভাড়া নেন মুকুল-সিঁথি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই বাসায় দিনের প্রায় পুরো সময় কাটাতেন তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বনশ্রীর এফ ব্লকের সাত নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর বাড়িটি তারা ভাড়া নিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাড়িতে মুকুলের ঘনিষ্ঠরাও যেতেন। প্রায়ই রাতে সেখানে আড্ডা হতো। দিনে ওই বাসায় অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন সিঁথি ও মুকুল। ওই বাসায় তোলা তাদের অনেক আলোকচিত্র পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, দেশের বাইরে ভ্রমণের শখ সিঁথির। এ জন্য মুকুলের সঙ্গে আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। মুকুলের সহযোগিতায় তার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদনও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিসা পাননি তিনি।
স্ত্রীর আড়ালে মুকুল ও স্বামীর আড়ালে সিঁথি এই পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যান। সাংবাদিক নাজনীন আক্তার তন্বি জানান, গত বছরের জুন মাস থেকে অসংলগ্ন কথা বলতেন রকিবুল ইসলাম মুকুল। এসব কথা শুরুতে বুঝতে পারেননি তন্বি। মুকুল প্রায়ই বলতেন, তোমাকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে দূরে চলে যাবো। জমি বিক্রি করে সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেব। এই টাকা দিয়েই তুমি চলতে পারবে। আবার কখনো বলতেন, আমার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। কিন্তু মুকুলের অসংলগ্ন এসব কথায় তেমন কিছু মনে করতেন না তন্বি। তার কাছে মনে হতো আদরের কন্যা চন্দ্রমুখীকে হারিয়ে কষ্ট-হতাশা থেকেই এসব বলছেন মুকুল। কিন্তু মূল রহস্যটি বুঝতে পারেন কিছু দিনের মধ্যেই। তন্বি বলেন, একদিন ক্ষুব্ধ হয়ে মুকুল বললো তুমি আমার কাছে বোঝা। মনে করেছো বাচ্চা হলে আটকাতে পারবে আমাকে। মোটেও না। কথা শুনে বুকটা ভেঙে যায় তন্বির। সন্দেহটা ওই সময়ে জাগে। মুকুলের ফেসবুক সার্চ করে সিঁথিকে খুঁজে পান। মুকুলের প্রতিটি স্ট্যাটাসে তার মন্তব্য। কিন্তু তরুণী বিবাহিতা-এই তথ্য দেখে সন্দেহটা তার দিকে এগোয়নি। অবশ্য তন্বির বন্ধুরা জানিয়ে দেন আসল তথ্য। জানাজানির পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন মুকুল। কলহ বাড়তে থাকে। সংসারে ভাঙনের শব্দ স্পষ্ট হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তন্বি। তার আগেই নিজের নামে রাখা পূর্বাচলের সাত কাঠা জমি দুই কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মুকুল। সূত্রমতে, ওই টাকা থেকে গত ২রা এপ্রিল প্রেমিকা সিঁথিকে ১০ লাখ টাকা পে-অর্ডার করেন তিনি। মুকুলকে ফেরাতে কম চেষ্টা করেননি তন্বি। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সিঁথিকে অনুরোধ করেছিলেন, আমার সংসার ভাঙবেন না। জবাবে সিঁথি বলেছিলেন, আপনার স্বামীকে ধরে রাখতে পারেন না কেন। কেন সে আমার কাছে আসে? একইভাবে গত মে মাসে মুকুলের সঙ্গে সিঁথির পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে নিশ্চিত হন তার স্বামী। অনেক চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেননি নিজ স্ত্রীকে। তিনি জানান, সিঁথির প্রতি অনেক বিশ্বাস ছিলো। ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেছিলাম। কল্পনাও করিনি সে কখনো এরকম করতে পারে!
সর্বশেষ মুকুল ও সিঁথিকে আসামি করে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন তন্বি। মামলা দায়েরের পর গত ২৬শে জুন রাতে মুকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ওই রাতে শপিং করতে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিলেন সিঁথি ও মুকুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় মুকুলের হাত ধরে, পায়ে পায়ে হাঁটছিলেন সিঁথি। অন্য হাতে ছিলো কয়েকটি শপিং ব্যাগ।
মেহেরুণ বিনতে সিঁথির সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে তার মা রুবিনা আক্তার বলেন, সিঁথির বন্ধু মুকুল। এছাড়া কিছুই না। মুকুল-সিঁথির অন্তরঙ্গ ছবিগুলো বানানো। অযথা তার নিষ্পাপ মেয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মেহেরুন বিনতে সিঁথির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুরে। তার পিতা মৃত ফেরদৌস আলম একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। দুই বোনের মধ্যে সিঁথি ছোট। তার বড় বোন ও ভগ্নিপতি এবং মা বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে সিঁথিও সেখানে আছেন বলে জানিয়েছেন তার মা।
সিঁথি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতো সিঁথি। সৌন্দর্য ও কণ্ঠের গুণে সহজেই মানুষকে আকর্ষণ তৈরি করতো সে। একসময় ঢাকায় এসে ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। এর মধ্যেই ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। খ্যাতিমান ও ধনাঢ্য পরিবারের ওই ছেলেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকেন সিঁথি। চুটিয়ে প্রেম করেন তারা। ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত শপিং মল, কফি শপ, রেস্টুরেন্ট বরাবরই প্রিয় ছিল সিঁথির।
সূত্রমতে, ওই সময়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকে যোগ দেন ছেলেটি। এরপরেই ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তার সঙ্গে বিয়ে হয় সিঁথির। বিয়ের পর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ভ্রমণের তীব্র ইচ্ছার কথা বারবার প্রকাশ করতেন সিঁথি। কিন্তু সাধ্য ও সুযোগের অভাবে তা সম্ভব হতো না তার স্বামীর। সকাল ৯টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত তাকে একাই থাকতে হতো ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামীর মগবাজারের বাসায়। ওই সময়ে ফেসবুক ও টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতেন সিঁথি। সুযোগ পেলেই বাইরে বের হতেন বন্ধুদের সঙ্গে। সিঁথির ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু রয়েছে বলে তার স্বামী স্বীকার করেছেন। ওয়েস্টার্ন পোশাক প্রিয় ছিলো তার।
ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামীর এক বন্ধুর মাধ্যমে এক আমেরিকা প্রবাসীর সঙ্গে পরিচয় হয় সিঁথির। ওই পরিচয়ের পর ফোন নম্বর বিনিময় হয়। ওই দিন রাতেই ফেসবুকে ওই প্রবাসীর বন্ধু তালিকায় যোগ হন সিঁথি। স্বামীর অজান্তে তার সঙ্গে চ্যাট ও ফোনে কথা হতো সমানতালে। বিষয়টি ওই প্রবাসীর স্ত্রী অবগত হওয়ার পর তা আর বেশিদূর এগোয়নি। তবে ওই সময়ে প্রাক্তন আরেক প্রেমিকের সঙ্গে আবার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটান সিঁথি।
২০১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় শিশুকন্যা চন্দ্রমুখীর মৃত্যু ও তার মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টার সংবাদে। চন্দ্রমুখীকে হারিয়ে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিক নাজনীন আক্তার তন্বি। ওই সংবাদে অনেকের মতোই মর্মাহত হন সিঁথি। চন্দ্রমুখীর মা তন্বির চেয়েও তার বাবা রকিবুল ইসলাম মুকুলকে জানার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তিনি। সিঁথির ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ওই সময়ে মুকুল যে টিভি চ্যানেলে কাজ করতেন সে টিভি চ্যানেলের নিয়মিত দর্শক ছিলেন সিঁথি। ফেসবুকে সার্চ করে মুকুলকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ প্রেরণ করেন তিনি। শুরু হয় হাই-হ্যালো। ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত তন্বি তখন হাসপাতালের শয্যায়। ওই সময়েই মুকুলের সঙ্গে ফেসবুকে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে সিঁথির। গত বছরের জানুয়ারিতে মুকুলের সঙ্গে দেখা করতে ওই টিভি চ্যানেলের অফিসে যান সিঁথি। রকিবুল ইসলাম মুকুল তখন ওই টিভি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক। সেদিন ওই টিভি অফিসে ছবি তোলে তা ফেসবুকে আপলোড করেন সিঁথি। অফিসে দীর্ঘ সময় মুকুলের সঙ্গে কথা হয় সিঁথির। অন্তরঙ্গ আলাপনের এক পর্যায়ে ওই দিনই দুজনের মধ্যে তুমি সম্বোধনের শুরু হয়। মুকুল ওই সময় তাকে জানান, স্ত্রী তন্বি হাসপাতালে থাকায় খাওয়া-দাওয়ায় কষ্টে হচ্ছে তার। এরপর প্রায়ই বাসায় রান্না করে মুকুলের জন্য অফিসে নিয়ে যেতেন সিঁথি। ওই সময়ে মুকুলের সঙ্গে ঘনঘন দেখা করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য একটা চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। গণমাধ্যমের রিপোর্টার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সিঁথি। মুকুলও তাকে আশ্বস্ত করেন। এরমধ্যেই ওয়ারীতে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সিঁথি। স্কুলের নাম করে মুকুলের সঙ্গে সময় কাটানোই তার প্রিয় হয়ে উঠে। পাশাপাশি ছায়ানটে গান শিখতেন সিঁথি। রবীন্দ্র সংগীতে ভালো হাতেখড়ি তার।
সিঁথির ঘনিষ্ঠরা জানান, একান্তে সময় কাটানোর জন্য বনশ্রীতে একটি বাসা ভাড়া নেন মুকুল-সিঁথি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই বাসায় দিনের প্রায় পুরো সময় কাটাতেন তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বনশ্রীর এফ ব্লকের সাত নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর বাড়িটি তারা ভাড়া নিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাড়িতে মুকুলের ঘনিষ্ঠরাও যেতেন। প্রায়ই রাতে সেখানে আড্ডা হতো। দিনে ওই বাসায় অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন সিঁথি ও মুকুল। ওই বাসায় তোলা তাদের অনেক আলোকচিত্র পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, দেশের বাইরে ভ্রমণের শখ সিঁথির। এ জন্য মুকুলের সঙ্গে আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। মুকুলের সহযোগিতায় তার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদনও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভিসা পাননি তিনি।
স্ত্রীর আড়ালে মুকুল ও স্বামীর আড়ালে সিঁথি এই পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যান। সাংবাদিক নাজনীন আক্তার তন্বি জানান, গত বছরের জুন মাস থেকে অসংলগ্ন কথা বলতেন রকিবুল ইসলাম মুকুল। এসব কথা শুরুতে বুঝতে পারেননি তন্বি। মুকুল প্রায়ই বলতেন, তোমাকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে দূরে চলে যাবো। জমি বিক্রি করে সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেব। এই টাকা দিয়েই তুমি চলতে পারবে। আবার কখনো বলতেন, আমার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। কিন্তু মুকুলের অসংলগ্ন এসব কথায় তেমন কিছু মনে করতেন না তন্বি। তার কাছে মনে হতো আদরের কন্যা চন্দ্রমুখীকে হারিয়ে কষ্ট-হতাশা থেকেই এসব বলছেন মুকুল। কিন্তু মূল রহস্যটি বুঝতে পারেন কিছু দিনের মধ্যেই। তন্বি বলেন, একদিন ক্ষুব্ধ হয়ে মুকুল বললো তুমি আমার কাছে বোঝা। মনে করেছো বাচ্চা হলে আটকাতে পারবে আমাকে। মোটেও না। কথা শুনে বুকটা ভেঙে যায় তন্বির। সন্দেহটা ওই সময়ে জাগে। মুকুলের ফেসবুক সার্চ করে সিঁথিকে খুঁজে পান। মুকুলের প্রতিটি স্ট্যাটাসে তার মন্তব্য। কিন্তু তরুণী বিবাহিতা-এই তথ্য দেখে সন্দেহটা তার দিকে এগোয়নি। অবশ্য তন্বির বন্ধুরা জানিয়ে দেন আসল তথ্য। জানাজানির পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন মুকুল। কলহ বাড়তে থাকে। সংসারে ভাঙনের শব্দ স্পষ্ট হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তন্বি। তার আগেই নিজের নামে রাখা পূর্বাচলের সাত কাঠা জমি দুই কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মুকুল। সূত্রমতে, ওই টাকা থেকে গত ২রা এপ্রিল প্রেমিকা সিঁথিকে ১০ লাখ টাকা পে-অর্ডার করেন তিনি। মুকুলকে ফেরাতে কম চেষ্টা করেননি তন্বি। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সিঁথিকে অনুরোধ করেছিলেন, আমার সংসার ভাঙবেন না। জবাবে সিঁথি বলেছিলেন, আপনার স্বামীকে ধরে রাখতে পারেন না কেন। কেন সে আমার কাছে আসে? একইভাবে গত মে মাসে মুকুলের সঙ্গে সিঁথির পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে নিশ্চিত হন তার স্বামী। অনেক চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেননি নিজ স্ত্রীকে। তিনি জানান, সিঁথির প্রতি অনেক বিশ্বাস ছিলো। ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেছিলাম। কল্পনাও করিনি সে কখনো এরকম করতে পারে!
সর্বশেষ মুকুল ও সিঁথিকে আসামি করে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন তন্বি। মামলা দায়েরের পর গত ২৬শে জুন রাতে মুকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ওই রাতে শপিং করতে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিলেন সিঁথি ও মুকুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় মুকুলের হাত ধরে, পায়ে পায়ে হাঁটছিলেন সিঁথি। অন্য হাতে ছিলো কয়েকটি শপিং ব্যাগ।
মেহেরুণ বিনতে সিঁথির সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে তার মা রুবিনা আক্তার বলেন, সিঁথির বন্ধু মুকুল। এছাড়া কিছুই না। মুকুল-সিঁথির অন্তরঙ্গ ছবিগুলো বানানো। অযথা তার নিষ্পাপ মেয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মেহেরুন বিনতে সিঁথির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুরে। তার পিতা মৃত ফেরদৌস আলম একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। দুই বোনের মধ্যে সিঁথি ছোট। তার বড় বোন ও ভগ্নিপতি এবং মা বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে সিঁথিও সেখানে আছেন বলে জানিয়েছেন তার মা।
No comments