খাবারের দোকান, নাকি শেয়ারবাজারের সূচক! by রানা আব্বাস
খাবার কিনবেন কিনা দাম শুনে দ্বিধায় এক ক্রেতা। ছবি: প্রথম আলো |
ইফতারির সময় হয়ে এসেছে। প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েও কিছু কিনতে পারলেন না ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে খেলা দেখতে আসা শোয়েব।
‘কী ব্যাপার কিছু কিনলেন না?’ জিজ্ঞেস করতেই এআইইউবির এ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ যেন উগরে পড়ল, ‘কিনব কী করে? দাম দেখছেন? মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়!’
তবে ইফতারি করবেন কী দিয়ে? হাতের বোতলটা উঁচিয়ে দেখালেন, ‘আপাতত এটা দিয়ে চালিয়ে দেব। আর বাংলাদেশের ইনিংসে যে অবস্থা, বাসায় যেতে বেশিক্ষণ লাগবে না।’
প্রথম ওয়ানডেতে শোয়েব না হয় এ দফা কোনো মতে চালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আজ? এবং এর পর?। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে দর্শকদের ভোগান্তি যে নতুন নয়। বরং নিত্যসঙ্গী। খাবারের দাম আকাশছোঁয়া!
এমনিতে গ্যালারিতে ঢোকার সময় খাদ্যদ্রব্য তো বটেই, কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে দর্শকদের কিনতে হয় গ্যালারির দোকানগুলোর খাবার। ইফতারির সময়ে এ বিড়ম্বনা বাড়ে বহুগুণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ইফতারির আগে-পরে লক্ষ্য করা হলো খাবারের দাম। তখন ইফতারির আধা ঘণ্টার মতো বাকি। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের লাগোয়া খাবারের দোকানটায় দর্শকদের ইফতারি কেনার হিড়িক। ভিড় ঠেলে চিকেন বিরিয়ানির দাম জানা গেল ১৫০ টাকা। ইফতারির মিনিট তিনেক আগে সেটি লাফিয়ে উঠল ২০০-এর ঘরে! ইফতারির আধা ঘণ্টা পরে আবার নেমে এল ১০০ টাকায়।
শুধু বিরিয়ানি নয়, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দোকানগুলোয় অন্য খাবারগুলোর দামও এভাবেই ওঠা-নামা করে। এ যেন শেয়ারবাজারের সূচক! এই ওঠে, এই নামে! খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা মেলে না। সেটি অনেক সময় নির্ভর করে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের ওপরও। কোনো দিন হয়তো ২৫০ টাকাতেও একটা বার্গার মেলে না। কোনো দিন ৩০ টাকা হাঁকিয়েও ক্রেতা পায় না দোকানিরা। কিন্তু রজমান মাস বলেই খাবার নিয়ে দর্শকদের ভোগান্তি চোখে পড়ছে বেশি করে।
এবার রমজানে মিরপুরে মোট চারটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে শেষ দুটি ওয়ানডে হয়েছিল এই রমজানের মধ্যেই। ওই দুই ম্যাচে বিসিবি ইফতারির জন্য দর্শকদের এক বোতল পানি দিয়েছিল সৌজন্য হিসেবে। কিন্তু তাতে দেখা গেল উল্টো বিপত্তি। তাতে দায় বেশ কিছু দর্শকের। ইফতারির পর গ্যালারি থেকে বোতল ছোড়া, ‘মওকা মওকা’ দুয়োধ্বনির তালে বোতল দিয়ে শব্দ করা—এ কারণে এবার পানির বোতল দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে বিসিবি। কিনেই পান করতে হবে পানি। কিন্তু ইফতারির আগে দেড় লিটার পানির বোতল কিনতে গেলে ভিরমিই খেতে হবে!
স্টেডিয়ামে খাবারের দোকান রয়েছে ২৫টির মতো। বেশির ভাগ দোকানের নেই দামের তালিকা। ফলে দাম হাঁকানো হয় ইচ্ছে মতো। বেশির ভাগ খাবারের দাম রাখা হয় দ্বিগুণ হারে। অবশ্য পরিস্থিতি বুঝে দাম ওঠা-নামা করে। সব সময় খাবারের চাহিদা একরকম থাকে না। যেমন বৃষ্টিতে কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে খাবারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই পড়ে যায়। কিংবা ম্যাচের শেষ দিকেও খাবার চাহিদা তেমন থাকে না। রমজানের সময় খাবারের চাহিদা কমে যায় ইফতারির পর। এ কারণেই যখনই খাবারের চাহিদা বাড়ে, মওকা বুঝে তখনই খাবারের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
ইফতারির সময় দেড় লিটার পানির বোতল নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা, পেপসি দুই লিটার ৩০০ ও এক গ্লাস ৩৫ টাকা। পিত্জা কখনো ১০০ টাকা, কখনো বা নেমে আসে ৬০ টাকায়। চিকেন বার্গার সময়ভেদে ১০০ থেকে ৬০ এমনকি ৫০ টাকায় নেমে আসে। ভেজিটেবল রোল কখনো ৫০, কখনো বা ৪০ টাকা। হট-ডগ ওঠা-নামা করে ১০০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। স্যান্ডউইচ পাওয়া যাবে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
খাবারের দাম কেন এমন ওঠা-নামা করে জানতে চাইলে স্টল খুলে বসা কিংস এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বললেন, ‘যখন যেভাবে বিক্রি করা যায়! ইফতারির সময় চাহিদা বেশি থাকে। অন্য সময় তো এমন চাহিদা থাকে না।’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চাইলে যে কেউ দোকান নিতে পারেন না। তাহলে
কীভাবে দোকান পাওয়া যায়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানালেন,
‘বিসিবির সঙ্গে যারা জড়িত, যাদের একাডেমি আছে, এ ছাড়া এলাকার ছেলেপেলেরাই
এখানে দোকান দিতে পারে। যে কেউ চাইলেই এখানে দোকান দিতে পারে না। যদি আপনার
বিসিবিতে লোক থাকে, তাহলে পারবেন। তবে কেবল বিসিবিতে লোক থাকলেই হবে না;
তালিকাভুক্ত লোকেরাই অগ্রাধিকার পায়।’ সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়টাও লাগে
কিনা-শুনে ওই ব্যবসায়ীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘আপনি কি মনে করেন, রাজনৈতিক পরিচয়
ছাড়াই আমরা এখানে ব্যবসা করতাছি?’
খাবারের দাম-প্রসঙ্গে বিসিবির বিপণন ও বাণিজ্য কমিটির প্রধান কাজী ইনাম আহমেদের কাছে জানতে চাইলে বললেন, ‘দোকানের বরাদ্দ বা দামের বিষয়টা আমরা দেখি না। সাধারণত ব্রান্ডের খাবারগুলো, যেমন আইসক্রিমের দামের ব্যাপারে বলতে পারব। বাকিগুলোর দাম লজিস্টিকস কমিটি দেখে।’
যোগাযোগ করা হলে লজিস্টিকস ও প্রটোকল কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার মল্লিক বললেন, ‘আমরা খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। দামের তালিকা তাদের দেওয়া আছে। কিন্তু সব সময় তারা এটা মানে না। এটা আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। যখন প্রচুর দর্শক থাকে, তখন তারা বেশি দাম নেই। আবার দর্শক না থাকলে ওই খাবারগুলো বিক্রির সুযোগ থাকে না। তবুও চেষ্টা করি দাম নিয়ন্ত্রণের।’
ক্রিকেট নাকি ‘মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল’ খেলা। এ নিয়ে তর্ক করতেই পারেন। তবে মিরপুরের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের খাবারের দাম যে পৃথিবীর যেকোনো খেলার যেকোনো স্টেডিয়ামের চেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, তাতে কোনো সন্দেহ নেই!
‘কী ব্যাপার কিছু কিনলেন না?’ জিজ্ঞেস করতেই এআইইউবির এ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ যেন উগরে পড়ল, ‘কিনব কী করে? দাম দেখছেন? মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়!’
তবে ইফতারি করবেন কী দিয়ে? হাতের বোতলটা উঁচিয়ে দেখালেন, ‘আপাতত এটা দিয়ে চালিয়ে দেব। আর বাংলাদেশের ইনিংসে যে অবস্থা, বাসায় যেতে বেশিক্ষণ লাগবে না।’
প্রথম ওয়ানডেতে শোয়েব না হয় এ দফা কোনো মতে চালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আজ? এবং এর পর?। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে দর্শকদের ভোগান্তি যে নতুন নয়। বরং নিত্যসঙ্গী। খাবারের দাম আকাশছোঁয়া!
এমনিতে গ্যালারিতে ঢোকার সময় খাদ্যদ্রব্য তো বটেই, কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে দর্শকদের কিনতে হয় গ্যালারির দোকানগুলোর খাবার। ইফতারির সময়ে এ বিড়ম্বনা বাড়ে বহুগুণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ইফতারির আগে-পরে লক্ষ্য করা হলো খাবারের দাম। তখন ইফতারির আধা ঘণ্টার মতো বাকি। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের লাগোয়া খাবারের দোকানটায় দর্শকদের ইফতারি কেনার হিড়িক। ভিড় ঠেলে চিকেন বিরিয়ানির দাম জানা গেল ১৫০ টাকা। ইফতারির মিনিট তিনেক আগে সেটি লাফিয়ে উঠল ২০০-এর ঘরে! ইফতারির আধা ঘণ্টা পরে আবার নেমে এল ১০০ টাকায়।
শুধু বিরিয়ানি নয়, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দোকানগুলোয় অন্য খাবারগুলোর দামও এভাবেই ওঠা-নামা করে। এ যেন শেয়ারবাজারের সূচক! এই ওঠে, এই নামে! খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা মেলে না। সেটি অনেক সময় নির্ভর করে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের ওপরও। কোনো দিন হয়তো ২৫০ টাকাতেও একটা বার্গার মেলে না। কোনো দিন ৩০ টাকা হাঁকিয়েও ক্রেতা পায় না দোকানিরা। কিন্তু রজমান মাস বলেই খাবার নিয়ে দর্শকদের ভোগান্তি চোখে পড়ছে বেশি করে।
এবার রমজানে মিরপুরে মোট চারটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে শেষ দুটি ওয়ানডে হয়েছিল এই রমজানের মধ্যেই। ওই দুই ম্যাচে বিসিবি ইফতারির জন্য দর্শকদের এক বোতল পানি দিয়েছিল সৌজন্য হিসেবে। কিন্তু তাতে দেখা গেল উল্টো বিপত্তি। তাতে দায় বেশ কিছু দর্শকের। ইফতারির পর গ্যালারি থেকে বোতল ছোড়া, ‘মওকা মওকা’ দুয়োধ্বনির তালে বোতল দিয়ে শব্দ করা—এ কারণে এবার পানির বোতল দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে বিসিবি। কিনেই পান করতে হবে পানি। কিন্তু ইফতারির আগে দেড় লিটার পানির বোতল কিনতে গেলে ভিরমিই খেতে হবে!
স্টেডিয়ামে খাবারের দোকান রয়েছে ২৫টির মতো। বেশির ভাগ দোকানের নেই দামের তালিকা। ফলে দাম হাঁকানো হয় ইচ্ছে মতো। বেশির ভাগ খাবারের দাম রাখা হয় দ্বিগুণ হারে। অবশ্য পরিস্থিতি বুঝে দাম ওঠা-নামা করে। সব সময় খাবারের চাহিদা একরকম থাকে না। যেমন বৃষ্টিতে কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে খাবারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই পড়ে যায়। কিংবা ম্যাচের শেষ দিকেও খাবার চাহিদা তেমন থাকে না। রমজানের সময় খাবারের চাহিদা কমে যায় ইফতারির পর। এ কারণেই যখনই খাবারের চাহিদা বাড়ে, মওকা বুঝে তখনই খাবারের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
ইফতারির সময় দেড় লিটার পানির বোতল নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা, পেপসি দুই লিটার ৩০০ ও এক গ্লাস ৩৫ টাকা। পিত্জা কখনো ১০০ টাকা, কখনো বা নেমে আসে ৬০ টাকায়। চিকেন বার্গার সময়ভেদে ১০০ থেকে ৬০ এমনকি ৫০ টাকায় নেমে আসে। ভেজিটেবল রোল কখনো ৫০, কখনো বা ৪০ টাকা। হট-ডগ ওঠা-নামা করে ১০০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। স্যান্ডউইচ পাওয়া যাবে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
খাবারের দাম কেন এমন ওঠা-নামা করে জানতে চাইলে স্টল খুলে বসা কিংস এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বললেন, ‘যখন যেভাবে বিক্রি করা যায়! ইফতারির সময় চাহিদা বেশি থাকে। অন্য সময় তো এমন চাহিদা থাকে না।’
এমন দামসহ খাবারের তালিকা বেশির ভাগ দোকানে নেই। থাকলেও মানা হয় না। ছবি: প্রথম আলো |
খাবারের দাম-প্রসঙ্গে বিসিবির বিপণন ও বাণিজ্য কমিটির প্রধান কাজী ইনাম আহমেদের কাছে জানতে চাইলে বললেন, ‘দোকানের বরাদ্দ বা দামের বিষয়টা আমরা দেখি না। সাধারণত ব্রান্ডের খাবারগুলো, যেমন আইসক্রিমের দামের ব্যাপারে বলতে পারব। বাকিগুলোর দাম লজিস্টিকস কমিটি দেখে।’
যোগাযোগ করা হলে লজিস্টিকস ও প্রটোকল কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার মল্লিক বললেন, ‘আমরা খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। দামের তালিকা তাদের দেওয়া আছে। কিন্তু সব সময় তারা এটা মানে না। এটা আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। যখন প্রচুর দর্শক থাকে, তখন তারা বেশি দাম নেই। আবার দর্শক না থাকলে ওই খাবারগুলো বিক্রির সুযোগ থাকে না। তবুও চেষ্টা করি দাম নিয়ন্ত্রণের।’
ক্রিকেট নাকি ‘মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল’ খেলা। এ নিয়ে তর্ক করতেই পারেন। তবে মিরপুরের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের খাবারের দাম যে পৃথিবীর যেকোনো খেলার যেকোনো স্টেডিয়ামের চেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, তাতে কোনো সন্দেহ নেই!
No comments