চার দিক-ঢাকঢোলের হাট! by সালেহিন রাহাত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও বসছে ঢাকঢোলের হাট। বসবে উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারে। আসন্ন শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও কটিয়াদীতে ১১ ও ১২ অক্টোবর ৫০০ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোলের হাট বসছে। জনশ্রুতি বলে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ই সর্বপ্রথম তাঁর রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।


উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। আজও রাজার আমলে খনন করা কোটামন দিঘিটির মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পূজা উপলক্ষে রাজপ্রাসাদ থেকে সুদূর বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। সে সময় নৌপথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই দিন আগে আসতেন। পরবর্তী সময়ে পার্শ্ববর্তী মসূয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে বিভিন্ন পূজায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তিত হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারের প্রেসক্লাবের কাছে ঢাকের হাট বসতে থাকে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজক এই হাট থেকে পূজার দু-এক দিন আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যান। আজও বিক্রমপুর ভাটি অঞ্চল ও কুমিল্লা হাওরাঞ্চল থেকে শত শত বাদ্যযন্ত্র এ হাটে আসে। ঢাক, ঢোল, সানাই; বিভিন্ন ধরনের বাঁশি-কাঁসিসহ হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে এখানে। নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকেন। সাধারণত একটি ঢাক পাঁচ হাজার, ঢোল দুই হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ব্যান্ড পার্টি ছোট ১৫ থেকে ২৫ হাজার এবং বড় ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামণ্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন।
বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন আগত ঢুলিদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ এম এ মান্নান বলেন, ‘এ ঐতিহ্য আমাদের গর্ব।’ তিনি কটিয়াদীতে দুর্গাপূজা বিসর্জনের জন্য একটি স্থায়ী দশমী ঘাট নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতার আশ্ব্বাস দেন। এ ব্যাপারে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পূজার আগে আগত বাদ্যযন্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে নানা সমস্যায় ভুগতে হয়। এ ছাড়া কটিয়াদীতে সব প্রতিমা একত্রে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আরতি দিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। কিন্তু এর জন্য কোনো নিজস্ব ভূমি নেই। কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজ মাঠে বিসর্জন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.