পেশাদার ভিসায় অদক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়া যাচ্ছেন by শরিফুল হাসান
মালয়েশিয়ার সেলানগরের বিশাল এক বিপণিবিতান মাইনস। গত শুক্রবার সকালে এই বিপণিবিতানে গিয়ে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চেহারা দেখে তাঁকে বাংলাদেশি মনে হলো। আলাপে তিনি বললেন, তাঁর নাম মুহাম্মদ মোফাজ্জল। বাড়ি ময়মনসিংহে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে দক্ষ পেশাদার ভিসায় এসেছেন। এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
মোফাজ্জল অভিযোগ করলেন, তাঁকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আনা হয়েছে। এখন বুঝছেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে দক্ষ পেশাদার ভিসায় এসে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। অনেকে আবার যে কোম্পানির ভিসায় এসেছেন, সেখানে কাজ করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়ছেন। কারণ, দক্ষ ভিসায় আনা হলেও তাঁরা সাধারণ শ্রমিক বা অদক্ষ শ্রমিক।
মালয়েশিয়ায় গত দুই দিনে তমিজউদ্দিন গাজী, সাইদুর রহমান, মিরাজুল ইসলামসহ আরও ২৫ থেকে ৩০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই এমন ভিসায় এসেছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র বলেছে, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা কোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞরাই সাধারণত দক্ষÿ ভিসায় মালয়েশিয়ায় চাকরি করতে আসেন, এর নাম ডিপি-১০ ভিসা। এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে পরিচ্ছন্ন বিশেষজ্ঞ, নির্মাণশ্রমিককে নির্মাণ বিশেষজ্ঞ বানিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের আনা হচ্ছে।
সাধারণ শ্রমিকেরা এই ভিসায় কেন আসছেন—জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণ শ্রমিক আসার জন্য দূতাবাসের সত্যায়ন লাগলেও ডিপি-১০ বা প্রফেশনাল ভিসার ক্ষেত্রে হাইকমিশন কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি লাগে না। সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার পর সাধারণ শ্রমিক আসা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন দালাল ও কিছু জনশক্তি রপ্তানিকারক এই ব্যবসা শুরু করেন। মালয়েশিয়ার কিছু নিয়োগকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এখানকার শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে এটা করেন। এ ক্ষেত্রে ভিসা হয়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা চলে আসেন।
তবে সাগরপথে মানব পাচার নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ÿব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এভাবে চলে এসেছেন।
অবশ্য ডিপি-১০ ভিসায় কত বাংলাদেশি এসেছেন, সেই পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে। তবে এই সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজারের কম নয় বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াপ্রবাসীরা।
প্রবাসী শ্রমিকেরা বলেছেন, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে সাধারণ শ্রমিকদের এই ভিসায় আনা হলেও তাঁরা এখানে এসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। অনেকে আবার এমন কাজও পাচ্ছেন না। অনেকে এই ভিসায় কাজ করতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।
এমন ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের একজন নজরুল ইসলাম। বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ডিপি-১০ ভিসায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মালয়েশিয়া এসে জহুর বারুতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কিন্তু মালিক তাঁর কাজের অনুমতি বা পারমিট লাগাননি। গত ২২ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর।
নজরুলের এক আত্মীয় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলকে দেশে পাঠানোর জন্য বর্তমানে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকের অভাবে অনেক কোম্পানির কাজ বন্ধ আছে। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জি টু জি) কর্মী না আসায় দালালেরা লোক আনতে এই প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছেন। তবে ডিপি-১০ বা দক্ষ ভিসায় যাঁরা আসছেন তাঁরা একেবারেই অদক্ষ। অনেকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। ফলে মালয়েশিয়ায় এসে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা সেখানে কাজ করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছেন অন্য জায়গায়। ফলে তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়ছেন। এসব কারণে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছেই। বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি মালয়েশিয়াকে জানানো হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
সমস্যার সমাধান যে হয়নি তা বাংলাদেশে থাকতেই জানা ছিল। ৭ জুলাই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় আসার সময় একই বিমানে ছিলেন মাগুরার মাহবুবুর রহমান। একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন ডিপি-১০ ভিসায়। খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কী কাজ করবেন—জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মাহবুবের সঙ্গেই ছিলেন শামসুল আলম। তিনিও একই ভিসায় যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কাজ জানেন না। জমিজমা বিক্রি করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। দুজনেই বললেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন মালয়েশিয়ায় কাজ করে তাঁরা ভাগ্য ফেরাতে পারবেন।
তবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) মুসাররাত জেবিন বলেন, এভাবে আসা লোকজন কেবল যে প্রতারিতই হচ্ছেন তা-ই নয়, বরং অবৈধও হয়ে পড়ছেন। তবে এই অবৈধদের সংখ্যা কত তা তিনি জানাতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিশেষজ্ঞদেরই ডিপি-১০ ভিসায় আসার কথা। সেখানে যদি সাধারণ শ্রমিক চলে আসে তাহলে সমস্যা। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বাংলাদেশিদের কাছে অনুরোধ, কে কেন কী কাজে আসছেন সেটা যেন জেনে আসেন।’
মোফাজ্জল অভিযোগ করলেন, তাঁকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আনা হয়েছে। এখন বুঝছেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে দক্ষ পেশাদার ভিসায় এসে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। অনেকে আবার যে কোম্পানির ভিসায় এসেছেন, সেখানে কাজ করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়ছেন। কারণ, দক্ষ ভিসায় আনা হলেও তাঁরা সাধারণ শ্রমিক বা অদক্ষ শ্রমিক।
মালয়েশিয়ায় গত দুই দিনে তমিজউদ্দিন গাজী, সাইদুর রহমান, মিরাজুল ইসলামসহ আরও ২৫ থেকে ৩০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই এমন ভিসায় এসেছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র বলেছে, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা কোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞরাই সাধারণত দক্ষÿ ভিসায় মালয়েশিয়ায় চাকরি করতে আসেন, এর নাম ডিপি-১০ ভিসা। এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে পরিচ্ছন্ন বিশেষজ্ঞ, নির্মাণশ্রমিককে নির্মাণ বিশেষজ্ঞ বানিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের আনা হচ্ছে।
সাধারণ শ্রমিকেরা এই ভিসায় কেন আসছেন—জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণ শ্রমিক আসার জন্য দূতাবাসের সত্যায়ন লাগলেও ডিপি-১০ বা প্রফেশনাল ভিসার ক্ষেত্রে হাইকমিশন কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি লাগে না। সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার পর সাধারণ শ্রমিক আসা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন দালাল ও কিছু জনশক্তি রপ্তানিকারক এই ব্যবসা শুরু করেন। মালয়েশিয়ার কিছু নিয়োগকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এখানকার শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে এটা করেন। এ ক্ষেত্রে ভিসা হয়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা চলে আসেন।
তবে সাগরপথে মানব পাচার নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ÿব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এভাবে চলে এসেছেন।
অবশ্য ডিপি-১০ ভিসায় কত বাংলাদেশি এসেছেন, সেই পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে। তবে এই সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজারের কম নয় বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াপ্রবাসীরা।
প্রবাসী শ্রমিকেরা বলেছেন, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে সাধারণ শ্রমিকদের এই ভিসায় আনা হলেও তাঁরা এখানে এসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। অনেকে আবার এমন কাজও পাচ্ছেন না। অনেকে এই ভিসায় কাজ করতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।
এমন ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের একজন নজরুল ইসলাম। বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ডিপি-১০ ভিসায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মালয়েশিয়া এসে জহুর বারুতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কিন্তু মালিক তাঁর কাজের অনুমতি বা পারমিট লাগাননি। গত ২২ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর।
নজরুলের এক আত্মীয় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলকে দেশে পাঠানোর জন্য বর্তমানে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকের অভাবে অনেক কোম্পানির কাজ বন্ধ আছে। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জি টু জি) কর্মী না আসায় দালালেরা লোক আনতে এই প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছেন। তবে ডিপি-১০ বা দক্ষ ভিসায় যাঁরা আসছেন তাঁরা একেবারেই অদক্ষ। অনেকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। ফলে মালয়েশিয়ায় এসে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা সেখানে কাজ করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছেন অন্য জায়গায়। ফলে তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়ছেন। এসব কারণে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছেই। বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি মালয়েশিয়াকে জানানো হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
সমস্যার সমাধান যে হয়নি তা বাংলাদেশে থাকতেই জানা ছিল। ৭ জুলাই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়ায় আসার সময় একই বিমানে ছিলেন মাগুরার মাহবুবুর রহমান। একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন ডিপি-১০ ভিসায়। খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কী কাজ করবেন—জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মাহবুবের সঙ্গেই ছিলেন শামসুল আলম। তিনিও একই ভিসায় যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কাজ জানেন না। জমিজমা বিক্রি করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। দুজনেই বললেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন মালয়েশিয়ায় কাজ করে তাঁরা ভাগ্য ফেরাতে পারবেন।
তবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) মুসাররাত জেবিন বলেন, এভাবে আসা লোকজন কেবল যে প্রতারিতই হচ্ছেন তা-ই নয়, বরং অবৈধও হয়ে পড়ছেন। তবে এই অবৈধদের সংখ্যা কত তা তিনি জানাতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিশেষজ্ঞদেরই ডিপি-১০ ভিসায় আসার কথা। সেখানে যদি সাধারণ শ্রমিক চলে আসে তাহলে সমস্যা। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বাংলাদেশিদের কাছে অনুরোধ, কে কেন কী কাজে আসছেন সেটা যেন জেনে আসেন।’
No comments